#শৈবলিনী—১৯
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★ভেজা শরীরে হাঁচির বর্ষণ করতে করতে বাসায় ফিরলো আদিত্য। এরইমাঝে সর্দিতে নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে তার। ছেলের এই হাল দেখে একপ্রকার আৎকে উঠলেন রেহনুমা। দ্রুত ছেলের কাছে গিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,
–আদি, কী হয়েছে তোর? এতো ভিজে গেছিস কীভাবে? সর্দি লাগলো কেমন করে?

–কিছু না মা,ওই একটু বৃষ্টিতে ফুটবল খেলেছি তো আজকে। তাই এমন হয়েছে।

–আদি তুই পাগল হয়ে গেছিস? তুই জানিস না বৃষ্টির পানি তোর সয়না? তাও বৃষ্টিতে ভিজতে গেছিস কেন? ইশশ, কী অবস্থা হয়েছে। আয় বোস এখানে আমি মাথা মুছে দিচ্ছি।তুই কী দিন দিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছিস? এসব কী ছেলেমানুষী? এই ছবি, যা জলদি গরম পানি করে নিয়ে আয়।

ছেলের চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন রেহনুমা। আর ছেলেকে মমতাময়ী বকাঝকা করতে লাগলেন। আদিত্য হাসছে মনে মনে।তোমাকে কী করে বলি মা,পাগল তো তোমার ছেলে হয়েই গেছে। এখন আর নিজের হুঁশ কই তার। বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হওয়ার বিনিময়ে নূরের সাথে যে মুহুর্ত পেয়েছি তারজন্য তো সে এরথেকে বেশি অসুস্থ হতেও রাজি। তার আবহের গভীর সমুদ্রে নিজেকে অনন্তকাল ভাসাতে রাজি।
পাশেই সোফায় বসেছিল আহানা। স্ট্র লাগিয়ে সে কোল্ড ড্রিংকস খাচ্ছে। আদিত্যর দিকে কেমন সন্দেহের নজরে তাকাচ্ছে সে। আদিত্য যে কারসাথে বৃষ্টিবিলাস করে এসেছে তা ভালোই বুঝতে পারছে সে। আহানা কোল্ড ড্রিংকসের স্ট্র ঘোরাতে ঘোরাতে প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে বলল,
–বৃষ্টিতে ফুটবল খেলে আসলে নাকি পাশা খেলে আসলে ভাইয়া? তা জয়ী কে হলো শুনি? তুমি নাকি অপরপক্ষ? তোমার হাল দেখে তো মনে হচ্ছে তুমিই গো হারা হেরেছ।

আহানার বিশেষ বিবৃতি শুনে কেশে উঠলো আদিত্য। আহানার দিকে চোখ পাকড়িয়ে বলল,
–চুপ কর বদমাইশ। আজকাল একটু বেশিই পেকে গেছিস তুই।

আহানা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
–হুঁহ্, সত্যি কথা বললেই, চাচা নাও থেকে নামো। আজ শুধু সবার ছোট বলে অন্যায় ভাবে আমার কন্ঠ দমানো হচ্ছে। তবে এই কন্ঠ দমে যাবে না। এই কন্ঠ হবে কালের কন্ঠ। চাইলে পরশুর কন্ঠও হতে পারো।

ভাইবোন মজা করলেও রেহনুমা যেন কোনোকিছুর আভাস পাচ্ছে। সে কী কোনোকিছু থেকে অজ্ঞাত থাকছে? তাঁকে জানতেই হবে। তাঁর ছেলের জীবনে কী চলছে জানতে হবে তাঁকে। অযাচিত কিছু হওয়ার আগেই জানতে হবে তাঁকে। ছেলের জীবনে অনাঙ্ক্ষিত কিছু হতে দেবেন না তিনি। রেহনুমার ভাবনার সুতা কাটলো আদিত্যর কথায়।
–মা, আদ্র কই? বাসায় ওকে দেখাই যায় না।

