#শৈবলিনী—১৭
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★বিরোক্তিতে ছেয়ে যাচ্ছে নূর। বিরক্তির কারণ শিখার এই অভিজাত শপিং মলে নূরকে নিয়ে আসা। এক প্রকার জোর করে টেনেই নিয়ে এসেছে নূরকে। আজ নাকি ওর মা বাবার বিবাহ বার্ষিকী। সেই উপলক্ষে তাদের জন্য গিফট কিনতে এসেছে। সাথে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে নূরকেও ঠেলে নিয়ে এসেছে। নূর ভেবে পাচ্ছে না ওর এখানে কী কাজ আছে। এসব অভিজাত শপিং মলে কেনাকাটা করার না ওর অভিজ্ঞতা আছে না প্রয়োজন। আর না এইসব জিনিসপত্র কেনার কোনো আগামাথা বোঝে ও। নিজের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা বলতে ওই রাস্তার পাশের মার্কেট থেকে দুইশো টাকার লেগিস, তিনশ টাকার কুর্তি আর দেড়শ টাকার জুতা ব্যাস শেষ। খুব হলে মাঝে মধ্যে ওর মা নিজেই গজ কাপড়ের পাজামা কামিজ বানিয়ে দেয়, এতটুকুই। এরবেশি নূরের না প্রয়োজন আছে না ইচ্ছে। কোনো আপসোসও নেই এটা নিয়ে। শরীরকে ঢাকার জন্য যতটুকু দরকার এতটুকু পোশাক হলেই হলো। কী দরকার অযথা টাকা নষ্ট করে দামি দামি পোশাক পড়ার।তাতে কী শরীরের ইমিউনিটি বাড়বে? মানুষের এই অদরকারী ব্যায়বহুলতা নূরের বোধগম্য হয়না। তাইতো সে এসব ক্যাচাল থেকে দূরে থাকে। এমনিতেও এসব জায়গায় আসলে লোকজন কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। যেন আমি ভিনগ্রহের কোনো এলিয়েন। আসলে দোষ এদের নয়। দোষ এদের মনমানসিকতার। এরা পোশাক আশাকের পরিধানের ওপর ভিত্তি করে মানুষকে জাজ করে। তাইতো এদের ধারণায় আমার মতো মানুষ এই জায়গায় বেমানান। যদিও কে কী ভাবলো তাতে নূরের বিন্দুমাত্র যায় আসে না। তবুও এসব কিছু থেকে দূরে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে সে। কিন্তু এই শিখার জোরাজুরিতে পেরে ওঠেনি আজ। না আসলে দেখা যেত মন খারাপ করে বসে থাকতো। তাই অগত্যা আসতে হলো ওকে।
গিয়াস নূরের বিরক্তি ভরা চেহারা দেখে বলল,
–কীরে মামা! এমনে পোকা ধরা বেগুনের মতো মুখ বানায় রাখছস ক্যান? মাথায় কলেরা হইছে নি?
নূর কটমটে চোখে তাকালো গিয়াসের দিকে। তা দেখে গিয়াস মেকি হেসে বলল,
–হে হে, এমনে তাকাস ক্যা? পরাণডা হাতে চইল্লা আসে তো। পরাণ ছাড়া পরাণ প্রিয়ারে পরাণ ভরা ভালোবাসা দিমু কেমনে?
