#শৈবলিনী—৪৮
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★সুখময় রাতের চাদর সরিয়ে আগমন ঘটলো ঝলমলে সকালের। শুভ্র পর্দার আড়াল থেকে দস্যু রোদেরা উঁকি ঝুঁকি করতে লাগলো। ভেতরে প্রবেশের অদম্য ইচ্ছে যেন তাদের। বিছানায় পরম প্রশান্তির আবেশে জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকা ওই নারীর সুখ দেখে যেন তাদের বড্ড হিংসে হচ্ছে। যেন বলতে চাইছে,”এই সুন্দরী রমনী, এতো কেন সুখ তোমার মুখময়? এতো সুখ যে আমাদের সইছেনা।” তাইতো রমণীকে জাগানোর ফন্দি করছে তারা। একসময় তাদের অত্যাচারে জেগে যায় নূর। আস্তে করে নেত্রপল্লব মেলে তাকায় সে। ঘুম থেকে জাগতেই পাশে আদিত্যকে দেখতে না পেয়ে ঘাবড়ে যায় সে।গায়ের সাদা চাদরটা চেপে ধরে ঠাস করে উঠে বসে সে। এদিক ওদিক খেয়াল করে দেখে সে বর্তমানে রুমে আছে। মনে পড়ে ভোর রাতের দিকে আদিত্য ওকে রুমে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু উনি কোথায় গেল? নূরের হঠাৎ ভয় হতে লাগলো। আদিত্য ওকে ছেড়ে চলে গেল নাতো? ভাবতেই কলিজা কেঁপে উঠল নূরের। অস্থির হয়ে নামতে চাইলে তখনই খাটের পাশে ক্যাবিনেটের উপর পেপার ওয়েট দিয়ে চাপা দেওয়া একটা চিরকুট দেখতে পেল। চিরকুট টা হাতে নিয়ে দেখলো তাতে লেখা আছে,
“ভয় নেই জান,আমি তোমার আশেপাশেই আছি। শুধু প্রেমবিলাস করলে কি হবে! পেট বাবাজিতো অবরোধ করছে। তাকেও তো শান্ত করতে হবে। নাহলের রোমান্সের এনার্জি কই পাবে! এমনিতেও রাতে অনেক এনার্জি লস হয়েছে তোমার। তাই আমার বউ সোনাটার জন্য পুষ্টিকর এবং মজাদার ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছি। তুমি উঠে গেলে ফ্রেশ হয়ে নাও। নাহয় অপেক্ষা করো আমি এসেই তোমাকে ফ্রেশ করিয়ে দিবো। আই লাভ টু ডু দ্যাট। ”
চিরকুট পড়ে লাজে রাঙা হয়ে গেল নূর। চিরকুট টা মুখের উপর চেপে ধরে লাজুক হাসলো।মনে পড়ে গেল তার গতরাতের কথা। লজ্জা আরও চারিদিক থেকে চেপে ধরলো তাকে। সেটা আরও বৃহৎ হলো যখন সে নিজের দিকে তাকালো।আজ নিজেকেই দেখে সে লজ্জায় মরে যাচ্ছে। সারা অঙ্গে আদিত্যর দেওয়া চিহ্ন জ্বলজ্বল করছে। শরীরে বস্তু বলতে শুধু এই চাদরটাই অবলম্বন। লজ্জা নামক বস্তু যেন শুধু আজ ওকেই বলির পাঠা করে নিয়েছে। নূরের জীবনেও এমন একটা দিন আসবে যখন সে এভাবে শরমের ম,র,ণে মরবে তা কখনো ভাবেনি সে। এই লজ্জা থেকে বাঁচতে বস্ত্রহীন অঙ্গটাকে চাদরে পেঁচিয়ে দ্রুত সে উঠে একপ্রকার দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। শাওয়ার নিয়ে আদিত্যর টিশার্ট আর ট্রাউজার পড় বের