–বন্ধুদের সাথে কোনো পার্টিতে নাকি গেছে। ফিরতে রাত হবে।

–ছেলেটা সবসময় শুধু পার্টি আড্ডা নিয়েই থাকে। বাসায় তো কখনো ওকে পাওয়াই যায়না। মানলাম ইয়াং জেনারেশনে এসব করে। তাই বলে অতিরিক্ত কেনোকিছু ভালোনা মা।

–আরে এক্সাম শেষ তাই একটু আড্ডা দিচ্ছে। কিছুদিন পর সব কমে যাবে। তুই এসব ছাড়। যা রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নে।

–ঠিক আছে মা।
__

গোসল করে ভেজা চুলগুলো মুছতে মুছতে হঠাৎ নূরের নজর পড়লো ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়। প্রতিবিম্বের স্থানে প্রতীয়মান হলো আদিত্যের সঙ্গে বৃষ্টি ভেজা সেই মুহুর্ত। আদিত্যর ধারালো নজর এখনো কেমন চুম্বকের মতো টানতে চাইছে তাকে।সম্মোহিত করার প্রচন্ড রকম ষড়যন্ত্রে নেমেছে সে। বিমোহের বর্শি বিধিয়ে শিকার করতে চাইছে নূরের।হাত বাড়িয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছে নূরকে তার প্রেমতরীতে।কিন্তু কি আশ্চর্য! এমন ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়েও কেন প্রতিবাদী হচ্ছে না নূর? কেন শক্ত হস্তে রুখে দাঁড়াতে পারছেনা? তবে কী সে স্বহস্তে নিজেকে এই ষড়যন্ত্রের শিকার হতে দিতে চাইছে? হেরে যাচ্ছে সে? ঝটকা মেরে মাথা ঘুরিয়ে নিয়ে চোখ বুজে নিলো নূর। নাহ, কখনো না। হারতে পারবেনা সে। কিছুতেই না। মন হারানোর অধিকার তার নেই। অধিকার নেই ওই পুরুষের মায়াজালের বর্শিতে বিঁধে যাওয়ার। তার হাত ধরে ওই প্রেমতরীতে উঠে ভাসার অধিকার নেই। কিছুতেই না। নূরের নদীতে কোনো প্রেমতরীর জায়গা নেই। এই শান্ত নদীতে কোনো অশান্ত ঢেউয়ের আন্দোলন হবে না। এই নদী কোনো সাগরে মিশবে না। কখনো না।

মিছরির ডাকে চৈতন্যে ফিরলো নূরের। মিছরি বলল,
–আপু,চাচা এসেছে। ডাকছে তোমাকে।

ভ্রু কুঁচকে আসলো নূরের। চাচা হঠাৎ এইসময়! উনি কখনো অপ্রয়োজনে এমুখো হন না। তবে আজ আবার কী প্রয়োজনে এলেন! নূর তোয়ালেটা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে, ভেজা চুলগুলো হাত খোপা করে বাইরে বেড়িয়ে এলো। ড্রয়িং রুমে এসে সোফায় বসে থাকা চাচার উদ্দেশ্যে সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময়ের পর্ব শেষ করলো। সৌজন্যমূলক কথাবার্তা শেষে চাচা বলে উঠলেন।
–আসলে একটা জরুরী বিষয়ে কথা বলতে এসেছি তোমাদের সাথে।

–জি বলুন না চাচা।

–তোমরা সবাইতো জানোই তোমাদের বাবা যে গ্যারেজ দিয়েছে ওটা আমার জায়গায় দিয়েছে।

–হ্যাঁ চাচা জানি। আর তার বদলে বাবা আপনাকে অন্য জায়গা থেকে নিজের জায়গা আপনাকে দিয়েছে। মানে জমি বদল দিয়ে নিয়েছে। কারণ ওই জায়গাটা গ্যারেজের জন্য উত্তম ছিলো।

–হ্যাঁ, কিন্তু সেটা মুখে মুখে। কোনো ধরনের কাগজি কাজ বা রেজিষ্ট্রেশন করা হয়নি।

নূরের কেমন ভয় লাগতে শুরু করলো। সে শঙ্কিত হয়ে বলল,
–হঠাৎ এসব কেন বলছেন চাচা? হয়েছে কী?