— গ্যাসের বাচ্চা, তোর পরাণ কিতাব বন্ধ না করলে এখুনি তোর পরাণের পাকোড়া বানিয়ে তোকেই খাওয়াবো আমি।
–সাথে চিলি সস দিস, খাইতে টেস্টি লাগবো। আরে চিল করনা মেরি মা। এতো রাগোস ক্যা?সবসময় এতো লোহার মতো শক্ত না থেকে একটু স্পঞ্জ মিষ্টির মতো সফটও তো হতে পারিস। দেখ কতসুন্দর জায়গায় আইসস। শপিং মলে আসলে নাকি মাইয়াগো মহারাণী মহারাণী ফিলিং হয়। আর তুই কেমন মাইয়া যে শপিং মলে আইসাও বিরক্ত হস।মাইয়ারা জানলে তোর এই ঘোর অপরাধের জন্য তোরে নারী জাতি থেকে বহিষ্কার করে দিবে। আমারতো তোর ভবিষ্যত জামাইর লাইগা বহুত মায়া হইতাছে। বেচারা জানেই না তার কপালে তোর মতো ডাইনোসরদের সরদারনী অপেক্ষা করছে। আহারে, বেচারাকে আমার তরফ থেকে হৃদয়ের অন্তরস্থল থেকে নিংড়ানো সহানুভূতি।
গিয়াসের বলা জামাইয়ের প্রসঙ্গ শুনে হঠাৎ করেই যেন আদিত্যর কথা মনে এসে গেল নূরের। সাথে সাথেই নিজের মনকেই রাম ধমক দিলো নূর। আজকাল বেশি বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে মনটা। কিসব আলতো ফালতু খেয়াল টেনে আনে। সব এই গ্যাসের বাচ্চার জন্য হয়েছে। গিয়াস ওর মতো করে বলেই যাচ্ছে,
–ইয়ার আমার না খুব জানতে ইচ্ছে করে তুই বাসর রাতে কী করবি। আমারতো এখুনি ভিজ্যুয়াল আসছে, তুই তোর জামাইর কলার ধইরা কইতাছস “ওই জামাইয়ের বাচ্চা জামাই তোর সাহস কি করে হলো আমার গায়ে হাত দেওয়ার! আইজ তোর বাসরের শখ মিটাই দিমু আমি। ” বাসর রাতেই জামাই মারার ইতিহাস করার মতো মহান নারী হিসেবে পরিচিত হবি তুই।
নূর দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
–জামাইয়ের কথাতো জানি না। তয় কাল সকালে নিজের মৃ,ত্যু,র সংবাদ হতে না চাইলে এখুনি অফ যা। নাহলে জীবনের মনে অফ করে দিবো তোকে।
–না না এতো মেহনত করার দরকার নেই তোর। তুই বরং এখানে বসে থাক আমি একটু আমার গফের জন্য কিছু কিনে আনি। দেখি একখান চুমু নেওয়ার জন্য কোনো গিফট পাই কিনা।
বলেই উঠে গেল গিয়াস। শিখা সেই কখন থেকে এটা ওটা দেখে বেড়াচ্ছে। নূরের বিরক্ত লাগছিলো তাই সে কাউন্টারের সামনে সোফায় বসে অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি এসব শেষ হলে বাঁচে ও।
মায়ের সাথে শপিংয়ে এসেছে আহানা। রেহনুমা এসেছে বাসার কিছু কেনাকাটা করতে আর আহানা এসেছে নিজের জন্য কিছু নিতে। তাদেরকে দেখেই মলের ম্যানেজার নিজে এগিয়ে এলো। সুপারস্টার আদিত্যর মা বোন বলে কথা। আর তাছাড়া তারা এই মলের পরিচিত ভিআইপি কাস্টোমার। তাই তাদের সম্মানের সহিত ভেতরে নিয়ে এলো ম্যানেজার। স্টাফদের অর্ডার দিলো ঠান্ডা এনে দিতে। সোফায় বসিয়ে ঠান্ডা কোল্ড ড্রিংকস দেওয়া হলো তাদের। ওদের থেকে কিছুটা দূরেই নূর বসে ছিলো। এসব দেখে মনে মনে হাসলো সে।
আহানা ক্লোথ সেকশনে গিয়ে নতুন ডিজাইনার কিছু কালেকশন খুঁজতে লাগলো। লাইন করে হ্যাঙ্গারে ঝুলানো পোশাক গুলো দেখছিল সে। হঠাৎ ওপাশ থেকে কারোর পরিচিত কন্ঠ কানে এলো। আহানা হ্যাঙ্গার একটু সরিয়ে সামনে তাকালো। এবং যা ভেবেছিল তাই। সামনেই একজন সুন্দরী রমনীর হাত ধরে ফ্ল্যাট করছে আবির। সে বলছে,
–জানো তোমাকে না দেখলে আমি জানতামই পৃথিবীতে আসল সৌন্দর্য কী। সত্যিই বলছি তোমার সৌন্দর্যে কলিজা পুড়ে যাচ্ছে আমার। একটু ফায়ার ব্রিগেড হয়ে আগুন নিভিয়ে দাওনা। নাহলে যে মরে যাবো।
আবিরের কথায় মেয়েটা যেন গদগদ হয়ে একেবারে ফালুদা হয়ে গেল। মেজাজ বিগড়ে গেল আহানার। এখানেও এই লোক! অসহ্য। আবির দেখার আগেই ওখান থেকে সরে যেতে চাইলো আহানা। এই লোকের সামনেই পড়তে চায়না ও। কিন্তু বিধিবাম, তখনই রেহনুমা এসে আবিরকে দেখে ফেলে বলল,
–আরে আবির,তুমি এখানে!
