শুভ্রনীড়
পর্ব১৪
#Shamu_Choudhury

মালী আসলে সবাই মিলে অনেক কষ্ট করে দরজা ভাঙে তারপর দেখে পুরো রুম ধুমায় ধুমায়িত। সবার কাশতে কাশতে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। একটু পর সবাই রুমে ঢোকে সবাই দেখে পুরো রুম জুড়ে শুধুই শির আর শির। সবাই হতবাক হয়ে যাক। রুমটা গোছালো কিন্তু অন্য রকম কি বিদঘুটে গন্ধ মিরার বমি বমি পায়। সে বুঝে উঠেনা আসলে কি করা উচিত। তবুও সে রুমের ফ্যান ছেড়ে ভিতরে ঢোকে। ভিতরে কিছুই পায়না। মিরা আর বাকি লোক ভেবে পায়না এসব কে করেছে আর এইগুলোই বা কি? আমান বলেছিল স্টোর রুম অনেক আগে থেকে বন্ধ আছে। আমান এই সব কিছু থেকে অজানা। মিরা আস্তে আস্তে সামনে এগোতে থাকে হঠাৎ করেই লোহার শিকলের সাথে পা পেচিয়ে যায় আর মিরা পরে যায়। ব্যাথার আর্তনাদ করে উঠে। কাজের লোক গুলো মিরা কে শিকল থেকে ছাড়িয়ে নেয়৷ মিরা উপরে উঠে হাত এর ধুলা মুছতে নিলে দেখে সে যেখানে পরেছিল ফ্লোরের সেখানে দরজার মত কিছু যে রকম টা হলিউডের বা বলিউডের অন্যতম হরর মুভী গুলোতে দেখা যায়। তার মনে হয় নিচে বেইসমেন্ট আছে। আশ্চর্য ব্যাপার হল যে কেউ তাতে যেতে পারবে। সে যাওয়ার আগে শ্রাবণ কে ফোন করে নেয়। কিন্তু শ্রাবণ ফোন উঠায় না। তিন-চার বার ফোন দেওয়ার পর ও না ধরলে মিরা ঠিক করে সে একাই ভিতরে যাবে।

__অন্যদিকে তারা সবাই শুভ্রাকে খুজতেছে কিন্তু কোন ভাবেই তার হদিস পাচ্ছে না৷ আমান এখন আর কাদঁছেনা তবে কারো বুকে অনবরত ছুরি মারলে যে ব্যাথা হয় তার থেকে শতগুন ব্যাথা সে অনুভব করছে৷ এর মাঝেই সবার মুখ চোখ শুকিয়ে গেছে৷ কাল থেকে তারা কিছুই খায়নি। না খেয়ে চলাও মুশকিল। অনেক খুজাখুজি করে তারা কিন্তু শুভ্রার খোজঁ মিলে না। আমান শ্রাবণ আর ইউভীর দিকে তাকায় না খেয়ে আর চিন্তায় তার মুখ শুকিয়ে গেছে। আমান ভাবে শুধু শুভ্রার চিন্তা করলেই তো হবেনা তাদের যে আরোও দুইটা ভাই আছে তারা না খেয়ে আছে তাদের কিছু অন্তত খাওয়া দরকার। আমান তাদের কে বাসায় যেতে বলে আর বলে সে নিজেই খুজতে থাকবে। কিন্তু কেউ রাজি হয়না। তাদের জন্য আমান শুভ্রনীড় এ ফিরতে রাজি হয়ে যায়।