হলো। এখানে নূরের বাড়তি কাপড়চোপড় নেই। তাই এই মুহুর্তে আদিত্যর কাপড়চোপড়ই পড়ে নিলো। যদিও নূরের এটাতেই বেশি ভালো লাগছে। কারণ এতে যে আদিত্যের ঘ্রাণ মিশে আছে। ট্রাউজার টা বেশি লম্বা হওয়ায় নিচের দিকে একটু ভাজ করে নিলো নূর। গোসল শেষে চুলগুলো একটু আঁচড়ে নিয়ে ধীরে ধীরে রুমের দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো। বুকের মাঝে ভীষণ ধুকপুক করছে। আদিত্যর সামনে কীভাবে যাবে? এখন যে তার সামনে যেতেও লজ্জা লাগছে নূরের। কিন্তু যেতে তো হবেই। কতক্ষণ আর তার থেকে পালিয়ে থাকবো। নূর গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের মনকেই মনোবল প্রদান করে মনে মনে বলল, কাম অন নূর, ইউ ক্যান ডু ইট। ইউ আর ব্রেভ গার্ল। গো ফর ইট। এসব বলে সে নিজেকে স্বাভাবিক করার আপ্রাণ চেষ্টা করলো। যা খুব একটা কাজে দিলো বলে মনে হলোনা। নিচে এসে যখন রান্নাঘরের দরজায় এসে পৌঁছাল তখন তার আবারও সব গুলিয়ে এলো। যখন আদিত্যকে সামনে রান্না করতে দেখলো। খালি গায়ে শুধু থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে উনি চুলোয় কি যেন নাড়ছেন। নূরের কন্ঠস্বর যেন আটকে এলো। আদিত্যর সামনে এগিয়ে যেতে চেয়েও পারছেনা। দরজায় দাঁড়িয়ে থেকেই হাত কচলাতে কচলাতে কোনরকমে গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের আগমনের জানান দিলো আদিত্যকে। আদিত্য ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে নূরের দিকে তাকালো। সদ্য গোসল করে আসা ভেজা চুলে তার বউয়ের স্নিগ্ধ রুপে আবারও মোহিত হলো আদিত্য। কর্মরত কাজটা স্থগিত রেখে নেশাময় চোখে তাকিয়ে এগিয়ে এলো সে নূরের দিকে। এতেই নূরের ধুকপুক আরও বেড়ে গেল। লজ্জায় মাথা নত করে এদিক ওদিক নজর ঘোরাতে লাগলো। আদিত্য বাঁকা হেঁসে নূরের একেবারে কাছে চলে এলো। নূরের দুই দুই পাশে দেয়ালে হাত রেখে নূরকে দুই হাতের মাঝে আটকে দিলো। মুখ এগিয়ে নাক গলিয়ে দিলো নূরের ভেজা চুলের গভীরে। চুলের মাঝে নাক ঘষে মনমাতানো ঘ্রাণে নিজেকে হারালো সে। নূরের মাঝে আবারও সেই ভয়াবহ কম্পন শুরু হলো। চোখ বুজে ভারী নিঃশ্বাস ছাড়তে লাগলো সে। একটু পরে আদিত্য চুলের মাঝ থেকে মুখটা তুলে নূরের লাজে রাঙা মুখের দিকে তাকালো।নূরের গালে আঙুলের উল্টো পাশ দিয়ে স্লাইড করে মাদকতা কন্ঠে বলল,
–সকাল সকাল এভাবে ঘায়েল করলে কীভাবে টিকবো? এতো মোহনীয় হতে কে বলেছিল তোমাকে? এখন এই অধমের কি হবে? নির্ঘাত বদ্ধ পাগল হয়ে যাবো আমি।
নূর লজ্জা মিশ্রিত হেঁসে আদিত্যর বুকে মুখ লুকিয়ে বলল,
–ধ্যাৎ!