রেহনুমার ডাকে সেদিক তাকালো আবির। চোখ গেল আহানার ওপরও। যথারীতি বাঁকা হাসলো সে। তারপর ওর সামনে থাকা মেয়েটাকে কিছু বলে এগিয়ে এলে ওদের কাছে। রেহনুমার উদ্দেশ্যে হাসিমুখে বলল,
–আরে আন্টি, মাই ফেবারিট লেডি। হাউ আর ইউ?
–ভালো। তা তুমি এখানে? শপিং করতে এসেছ নাকি?
–না না আন্টি, আসলে এই মলে আমার নতুন কালেকশনের প্রদর্শন করা হয়েছে। সেই জন্যই এসেছি।
–ওয়াও তাহলে তো ভালোই হলো। আহানাও নতুন কালেকশন দেখতে এসেছে। তুমি ওকে বরং নতুন কিছু ড্রেস দেখাও। আমি ততক্ষণে অন্য সেকশনে ঘুরে আসি।
আহানা মানা করতে চেয়েও পারলোনা। রেহনুমা মানবেনা তার কথা। আবির ঘাড় কাত করে আহানার দিকে তাকিয়ে বলল,
–সিওর আন্টি।
রেহনুমা চলে গেলে আবির আহানার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
–আসার আর সময় পেলিনা! এখুনি টপকাতে হলো তোর! আরেকটু হলেই কাজ হয়ে যাচ্ছিল। পুরো দশ মিনিট ধরে ফ্ল্যাট করার ফল পেতেই যাচ্ছিলাম তখুনি কাবাবে হাড্ডি হতে হলো তোকে? আরে অন্তত কিসিং সীনটাতো কমপ্লিট হতে দিতি। পুরো মেহনতে তিব্বত কদুর তেল ঢেলে দিলি।
আহানা রাগে কড়মড় করে বলল,
–মলটা আপনার একার না।আমার মন চাইছে এসেছি আপনার তাতে কী? দরকার নেই আপনার হেল্পের। আমি নিজেই দেখে নিবো।আপনি যান আপনার অসমাপ্ত মহান কাজ পূরণ করুন গিয়ে।
–হ্যাঁ যাতে আন্টির সামনে আমার ইমপ্রেশন খারাপ হয়ে যায় তাইনা? তোর ষড়যন্ত্র আমি বুঝিনা ভেবেছিস? কুফা হয়ে এসে আমার বানানো কাজতো বিগড়েই দিয়েছিস। এখন আবার আন্টির সামনে আমার ইম্প্রেশন খারাপ করার যে অসাধু কূটনীতি পরিকল্পনা করেছিস তা আমি সফল হতে দিবোনা। এখন তাড়াতাড়ি কর,যাতে আমি আমার অসমাপ্ত কাজ পূরণ করতে পারি। তোর কারণে উপস থাকতে পারবোনা আমি।
–ছিহহ্,ভাষার কী শ্রি। আপনি টায়ার্ড হন না এসব নোংরা কাজ করে করে? একই জিনিস আর কতো করবেন?
আবির করুন ভঙ্গিতে বলল,
–হুমম,টায়ার্ড তো অনেক হয়ে যাই।এতো এতো গার্লফ্রেন্ড গুলোকে একা হাতে মেইনটেইন করা তো চারটে খানি কথা নয়। ঘাম ছুটে যায় আমার। কিন্তু কী আর করার। পরিশ্রম তো করতেই হবে। কষ্ট ছাড়া কী কেষ্ট মেলেরে পাগলা। হার্ড ওয়ার্ক ইজ দ্য কি অফ সাকসেস। পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি বুঝেছিস। তোর মতো আলসের ঢেঁকি এসব বুঝবিনা।
আবির আহানাকে ডিজাইনার ড্রেস দেখাতে নিয়ে এলো। ড্রেস দেখিয়ে দায়সারা ভাবে বলল,
–নে কী দেখবি দেখ। বাই দা ওয়ে হঠাৎ ডিজাইনার ড্রেস এন অল।ঘটনা কী! ডেটিং ফেটিং শুরু করেছিস নাকি?
