#শৈবলিনী—২২
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★আদত্য তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে হন্তদন্ত হয়ে বাইরে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য নিচে এলো। আদিত্যকে এভাবে বেড়িয়ে যেতে দেখে ডাইনিং টেবিল থেকে ডাকলেন রেহনুমা। সকালের খবরের কাগজে আদিত্যর নিউজটা বাসার সবাইসহ তিনিও দেখেছেন। এমনিতে রেহনুমা এসব বিষয়ে তেমন চিন্তিত হন না।ছেলের উপর তার আস্থা আছে। তিনি জানেন সেলিব্রিটিদের নিয়ে এসব নিউজ আজকাল ট্রেন্ড হয়ে গেছে। কিন্তু আজ তিনি বিচলিত। বিচলিত হওয়ার হেতু হলো ছবির ওই মেয়েটা। রেহনুমার বিচক্ষণ নজর মেয়েটাকে চিনতে সময় নেয়নি। তিনি ঠিক চিনে ফেলেছেন এটা সেই মলের মেয়েটাই। আর এমন উশৃংখল, বখাটে টাইপের মেয়ের সাথে আদিত্যর কী সংযোগ হতে পারে এটাই চিন্তার বিষয়। আর এটাই জানতে হবে আদিত্যের কাছ থেকে। তবে শান্ত ভাবে। আগেই রাগারাগি করা যাবে না ছেলের সাথে। তাই স্বাভাবিক সুরেই আদিত্যকে ডেকে বললেন।
–আদি, নাস্তা না করে এভাবে বের হচ্ছো কেন?

–আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছেনা মা। আমি বাইরে কিছু খেয়ে নিবো। দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার।

–পাঁচ মিনিটে কিছু হবেনা আদি। বসো তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।

আদিত্য এবার থেমে গিয়ে টেবিলের সবার দিকে তাকালো। সবাই থমথমে মুখে বসে আছে। প্রশ্নবোধক চাহনি সবার। মায়ের জরুরি কথার বিষয়বস্তু কী তাও ভালোই বুঝতে পারছে আদিত্য। আদিত্য ডাইনিং টেবিলের সামনে এগিয়ে গেল।সে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে কোনোরকম ভনিতা ছাড়াই বলে উঠলো,
–মা, আমি জানি কী জরুরি কথা বলতে চাইছ তুমি। আর কী জানতে চাইছ। তো মা, বাবা, আন্নি,আদ্র এবং বাকি সবাই একবারে শুনে নাও।ভেবেছিলাম ঠিক সময় হলে বলবো। কিন্তু যেহেতু এমন একটা সিচুয়েশন চলে এসেছে। তাই আর না বলে পারছিনা। সবকিছু ডিটেইলস এ বলার সময় নেই। শুধু বলব, ছবিতে যে মেয়েটা আছে ওর নাম, নূর। আর এই মেয়েটা তোমাদের আদিত্যর ভালোবাসা। আদিত্যর লাইফলাইন। আশা করি তোমাদের জবাব পেয়ে গেছ। নাউ আই হ্যাভ টু লিভ,বাই।

বলেই বেড়িয়ে গেল আদিত্য। তার পিছু পিছু দৌড়াল জীদান। ডাইনিং টেবিলে সবাই হতবাক হয়ে বসে রইলো। কোনোরকম আগাম সতর্ক ছাড়াই আদিত্য যে বিস্ফোরণ করে গেল। তা সামাল দিতে কিছু সময়তো লাগবেই বেচারাদের। রেহনুমা অতি বুদ্ধিমতি মহিলা। উনি হাইপার হলেন না। বিষয় টা বিচক্ষণতার সাথে হ্যান্ডেল করতে হবে। বুঝে শুনে পদক্ষেপ নিতে হবে। নাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ছেলেকে কিছুতেই হাতছাড়া হতে দিবেন না উনি।

বাইরে গাড়ির দিকে এগুতে নিলেই ফোন বেজে উঠল আদিত্যর। চেয়ে দেখলো আবিরের ফোন। রিসিভ করে কানে ধরতেই আবির বলে উঠল,
–কীরে মিয়া তুইতো দেখি ঘরে ঘরে সকালের চায়ের বিস্কুট হয়ে গেছিস। তলে তলে টেম্পু চালাও মিঞা। কিন্তু টেম্পু কেউ এভাবে খোলামেলা জায়গায় চালায়? আরে এসব কাজ কেউ পাবলিক প্লেসে করে? আরে এসব করবি হোটেলে গিয়ে কর। তোর কী টাকার কমতি আছে? এতো কিপ্টা কেরে তুই?টাকা নিয়া ক,ব,রে যাবি? টাকা বাঁচাইতে জঙ্গলে মঙ্গল করতে যাওয়ার কী দরকার? ধরা খাইয়ে গেলিতো এখন।

আদিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–শাট আপ ইডিয়ট। তোর মস্তিষ্কে যে কাহিনি চলছে তেমন কিছুই হয়নি। আমিতো শুধু নূরকে নিয়ে ওখানে বসে ছিলাম। জানিনা কে ওই সময় ছবি তুলে নিয়েছে।

–ওওও,, তাইলে তো বাসর ছাড়াই বউ প্রেগন্যান্ট হওয়ার মতো ঘটনা ঘইটা গেছে।

–আবির তোর সাথে পরে কথা বলছি। আমার মুড ঠিক নেই এখন।
___

–বাহ্ আপু,আমরা একটু টিভিতে হিরো দেখলেও তুমি রেগেমেগে আগুন হয়ে যাও।আর এখন নিজেই হিরোর সাথে ডেটিং করে বেড়াচ্ছ!

অমালিয়ার কথার পরিপেক্ষিতে ইভান তার দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,
–দেখ লিয়া, আপুর সম্বন্ধে আর একটা বাজে কথা বললে কিন্তু জান নিয়ে নিবো তোর। আজ একটা ছবিই তোর কাছে বড়ো হয়ে গেল? আরে এসব ছবিতো ইচ্ছে করলে এখুনি হাজার টা বানানো যাবে। আমরা কী আপুকে চিনিনা? তাহলে কে কী ছাপালো তাতে কী যায় আসে।

–হ্যাঁ হ্যাঁ আমাকেই বলতে পারো সবাই। এতেও বুঝি আমারই দোষ তাইনা? বাইরে গিয়ে দেখ লোকজন কতো রকমের কথা বলছে। অথচ যতো দোষ এই নন্দ ঘোষের।

নূর থমথমে মুখে বসে আছে। সকাল সকাল এই নিউজ ওদের বাড়িতেও বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।অমালিয়া কথা কাটা হয়ে বিঁধছে শরীরে। কিন্তু উপযুক্ত জবাব দিতে পারছেনা নূর। বাইরের মানুষ কে কী ভাবলো তাতে কিছু যায় আসেনা নূরের। কিন্তু আপনজনই যখন অবিশ্বাসের তীর চালায় তখন সেখানে কোনোকিছু বলাই বৃথা। বলে বিশ্বাস করাতে হবে এমন ঠুনকো বিশ্বাসের কী প্রয়োজন। নিউজ দেখার পর থেকে পাড়া প্রতিবেশী নানাজন নানা মন্তব্য করছে। লতিকা বেগম চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। দিশেহারা বোধ করছেন তিনি। মায়ের এমন শঙ্কিত চেহারা দেখে নূরের বুক পুড়ছে। নূর মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে মায়ের দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ভারাক্রান্ত গলায় বলল,
–মা,তুমিও কী বাকিদের মতো আমাকে অবিশ্বাস করছ? তুমি কী চিনোনা তোমার মেয়েকে? তোমার মনে হয় তোমার মেয়ে কোনো অশালীন কাজ করতে পারে?

লতিকা বেগম ছলছল চোখে তাকিয়ে বললেন।
–নারে মা,তোকে আমি একটুও অবিশ্বাস করছিনা। আমি জানি আমার নূরের মতো খাটি সোনা আর একটাও নেই। কিন্তু এসব দেখে লোকজন যে নানান কথা রটাবেরে মা। আমার চিন্তা সেখানে৷

–কোনো চিন্তার কিছু নেই মা। তোমার বিশ্বাস আছে এটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বাকি কে কী ভাবলো তাতে কিছু যায় আসেনা আমার। লোক কথা বলবেই। এই বিষয় নয়তো অন্য কোনো বিষয়ে বলবে। কারণ লোকের কাজই কথা বলা। ওসব কথা কানে নিলেই বোকামি। নিজে ঠিক থাকলে সবই ঠিক। এখন এসব চিন্তা করোনা। অসুস্থ হয়ে পড়বে।তুমি রেস্ট করো। আমি এখন কাজে যাচ্ছি।