আদিত্য মুচকি হেঁসে একটু ঝুঁকে নূরকে আবারও কোলে তুলে নিলো। নূরকে নিয়ে এসে রান্নাঘরের সিংকের উপর পা ঝুলিয়ে বসিয়ে দিলো। হঠাৎ নূরের নজর গেল আদিত্যর হাতের দিকে। হাতের সেই ব্যান্ডেজ টা খুলে ফেলেছে। তবে ক্ষতর চিহ্ন এখনো আছে। খুবই বাজে ভাবে ক্ষত হয়েছিল মনে হচ্ছে। নূর চিন্তিত মুখে বলল,
–সেদিন তো বললে না। আজ বলোতো তোমার হাতে এই ক্ষত কীভাবে হলো?
আদিত্য আমতাআমতা করে বলল,
–আরে কিছু না। ওই শুটিং করতে গিয়ে লেগে গিয়েছিল।
আদিত্যর কথা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য হলো না নূরের কাছে। আদিত্য নিশ্চয় কিছু লুকাচ্ছে। সেটা জানার জন্য নূর আদিত্যর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
–সত্যি করে বলো কী হয়েছে? প্লিজ? নাহলে আমি শান্তি পাবোনা। প্লিজ বলো?
আদিত্য স্মিথ হেঁসে বলল,
–তেমন কিছু না। হাতটা শুধু তার কর্মের শাস্তি পেয়েছে আর কিছুনা। যদিও এই শাস্তি তারজন্য অতি ক্ষুদ্র। আমার নূরের গায়ে হাত তোলার দায়ে,তাকে আঘাত করার মতো যে অসামান্য অপরাধ সে করেছে তারজন্য তো আরও কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত তার।
চমকে গেল নূর। ছলছল চোখে তাকালো সে আদিত্যর পানে৷ এতোটা কেউ কাউকে কীভাবে ভালোবাসতে পারে! এতোটা ভালোবাসা পাওয়ার কী যোগ্য আমি! আদিত্য নূরের চোখের কোন মুছে দিয়ে মুচকি হেঁসে বলল,
–এতো সুন্দর সকালটাকে কি এই মূল্যবান অশ্রু ঝড়িয়ে নষ্ট করবে? যা হয়ে গেছে, তা গেছে।পেছনের সব পেছনেই ছেড়ে দাও। আজ থেকে আমাদের নতুন জীবনের শুরু হবে। আর এই শুরুটা হবে তোমার হট এন্ড হ্যান্ডসাম হাসব্যান্ড, দ্য গ্রেট শেফ, সাদমান শাহরিয়ার আদিত্যর হাতের টেস্টি টেস্টি পাস্তা খেয়ে।
হাসিমুখে কথাটি বলতে বলতে আদিত্য কাটা চামচে দুই টুকরো পাস্তা গেঁথে তুলে নূরের মুখের সামনে ধরে বলল,
–খেয়ে দেখ কেমন হয়েছে।
নূর মুচকি হেঁসে আদিত্যর হাত থেকে চামচের পাস্তাটুকু মুখে নিলো। পাস্তা খেয়ে বলল,
–হুম,সত্যিই অনেক ভালো হয়েছে। ইটস রিয়েলী ইয়ামি।
আদিত্য নূরের দুই পাশে সিংকের উপর হাত রেখে নূরের মুখের সামনে ঝুঁকে বলল,
–সত্যি? দেখিতো কেমন হয়েছে?
বলেই ফট করে নূরের ঠোঁটে লেগে থাকা পাস্তার সসটুকু খেয়ে নিলো আদিত্য। খাওয়া শেষে দুষ্টু হাসির রেখা ঝুলিয়ে বলল,
–হুম,ইটস ইয়ামি। ইনফ্যাক্ট আগের থেকেও বেশি টেস্টি লাগছে। একটু আগেও এতটা মজা লাগছিল না।আর এখন দেখ, অমৃত লাগছে।
নূর আবারও সেই লজ্জায় বশীভূত হলো। অন্যদিকে মুখ লুকিয়ে লাজুক হাসলো সে। সিচুয়েশন থেকে বাঁচতে সে কথা ঘুরিয়ে আমতাআমতা করে বলল,
–বাসায় কখন ফিরবো আমরা?
