#শৈবলিনী—–৩
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★(গত পর্বের ঘটনার কিছুসময় পূর্বে)
ক্যাম্পাসের মাঠের একপাশে বটবৃক্ষের নিচে বসে গল্প করছিল গিয়াস আর শিখা। তখনই ওখানে ওদের মাঝে এসে ধপ করে বসে পড়লো নূর। বসেই জোরে জোরে দম নিলো সে। ঘেমে কপাল ভিজে গেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে নূর অনেক তাড়াহুড়োর মাঝে দৌড়ে এখানে এসেছে। শিখা ব্যাগ থেকে পানির বোতল টা বের করে নূরের দিয়ে এগিয়ে দিলো। নূর সেটা হাতে ঢকঢক করে কয়েক ঢোক গিলে নিয়ে একটু আরাম পেল। গিয়াস মজার ছলে বলল,
–কিরে দোস্ত, কুকুরের তাড়া করছিলো নাকি? এমনে দৌড়ায়ছোস ক্যা? আমিও কারে কী বলি! কুকুরের কী সাহস আছে তোকে ধাওয়া করার। বরং তোকে দেখলে ওরা নিজেরাই লেজ গুটিয়ে চৌদ্দ গুষ্ঠি সমেত উগান্ডা যাত্রা করবে। তাইলে কী বিয়ে বাড়ি থেকে “বর” ছিনতাই করে পালিয়েছিস? ঘটনা কী মামা?
নূর পানি খেয়ে চোখ বুজে লম্বা লম্বা শ্বাস নিজেকে স্থির করছিল। গ্যারেজের কাজ কোনরকমে শেষ করে কতো তাড়াহুড়ো করে এসেছে তা ওই জানে। বাইকটাও আবার নষ্ট হয়ে গেছে। সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক, কতই আর চলবে। তাই বাসে করে আসতে হয়েছে নূরকে। বাস থেকে নেমে দৌড়ে দৌড়ে এসেছে এখানে ও। আজ একটা ইম্পর্ট্যান্ট এসাইনমেন্ট সাবমিট করতে হবে তাই এসেছে। নাহলে রোজ আসেনা ও। মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ছে নূর। এটাই ফাইনাল ইয়ার। সামনে কিছুদিন পরেই ওর ফাইনাল এক্সাম। তাই এখন প্রায় রোজই আসতে হয়। যেদিন আসতে পারে না। সেদিন গিয়াস আর শিখা ওকে সবকিছুর নোট দিয়ে দেয়। গ্যারেজের কাজ সামলিয়ে পড়ালেখা করা কতটা মুশকিল হয়ে যায় তা কেবল ওই জানে। তবে এই দুজন না থাকলে ওর এই মুশকিলটা হয়তো অসম্ভবই হয়ে যেত। ওর এই দুই বন্ধু পড়ালেখার বিষয়ে ওকে যথাসাধ্য সাহায্য করে। এখনও গিয়াস ওকে প্রফুল্ল করার উদ্দেশ্যেই এসব কথা বলছে। নূর চোখ খুলে গিয়াসের মাথায় আলতো চাটি মেরে বলল,
–ওই গ্যাসের বাচ্চা, মুখের ঢাকনা খুলে কী শুধু দুর্গন্ধই বের করিস? আবাল মার্কা কথা না বলে, মাঝে মধ্যে তো একটু বুদ্ধিমানদের মতোও কিছু কথা বলতে পারিস। নাকি ভালো কথা বলতে ডক্টর মানা করেছে?
