সংসার
পর্ব:২
লেখা:রাইসা।

– ধূর পাগলী। আসই একসাথে রান্না করি। মৌ খুশি হয়ে যায়। সত্যিই মায়ের আদর বোধহয় এমনি হয়।

.
এদিকে দেখতে দেখতে দু’মাস হয়ে যায়। দু’মাসে মৌ রাজের পরিবারের একজন হয়ে যায়। পরিবারের প্রতিটা মানুষ মৌকে ভালোবাসে। শুধু রাজ ছাড়া। মৌ জানে রাজের হৃদয়ে শুধু সুমাইয়ার বসবাস। আর তাকে বিয়েটাও করেছে শুধু তার মায়ের জীবন বাঁচাতে। ওসময় যদি ওর মায়ের কথা না শুনতো তা হলে অনেক বড় বিপদ হয়ে যেত।

.
মৌ রাজকে যতই দেখে ততই বিমোহিত হয়! কারণ মৌ হয়তো আগে এমন কোন পুরুষ দেখেনি। প্রায় ছয়ফুটের কাছাকাছি লম্বা। নীল রঙের শার্ট পরলে যেকোন মেয়েই প্রথম দেখায় প্রমে পড়ে যাবে। রাজের এক বান্ধবীর বিয়েতে রাজ মৌকে নিয়ে দাওয়াত খেতে যাবে বলে মৌকে রেডি হতে বলে। মৌ যখন রেডি হওয়ার চলে যাবে তখন রাজ মৌকে ডাক দিয়ে তার হাতে একটা প্যাকেট তুলে দেয়! মৌ ক্ষানিকটা অবাক হয়ে বলে কি এটাতে?

-খুলে দেখো?
– মৌ খুলে দেখে যে একটা শাড়ি।
– মৌ শাড়ি দেখে যতটা না খুশি হয়েছে তার চেয়ে বেশি মন খারাপ করেছে।
– মৌ এর মন খারাপের কারণটা রাজ বুঝতে পেয়েছে। কারণ রাজ জানে, মৌ ঠিকমতো শাড়ি পরতে পারে না। তার উপর বিয়ে বাড়ি যাচ্ছে। তাই মৌকে বলল ‘ কি হলো শাড়ি পছন্দ হয়নি?
– হুম হয়েছে।

– তো শাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

– আমি পরতে পারি না শাড়ি।

– রাজ মজা করার জন্য বলল’ তো কি পারেন খেতে? আপনার মা আপনাকে শাড়ি পরাও সেখায়নি? যেখানে ক্লাস ফ্লাইভের মেয়ে শাড়ি পরতে পারে।

– কি করবো, আমার মা’কে আমি দেখেইনি। বাবার কাছে শুনেছি আমাকে জন্ম দেওয়ার সময় মা মরে গেছে। দুধটাও খেতে পারিনি। আর মা মরার জন্য বাবা একবছর আমার মুখটা পর্যন্ত দেখেনি। বাবা মাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো। বাবার ধারণা ছিল আমার জন্যই মা মারা গেছে।

– রাজ স্পর্ষ্ট দেখতে পেল মৌ এর চোখের কোণে পানি। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সত্যি শাড়ি পরার কথাটা মা’কে টেনে বলা উচিত হয়নি। আচ্ছা তুমি শাওয়ার নিয়ে আসো। আমি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিবো।

– মৌ কিছু না বলে শাওয়ার নিতে চলে গেল। শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পড়ে যখনি রুমে আসছে। এসেই দেখে রুমে রাজ। দেখেই থরথর করে কাঁপতে লাগল। লজ্জায় মৌ এর গাল মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মৌ বললো, আপনি রুমের বাহিরে যান। আমি শাড়ি পরে আসছি। মৌ রাজকে জোর করে বাহিরে বের করে দিয়ে কোন রকম শাড়ি পরল।

– রাজ রুমে এসেই দেখে, লুঙির মতো শাড়ি পরেছে মৌ । সে হাসবে না কাঁদবে ভেবে পাচ্ছে না। মৌকে ডাক দিয়ে বলল ‘ কাছে এসো। আর এভাবে শাড়ি পরে?
– আসবনা আপনি পঁচা। তখন বসে থেকে সব দেখে নিয়েছেন। আপনি এতো লুচু কেন?
– ধ্যাত মেয়ে মানুষের এ একটা সমস্যা উপকার করতে গেলেই ভাবে লুচ্চামি করছে। আর তুমি যেভাবে শাড়ি পরছো না? ছেলেরা এর চেয়ে ভালো লুঙ্গি পরে। এখন কাছে আসো। মৌ অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজের কাছে আসে। রাজ একটান দিয়ে শাড়িটা খুলে ফেলে সুন্দর করে কুঁচি দিয়ে সুন্দর করে পরিয়ে দেয়। রাজ শাড়ি পরিয়ে দিয়ে মৌ এর দিকে তাকিয়ে দেখে, মুখটা সূর্যের মতো লাল আকার ধারণ করছে চোখ দু’টি বন্ধ। আর মুখ দিয়ে বিড়বিড় করে আল্লাহ আল্লাহ করছে। রাজ আজকে বুঝতে পারল, সত্যিই লজ্জা নারীদের ভূষণ। লজ্জা পেলে মেয়েদের এতো সুন্দর লাগে তার ধারনাতীত ছিল বিষয়টা। রাজ মৌ এর গায়ে টার্চ করতেই মৌ চমকে ওঠে!