মাকে শান্তনা দিয়ে বেড়িয়ে গেল নূর।বাইরে এসে হাঁটতে নিলেই নূর দেখলো আশেপাশের লোকজন কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ইশার কী কী বলাবলি করছে। এরা যে এই নিউজ দেখেই এমন করছে তা বুঝতে পারছে নূর। আর এসবকিছুর জন্য ওই একজনকেই দায়ী করছে নূর। সব রাগ গিয়ে পড়ছে তার ওপর। যার কারণে তার পরিবারে এই অশান্তি এসেছে এবার তার সাথে বোঝাপড়ার পালা। আজতো এর একটা ফয়সালা করেই ফেলবে সে।
__

আদিত্যর ভ্যানিটির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো জিদান। স্যারের চিন্তায় তার হাঁপানি শুরু হয়ে যাচ্ছে। চিন্তার মাঝেই সে দেখলো সামনে এক প্রকার ধেয়ে আসছে নূর। এভাবে কালিমূর্তির ন্যায় নূরকে আসতে দেখে জিদানের ভয়ে কলিজা ভুনা হওয়ার উপক্রম। আজ নির্ঘাত এই কুমিরের সরদারনী আমার ভোলাভালা স্যারকে গিলেই নিবে। হে খোদা, আমাকে শক্তি দাও। আমি যেন আমার স্যারের প্রাণ বাঁচাতে পারি। দেখতে দেখতেই নূর কাছে চলে এলো। ভেতরে ঢুকতে গেলেই জিদান নিজের জানের বাজি রেখে নূরের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল। দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে বলল,
–না ম্যাম, দাঁড়ান। দয়া করে আমার স্যারকে কিছু করবেন না ম্যাম। স্যারের কোনো দোষ নেই। চাইলে আমার জান নিয়ে নিন। কিন্তু আমার স্যারকে ছেড়ে দিন প্লিজ।

নূর দাঁত কিড়মিড় করে হ্যান্ডব্যাগ থেকে স্ক্রু-ড্রাইভার টা বের জিদানের গলায় ধরে বলল,
–শোন মিঃ পাতিহাঁস, অলরেডি মগজের ব্লেন্ডার হয়ে আছে। আমাকে বিরক্ত করতে আসলে আজ সত্যি সত্যিই তোর জান কেঁড়ে নিবো। বল পাঠিয়ে দিবো তোকে পটল তুলতে?

নূরকে আর জিদানকে মারার জন্য খাটুনি করতে হলোনা।তার হুমকি শুনে বেচারা জিদান এমনই ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। নূর সেদিকে আর ভ্রুক্ষেপ না করে সোজা ভেতরে ঢুকে গেল। ভেতরে আদিত্য দুই হাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বুজে বসে ছিলো। নূর এসেই ওর সামনে টেবিলের ওপর ঠাস করে হাতের পত্রিকা টা আছাড় দিয়ে ফেলল। যার শব্দে মাথা তুলে তাকালো আদিত্য। তবে খুব একটা চমকায়নি সে। এমন একটা কিছু হবে সে জানতো।মনে মনে সে প্রস্তুত হয়েই ছিলো নূরের আসার অপেক্ষায়। নূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলে উঠল,
–এখন নিশ্চয় খুশি আপনি তাইনা! এটাই তো চাচ্ছিলেন আপনি। এখন শান্তি হয়েছে আপনার!

আদিত্য শান্ত সুরে বলল,
–নূর রিল্যাক্স, এতো হাইপার হইও না। শান্ত হয়ে বসে কথা বলছি আমরা।

–শান্ত হয়ে বসে কথা বলবো? লাইক সিরিয়াসলি! সারাদেশে আমার তামশা হচ্ছে। আর আমাকে শান্ত হতে বলছেন আপনি! আজ আপনার জন্য আমার আর পরিবারের দিকে সবাই বিদ্রুপের নজরে তাকাচ্ছে। হ্যাঁ এমনিতে মানুষের কথায় আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু কেউ আমার চরিত্র নিয়ে পরিহাস করলে সেটা আমি কখনো সহ্য করবোনা। আজ এসবের কারণে আমার মা চিন্তায় প্রায় অসুস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু অফকোর্স, আপনার এসবে কী যায় আসে। আপনার তো বরং পাবলিসিটি হয়ে গেল তাইনা! দ্য সুপারস্টার আদিত্য আরও একবার মিডিয়ার মেইন আকর্ষণ হয়ে গেল।