__
শোন,তোমরা সবাই এখানেই থাকো কাউকে তো থাকা লাগবে বল? না হলে শ্রাবণ দের খবর দিতে পারবোনা। আমি বরং একাই যাই।

মিরা এক নাগাড়ে এসব কথা বলে কাজের লোক দের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু তারা রাজি হয়না। এসব ভুতুড়ে জায়গায় থাকাও কি রকম একটা৷ তারা বলে তারা তাদের সাথেই যাবে। মিরা বলে তাহলে তারা যাক সে থাকুক। কিন্তু এতেও তাদের আপত্তি। অবশেষে মিরা হার মানে। সবাই বেইসমেন্টের ভিতরে যাওয়াতে রাজি হয়।
কিন্তু মিরা দেখে ভিতরে যাওয়ার দরজায় তালা দেওয়া তালা টা অনেক ক্ষুদ্র। সে এক নিমিষেই বুঝে যায় এর চাবি কোথায় পাওয়া যাবে। কারণ একদিন সামিহাকে ডাক দিতে গিয়ে মিরা দেখে সামিহার বেডে একটা চাবি। চাবিটা খুবইইইইই ছোট। সে কৌতুহল বশত সামিহাকে প্রশ্ন করে কিন্তু সামিহা এড়িয়ে যায়। চাবিটা কোথায় রেখেছিল তা জানত না। কিন্তু একদিন কাজের মেয়েটা সামিহার রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে সেই চাবিটা পেয়েছিল আর মিরা কে দিয়েছিল। মিরা সেইটা তার কাছে রেখে দিয়েছিল। মিরা এক দৌড়ে গিয়ে সেই চাবিটা আনে আর চাবিটা দিয়ে এক মুহুর্তেই তালা খুলে যায়। মিরা ভেবে পায়না এখানে সামিহা কি করবে বা কি করেছে।
তারা সবাই দরজাটা খুলে দেখে তার সাথেই লাগানো সিড়ি রয়েছে। আর তার ভিতর ছোট বড় কয়েকটা কামরা। দরজা টা ছোট হলেও বাহিরে থেকে মনে হচ্ছে কামরা গুলো বেশ বড়। একদম পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছেনা তবে আবছা আবছা বোঝা যাচ্ছে। সিড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে সবাই বেইসমেন্টের ভিতরে ঢোকে। কেউ কালেমা পড়ছে আবার কেউ ইউনুস দোয়া পড়ছে।আস্তে আস্তে নিচে যাওয়ার পর মিরা আমান কে ফোন করতে যায়।কিন্তু সে দেখে ফোনে কোন নেট নেই। সাধারণত বেইসমেন্টের ভিতরে নেট না থাকারি কথা। সে আস্তে আস্তে এগোতে থাকে নিচে পানিতে চিপচিপা একটা ভাব। কেমন বিচ্ছিরি গন্ধ।এখানে সেখানে মরা ইদুর পরে আছে তা থেকে আরোও বিদঘুটে গন্ধ বের হচ্ছে। মিরা ওরনা দিয়ে তার নাক ঢাকে। সিড়ির কাছে থেকে দেখা যাচ্ছে কামরাগুলোতে কি যেন ঝুলানো আছে। একটু এগোতেই মিরা আতঁকে উঠে। তার পায়ের নিচের পানি পুরো লাল। এইগুলা রক্ত ছাড়া অন্য কিছু হতে পারেনা।কেননা সেগুলো থেকে রক্তের গন্ধ আসতেছে সে তো ডাক্তার সে কোনটা রক্ত আর কোনটা কি সহজেই বুঝে যাবে। মিরা ভয়ে ঢোক গিলে। সে ফিরে আস্তে চায়। ভাবে এখন না পরে আমান দের সাথে আসাটাই শ্রেয়। এই ভেবে সে দরজার দিকে অগ্রসর হয়।
কিন্তু আকস্মিকভাবে পিছন থেকে কাজের মেয়েটার চিৎকারে মিরার পা থমকে যায়। সে এক নিমিষেই পিছে তাকায়। ভয়ে, অভিশঙ্কায় তার বুক ধুকপুক ধুকপুক করতে থাকে।সে দেখে কাজের মেয়ে বেইসমেন্টের ফ্লোরে পরে আছে।আর তার রক্তে এইবার মনে হয় সব টুকু পানি রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। তার এই অবস্থা দেখে মিরা ভয়ে কাপঁতে থাকে। সে মাথা তুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। এ সে কাকে দেখছে? তাহলে এতদিন সে মুখোশ ধরে এ বাসাতে ছিল?

সামনে থাকা মানুষ্টার হিংস্রতা দেখে মিরা পালাতে চায়। সিড়িতে একপা দিতেই পিছনে থাকা লোকটা তার হাতের ধারালো ছুরি দিয়ে মিরার পায়ে এক কোপ দেয়। মিরা সেখানেই পরে যায় তিব্র ব্যাথায় আর্তচিৎকার করে উঠে। পা থেকে রক্ত গলগলিয়ে পরতে থাকে। তার সাহস হয়না সে পায়ে হাত দিবে তবুও ভয়ে ভয়ে ওরনা ছিড়ে তার এক টুকরো পায়ে কোনমতে বাধেঁ। তবুও তাতে কাজ হয়না রক্ত সেই আগের মত পরতে থাকে। মনে হয় ক্ষতটা খুবই গভীর হয়েছে। মিরা ডুকরে কেদেঁ উঠে আর বারংবার একটা কথায় বলে,,

তুমি না বলেছিল তোমার মেয়ে নেই। আমি তোমার মেয়ের মত তাহলে আমাকে মারতেছো কিভাবে? আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ____!

আর কিছু বলার আগেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি তাকে ক্লোরোফর্ম শুকিয়ে অজ্ঞান করে নিয়ে যায় বেইসমেন্টের কোন এক অজানা রহস্যময়ী কামরায়৷

অন্যদিকে আমান রা বাসায় ফিরে। কিন্তু বাসায় কাউকে দেখতে না পেয়ে অবাক হয়। শ্রাবণ এতে রেগে যায় কারণ সে বলেছিল তারা তিন জন শুধু শুভ্রা কে খুজঁতে যাবে ওদের কে যেতে বলেছে?

