সংসার
পর্বঃ১২+১৩
লেখাঃরাইসা

কোন হসপিটালে বলো। সুমাইয়া রাজের কাছে হসপিটালে ঠিকানা নিয়ে বিশ মিনিটেই হসপিটালে এসে উপস্থিত হয়। হসপিটালে রাজকে দেখেই জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। জান তুমি অসুস্থ আমাকে জানাতে পারলে না?
– আর এই যে রক্ষিতা! আমাকে ফোন করে জানাতে পারলে না?
– আপনাকে কেন জানাবো?
– ঠাস! করে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো রক্ষিতা তুই কি বললি? আমাকে কেন জানাবি? জানস রাজ আমার জান আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না। রাজ যে আমার কলিজা।

– সুমাইয়া কি করছো এসব? ছাড়ো না এটা হাসপাতাল।
– তুমি চুপ করবে জান। তোমার যদি কিছু হয়ে যেত আমি কি নিয়ে বাঁচতাম? তুমি জানো না আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি।
– হুম জানি তো পাগলী।

– তো, রক্ষিতাটা আমায় একটু ফোন দিয়ে বললোও না। তুমি অসুস্থ।
– আচ্ছা বাদ দাও। আমার তো কিছু হয়নি।

– কিছু হয়নি যদি হতো? এই কথাটা বলে সুমাইয়া রাজের বুকে গিয়ে লুকালো।

– মৌ কিছু বলতে পারছে না। মাথাটা নিচু করে কাঁদছে। রিত্ত আর মা’কে ফোন দিচ্ছে। এখন ফোন রিং হচ্ছে।

– রিত্ত ফোন ধরতেই মৌ বলল’ আপু তোমরা কখন আসবে?
– রিত্ত বললো আমরা রওয়ানা দিচ্ছি। আসতে আসতে সন্ধ্যা লাগবে।
– মৌ রাজের অসুস্থতার কথা বলতে চেয়েও পারলো না।

– বিকেলে রাজকে হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে এসে পড়ে। রাজের সাথে সুমাইয়াও বাসায় আসে। সুমাইয়া রাস্তায় একটা মুহূর্তের জন্যও রাজের হাতটা ছাড়েনি। রাজ বাসায় আসার পথে স্পর্ষ্ট বুঝতে পারলো সুমাইয়া কাঁদছে।

– আমার হার্ট কাঁদছে কেন?
-সুমাইয়া কোন কথা বলছে না। রাজ আবারো বলবো কি হলো? কথা বলছো না কেন? প্লিজ কেঁদো না।

– সুমাইয়া এবার রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গাড়িতেই ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগল।
– কি হলো কান্না করছো কেন? কি হয়েছে বলো?
– সুমাইয়া কান্না করতে করতে বললো’ রাজ আমাকে কখনো ছেড়ে যেয়ো না! আমি তোমাকে বড্ডবেশি ভালোবাসি। তোমার জন্য জীবনটা পর্যন্ত দিতে পারি। আমাদের ভালোবাসা পবিত্র।

– রাজ সুমাইয়ার কপালে আলতো করে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিয়ে বললো’ এ দেহে প্রাণ থাকতে তোমাকে ছেড়ে যাবো না। তুমি যে আমার কলিজা। তোমাকে ছাড়া কেমনে বাঁচি বলো? আর ছেড়ে যাওয়ার তো কোন প্রশ্নই উঠে না।

– এদিকে গাড়ি বাসায় এসে গেছে। মৌ রাজকে হাত ধরে গাড়ি থেকে নামাতে যাবে যখন ঠিক তখনি, সুমাইয়া বললো’ এই রক্ষিতা তুমি রাজকে স্পর্শ করবে না। রাজের অমঙ্গল হবে।
– সুমাইয়ার কথাটা যেন মৌ এর কলিজায় এসে লাগল। মৌ রাজের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়বে পড়বে ভাব। মৌ ভাবছে রাজ হয়তো কিছু বলবে। কিন্তু না, রাজ তো আর তার না। তিনবার কবুল বলেছে হয়তো। কিন্তু মনে তো আর জায়গা করে নিতে পারেনি।