–কেন, এখন কি জঙ্গলে আছি! এটাও তো বাসা।
–না মানে,ওই বাসায় ফিরতে হবে না? সবাই চিন্তা করবে তো।
–কেউ চিন্তা করবেনা। সবাই জানে তুমি আমার সাথে আছো। তাই রিল্যাক্স। এখানে ভালো লাগছে না তোমার? আমারতো ভীষণ ভালো লাগছে। ইনফ্যাক্ট এরচেয়ে ভালো জীবনে কখনো লাগেইনি। ভাবছি এখানেই থেকে যাবো আমরা। এখানে কেউ আমাদের ডিস্টার্ব করবেনা।
–আচ্ছা? তা কাম কাজ বাদ দিয়ে আমরা এখানে থেকে করবো টা কি শুনি?
–কেন? এইযে এভাবে তুমি আমার সামনে বসে থাকবে আর আমি তোমাকে দেখতে থাকবো। এরচেয়ে বেস্ট কিছু আছে নাকি?
নূর আবারও লাজুক হেঁসে বলল,
–আচ্ছা? কিন্তু এভাবে দেখতে দেখতে একসময় বোর হয়ে যাবে। তখন কী করবে?
আদিত্য দুষ্টু হাসির রেখাটা আরও বিস্তর করে বলল,
–ওয়েল,বোর হয়ে গেলে আমাদের কাছে করার জন্য আরও অনেক ইন্টারেস্টিং জিনিস আছে।
বলেই নূরের অধর পানে ঝুঁকতে লাগলো আদিত্য। আদিত্যর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে নূর দুষ্টুমি করে পাশের বেসিন থেকে হাতে পানি নিয়ে আদিত্যর মুখে ছিটিয়ে দিলো। হকচকিয়ে উঠলো আদিত্য। আদিত্য হাত সরিয়ে নিতেই সুযোগ বুঝে ফুড়ুৎ করে সিংক থেকে নেমে গেল নূর। দরজার কাছে এসে হেঁসে বলল,
–সে গুড়ে বালি।
বলেই আদিত্যকে জিব দেখালো নূর। আদিত্যও মিছে রাগ দেখিয়ে বলল,
–তবেরে, দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।
বলেই তেড়ে গেল নূরের দিকে। নূরও আদিত্যর থেকে বাঁচতে ছুটে পালালো। আদিত্য দৌড়ালো নূরের পেছনে। নূর খিলখিল করে হাসতে হাসতে ড্রয়িং রুম জুড়ে দৌড়াতে লাগলো। আদিত্যও নূরকে ধরার উদ্দেশ্যে হাসিমুখে তার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে। সোফার চারিদিকে গোলগোল ঘুরে দৌড়াচ্ছে দুজন। দৌড়াতে দৌড়াতে নূর সোফার কুশন বালিশ গুলো উঠিয়ে আদিত্যর দিকে একটা একটা করে ছুঁড়ে মারতে লাগলো। আদিত্য সুকৌশলে সেগুলো ক্যাচ করে নিচ্ছে। এভাবে ছুটতে ছুটতে একসময় আদিত্য ধরে ফেললো নূরকে। নূরের হাত ধরে টান দিয়ে সোফায় ফেলে দিলো। তারপর নিজেও নূরের উপর শুয়ে নূরের দুই হাত সোফার সাথে চেপে ধরে হাঁপাতে লাগলো দুজন। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেঁসে বলল,
–এবার কোথায় পালাবে শুনি?