নূরের কথায় শিখা হাসতে লাগলো। গিয়াস মুখ ভোতা করে বলল,
–ইয়ার,তোর পায়ে পড়ি। প্লিজ এই গ্যাস বলা বন্ধ কর। সবাই শুনলে ইজ্জতের মুড়ি ঘন্টো হয়ে যাবে। মেয়েদের মাঝে আমার ইম্প্রেশন থাকবে না।
শিখা বলে উঠলো।
–তোর আবার ইম্প্রেশন? এখনো পর্যন্ত শরীরের ডিহাইড্রেশন ঠিক করতে পারলিনা, আবার ইম্প্রেশন! আমার লাফটারসেশন বাড়াইস না আর।
গিয়াস শিখার দিকে আঙুল তুলে বলল,
–দেখ শিখাইয়া, ভালো হবে না কিন্তু।
–এটা আবার নতুন করে দেখার কী আছে? তোর দ্বারা ভালো কিছু হবে না এইটা তো অল বাংলাদেশ জানে।
ওদের বিতর্কের মাঝে নূর বলে উঠলো।
–আচ্ছা হইছে অফ যা এখন। তোরা একজন আরেকজনের সাথে বেশি লাগিস না।জানিস না গ্যাসের সাথে শিখা লাগলে আগুন জ্বলে উঠে।
শিখা আবারও অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। গিয়াস বেচারা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–নূর…..
–আচ্ছা শোন, আজ ক্যাম্পাসে এতো ভীড় কেন? ফ্রী সয়াবিন তেল বিতরণ করছে নাকি কেউ?
শিখা বলল,
–আরে তুই জানিস না! আজ সুপারস্টার আদিত্য আসবে এখানে। কোন বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ের জন্য।
আদিত্যের কথা বলতেই কালকের আদিত্যের সাথে দেখা করার বিষয় টা মনে পরে গেল ওর। কিছুটা বিরক্তির সুরে বলল,
–তো? আমি ভেবে পাইনা একটা মানুষকে দেখার এতো কী আছে? সেকি মঙ্গলগ্রহ থেকে আসা কোনো এলিয়েন নাকি? সেও তো আমাদের মতোই সাধারণ একটা মানুষ। নাকি তার দুটো হাত, দুটো পা বেশি আছে? তাহলে তাকে এতো দেখার কী আছে? সেলিব্রিটি দেখলেই মানুষ এমন হুমড়ী খেয়ে পড়ে মনে হয় সে কোনো অমরত্বের খোঁজ জানে। যে অমরত্ব খেয়ে সবাই অমর হয়ে যাবে। তাছাড়া আর কী আছে দেখার?
–সেটা তোমার মতো মিডিল ক্লাস, ছেলেদের মতো মেয়ে হয়ে,কীভাবে বুঝবে!
পাশ থেকে মেয়েলী কন্ঠে তাচ্ছিল্যের সুরে কথাটা বলল,নূরের ক্লাসমেট অবনী। ধনীর দুলালি মেয়েটা প্রায়ই নূরকে এমন খোঁচা মারা কথা বলে। অবনীর কথায় সবাই পাশে ফিরে তাকালো। অবনী তার দুইটা লেজ নামক বান্ধবীদের নিয়ে নূরের সামনে এসে বলল,
–তোমার মতো মেয়ে, যার নাইন্টি পার্সেন্টই ছেলে সে কখনো এসব বুঝবেনা। আদিত্যর মতো হট এন্ড হ্যান্ডসাম সেলিব্রেটির জন্য কেন সব মেয়ে পাগল তা বোঝার জন্য আগে পরপূর্ণ মেয়ে হতে হবে। যা আমার মনে হয়না তোমার দ্বারা সম্ভম। লুক এ্যাট ইউ। কোনদিক দিক থেকে কেউ বলবে তুমি একটা মেয়ে? মেয়ে হয়ে গ্যারেজে কাজ করো। না ঢকের কাপড়, না চালচলন। দেখে মনে হচ্ছে এইমাত্র নর্দমা থেকে উঠে এসেছ। আমার তো সন্দেহ হয় কখন না জানি শোনা যায় শিখার সাথে তোমার সমকামীর সম্পর্ক হয়ে গেছে। তাহলে তুমি কী করে এসব বুঝবে?
অবনীর কথায় নূর স্মিথ হেঁসে বলল,
–ধন্যবাদ অবনী,এতো সুন্দর করে আমাকে ব্যাপার টা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। তুমি এতো জিনিয়াস, তা জানাই ছিলোনা আমার। আমিতো ভেবেই অবাক হচ্ছি এক্সামে এভারেজে টু পয়েন্ট পাওয়া মেয়েটা এতো জিনিয়াস কীভাবে হলো? নাকি এখানেও তোমার ট্রাস্টি বাবার অবদান আছে?