– বাসায় ঢুকেই সুমাইয়া বললো’ এই যে দু’কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসো।
– মৌ যখন কিচেনে যা বানাচ্ছে, তখন দেখে কিচেনে চিনি নেই। মৌ যখন চিনি খুজতে রাজের মায়ের রুমে আসে এ সুযোগে সুমাইয়া চায়ের কাপে লবণ দিয়ে আবারো রাজের কাছে বসে গল্প বলতে লাগে।

– ক্ষানিক পর মৌ চা নিয়ে এসে রাজকে আর সুমাইয়া দিল। রাজ চা মুখে দিয়েই অ্যাক থু! জঘন্য তিতো। এই চায়ে চিনি দিছিস না লবণ দিছিস?
– কেন চিনি দিয়েছি।
– এবার সুমাইয়া গরম চা মৌ এর পেটে ছুড়ে মেরে বলল। তোর চা তুই খা!

– মৌ অ্যা করে গগণ বিদায়ী চিৎকার দিয়ে ওঠল। মৌ এর মুহহূর্তের মাঝেই পেটের চামড়া ঝলসে গেল। খুব জালা করছে। রাজ আর সুমাইয়া একটার পর একটা খারাপ কথা বলেই যাচ্ছে।

– এক পর্যায়ে সুমাইয়া বলেই ফেলল’ রাজ তোমাকে মারার জন্য মনে হয় চাতে বিষ মিশিয়েছে!

– মৌ এবার নিজেকে সামলাতে পারলো না। চিৎকার করে বলতে লাগল ‘ আমি কেন রাজকে মারতে যাবো?’ রাজ আমার স্বামী। যার খেদমত করে আমি আল্লাহর প্রিয় হবো। যার সন্তান আমার গর্ভে তাকে কেন মারতে যাবো?
– এবার সুমাইয়া আর সহ্য করতে পারলো না। মৌ এর গালে কষে থাপ্পর দিয়ে বললো’ এই রক্ষিতা তোর সাহস কি করে হয়? আমার জানকে স্বামী বলার? আরে পতিতালয়ে তো কতজনেই যায়, সেখানে যদি কেউ কারো সন্তান গর্ভে ধারণ করে সেটা জারজই হয়। তেমনি রক্ষিতার।

– জান আমি সত্যি মরে যাবো তুমি যদি এটাকে ডির্ভোস না দিয়ে আমাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে না করো। কথাটা বলেই ফল কাটা ছুরি দিয়ে হাতে পোঁচ দিল!

– ফেলকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। রাজ তাড়াতাড়ি পকেট থেকে রুমাল বের করে, সুমাইয়া হাতটা বেধে ফেলল। টান দিয়ে সুমাইয়াকে বুকে জড়িয়ে বলতে লাগল ‘ তুমি তোমার হাতে ছুরি চালাওনি। চালিয়েছ কলিজায়। তুমি জানো না তোমায় কতটা ভালোবাসি। তোমাকে পাবার জন্যিই রক্ষিতাকে বিয়ে করেছিলাম। জানতে পারিনী, কালনাগিনীটা এমন করবে। নিজে সন্তান জন্ম দিয়ে সম্পদের মালিক হতে চাইবে।
– মৌ রাজের মুখে এমন কথা শুনে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগল। মন চাচ্ছে তার জীবনটা এ মুহূর্তে বের করে দেয়। মৌ এর পেটে খুব জলছে। তাই পেটের উপর থেকে কাপড়টা সরাতেই দেখতে পেল, পেটের উপর গরম চা পড়ে ফোসকা পড়ে গেছে। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। আল্লাহ কেন যে এতো কষ্ট দেয়। মৌ পেটের নিচে হাত রেখে দু’চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলে’
কিরে কান্না করছিস? কান্না করিস না? আল্লাহ তোকে হেফাযত করবে। আমার দেহে প্রাণ থাকতে তোর কিছু হবে না। তুই যে আমার জীবন হয়ে গেছিস। সত্যিই তুই অভাগা, জন্মের আগেই তুই তোর জন্মদাতার মুখে জারজ হওয়ার তকমাটা পেয়ে গেলি। ভাবিস না আমি তোকে ছেড়ে যাবো? কখনোই না।
-মৌ পাগলীর মতো এসব বলছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।