লাজুক হাসলো নূর। আদিত্য তার অসম্পূর্ণ ক্রিয়া পূর্ণ করতে চাইলো। আবারও এগুলো সে নূরের অধর পানে। নূর এবার চোখ বুজে সমর্পণ করলো নিজেকে আদিত্যর কাছে। আদিত্যর ঠোঁট নূরের ঠোঁটে মিলিত হতেই নিবে ঠিক তখনই বাসার কলিং বেল বেজে উঠল। নূর ঝট করে চোখ খুলে তাকালো। দেখলো আদিত্য এখনো নিজের কাজেই মগ্ন আছে। অন্য কিছুর যেন হুঁশ নেই তার। নূর তার চৈতন্য ফেরাতে বলে উঠলো,
–কলিং বেল বাজছে তো। দরজায় কেউ এসেছে।
আদিত্য বিরক্তির সুরে বলল,
–আসুক যে খুশি সেই। বেল বাজিয়ে আবার চলে যাবে। তুমি ডিস্টার্ব করোনাতো আমাকে। আমাকে আমার কাজ করতে দাও।
আদিত্য আবারও তার ক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে চাইলো। কিন্তু কলিং বেল আবারও ক্রমাগত বাজতে শুরু করলো। নূর বলল,
–দেখো না কে এসেছে। জরুরি দরকারেও আসতে পারে কেউ।
আদিত্য চরম বিরক্ত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–কার এতো মওত আসলো এখন? ফার্মহাউসে এসেও শান্তি নেই। বান্দা একটু নিজের বউয়ের সাথে শান্তিমতো রোমাঞ্চও করতে পারবেনা!
আদিত্যর এমন বিরক্ত হওয়া দেখে মুখ টিপে হাসছে নূর। আদিত্য সেটা দেখে মিছে রাগ দেখিয়ে বলল,
–অনেক হাসি পাচ্ছে তাইনা! হাসো হাসো। আগে বাইরের টাকে দেখে নেই তারপর তোমাকে দেখছি।
বলতে বলতে উঠে এগিয়ে দরজার দিকে। দরজা খোলার আগে দরজার ছোট্ট দূরবীন দিয়ে বাইরে তাকালো। তাকাতেই যা দেখলো তাতে চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল আদিত্যর। চোখ দুটো ফুটবল আকার ধারণ করলো। আদিত্য দরজা না খুলেই আতঙ্কিত মুখ বানিয়ে ছুটে এলো নূরের কাছে। কিছুটা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
–এই ডাকাতের দল এখানে কি করে এলো?
নূর ধড়ফড়িয়ে উঠে ভীতিগ্রস্ত কন্ঠে বলল,
–ডা ডাকাত! এখানে! তাও দিনের বেলায়! ও মাই গড! এখন কি হবে? তুমি জলদি পুলিশকে ফোন করো। আমিও কোনো কিছু ভাবছি ততক্ষণে। বাইদাওয়ে এই বাসায় তেমন মূল্যবান কিছু নেইতো? আরে হ্যাঁ, তুমি কালইতো এতগুলো গহনা নিয়ে এসেছ। এরা মনে হয় সেটা জানতে পেরেই এসেছে। এরা এসব খোঁজ নিয়েই আসে। দেখ গহনা গেলে যাক। তবুও তুমি যেন এদের সাথে লড়তে যেওনা। এদের কাছে ধারালো হা,তি,য়া,র থাকে। তাই উত্তেজিত না হয়ে বুঝে শুনে কাজ করতে হবে।
আদিত্য বলে উঠলো,
–পুলিশ দিয়ে কোনো কাজ হবেনা।এরা গহনা নেওয়া ডাকাত না। এরা তাদের চেয়েও ভয়াবহ ডাকাত।এরা আমাদের একান্ততা, শান্তি, স্বামী স্ত্রীর স্পেশাল মুহুর্তটা কেঁড়ে নিতে এসেছে।
নূর ভ্যাবাচেকা খেয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
–মানে?