–দেখ কিছু মনে করোনা। আসলে আমার ব্যবসায় বিরাট লস হয়ে গেছে। অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছি আমি। যারজন্য অনেক টাকার প্রয়োজন এখন আমার। তাই আমি গ্যারেজের ওই জমিনটা বিক্রি করতে চাই।

আসমান ভেঙে পড়লো নূরের ওপর। পুরো পরিবার আৎকে উঠল। নূর আশঙ্কাগ্রস্থ হয়ে বলল,
–কী বলছেন এসব চাচা? আপনি ভালো করেই জানেন এই গ্যারেজই আমাদের সব। বাবার রেখে যাওয়া স্বপ্ন। যা বাঁচিয়ে রাখার আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।এটার উপরেই আমার পরিবার চলে। আপনার টাকার দরকার হলে আপনি বাবার দেওয়াটা জমিটা বিক্রি করেন।

–চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ওই জমির দাম কম। আর কাস্টমারও তেমন আসেনা। তাই আমাকে এটাই বিক্রি করতে হবে। তাছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই।

–আপনি এটা করতে পারেন না চাচা। বাবা বিশ্বাস করে শুধু মুখে মুখে জমি বদল করেছিল। কারণ বাবার বিশ্বাস ছিলো তার ভাই কখনো বেইমানি করবেনা। তাইতো তিনি রেজিষ্ট্রেশন করেনি। তার বিশ্বাসের এই প্রতিদান দিচ্ছেন আপনি? বাবা নেই আমাদের মাঝে। আছে শুধু তার রেখে যাওয়া এই গ্যারেজ টা।বাবার রেখে যাওয়া এই শেষ অবলম্বন টা এভাবে কেড়ে নিয়েন না চাচা। এটার উপরেই আমার পরিবার নির্ভরশীল। এটা না থাকলে আমাদের কী হবে একবারও ভেবে দেখেছেন? প্লিজ চাচা এমনটা করবেন না।

–দেখ আমারও তো বাঁচতে হবে। আমার পরিবারের কথাও ভাবতে হবে। দেনদাররা বাড়িতে এসে হুমকি দিচ্ছে। টাকা না দিলে তারা বাড়ি দখল করে নিবে। তাই আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই। এই জমিন আমাকে বিক্রি করতেই হবে।

লতিকা বেগম হাত জোর করে মিনতি করলো তবুও নূরের চাচা তার সিদ্ধান্তে অনড় রইলো। এবার ইভান ক্ষেপে গিয়ে বলল,
–অনেক হয়েছে চাচা। এতক্ষণ সম্মান দেখাচ্ছিলাম বলে যা খুশি তাই বলে যাচ্ছেন। তবে আর না। সাহস থাকলে গ্যারেজে হাত লাগিয়ে দেখান। ওই জমিতো বিক্রির কথা ভুলে যান। জমি দখল করতে আসলে ফলাফল খুব খারাপ হবে। বাবা নেই বলে আমাদের দূর্বল ভাবার ভুল করবেন না চাচা।

নূরের চাচাও এবার গর্জে উঠে বললেন,
–ঠিক আছে তাহলে। বিবাদে যেতে চাচ্ছিলাম না। আপন লোক বলে ভালো করে বলছিলাম।তবে না মানলে আমিও পুলিশের সাহায্য নিবো। জমি আমার। আমার জমি আমাকে বিক্রি করতে কেউ ঠেকাতে পারবেনা। কালই আমি সরকারি নোটিশ লাগিয়ে দিবো। দেখি কীভাবে ঠেকাও।