এবার একটু রাগান্বিত হলো আদিত্য। কন্ঠস্বর দৃঢ় করে বলল,
–লাইক রিয়েলি নূর! তোমার সত্যিই মনে হয় আমি পাবলিসিটির জন্য এমন চিপ কাজ করবো? তাও তোমার সাথে? এতদিনে কী এতটুকুও বুঝতে পারোনি আমাকে? এটা তোমার মতো আমার কাছেও আনাক্সপেক্টেড। ওখানে ওইমুহূর্তে কেউ আমাদের এভাবে ছবি তুলবে সেটা আমি বুঝতেই পারিনি।

–হ্যাঁ, আর ঠিক এই কারণেই আমি আপনাকে বারবার মানা করছিলাম। আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম আমাদের দুনিয়া আলাদা। তাই এই বৃথা জেদ ছেড়ে দিন। আজ আপনি একজন সেলিব্রিটি দেখে এই ঘটনা ঘটলো। এই কারণেই আমার এসব নায়ক পছন্দ না। আমি অতি সাধারণ একটা মেয়ে। আর আমার জীবনও অতি সাধারণ। আমি কোনো অসাধারণ কিছু চাইনা আমার জীবনে। রোজ রোজ লোকের চর্চার বিষয় হতে চাইনা আমি।

–নূর শান্ত হও। বুঝতে পারছি এটা হওয়া ঠিক হয়নি। তবে চিন্তা করোনা তুমি। আমি সব ঠিক করে দিবো। আই প্রমিজ পরবর্তীতে আর এমন কিছু হবে না।

–কী গ্যারান্টি আছে আপনার কাছে। বলুন দিতে পারবেন গ্যারান্টি? পারবেন না। কারণ এটাই আপনার জীবন। এটাতো শুধু একটা মুশকিল এসেছে। আমাদের দুজনের পথ এক করার চেষ্টা করলে এর থেকেও বড়ো বড়ো মুশকিল আসবে। এখন আপনি হয়তো ফিল্মি ডায়লগ ঝাড়বেন , আমি তোমাকে ভালোবাসি নূর। তোমার জন্য আমি সব মুশকিল পেরিয়ে যাবো। চাঁদ সূর্য ছিনিয়ে আনবো ব্লা ব্ল..। এসব কথা শুনতেই ভালো লাগে। করতে গেলে না।আচ্ছা চলুন আপনি একটা জিনিস বলুনতো। আপনি যে সবসময় বলে বেড়ান ভালোবাসি ভালোবাসি। তো কখনো ভেবে দেখেছেন এর পরিণাম কী হবে? ধরুন আপনার প্রস্তাবে আমি সম্মতি দিলাম। এরপর? এরপর কী হবে? এরপর নিশ্চয় আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাইবেন। কিন্তু আমিতো আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা। কারণ আমাকে আমার পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইভানের পড়াশোনা শেষ করিয়ে ওকে কোনো কর্মে সেটেল্ড করতে হবে। অমালিয়ার পড়াশোনা শেষ করিয়ে ওকে ভালো একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিতে হবে। তারপর মিছরিকেও পড়াশোনা করিয়ে ওকেও একটা ভালো ঘরে বিয়ে দিতে হবে। আর এসব দায়িত্ব শেষ করতে করতে কতবছর লোগে যাবে তা আমি নিজেও জানি না। তো এতদিন পারবেন অপেক্ষা করতে? আচ্ছা মানলাম এটাও আপনি করলেন। কিন্তু আপনার পরিবার কী অপেক্ষা করবে? তারা একজন নায়কের সাথে সামান্য একটা গ্যারেজ মেকানিক যে কীনা বর্তমানে ট্যাক্সি ড্রাইভার। এমন মেয়েকে মেনে নিবে? হ্যাঁ আপনি হয়তো বলবেন আমার পরিবারের দায়িত্ব সব আপনি নিবেন। তাদের সব খরচ বহন করতে রাজি। কিন্তু আমিতো সেটা কখনো মানবোনা। আমিতো আমার পরিবারের দায়িত্ব কারোর ঘাড়ে দিবোনা। সে যেই হোকনা কেন। এমনকি কথার কথা যদি আমাদের বিয়েও হয়ে যায় তবুও না। তো বলুন আপনার পরিবার এমন বউকে মেনে নিবে?