–মানে? এরা আর কেউ না, তোমার দেবর ননদের দস্যু বাহিনী।আবির,আহানা,আদ্র, অমালিয়া, জিদান, শিখা সবগুলো দল বেঁধে এসেছে আমাদের রোমাঞ্চের বারোটা বাজাতে। কিন্তু এরা জানল কি করে? এক মিনিট! তুমি এদের ডাকোনি তো?
–আরে না, আমি কেন ডাকতে যাবো ওদের? আচ্ছা এসব ছাড়ো। ওরা এসেছে তাহলে দরজা খুলে ভেতরে আসতে দাও ওদের।
–একদমই না। পাগল হয়ে গেছ তুমি! এদের ঢুকতে দিলে আমাদের সুন্দর সময়টাকে তছনছ করে দিবে একদম। দরজা খোলা যাবেনা কিছুতেই। কিছুক্ষণ নক করে হার মেনে চলে যাবে আবার।
–কি বলছ এসব! বাচ্চাদের মতো কথা না বলে দরজা খুলে দাও গিয়ে।
ওদের কথার মাঝেই কলিং বেল ক্রমাগত বেজেই যাচ্ছে। যেন কলিং বেলের উপর গ্রে,নে,ড হামলা শুরু করেছে। সেটাতেও যখন কাজ হচ্ছে না তখন সবগুলো হাত দিয়েই দরজা চাপড়াতে লাগলো। যেন আজ ভেঙেই ফেলবে দরজা৷ অবস্থা বেগতিক দেখে নূর বলল,
–দরজা খুলে দাওনা। দেখ ওরা যেভাবে ধাক্কাচ্ছে তাতে দরজা না খুললে নিশ্চিত ভেঙে ফেলবে ওরা। যাওনা প্লিজ।
আদিত্যও আর না পেরে অগত্যা চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
–ধূরর! ভাল্লাগে না।
আদিত্য দরজা খুলতে যেতে নিলেই নূর আদিত্যর হাত ধরে আঁটকে দিয়ে বলল,
–আরে দাঁড়াও, আমি এই পোশাকে ওদের সামনে কীভাবে থাকবো?
–ঠিক আছে, তুমি বরং আপাতত কালকে যে পোশাকে তুমি এসেছিলে সেটাই পড়ে নাও। পরে নাহয় আমি অন্য ব্যবস্থা করছি। যাও গিয়ে চেঞ্জ করো। আমি দরজা খুলছি।
নূর আদিত্যর কথা মেনে উপরে চলে গেল চেঞ্জ করতে। আদিত্য পোড়া মনে গেল দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে সবগুলো ভেতরে ঢুকলো। যেন এখুনি ভেতরে না ঢুকলে ওদের উপর বাজ পড়বে। ভেতরে ঢুকেই আহানা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,
–কি হলো ভাইয়া দরজা খুলতে এতো দেরি করলে যে? সব ঠিক আছে তো?
আদিত্য চোয়াল চিবিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
–তোদের আসার আগে সব ঠিকই ছিলো। এখনতো আল্লাই ভরসা।
আদিত্যর সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখা জিদান, আদিত্যর চিন্তায় চিন্তনলাল হয়ে বলল,
–স্যার, আপনি ঠিক আছেন তো? গ্যাস্টিকের সমস্যা হলে আমার কাছে সেকলো আছে, দিবো?
আদিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–তুমি কি পার্ট টাইম, সেকলো কোম্পানির সেলসম্যান এর কাজ করো? সবসময় তোমার এই সেকলোর গান না গেলে হয়না?
চুপ হয়ে গেল জিদান। ভালো মানুষের আজকাল কদরই নেই। আদিত্য বলল,
–বাইদাওয়ে তোরা সবগুলো হঠাৎ এখানে টপকালি কেন?