নূরের মিষ্টি সুরে বাঁশ দেওয়ার ভঙ্গি দেখে শিখা আর গিয়াস ফিক করে হেসে দিলো। অবনী রাগে কড়মড় করে মাটিতে পা দিয়ে ধাপ্পা দিয়ে চলে গেল। গিয়াস বলে উঠলো।
–নূর,তুই মেয়েটাকে এভাবে ছেড়ে দিলি কেন? রোজ এসে কিছু না কিছু বলে যায় তোকে। এমনিতে তো খুব দাবাং সেজে থাকিস।
–ছাড় না, বেচারি মেন্টালি ডিসব্যালেন্স। ওর মতো পাগলের সাথে কী লড়াই করবো। দোষ টা ওর না। দোষ ওর পারিপার্শ্বিকতার। আমরা জীবনে যা অভিজ্ঞতা করি সেই হিসেবেই নিজেদের গড়ে তুলি। এই ক্ষেত্রে বলতে গেলে আমি অনেক লাকি। হ্যাঁ, তোরা হয়তো ভাবিস আমার ভাগ্য কতো খারাপ। আমাকে এতো মুশকিলের সম্মুখীন হতে হয়।এতো কষ্ট আমার জীবনে। তবে সত্যি কথা বলতে আমার মোটেও তা মনে হয়না। বাবা সবসময় বলতো, “মানুষের জীবনে যতো মুশকিল আসবে মানুষ ততো অভিজ্ঞ হবে। মুশকিল কে নিজের জীবনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের ওপর সবসময় বিপদ দিয়ে তাদের পরিক্ষা নেয়। তাই বিপদ দেখে কখনো নিজেকে অভাগী ভাবতে নেই।” আমি বাবার কথাগুলো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। আমি নিজেও উপলব্ধি করেছি। এই মুশকিল গুলোই আমাকে আরও স্ট্রং করে তুলেছে। হ্যাঁ তবে একটাই শুধু কষ্ট। বাবা আমার পাশে নেই। এই কষ্ট তো কোনো ক্রমে ঘুচাবার নয়।
শিখা পাশ থেকে নূরকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
–মন খারাপ করিস না। আঙ্কেল তোর কাছেই আছে। সে নিশ্চয় তোকে দেখে অনেক প্রাউড ফিল করছে।
গিয়াস বলে উঠলো।
–কীরে এহন কী সেন্টিই খাবি বসে বসে?
–আরে হ্যাঁ চল ক্লাসে যাই।
___
ক্লাস শেষে শিখা খুব জেদ ধরলো একটু আদিত্যের এডশুটের ওখানে যেতে। নূর মানা করলেও শুনলো না। একপ্রকার টেনেই নিয়ে গেল ওখানে।গিয়াস লাইব্রেরীতে গেছে। তাই শিখা নূরকেই নিয়ে এলো। আসতে আসতে হঠাৎ নূরের মনে হলো ওর অন্তর্বাসের হুকটা খুলে গেছে। অস্বস্তিতে পড়ে গেল নূর। এভাবে হাঁটতে গেলে দেখতে খারাপ লাগবে। আর অন্তর্বাসের ফিতা হাতার ভেতর দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসবে। খুব লজ্জাজনক হবে বিষয় টা। ওয়াশরুম তো অনেক দূরে। এখন কোথায় ঠিক করবে এটা? তখনই পাশের রুমে নজর পড়লো। বুঝতে পারলো এটা হয়তো শুটিংয়ের মেকআপ রুম। রুমের দরজাটা হালকা খুলে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখলো ভেতরে কোনো লোকজন নেই। নূর ভাবলো এই রুমে গিয়েই ফট জিনিসটা ঠিক করে ফেলবে। শিখাকে সবটা বুঝিয়ে দিয়ে বলল,
–শোন আমি ভেতরে গিয়ে ঠিক করছি। তুই ততক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে দেখ কেউ জেন না আসে।