–একদম বাজে কথা বলবেন না। সবাইকে নিজের মতো ক্যারেক্টর লেস ভাববেন না। পরশুদিন আমার ফ্রেন্ড রিসার বার্থডে। সেই ফাংশনের জন্য ড্রেস নিতে এসেছি।
–হুমম,তো ডিজাইনার ড্রেস পড়ে পার্টিতে ক্যাটরিনা কাইফ হতে চাচ্ছিস। কিন্তু তাতে কী লাভ হবে? যাতোই ঘষামাজা কর, লাগবে তো তোকে জরিনা বানুই।
আবির একটা ড্রেস দেখিয়ে বলল,
–এইটা নে, তোর ওপর ভালো মানাবে। পুরো টিকটিকি লাগবে তোরে। দেয়ালে চিপকে গিয়ে মশা গুলো খেয়ে ফেলবি। ডিনারের ডিনারও হয়ে যাবে সাথে ফ্রীতে জনসেবাও হয়ে যাবে। দেখেছিস কী ফাটাফাটি আইডিয়া দিলাম! ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই। তুইতো জানিসই আমার উদার মন। বাহবা পছন্দ না আমার।
রাগে শরীর রিরি করছে আহানার। এতো খারাপ লোক হয় কী করে? ঘৃণায় চোখ মুখ বিতৃষ্ণায় ভরে উঠল। এতো সুন্দর মুডটা পুরো তছনছ করে দিলো লোকটা। ইচ্ছে তো হচ্ছে বুর্জ খলিফার ওপর থেকে এই জঘন্য লোকটাকে ছুড়ে মারতে।মায়ের জন্য ফেঁসে গেছে এখানে। আহানার এই ঘৃণায় ভরা চোখের দৃষ্টির অগ্নি দেখে হাসলো আবির। এটাই যেন তার অদম্য চাওয়া। অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরির পর আহানার একটা ড্রেসে নজর পরলো। পার্পল কালারের গাউন টা তার মনে ধরে গেল। আবির সেটা লক্ষ্য করে বলল,
–এই এই দেখ,ওই ড্রেসটা নিসনা একদম। তোর মতো টিকটিকির জন্য এই ড্রেস না। এসব গর্জিয়াছ ড্রেসতো আমার হটি নটি গার্লফ্রেন্ডদের জন্য। তাদের হট ফি,গা,রের সাথে এই ড্রেসটা একেবারে ভরা জোছনার আলোর মতো ঝিলিক মারবে। তুই খবরদার এই ড্রেসের দিকে নজরও দিবিনা।
স,য়,তা,নি হাসি ফুটে উঠল আহানার ঠোঁটের কোণে। এখন তো যা কিছু হয়ে যাক, সে এই ড্রেসটাই নিবে। দেখি কে ঠেকায় ওকে। আহানা সেলসম্যানের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওই ড্রেসটা প্যাক করে দিতে বললো। আবির এগিয়ে গিয়ে বলল,
–এই তোকে মানা করলাম না এটা নিতে!
আহানা এটিটিউট দেখিয়ে বলল,
–তো??? আমার পছন্দ হয়েছে আমি নিবো। আপনি কী বললেন না বললেন, আই কেয়ার আ ড্যাম।
বলেই চলে গেল আহানা। পেছন থেকে নিঃশব্দে হাসলো আবির। গাঁধিটা জানেই না এই ড্রেস আবির ওরজন্যই স্পেশালি ডিজাইন করেছে।
__
নূর বিরক্তির চরমে। এই শিখার এখনো আসার নাম নেই। আর পাঁচ মিনিট হলে ও উঠে চলে যাবে নির্ঘাত। অধৈর্য হয়ে এদিক ওদিক নজর বোলাচ্ছিল নূর। হঠাৎ কিছু চোখে পড়লো তার। মলের একটা সেলসম্যান কাস্টোমারকে পারফিউম দেখাচ্ছে। কাস্টোমার পারফিউমটা হাতে নিয়ে দেখতে গিয়ে ভুলবশত সেটা তার হাত থেকে পরে গিয়ে ভেঙে যায়। সাথে সাথে সুপারভাইজার সহ আরও কয়েকজন স্টাফ এগিয়ে আসে ওখানে। কীভাবে ভাঙলো জানতে চাইলে কাস্টোমার লোকটা ফট করে নিজের দোষটা বেচারা সেলসম্যানের উপর চাপিয়ে দিলো। সুপারভাইজার সেলসম্যানকে ইচ্ছেমতো বকাঝকা করতে লাগলো। সেলসম্যান বলছে সে ওই কাজ করেনি কাস্টোমার লোকটা করেছে। কিন্তু বেচারার কথা কেউ শুনছে না। বরং উল্টো কাস্টোমারকে দোষ দেওয়ার কারণে সুপারভাইজার তার গালে একটা চড় লাগিয়ে দিলো। যা মেজাজ বিগড়ে গেল নূরের। চোখের সামনে অন্যায় দেখে চুপ থাকতে পারলোনা সে। উঠে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল ওদের দিকে। ওখানে এসে সুপারভাইজারের উদ্দেশ্যে বলল,