– এদিকে সুমাইয়া রাজকে জড়িয়ে ধরে বললো ‘ জান তোমাকে বলেছিলাম না সব কিছু পরিকল্পনা করে মাঠে নেমেছে। ‘ তুমি কিন্তু আমায় ছেড়ে যেয়ো না।
– রাজ এবার সুমাইয়ার কপালে চুমু দিয়ে বলল! কি করা যায়?
– পথ থেকে সরিয়ে ফেলি? গাড়ি একসিডেন্ট করিয়ে!
– হুম তবে, চুক্তির মেয়াদ দু’মাস আছে চেষ্টা করে দেখি যদি বাচ্চাটা নষ্ট করতে পারি তবে ডির্ভোস কোন ব্যাপার না। তা তো অর্ধেক হয়েই আছে।

-আচ্ছা এবার তাহলে আসি?
– হুম যাও!
– সুমাইয়া যাওয়ার আগে রাজের কপালে চুমু দিয়ে গেল।
– রাজ সোফাতে বসে আছে। এমন সময় কলিংবেলটা বেজে ওঠল। রাজ দরজা খুলতেই দেখতে পেল রিত্ত আর তার মা বাহিরে দাঁড়িয়ে।
– রাজের মা রাজকে কিছু না বলেই ‘ মৌকে ডাকতে লাগল। কিরে মা কোথায় তুই?
– মৌ এর কাছে মনে হচ্ছে সে জীবন ফিরে পেয়েছে। তাড়াহুড়া করে চোখের জল মুছে শাড়িটা পাল্টিয়ে নিয়ে, রুম থেকে বের হয়েই বলে। মা আমি কাজ করছিলাম।
– কি তুমি এ শরীর নিয়ে কাজে? বাড়ির চাকর বাকররা কই?
– মা ছুটিতে গেছে।
– এখন ছুটিতে? বুঝতে পারি না কিছু।
– রাজের মা মৌ এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল ‘ মা তোর মন খারাপ?’
– না মা।

– কয়েকদিন পর মৌ এর ফোনটা বেজে ওঠল!
– মৌ ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো’ ম্যাডাম আপনার বাবাকে বাঁচাতে হলে সামনে শুক্রবারে ছয়লাখ টাকা লাগবে। ‘ অপারেশন করতে হবে। নয়তো বাঁচানো যাবে না ।
-আচ্ছা, আপনি অপারেশন করার সব ব্যবস্থা করেন শুক্রবারের মাঝে সব টাকা প্যাড করবো । আর শুনেন বাবাকে কখনোই বলবেন না টাকাটা আমি দিচ্ছি। বাবা যদি এটা শুনে তাহলে মরে যাবে তবু আমার টাকায় অপারেশন করবে না। আমি যে তার ভালোবাসার মানুষটাকে জন্ম নেওয়ার সময় কেড়ে নিয়েছি।
– আচ্ছা ম্যাডাম।
– ফোনটা কেটে যেতেই মৌ মহাচিন্তায় পড়ে গেল। এতো টাকা কিভাবে ম্যানেজ করবে। রাজের কাছে চুক্তির তিনলাখ টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু বাকি তিনলাখ। যে বাবাকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনের সবকিছু বির্সজন দিলো, কারো কারো কাছে রক্ষিতা হলো। কিন্তু তারপরেও কি বাবাকে বাঁচানো যাবো না? হঠাৎ মৌ এর মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।
– মৌ রাজের কাছে গিয়ে বললো’ আপনার কাছে চুক্তির যে তিনলাখটাকা পায় সেগুলো দেন। ‘

– সরি আর একটা টাকাও দিতে পারবো না। তবে দিতে পারি এক শর্তে তুমি যদি তোমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলো। আরো বেশি যদি চাও তাও দিবো তবে সন্তানটা নষ্ট করতে হবে। যদি রাজি থাকো কালই ক্লিনিকে গিয়ে এবারশন করিয়ে নিয়ে আসবো।