বলেই ধুপধাপ করে বেড়িয়ে গেল নূরের চাচা। ধপ করে বসে পড়লো নূর। মাথা কাজ করছে না ওর। এই গ্যারেজ না থাকলে কীভাবে চলবে ও? কীভাবে ওর পরিবারের খরচ চালাবে? বাবার স্মৃতিটা ধরে রাখতে পারবেনা ও? ভাবতেই মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে যাচ্ছে । জীবন আবার কোন নতুন পরিক্ষা নিচ্ছে ওর। এবার কী করবে ও? লতিকা বেগম মুখে আঁচল চেপে কাঁদতে লাগলেন। হঠাৎ করেই পুরো পরিবারের ওপর যেন শোকের ছায়া নেমে পড়লো। মেঘের কালো ছায়া আরও গাঢ় হলো নূরের জীবনে। নূরের চাচা সত্যি করে তার জমিন দখলে নিতে পুলিশ নিয়ে এলো। হাজার চেষ্টা করে, আকুতি মিনতি করেও রক্ষা করতে পারলোনা নূরের গ্যারেজ।নূরের চোখের সামনেই ওর বাবার শেষ স্মৃতি আর নিজের পরিবারের একমাত্র উপার্জনের উৎস, গ্যারেজের শাটার বন্ধ করে সিল মেরে দিয়ে গেল পুলিশ। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো লতিকা বেগম। অমালিয়া আর মিছরিও কাঁদছে। নূর নিজেকে শক্ত করে মা বোনদের শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তার যে ভেঙে পড়লে চলবেনা। সবাইকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো নূর। সবার সামনে শক্ত থাকলেও এখন আর পারলোনা। রুমে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কেঁদে উঠল নূর । অপরাধী চোখে তাকিয়ে বলল,
–সরি বাবা, তোমার মেয়ে পারলোনা। পারলোনা তোমার শেষ স্মৃতিটাকে বাঁচাতে। মাফ করে দাও আমাকে। তোমার মেয়ে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে গেল বাবা।
__

–কি বলিস নূর,তোর চাচা এমন বেঈমানী করেছে? কত্তোবড় মীরজাফর ওই লোক। নিজের ভাইয়ের পরিবারের সাথে কীভাবে করতে পারলেন উনি এমন কাজ! ছিহহ্

নূরের কাছ থেকে ঘটনা শুনে শিখা ঘৃণিত সুরে বলে উঠল কথাগুলো। ভার্সিটিতে আসতেই নূরের মলিন ফ্যাকাসে মুখ দেখেই শিখা আর গিয়াস বুঝতে পারলো নূরের কিছু হয়েছে। নূরকে জিজ্ঞেস করলে তখন নূর সব খুলে বললো। গিয়াসও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলল,
–ইয়ার নূর, তুই আমাদের কেন বললি না? হয়তো কোনো হেল্প করতে পারতাম আমরা তোর। ওই ব্যাটা চাচাকে তো আলু ভাজা করতে মন চাচ্ছে।

নূর ভারাক্রান্ত গলায় বলল,
–আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে বাবার হাতের শেষ স্মৃতিটা রক্ষা করতে পারলাম না একারণে। উপার্জনের জন্য নাহয় কোনোকিছু করে নিবো আমি। কিন্তু বাবার হাতের রেখে যাওয়া জিনিস টা তো আর ফিরে পাবোনা।

শিখা বলল,
–চিন্তা করিসনা ইয়ার, কিছু একটা উপায় বের হবে। জমিতো এখনো বিক্রি হয়নি। বিক্রি হওয়ার আগেই কোনো উপায় আমরা নিশ্চয় বের করে নিবো।