– এই কি হলো ভয় পেলে নাকি?তোমার শাড়ি পরা শেষ। যদি ময়দা মাখতে হয় তাহলে আর একটু লেট করতে পারো।
– মৌ রাজকে কিছু না বলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে গেল। আয়নার সামনে বসে, কাজলের কট্টাটা থেকে এক বিন্দু কাজল নিয়ে চোখের ব্রুতে লাগিয়ে নিল। কপালের ঠিক মাঝখানটায় কালো রংয়ের একটা ছোট্ট টিপ বসিয়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে। রাজ মৌ এর থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না। কিন্তু না মৌ এর দিকে নজর দেওয়া যাবে না। আমার যা ভালোবাসা সব আমার প্রিয়তমা সুমাইয়ার জন্য। রাজ গাড়িতে বসেই সুমাইয়ার সাথে কথা বলছে। মৌ পাশেই বসে আছে। মৌ জানে রাজ তার না। সে নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য চুক্তিবন্ধ! বলতে গেলে রক্ষিতা। ঠিক রক্ষিতা বলা চলে না, কারণ তিনবার কবুল পড়ে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়েটা করেছে। সুমাইয়ার সাথে রাজের রোমান্টিক কথাগুলো মৌর হৃদয়ে এসে আঘাত করছে। সমুদ্রের ঢেউ যেমন তীরে এসে আঘাত করে ঠিক তেমনি। রাজকে যখন সুমাইয়া ফোনেই কিসস করে তখনি,মৌ এর চোখের কার্ণিশ বেয়ে টুপ করে একফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সদ্য কাজল দেওয়া চোখটা, আষাঢ়ের সময় যেমন নদী টইটম্বুর থাকে তেমনি হয়ে আছে। দেখতে দেখতে বিয়ে বাড়িতে এসে পড়ে।

বিয়ে বাড়িতে একটা ছেলে মৌকে দেখেই বলে ওঠে, ইশ্ মালটা সেই। ছেলেটার কথা শুনে রাজের মাথায় রক্ত উঠে যায়। বিয়ে বাড়ির সবার সামনে ছেলেটার গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে ‘ এটা আমার স্ত্রী কোন বাজারের পণ্য নয় । ‘ ভবিষৎতে কথা বলার আগে ভেবে বলবি। আর এখানে প্রতিটা মেয়েই কারো না কারো মা, বোন স্ত্রী। তোর ঘরে যেমন মা, বোন আছে তেমনি সবারি ঘরে।
ভবিষৎতে কোন মেয়েকে মাল বলার আগে নিজের মা বোনের চেহারাটা মনে করবি। দেখবি মুখ দিয়ে আর মাল কথাটা আসবে না। রাজ মৌকে নিয়ে সোজা বাসায় এসে পড়ে। মৌ আজ অনেক খুশি। কারণ রাজ তাকে স্ত্রী বলে সবার কাছে পরিচয় দিয়েছে। রাত্রে বেলা যখন রাজ বালিশ নিয়ে সোফাতে যাবে এমন সময় মৌ রাজের হাতটা ধরে ফেলে।
হাত ধরলে কেন?
আজ সোফাতে না গেলে চলে না? আমরা তো স্বামী স্ত্রী। তোমার প্রতি আমার তো একটা অধিকার রয়েছে।।

– হুম আমরা স্বামী-স্ত্রী তবে বাহিরের লোকেদের কাছে। কিন্তু ঘরের ভেতরে না। তুমি হয়তো চুক্তির কথা ভুলে যাচ্ছ। আমি বিয়েটা করেছি শুধু মায়ের খুশির জন্য। আর সুমাইয়ার বিদেশ থেকে আসতে দেরী হবে বলে। মা’কে এ অবস্থায় সুমাইয়ার কথা বললে কখনোই মেনে নিতো না।

আর তুমি তো টাকা নিয়েছ! তুমি এটাও বলতে পারবে না, আমি তোমাকে ঠকাচ্ছি। কারণ তুমি নিজে ইচ্ছায় রাজি হয়েছো সব শর্ত মানতে

– মৌ আর কিছু বলতে পারে না। রাজের হাতটা ছেড়ে দেয়। চোখের পানি কোন বাঁধা মানছে না। তার ভাগ্যটা কি এতটাই খারাপ ছিল? যার জন্য ছোটবেলায় মা মারা যায়। বিয়ের পর স্বামীর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। বাবা নিজের মেয়েকে সন্তান বলে পরিচয় দেয় না।

চলবে”””””

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here