আমান শুনে বলে,

আরে ওরা কোথাও যায়নি। গেলে এতক্ষণে ফিরে আসতোনা। গিয়ে দেখ উপরে আছে। মিরা কে বলেছিলাম সব কিছু ঠিক ঠাক পরিষ্কার করে রাখতে এমন কি স্টোর রুমও তাই হয়ত তারা ক্লান্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে।

আমানের কথা মতে শ্রাবণ উপরে যায় ঠিকি তবে মিরাদের পায়না। তারা তো আর জানেনা মিরা কোন বিপদে রয়েছে। শ্রাবণ হন্নি হয়ে খোজাঁর পরও তাদের না পেলে ফোন করতে যায়। কিন্তু সে দেখে মিরা তাকে ফোন দিয়েছিল। তার কপালে চিন্তায় সুক্ষ্ম ভাঁজ পরে। সে নিচে এসে আমাদের জানায়। ইউভী বলে,

আমাদের উদ্দেশ্যে ছিল শু কে খুন করা বাকি দের কাউকে না। তাহলে? তারা কিভাবে উধাও হয়।

ইউভীর মুখে এসব কথা শুনে আমান আতঁকে উঠে। সে সব কিছু শুনতে চায়। শুনতে চায় কিভাবে ইউভী এসব পথে আসলো। ইউভী বলতে না চাইলেও আমান আর শ্রাবণ জোর করে। তাদের জোরাজুরি তে ইউভী হার মানে আর বলতে থাকে।

সে যখন ছোট ছিল তখন শুভ্রার বাবার ডায়েরি পেয়েছিল। তখন সে না বুঝলেও আস্তে আস্তে সব বুঝে যায়। এমন কি সেই ডায়েরির জন্য শুভ্রার বাবা খুন হয় তাদের প্রধানের হাতে। তবে এইটা সে বড় হয়ে জানতে পারে৷
এর মাঝে আমান প্রশ্ন করে,

ডায়েরি মানে? যেইটা আমার কাছে আছে? আমি তো সেইটা খুলেও দেখিনি। চাচ্চুর সৃতিচারণ হিসেবে রেখে দিয়েছি। সেই খানে কি এমন ছিল?? যার জন্য চাচ্চু কে খুন করা হয়েছে?

সেই ডায়েরির ভাজে ভাজে অনেক কালো জাদু রয়েছে। রয়েছে ইলুমিনাতিদের গোপন অনেক কিছুর রহস্য আমি এর বেশু কিছু জানিনা। তবে চাচ্চু কালো জাদু করত শয়তানের পুজারী ছিল৷ আমি এমনিতেই সবার সাথে তেমন মিশতাম না আর ডায়েরিটা পাওয়ার পর থেকে নিজেকে আরোও বন্দি করে নেই চারদেয়ালের মাঝে। সবসময় সেইটা পড়ার চেষ্টা করেছি তবে বুঝিনি। আস্তে আস্তে আমি নেটে সার্চ করতে থাকি। আর পেয়ে যাই জার্মানে অবস্থিত সেই সুইসাইড ফরেস্ট এর ঠিকানা। যা আমার সব কিছুর রহস্য ভেদ করে দিয়েছিল। সেই ফরেস্ট আছে অনেক পুরোনো এক কবর। সেখানে দিন বা রাতে কাউকেই দেখা যায়না। যারা যায় তারা শুধু সুইসাইড করতেই যায় আর তাদের লাশ যদি ঠিক টাইমে পাওয়া যায় পঁচে না যায় তবে সেই কবরস্থানে মৃতদের দাফন করা হয়। সেইখানে আমি প্রথম গিয়ে কাউকেই পাইনি। তালা দেওয়া ছিল আর মানুষের লাশের ছিল প্রচন্ড গা গুলিয়ে দেওয়া গন্ধ। তবুও আমি অনেক কষ্ট করে সেখানে ঢুকি তবে লাশের মৃত দেহের পঁচা গন্ধে আমি থাকতে পারিনি। জোর করে থাকলেও সেখানে জ্ঞান হারায়। বলে বুঝাতে পারবোনা এত অসহ্যকর গন্ধ। আর তারপর জ্ঞান ফিরলে আমি কবরের ভিতরে নিজেকে আবিষ্কার করি।

তার শেষের কথা শুনে আমান আর শ্রাবণ দুজনেই আঁতকে উঠে।তাদের দুজনার চোখে ভয় বিদ্যমান।আর কবরের ভিতর মানে? দুজনেই প্রশ্ন ছুড়ে মারে ইউভী কে।

চলবে?
(এসাইনমেন্ট এর কারণে বড় বড় পর্ব দিতে পারবোনা। তবে প্রতিদিন দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here