–কী উপায় বের করবো? এখানে শুধু দুটো উপায়ই আছে। হয় চাচা দয়া করে জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলুক। নাহয় জমিটা আমরাই কিনে নেই। যার কোনোটাই অসম্ভব। না চাচা তার মত পাল্টাবে, আর না আমাদের সামর্থ্য আছে ওই জমি কিনে নেওয়ার। তাই গ্যারেজ বাঁচানো আমাদের হাতে নেই।

–আশা হারাস না নূর। দেখবি কোনো না কোনো উপায় নিশ্চয় বের হবে। আল্লাহ কোনো না কোনো পথ ঠিকই দেখাবেন। তা এই মনমানসিকতা নিয়ে আজকের দিন ক্যাম্পাসে না আসলেই পারতিস। বাসায় একটু রেস্ট করতি।

–নারে আজ ইম্পর্ট্যান্ট লেকচার আছে। আর তাছাড়া বসে থাকলে কী আর আমার চলবে। এখনতো আমাকে আরও বেশি ছুটতে হবে। নতুন উপার্জনের উৎস খুঁজতে হবে। ওই মিঃ নায়কের কাজও তো করতে হবে। তার কাছে ঋণ আছি আমি। তাই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসতে তো হবেই।

ক্লাস শেষে নূর যথারীতি আদিত্যর ভ্যানিটিতে এলো কাজের জন্য। আদিত্যর কাছে যে সে ঋণগ্রস্ত। তাইতো ঋণ পরিশোধের জন্য তাকে আসতেই হবে। তবে ভ্যানিটিতে আসতেই নূরের মুখপানে দৃষ্টি মেলতেই বুকের ভেতর কেমন ধুক করে উঠল আদিত্যর। নূরকে এমন মলিন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে কেন? চোখ দুটোও কেমন ফুলে আছে।মেয়েটা কী কেঁদেছে? কী হয়েছে নূরের? জানতে চাইলো আদিত্য,
–নূর, কী হয়েছে তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?

নূর আদিত্যর দিকে না তাকিয়েই বলল,
–কিছু হয়নি, কাজ কী করতে হবে তাই বলুন।

–নূর তাকাও আমার দিকে। বলো কী হয়েছে? কিছুতো একটা অবশ্যই হয়েছে।

নূর এবার তাকালো আদিত্যের দিকে। কঠোর গলায় বলল,
–কেন? কেন বলবো আপনাকে? কে হন আপনি আমার? কী অধিকার আছে আপনার? এখানে কী আমার পার্সোনাল লাইফ ডিসকাশন করার জন্য বসেছি আমরা? আপনার হয়তো ফালতু সময় থাকতে পারে কিন্তু আমার নেই। কাজ থাকলে বলুন, নাহলে চললাম আমি।

বলেই চলে যেতে উদ্যোত হলো নূর। নূরের হঠাৎ এমন বিহেভিয়ারে আদিত্য একটু বিস্মিত হলো। নূরের যে কিছু হয়েছে তা ভালো করেই বুঝতে পারছে আদিত্য। আর সেই কিছুটা যে মোটেও ভালো কিছু হয়নি তাও বুঝতে পারছে আদিত্য। আর এটা বুঝতে পেরেই আদিত্য আরও উত্তেজিত হয়ে উঠল। নূরের হাত টেনে ধরে নিজের কাছে এনে চোয়াল শক্ত করে বলল,
–সবসময় এমন করো কেন তুমি হ্যাঁ? খুব ভালো লাগে আমাকে অশান্তিতে রেখে।আমাকে ছটফট করতে দেখে আনন্দ পাও তুমি? কেন একটু আপন ভাবতে পারোনা আমাকে? একটুও কী ভরসা করা যায়না আমার ওপর? এতটাই কী অযোগ্য আমি? কেন নিজের সমস্যার কথা আমাকে বলতে চাওনা তুমি? প্লিজ বলোনা কী হয়েছে তোমার?