– মৌ এর পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে এমন কথা শুনে। মৌ ভাবতে লাগল কাকে বাঁচাবে? বাবাকে বাঁচালে গর্ভের সন্তানটাকে মেরে ফেলতে হবে ”’

চলবে””””””
সংসার
পর্বঃ১৩

লেখাঃরাইসা।

– মৌ রাজের কাছে গিয়ে বললো’ আপনার কাছে চুক্তির যে তিনলাখটাকা পায় সেগুলো দেন। ‘

– সরি আর একটা টাকাও দিতে পারবো না। তবে দিতে পারি এক শর্তে তুমি যদি তোমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলো। আরো বেশি যদি চাও তাও দিবো তবে সন্তানটা নষ্ট করতে হবে। যদি রাজি থাকো কালই ক্লিনিকে গিয়ে এবারশন করিয়ে নিয়ে আসবো।

– মৌ এর পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে এমন কথা শুনে। মৌ ভাবতে লাগল কাকে বাঁচাবে? বাবাকে বাঁচালে গর্ভের সন্তানটাকে মেরে ফেলতে হবে।

– কি হলো? বাচ্চাটা কি নষ্ট করবি?

– মৌ এর সামনে তার বাবার চেহারাটা ভেসে ওঠছে বারবার। তার বাবা মারা যাক সর কখনই চাই না। আর মা হয়ে গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করতে সেটাও সে পারবে না।

– কি হলো টাকা তিনলাখের বেশি দিতে হবে?
– হুম আমি রাজি বাচ্চা নষ্ট করতে।
– সত্যি?
– হ্যাঁ সত্যি। তবে টাকা লাগবে ছয়লাখ।

– কি? ছয়লাখ!
– হুম ছয়লাখ।
– আচ্ছা দিবো, তোরমতো রক্ষিতাতো টাকার জন্য সব করতে পারে।
– হ্যাঁ এবার ঠিক ধরতে পারছেন।
– হুম, এতো কিছু না করে পতিতা পল্লীতেই তো থাকতে পারিস।

তবে কি মিঃ রাজ, আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করলেই আপনি সুমাইয়াকে পাচ্ছেন না। আমাকে আপনি নিজ থেকে ডির্ভোস ও দিতে পারবেন না। কারণ আপনার মা আমাকে অনেক পছন্দ করে। অনেক! তবে কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বলো?
– তুমি সুমাইয়াকে পাবে সাথে আমাকেও তাড়িয়ে দিতে পারবে। এইজন্য তোমার মা’কে বলবে তুমি সুমাইয়াকে পাওয়ার জন্য আমার সাথে চুক্তি করে বিয়ে করেছ। সাথে বিয়ের দিনই আমি ডির্ভোস পেপারে সাইন করেছি এটাও বলবে। ও বলবে তুমি আমার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করোনি। আর আমার গর্ভের বাচ্চাটা অন্য কারো। তাহলে তোমার মা আমাকে এমনিতেই তাড়িয়ে দিবে।

– ওয়াও গুড আইডিয়া। তবে শর্ত আছে?
-কি শর্ত?
– তোকে লিখিস স্টেটমেন্ট দিতে হবে তোর গর্ভের সন্তান আমার না। আর সন্তানটা অন্য কারো সাথে নষ্টামি করে গর্ভে ধারণ করেছিস।

– মৌ এর কলিজাটা মনে হচ্ছে বের হয়ে আসবে। বুক ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু কি করার এতে করে গর্ভের সন্তান আর বাবা দু’জনকেই বাঁচানো যাবে।

– কি হলো? তুমি কি রাজি?
– হ্যাঁ রাজি। আর কাল সকালে আগে টাকা বুঝিয়ে দিবে।

– আচ্ছা।
– আরেকটা অনুরোধ করবো?
-হ্যাঁ করো।
– কালকের পর তো তোমার নামটা ধরেও ডাকতে পারবো না। রক্ষিতার তকমাটা গায়ে লেগে যাবে। অবৈধ সন্তানের জননী হয়ে যাবো। আজকের রাতটা তোমার কাছে চায় শুধু। জানো রাজ আমি তোমাকে স্বামী হিসেবে প্রথমদিনই গ্রহণ করেছিলাম। আর আজকের রাতটা শেষ রাত। তোমার মাথাটা আজকের জন্য শুধু বুকে রাখতে চাই।