–ঠিক আছে।
নূর ভেতরে ঢুকে গেল। শিখা বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। হঠাৎ হৈচৈ শুনতে পেল আদিত্য এসেছে, আদিত্য এসেছে। আদিত্য এসেছে শুনে শিখা নূরের কথা ভুলে দৌড়ে সেদিকে চলে গেল। নূর ভেতরে এসে মেকআপ রুমের বিশাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গায়ের কুর্তিটা মাথার ওপর দিয়ে খুলে ফেললো। তারপর দুই হাত পিঠে নিয়ে অন্তর্বাসের হুক লাগালো। লাগানো শেষে কুর্তাটা আবার পড়তে নিলো। কুর্তি মাথার নিচ পর্যন্ত নামাতেই চোখ আয়নায় গেল। ঠিক তখনই আদিত্য দরজা খুলে ভেতরে তাকিয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে দুজন দুজনকে দেখেই হতভম্ব হয়ে যায়। পরপরই নূর গগনবিদারী এক চিৎকার দিয়ে ওঠে। আদিত্য থতমত খেয়ে যায়। দ্রুত দরজা বন্ধ করে উল্টো ঘুরে দাঁড়ায় সে। হৃদপিণ্ড প্রবল বেগে ধাক্কাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কী করা উচিত বুঝতে পারছে না সে। এই প্রথম যেন উপস্থিত বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে ওর। নূরের সাথে দ্বিতীয় সাক্ষাৎ যে এভাবে হবে তা কল্পনাও করেনি ও। হ্যাঁ সিনামার শুটিংয়ের সুবাদে অনেক হিরোইনরাই খোলামেলা পোশাক পরে আসে ওর সামনে। এবং তাদের সাথে রোমাঞ্চও করতে হয়। তবে সেটা নিতান্তই ওর পেশাগত কাজ। সেগুলো সে শুধু ক্যামেরার সামনে করে। তবে এখনকার অবস্থাটা ভিন্ন। এখানে অজান্তেই একটা অপ্রীতিকর ব্যাপার হয়ে গেছে। তাও আবার নূরের সাথে। আদিত্য নারীদের যথেষ্ট সম্মান করে। সে আগে জানলে কখনো এভাবে রুমে ঢুকতো না। নাজানি মেয়েটা কী ভাববে ওকে নিয়ে।
ভেতর থেকে দরজায় জোরে জোরে টোকা দিচ্ছে নূর। আদিত্য সামনে তাকিয়ে দেখলো শুটিংয়ের কিছু স্টাফ এদিকে এগিয়ে আসছে। নূরকে কেউ এখান থেকে বের হতে দেখলে এটা নিয়ে লোক মসলা মিশিয়ে মজাদার নিউজ বানিয়ে দিবে। কিছু একটা করতে হবে। আদিত্য দরজা খুলে ফট করে ভেতরে ঢুকে দ্রুত দরজা বন্ধ করে দিলো। নূর এমনিতেই আদিত্যর কাজে ক্ষিপ্ত ছিলো। তারওপর এভাবে দরজা বন্ধ করাতে বিষয়টাকে খারাপ ভাবে নিলো সে। নূর কিছু বলতে যাবে তখনই বাইরে থেকে স্টাফরা আদিত্যকে ডাকতে লাগলো। তাদের ডাক শুনে নূর তাদের সাথে কথা বলতে চাইলো। তবে তার আগেই আদিত্য নূরের মুখ চেপে ধরলো। বাইরের স্টাফকে বলল,
–তোমরা যাও আমি একটু পরে আসছি।
স্টাফ গুলো ঠিক আছে বলে চলে গেল। নূর এবার আরও ক্ষেপে গেল। এক ঝটকায় আদিত্যর হাত সরিয়ে দিয়ে, আদিত্যের সামনে আঙুল তুলে রাগী স্বরে বলে উঠলো।