এবারে গ্রেট আবির তার মেলোড্রামা শুরু করে দিলো। আবেগপ্রবণ হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
–আরে ইয়ার তোকে না অনেক মিস করছিলাম আমরা। একটামাত্র কলিজা, ফোঁপরা, কিডনি, লিভার ওয়ালা দোস্ত আমার। তোকে বেশিক্ষণ না দেখলে আমার হার্টবিট কেমন বন্ধ হয়ে যায়।
আদিত্য চোখ দুটো কুঁচকে তাকিয়ে রইলো আবিরের দিকে। এসব যে এই হারামিটারই প্ল্যান তা ভালোই বুঝতে পারছে ও। সবগুলো ভেতরে ঢুকে পুরো বাসা দখল করে নিলো। ততক্ষণে নূরও চেঞ্জ করে এলো। আহানা আর শিখা ওকে দেখে কেমন দুষ্টু দুষ্টু হাসছে। সবার সামনে কেমন ইতস্তত লাগছে নূরের। নিচে এসে তবুও সবার সামনে একটু স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো সে। হঠাৎ আবির রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে উচ্চস্বরে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
–আরে গাইস, এখানে তো পাস্তা দেখছি। খেতে চাইলে চলে আসো সবাই। বলেই পাস্তাসহ পুরো প্যানটাই উঠিয়ে বাইরে নিয়ে এলো আবির। আর সাথে সাথেই প্রায় সবগুলো হামলে পড়লো পাস্তার ওপর। বেচারা আদিত্য শোকাহত হয়ে শুধু দেখতে লাগলো। তার নূরের জন্য এতো যত্ন করে বানানো পাস্তা,এই রাক্ষস গুলো কেমন করে গিলছে। হজম হবে না তোদের দেখে নিস।
সবটুকু পাস্তা খেয়ে সবগুলো ঢেকুর তুলে আরাম করে বসলো। আদিত্য আবিরের পাশে গিয়ে বসে চোয়াল চিবিয়ে আস্তে আস্তে বলল,
–সত্যি করে বল, এসব তোরই কারসাজি তাইনা?
আবির মেকি হেসে বলল,
–আমাদের বন্ধুত্বের কসম,এই মহান কাজ আমিই করেছি। দেখ, বন্ধুদের শান্তি হারাম করা আর তাদের রোমাঞ্চে ব্যাঘাত ঘটানো একজন ভালো বন্ধুর পরম গুরুদায়িত্ব। এটা বন্ধুজাতের জন্মগত অধিকার। আর তুইতো জানিসই আমি কতো দায়িত্ববান ব্যাক্তি। নিজের দায়িত্ব থেকে একদম পিছুপা হইনা। জানিস সকালে আমার ভীষণ বদহজম হচ্ছিল। বাথরুম ঠেকে গিয়েছিল। পরে বুঝলাম যে তোর প্রতি নিশ্চয় আমি কোনো দায়িত্ব পালনে ঘাটতি করেছি। তাই দেখ চলে এলাম আমি আমার দায়ীত্ব পালন করতে। আমার মতো বন্ধু পেয়ে নিশ্চয় তুই নিজেকে ধন্য মনে করছিস তাইনা? দেখ আবার ইমোশনাল হয়ে কেঁদে টেদে ফেলিস না।
আদিত্য দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
–তাই না? দাঁড়া তোর দায়িত্বগিড়ি এখুনি ছুটাচ্ছি আমি। আজ আমিও আমার বন্ধুত্বের দায়িত্ব একেবারে সঠিক ভাবে পালন করবো।
অবস্থা বেগতিক দেখে আবির উঠে দিলো এক দৌড়। আদিত্যও ওর পেছনে ছুটতে ছুটতে বলল,
–এই দাঁড়া হা,রা,মি কোথায় যাচ্ছিস? তোর বন্ধুত্বের মেডেল নিয়ে যাবি না?
ওদের কান্ড দেখে সবাই হাসতে লাগলো।
চলবে……
চলবে……