– আচ্ছা। তবে কাল সকালে কিন্তু, যা যা বলছো তা যেন করা হয়।

– হুম হবে।

– মৌ রাজের মাথাটা তার বুকে নিয়ে আছে। রাজের কাছে অসহ্য লাগছে। তবুও কিছু করার নেই। আজকের জন্য পর থেকে তবুও তো আপতটা বিদায় হবে।

– মৌ রাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মৌ এই খারাপ মানুষটাকেই কেন যেন ভালোবেসে ফেলেছে। কালকের পর তো আর মানুষটাকে দেখা হবে না। এসব ভাবতেই কেন যেন বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা হতে শুরু করে।এদিকে রাজ মৌ এর বুকেই ঘুমিয়ে যায়। মৌ এর মনে হচ্ছে আজকের রাতটা যদি শেষ না হতো তবে কতই না ভালো হতো। এদিকে চাঁদের আলো জানালার কাঁচ ভেদ করে রাজের মুখের উপর পড়ছে। চাঁদের আলোতে রাজের মুখটাকে একদম নিষ্পাপ মনে হচ্ছে। মৌ নিজের অজানেই রাজের কপালে চুমু একে দেয়। রাজকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মৌ এর মনে হচ্ছে এ ধরায় শেষ ধরা। রাজের সাথে কাটানো সহস্র হাসি-কান্নার স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠছে। মৌ রাজের মাথাটা বালিশে রেখে, রাজের পায়ের কাছে গিয়ে, পা দু’টো বুকে জড়িয়ে নিয়ো বলতে লাগল গুণগুণ করে ‘জানো রাজ আমি তোমার পায়ের নিচে একটু স্থান চেয়েছিলাম। ‘যে স্থান একটি নারিকে সকল বাধা বিপত্তি থেকে রক্ষা করে। স্ত্রী নামক তকমাটা গায়ে জড়িয়ে দেয়। কিন্তু আমি পারিনি। বলো রাজ কিভাবে আমি ভুলে যাবো তোমায়? তুমি আমার প্রথম স্পর্শ। তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা। তুমি আমার স্বামী। যাকে নিয়ে বেহেশতে থাকতে চেয়েছিলাম। আল্লাহর পবিত্র কালামকে স্বাক্ষী রেখে আমি তোমাকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু আমি অভাগীই রয়ে গেলাম। চোখের পানি দিয়ে মৌ রাজের মা ভিজিয়ে ফেলছে। রাজের ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু রাজ কোন কথা বলছে না।

– মৌ রাজের পা ছেড়ে দিয়ে রাজের কপালে চুমু দিয়ে মাথাটা বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে লাগল আল্লাহ আজকের রজনীটাকে বড় করে দিন।

– রাজ সবটা শুনেও চুপ করে থাকলো। রাজের চোখে বারবার সুমাইয়ার চেহারাটা ভাসছে।

.

এদিকে দেখতে দেখতে রাত কেটে যায়। সকালে রাজ ছয়লাখ টাকা এনে মৌ এর হাতে তুলে দেয়।
– মৌ টাকাটা তার ব্যাগে রেখে দেয়।

-রাজ মৌকে টাকা দিয়েই তার মাকে ডেকে নিয়ে বলে’ মা আমি আর পারছিনা , তুমি আমাকে যে শাস্তি দিবে সেটাই মাথা পেতে নিবো। ‘
– কি হলো বাবা কি হয়েছে বল?
– মা আমি অন্যায় করেছি!
– বল কি হয়েছে?
– মা মৌ এর গর্ভে যে সন্তান।

– যে সন্তানের জন্য নাম ঠিক করে রেখেছো। সারা বাড়ি ভর্তি খেলনা এনে রেখেছে। সে সন্তান আমার না। একটা অবৈধ সন্তান।