–এইযে মিঃ সো কল্ড নায়ক, এসব কী অসভ্যতামো? দরজা কেন বন্ধ করলেন? কী করতে চাইছেন আপনি? নায়করা যে একনাম্বারের লুচ্চা হয় আজকে আপনার আচরণে আমার সেই ধারণাকে আরও একধাপ পাকাপোক্ত করে দিলো। তবে শুনে রাখুন মিঃ নায়ক, আমার সাথে এসব লুচ্চামি করতে এলে এর ফল হবে ভয়াবহ। আমাকে ওইসব মেয়েদের মতো ভাববেন না, যারা আপনার এসব লুচ্চামিতে খুশি হয়ে নিজেদের ধন্য মনে করে। আমি লুচ্চাদের কীভাবে শায়েস্তা করতে হয় তা ভালো ক……
নূরের বাণী পরিপূর্ণ হলো না। আদিত্য হঠাৎ নূরের আঙুল দেখানো হাতটা খপ করে ধরে টান দিয়ে পাশের দেয়ালে আঁটকে দিলো। আদিত্যর দুই হাত নূরের দুই পাশে দেয়ালে অবস্থান করছে। আচমকা এমন কাজে নূর কিছুটা থতমত খেয়ে গেল। আদিত্যর দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবারও কঠিন কিছু বলতে যাবে তখনই বাঁধা দিলো আদিত্য। মাথাটা হালকা ঝুকিয়ে বলল,
–হুঁশশ, একদম চুপ। কথায় কথায় ঝাঁসির রানির মতো তলোয়ার বের করার কোনো দরকার নেই। সাদমান শাহরিয়ার আদিত্যর এমন চিপ লুচ্চামি করার কোনো প্রয়োজন পরে না। আমি যদি কোনো মেয়ের দিকে একবার ফিরে তাকাই তাতেই সে নিজেকে ধন্য মনে করে। তাহলে আমি র্র্যানডম ছেলেদের মতো এসব লো ক্লাস ট্রিকস কেন করতে যাবো? তখন যেটা হয়েছে সেটা নিতান্তই কোইন্সিডেন্ট। ইচ্ছাকৃত কিছুই হয়নি। আর হ্যাঁ, আমাকে যে এতো কথা শুনাচ্ছেন, তা এমন একটা কাজ করার সময় যে রুমের দরজা ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে নিতে হয় এই সামান্য জ্ঞান কী মাথায় আসেনি?
–এই দরজায় আলাদা ছিটকিনি লাগানো নেই। শুধু ডোর লক আছে। আমি আমার বান্ধবী শিখাকে বাইরে থাকতে বলেছিলাম।
–তা কোথায় আপনার বান্ধবী? কোনো শিখা টিখা তো দূরের কথা, শিখার ধুঁয়াও এই ত্রি সীমানায় নেই।
নূর এবার হালকা দমে গেল। রাগের মোড় ঘুরে এবার শিখার ওপর ট্রান্সফার হলো। ওঁকে বাইরে থাকতে বলেছি তারপরও কোন গঙ্গায় ডুবে মরতে গেছে স,য়,তা,নী টা? একবার পেলে হয়, নর্দমায় নিয়া চুবাবো শালীরে। আদিত্য আবার বলে উঠলো।
–আর হ্যাঁ, দরজা বন্ধ করেছি কারণ আপনাকে কেউ আমার সাথে দেখলে নানান কাহিনি রটিয়ে ফেলবে। তাই তখন চুপ করতে বলছিলাম।
নূর এবার একটু কনভিন্স হলো বোধহয়। তবে আদিত্য ওর এতো কাছে থাকায় প্রচুর অস্বস্তি হচ্ছে ওর। নূর অন্যদিকে মুখ করে বলে উঠলো। –বুঝতে পেরেছি, এবার ছাড়ুন আমাকে। দূরে সরে দাঁড়ান।
আদিত্য সরে এলো। দুই কদম সরে দাঁড়িয়ে বলল,
–বাইদা ওয়ে, আপনি এখানে কী করছেন? এটাতো আমার মেকআপ রুম। তো এটাকে নিজের বেডরুম বানিয়ে নেওয়ার কারণ টা জানতে পারি কী?