আদিত্য নূরের এতগুলো শুধু স্মিথ হেঁসে বলল,
–তুমি এখনো আমার ভালোবাসাকে মাপতে পারোনি নূর । আর না ভরসা করতে পেরেছ। তো যেখানে ভরসাই নেই সেখানে যাই বলি বৃথাই যাবে। তোমার মনে হবে আমি আবারও ফিল্মি ডায়লগ ঝাড়ছি। তবে শুধু একটা কথা বলতে চাই। ভালোবাসার পথে সবসময়ই বাঁধা ছিল আর সামনেও থাকবে। তবে দুজনের মনের আত্মবিশ্বাস এক থাকলে কোন বাঁধা অতিক্রম করা অসম্ভব নয়। যেদিন তুমি আমাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারবে সেদিন এই প্রশ্নগুলোর জবাব তুমি নিজেই নিজেকে দিয়ে দিবে।

নূর রেগে গিয়ে বলল,
–বন্ধ করুন আপনার এই ভালোবাসার তানপুরা বাজানো। আজ আপনার এই ভালোবাসার কারণেই এসব ঘটেছে। তবুও শান্তি হইনি আপনার? আর কতো বদনামী দিতে চান আমাকে? আপনার সাথে দেখা হওয়ার আগেই ভালো ছিলাম আমি। আপনার সাথে কখনো দেখা না হলেই ভালো হতো।

বলেই উল্টো ঘুরে ধুমধাম করে বেড়িয়ে গেল নূর। আর তার বলে যাওয়া তিক্ত কথাগুলো তীর হয়ে বিঁধল আদিত্যর বুকে। রাগে দুঃখে টেবিলের সামনে থাকা কাচের গ্লাস টা ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো সে। মুহুর্তেই ঝংকার দিয়ে সহস্র টুকরো হয়ে ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়লো গ্লাসটা। চোখ গেল টেবিলের ওপর রাখা পত্রিকার দিকে। অগ্নিলাল চোখে তাকিয়ে পত্রিকাটা হাতে উঠিয়ে নিলো সে। এক হাতে পত্রিকা ধরে আরেক হাতে ফোন বের ওর গ্যাং এর লোককে ফোন করলো আদিত্য। পত্রিকার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
–আজকের এই ছবি কে তুলেছে তাকে আজকের ভেতর চাই আমি। আর সকল সংবাদমাধ্যমের হেডদেরও চাই। কাজ হওয়া চাই। নাহলে তোমাদের কালকের সূর্য দেখতে দিবোনা আমি।

আদেশ অনুযায়ী সন্ধ্যার মাঝেই সেই ছবি তোলা ব্যাক্তিকে ধরে আনলো আদিত্যর লোক। আদিত্য আসলো সেখানে। হাতে গান নিয়ে অগ্নিমূর্তি হয়ে ছবি তোলা লোকটার সামনে গেল। ক্রুর চোখে তাকিয়ে বলল,
–তোর ছবি তোলার অনেক শখ না। চল আজ আমি তোর সুন্দর একটা ছবি তুলবো।কাল সকালের পত্রিকায় থাকবে তোর ছবি। শিরোনাম হবে, ****জায়গায় পাওয়া গেছে এক অজ্ঞাত লা,শ।

লোকটাতো ভয়ে অর্ধেক মরা এমনিতেই মরে গেছে। তারওপর এমন থ্রেট শুনে তার আত্না মুখে চলে এসেছে। লোকটা কেঁদে কেটে আকুতি মিনতি করে মাফ চাইলো আদিত্যর কাছে। তাই আদিত্যও হুমকি দিয়ে ছেড়ে দিলো লোকটাকে। তারপর সব সংবাদমাধ্যমের হেডকেও হুমকি দিয়ে এই নিউজ বদলাতে বলল। ভয়ে সবাই রাজি হয়ে গেল। পরদিন সকালেই সকল টিভি, পত্রিকাসহ সকল মাধ্যমে এই নিউজ ভুল বলা হলো। এবং এমন ভুল নিউজ দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীর কাছে মাফও চেয়েছে তারা।

নিউজ নূরও দেখতে পেল। এটা যে আদিত্যরই কাজ বুঝতে বাকি রইলনা তার। ভীষণ অপরাধবোধ হচ্ছে তার। কাল রাগের বশে অনেক বেশিই বলে ফেলেছে লোকটাকে। কিন্তু তার পর থেকেই অনেক খারাপ লাগছে নূরের। যদিও নূর ইচ্ছে করেই অতোটা কঠোর বাক্য বলেছিল। যাতে আদিত্য ওর পিছু ছেড়ে দেয়। লোকটা যে ভুল পথে পা বাড়িয়েছে সেটা বোঝাতে চেয়েছিল নূর। কিন্তু এখনতো নিজের বুকেই জ্বলছে। এতটা যন্ত্রণা কেন হচ্ছে ওর। তবে কী সত্যি করেই সে লোকটার মায়ায় জড়িয়ে পড়লো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here