–এইযে মিস্টার সুপারভাইজার, আপনি শুধু শুধু মারলেন কেন উনাকে? উনিতো ঠিকই বলেছে, পারফিউম এই কাস্টোমার ভেঙেছে, সেলসম্যান নয়।
কাস্টোমার লোকটা তেতে উঠে বলল,
–এই মেয়ে কী বলছ তুমি এসব? আমাকে কী তোমার মিথ্যেবাদী মনে হয়? তুমি জানো আমি কে? সুপারভাইজার সাহেব,কী হচ্ছে এসব? আপনাদের মলের স্ট্যান্ডার্ড কী দিনে দিনে কমে যাচ্ছে নাকি? আজকাল রাস্তাঘাটের ফকির মিসকিনরাও মলে চলে আসছে?
এবারতো মাথা পুরোই হাই ভোল্টেজ হয়ে গেল নূরের।তেড়ে গিয়ে খপ করে কাস্টোমার লোকটার কলার ধরে ঝাকিয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে বলল,
–কাকে ফকির মিসকিন বলছিস তুই হ্যাঁ! তোর মতো অমানুষের চাইতে রাস্তার ফকির মিসকানরাও অনেক ভালো। টাকা আছে বলে কী মানুষকে মানুষ মনে হয়না তোদের? গরীব মানুষদের ওপর নিজের দোষ চাপিয়ে দিতে একটুও বাঁধে না তোদের তাইনা? আবার উল্টো দাপট দেখাচ্ছিস? তোর দাপটের পাপর ভাজা না বানিয়ে দিয়েছি তো আমার নামও নূর না।
বলেই পেট বরাবর এক ঘুষি মেরে দিলো নূর। অবস্থা বেগতিক দেখে স্টাফগুলো নূরকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। এরই মাঝে গিয়াস আর শিখাও চলে এসেছে। নূরকে দেখে তাদের মাথায় হাত। দ্রুত এসে ওরা নূরকে ঠেলে সরিয়ে আনলো। সুপারভাইজার বলল,
–প্লিজ ম্যাম মারামারি বন্ধ করুন। নাহলে আমরা পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো।
নূরও প্রতিবাদী হয়ে বলল,
–হ্যাঁ হ্যাঁ ডাকুন পুলিশ। আর পুলিশকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখান। তারপর দেখেন দোষ টা কার।
এবার কাস্টোমার লোকটা একটু দমে গেল। এমনিতেও মারখেয়ে তার অবস্থা কাহিল। তাই আর ঝামেলা না বাড়িয়ে নিজের দোষ স্বীকার করে নিলো সে। সেলসম্যান কৃতজ্ঞতা জানালো নূরকে। গিয়াস আর শিখা কোনরকমে নূরকে টেনে নিয়ে গেল ওখান থেকে। তবে কিছুটা দূরে সোফায় বসে সবকিছুই দেখলো রেহনুমা বেগম। ওদের কথা শুনতে না পেলেও মেয়েটার মারামারি দেখে সে অসন্তুষ্ট চোখে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
–ছি ছি কেমন বখাটে মেয়েরে বাবা। যেখানে সেখানে অভদ্রের মতো মারামারি করে বেড়ায়। সো আনকালচারড গার্ল।
বিড়বিড় করে বললেও পাশ থেকে ঠিকই শুনতে পেল আহানা। সেও নূরের কান্ড দেখেছে। আর এই নূরই যে তার ভাইয়ের ভালোবাসা সেটাও চিনতে ভুল হয়নি তার। মনে মনে আপসোস হচ্ছে ভাইয়ের জন্য।প্রথমেই মায়ের মনে নূরের প্রতি যে নেতিবাচক প্রভাবটা পড়লো, নাজানি ভাইয়ের কপালে কী আছে। এখনতো উপরওয়ালাই সহাই ভাইয়ার।
চলবে…..