নূর আরও অস্বস্তিতে পরে গেল। নজর ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,
–আমি এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট। আমার পোশাকে একটু সমস্যা হয়েছিল সেটাই ঠিক করতে এখানে ঢুকেছিলাম।
–কিন্তু সেদিন তো বললেন আপনি গ্যারেজে…..
–হ্যাঁ তো? কোনো সংবিধানে লেখা আছে যে, যে ব্যাক্তি গ্যারেজে কাজ করে সে পড়াশোনা করতে পারে না?
–আমি কিন্তু সেটা বলিনি। আসলে…
আদিত্যর কথার মাঝেই নূর এক হাত উঠিয়ে বলল,
–থাক আর বিশ্লেষণের দরকার নেই। জানি বাকিদের মতো আপনার চিন্তাধারাও একই। তবে কে কী বলল তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি কাউকে কিছু প্রমাণ করতে বসে নেই এখানে।
কথা শেষ করে চলে যেতে উদ্যত হলো নূর। দরজার কাছে আসতেই আদিত্য ডাক দিলো।
–নূর।
থেমে গেল নূর। তবে পেছনে ঘুরে তাকালো না। আদিত্য বলে উঠলো।
–মিস নূর,আমার চিন্তাধারা কেমন তাতো জানি না। তবে নায়কদের প্রতি আপনার চিন্তাধারাটা কিন্তু পুরোপুরি সঠিক নয়। এটা সংশোধনের প্রয়োজন আছে। আপনি চাইলে আপনার এই ধারণা বদলাতে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করতে পারি। দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এটুকু তো করতেই পারি।
নূর পেছনে না তাকিয়েই বলল,
–নো নিড মিঃ নায়ক। আপনি আপনার সচেতনতার প্রচার বরং অন্য কোথাও গিয়ে দেখান।
বেড়িয়ে গেল নূর। প্যান্টের পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে আনমনেই হাসলো আদিত্য। এই হাসির উদ্দেশ্য সে জানে না। তবে ভালো লাগছে তার । কেন ভালো লাগছে তাও জানে না। অভ্যন্তরে কোন কিছুর পরিবর্তন ঘটছে। যেন ধীরে ধীরে গলছে কিছু। গ্যারেজে নূরকে না পেয়ে যে বিষন্নতা কাজ করছিল ওর মাঝে তা যেন এখন শুভ্র তুলোর মতো হাওয়ায় উড়ে গেছে। আদিত্য পেছনে ঘুরে সামনের বিশাল আয়নার ভিতরে তাকালো। আয়নায় তাকাতেই তখনকার নূরের সেই দৃশ্য মনে পড়ে গেল। চোখ বুজে নিলো। চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠলো নূরের ফর্সা পিঠের মাঝ বরাবর নজর টিকার মতো কালো তিলটা। ওইটুকু সময়ের মাঝেও আদিত্যের নজরে আঁটকে গিয়েছিল তিলটায়। ঠিক যেন আকাশে জ্বলতে থাকা টিমটিম তারা। ঝটকা মেরে চোখ খুলল আদিত্য। হঠাৎই তার প্রচন্ড গরম অনুভব হচ্ছে। গলা শুঁকিয়ে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে যেন। পাশে থাকা মিনারেল ওয়াটারের বোতলটা তুলে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো আদিত্য। কী হচ্ছে ওর সাথে? এ কোন মায়াজাল? এমনতো নয় কোনো মেয়েকে সে এভাবে প্রথম দেখেছে। তার কতো হিরোইনকেই তো সে এভাবে দেখেছে। বরং এরথেকেও অনেক বেশি কাছ থেকে দেখেছে। কই কোনদিন তো সেসব এভাবে অস্থির করেনি ওকে। অস্থির তো দূরের কথা, শুটিংয়ের পর কখনো তাদের খেয়ালও আমার ভাবনায় আসেনি। তাহলে কেন নূরের খেয়াল ওকে এতটা অস্থির করছে?
চলবে……..