– রাজের মা রাজের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল,’কি হলো লজ্জা করে না?’ নিজের সন্তানকে অবৈধ সন্তান বলতে। আমি মৌকে অনেক ভালো করেই চিনি। মৌকে নিয়ে আর একটা বাজে কথাও বলবি না।

– মা আমি সত্যি বলছি। কারণ মৌ এর সাথে আমার কোন শারীরীক সম্পর্ক হয়নি।
– ভাইয়া কি বলছো এসব?
– হ্যাঁ রিত্ত সবঠিক বলছি। মৌকে বিয়ে করেছিলাম মায়ের মুখের হাসির জন্য। আমি ভালোবাসতাম সুমাইয়াকে। কিন্তু তোমার জন্য মৌকে বিয়ে করলেও ছুঁয়েও দেখিনি। মৌ এর সাথে থাকতে থাকতে মৌকে ভালোবেসি ফেলি। কিন্তু ততদিনে মৌ অবৈধ সন্তান গর্ভে ধারণ করে ফেলি। ভাবছিলাম এবারশন করবো। কিন্তু তুমি সে কাগজটা দেখে ফেলো। অনেক কান্না করি। মৌ প্রমিজ করেছিল সে আর পাপাচার করবে না। কিন্তু মা মৌ এখনো ও ছেলের সাথে হোটেলে। এ কথা বলে রাজ কেঁদে দেয়।
– রাজের মা মৌকে ডেকে এনে বলে, মৌ রাজ যা বলছে তা মিথ্যা না?
– মৌ মাথাটা নিচু করে বলে না মা সব সত্য!
– মৌ এর মুখে কথাটা শুনে রাজের মায়ের পায়ের নিচে থেক মাটি সরে যেতে লাগল।
– রাজ এই নষ্টাকে বাড়ি থেকে বের করে দে। নিজের মেয়ে ভাবতাম। আর সেই কি না কলিজাতে আঘাত করলো।

– মা আমাকে ক্ষমা করে দেন।
– চুপ! তোর ও মুখে আমাকে মা ডাকবি না। জানিস কত স্বপ্ন দেখছিলাম তোদের নিয়ে। আমার মন চাচ্ছে, আমার শরীর ব্লেড দিয়ে কেটে তোর দেওয়া রক্ত বের করে দিতে। আসলেই তোদের মতো মেয়ে নিষিদ্ধ পল্লীতেই স্থান পায়। কথাগুলো বলতে গিয়ে কেঁদে দিলেন।
– মৌ নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে।
– রাজ বাবা উকিলকে ফোন করে ডির্ভোস পেপার নিয়ে আসতে বলো। আর সামনে শুক্রবারেই সুমাইয়ার সাথে তোর বিয়ে দিবো। তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম বাবা।

– এদিকে ঘন্টা ক্ষানিক পর ডির্ভোস পেপার হাতে পেলে, রাজের মা রাজকে বললো বাবা এখানে সাইন করে দিয়ে ঘরকে পবিত্র কর।
– রাজ ডির্ভোস পেপারে সাইন করে দিয়ে ডির্ভোস পেপারটা মৌ এর হাতে দিল। সাথে একটা হলফনামা করলো, ‘মৌ এর গর্ভে যে সন্তান সেটা রাজের নয়। কোনদিন উওরাধিকারী হতে পারবে না। মৌ রাজের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সাইন করে দিল।

– রাজের মা এসে বললো’ বাবা প্লিজ কলঙ্কিনীটাকে বের করে দে। আমার ওর মুখটা দেখতে মন চাচ্ছে না।