আদিত্যর এই আকুল অস্থিরতা নূরকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। তবুও নূর তাতে দূর্বল হবেনা । নূর ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত গতিতে বেড়িয়ে গেল। এতে আরও ক্ষিপ্র হয়ে গেল আদিত্য।রাগে লাথি মেরে সামনে থাকা চেয়ারটাতে। নিজের রাগ ঝাড়তে লাগলো অচেতন পদার্থ গুলোর ওপর। কাচের ফুলদানিটা সজোরে ফ্লোরে আছাড় মেরে চিল্লিয়ে বলল,
–আআআ…হোয়াই নূর, হোয়াই ড্যাম ইট!!!

কিছুক্ষণ তান্ডব চালিয়ে ধপ করে বসলো আদিত্য। নিজের রাগটাকে একটু শান্ত করে নিলো সে। কিন্তু মনের অশান্তি কীভাবে শান্ত করবে? ওর নূরের কী হলো হঠাৎ করে তা না জানা পর্যন্ত কিছুতেই শান্ত হতে পারবেনা সে । এইতো কালই কী সুন্দর প্রাণচঞ্চল ছিলো মেয়েটা। তবে আজ কী হলো তার? কীভাবে জানবে সে? নূরতো চলে গেল। কিন্তু পেছনে রেখে গেল আদিত্যর মাঝে এক সাগর অশান্তির ঢেউ। নূরের বিষন্ন মুখটা বারবার বিঁধছে তার বুকে। ওর কী হয়েছে তা না জানা পর্যন্ত কিছুতেই শান্ত হতে পারছেনা সে। হঠাৎ শিখার কথা মনে পড়লো আদিত্যর। শিখা নিশ্চয় বলতে পারবে নূরের কী হয়েছে। আদিত্য ফোন করে শিখাকে ওর ভ্যানিটিতে। কিছুক্ষণ পরই এলো শিখা। আদিত্য জানতে চাইলো নূরের কী হয়েছে। শিখা বলল,
–সরি ভাইয়া, এবার আপনাকে আমি কিছু বলতে পারবোনা। আমি নূরকে প্রমিজ করেছি এই ব্যাপারে আপনাকে যেন কোনোকিছু না বলি আমি। তাই সরি।

নূর বুঝতে পেরেছিলো আদিত্য ওকে দেখলেই বুঝে যাবে কিছু হয়েছে। আর জানতে চাইবে কী হয়েছে। কিন্তু নূর চাইনা আদিত্যকে এসব ব্যাপারে জানাতে। আদিত্য হেল্প করতে চাইবে, আর সেটাই চায়না নূর। তার আত্মসম্মান এর অনুমতি দিবেনা কখনো। তাই শিখাকেও ভালোভাবে শাসিয়ে দিয়েছে আর প্রমিজও নিয়েছে আদিত্যকে যেন এই ব্যাপারে কিছু না বলে। তাই শিখা আর কিছু বলতে পারলোনা আদিত্য হতাশ হয়ে বলল,
–আচ্ছা ঠিক আছে ব্যাপার না। তুমি যাও। আমি নাহয় অন্য উপায় খুঁজে নিবো।

শিখা যেতেই আদিত্য ওর গ্যাং এর লোককে ফোন করে বলল,
–শোনো তোমাকে একটা মেয়ের ডিটেইলস দিচ্ছি। খোঁজ লাগাও ওর জীবনে বর্তমানে কী ঘটছে। এভরি স্মল ডিটেইলস চাই আমার। এবং দ্রুত গতিতে বের করবে।

ফোন রেখে দিলো আদিত্য। উপেক্ষার খেলা যতো ইচ্ছে খেলো নূর। আমিও দেখবো কতটা পোড়ানোর ক্ষমতা আছে তোমার। মাঝখান থেকে তোমার দহনে এই হৃদয় পুড়ে নাহয় আরেকটু খাটি হোক।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here