– মৌ ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে যখন বের হবে। বের হওয়ার আগে রিত্তকে বললো’ বোন অনেক কষ্ট দিয়েছি ক্ষমা করে দিয়ো অভাগীটাকে। বামন হয়ে আকাশের চাঁদ ধরতে চেয়েছিলাম। রিত্ত কিছু না বলে তার রুমে চলে গেল।
– মৌ এবার রাজের মাকে বললো’ মা ছোটবেলায় তো মা হারিয়েছি। মায়ের আদর স্নেহ কি কখনো বুঝতে পারিনি। কিন্তু আপনার সংস্পর্শে এসে মায়ের আদরটা বুঝতে পেয়েছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। আপনাদের বিশ্বাস নষ্ট করার জন্য। আমি আসি।কথাটা বলে মৌ মায়ের পায়ে যখন সালাম করতে যাবে। তখন তিনি সরে যায়। মৌ ফ্লরে সালাম করে যে জায়গায় রাজের মা দাঁড়িয়েছিল।

– রাজ বাবা প্লিজ কোন বিশ্বাস ঘাতকে বাড়িতে আর একমুহূর্ত থাকতে দিস না। বের করে দে। বলে তিনি রুমে চলে গেলেন চোখের জল মুছতে মুছতে। মৌ যে এতটা বাজে কল্পনাও করেননি তিনি।

– মৌ বাড়ি থেকে বের হয়ে, বাড়িটার দিকে একবার অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন।
– মৌ যখন চলে যাচ্ছে, তখন রাজ পিছন থেকে ডাক দিয়ে বললো’ কোথায় যাচ্ছো? এগিয়ে দিয়ে আসবো?
– মৌ মাথাটা নিচু করে বললো’ ধন্যবাদ স্যার। এতিমতো যাওয়ার কোন জায়গা নাই। আপাতত যে দিকে চোখ যায় সে দিকে চলে যাবো। ভালো থাকবেন। আপনার উপকারের কথা আমি কোন দিন ভুলবো না। মৌ ডির্ভোস পেপারে তার সাইন করার জায়গাটিতে সাইন করতে চেয়েও কেন যেন পারেনি। রাজ অনেক চালাক আগের ডির্ভোস পেপারটা আর বের করলো না। হসপিটালে যাওয়ার পথে গাড়িতে বসে বসে এসব ভাবছে।

– এদিক রাজ আজ অনেক খুশি। রাজ বাসায় ঢুকতেই বললো’ বাবা জোর করে তোর উপর সিদ্ধান্ত চাপায় দেওয়ার জন্য ক্ষমা করে দিস মাকে। আর কাল বৃহস্পতিবার সুমাইয়ার বাবাকে বলবি কাল সুমাইয়াকে দেখতে যাবো। আর কালই আন্টি পরিয়ে দিয়ে আসবো।
– রাজ তার মাকে জড়িয়ে ধরে বললো’ মা সত্যিই তুমি অনেক ভালো।

– রাজ ভাবছে খুশির খবরটা সে সুমাইয়াকে ফোনে দিবে? না সুমাইয়াকে একদম চমকে দিবে। সত্যিই আল্লাহ মহান, সত্যিকারের ভালোবাসাগুলো তিনি মিলিয়ে দেন। রাজ নিউমাকেট থেকে বকুলের মালা, সাথে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে সুমাইয়ার বাসায় চলে গেল। রাজ একদৌড়ে সুমাইয়ার রুমে গিয়ে যখন দরজা ধাক্কা দিবে ঠিক তখন ভেতর থেকে পুরুষালি কন্ঠ শুনতে পেল।
– রাজ জানালার পর্দা সরিয়ে যা শুনতে পেল। যা শোনার আর দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।

– সুমাইয়া একটি ছেলের বুকে অর্ধনগ্ন হয়ে শুয়ে আছে। ছেলেটি সুমাইয়াকে বলছে’ বেবী কাজটা কবে শেষ হবে? হাজার কোটি টাকা কবে যে পাবো?
– তুমি চিন্তা করো না। যে বুদ্ধি দিয়েছি রাজকে সে তো পটে গিয়েছে। আর আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর আগেই এ কাজটা শেষ হবে। বিয়েটা হলেই সব সম্পত্তি আমার নামে করিয়ে নিবো। আর রাজ তো আমার জন্য পাগল।

– উম্মাহ, আমার সুইট বউ।বলেই সুমাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।

-এসব দেখে রাজের চোখের পানি কোন বাধা মানছে না।

চলবে”’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here