শুভ্রনীড়
পর্ব১০
#Shamu_Choudhury
শুভ্রার ফজরের ওয়াক্তে ঘুম ভেঙে যায়। সে ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে আমান তাকে জড়িয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। তাকে দেখে সে মুচকি হাসে মনে মনে ভাবে আজ সকাল টা শুরু হক নতুন কিছু দিয়ে,
যেই ভাবা সেই ডাক।
এই যে শুনছেন?? একটু উঠবেন?
শুভ্রার আকস্মিক ডাকে আমান ধরফরিয়ে উঠে, তার মনে এখনও ইউভীর কথা বাজে সে যে তার ছায়াবিনীর ক্ষতি করতে চায়। কেন করতে চায় আমান তা জানেনা, তাই একটু বেশি তার ছায়াবিনী কে নজরে রাখতে চায়। সে যেমন চায় তার ছায়াবিনী তার পাশে ছায়াবিনী ছায়া হয়ে থাকুক সে রকম ভাবে সেও তার পাশে থাকতে চায়। সে এসব ভেবে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে শুভ্রার চোখে করুণ ভাবে চোখ রাখে।
আমান শুভ্রার দু গালে দু হাত রেখে তাকে ভীত গলায় প্রশ্ন করে,
তুমি ঠিক আছো ছায়াবিনী? তোমার কিছু হয়নি তো? এর আগে তো তুমি আমাকে এইভাবে কখনো ডাকোনি? কি….
আরে থামেন থামেন। একসাথে এত গুলা প্রশ্ন। বাব্বাহ!! আমার এত কেয়ার কেন করেন? আমার কিছু হয়নি৷ আজ চেয়েছিলাম যাতে ফজরের ওয়াক্তে ঘুম ভেঙে যায় আর আমরা একসাথে নামাজ পড়তে পারি।
আমান কিছু বলতে লাগলেই শুভ্রা তার দুই হাতের উপর হাত রেখে বলে
কথা তো শেষ হতে দিবেন নাকি? শুনুন আমি চেয়েছিলাম বিয়ের প্রথম রাতেই এই নফল নাজাজ টা পড়তে কিন্তু আমার ঘুমের জন্য হয়ে উঠেনি। আল্লাহর কাছে সুকরিয়া
আদায় করতে হবে, তিনি যে আমাকে উত্তম জীবন সঙ্গি দান করেছেন তার জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ দুজনে এক সাথে আদায় করবো। পড়বেন না??
আমান শুভ্রার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে আবার তার হাত ধরে চুমু খায়
অব্যশই, কেন নয়? তবে অজু টা তুমি করে দিবা? এতে একটা তৃপ্তি পেতাম এই বলে আমান খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। তার হাসির উপর শুভ্রার বরাবরই দূরবলতা কাজ করে। সে আর আমান কে মানা করতে পারেনা৷
সে আর আমান অজু করে বাহিরে আসলে শুভ্রার ওরনার আচল দিয়ে আমান মুখ মুছে আর শুভ্রার মুখটাও মুছে দেয়। তারপর আমান একটা জায়নামাজ দৈর্ঘ্যের দিক না বিছিয়ে প্রস্থের দিক বিছায়। তারপর দুজনেই একি জায়নামাজে নামাজ আদায় করে। নামাজ আদায় পর আমান শুভ্রা কে বলে সে কোরআন পড়তে পারে কিনা!
শুভ্রা বলে অনেক আগে পড়তে পারতো এখন একটু আধটুকু ভুল যায়। আমান তাকে বলে সে শিখিয়ে দিবে কাল থেকে তার পড়া শুরু। এই বলে আমান শুভ্রাকে নিয়ে নিচে বাগানে নিয়ে যায়,,
শুভ্রার কথাতে সে পাশের জায়গাটায় কাঠগোলাপ লাগিয়েছিল আজ কয়েকটা ফুটেছে। আমান শুভাকে দোলনাতে বসায়। আর সে কাঠগোলাপ আনতে যায়। শুভ্রা নিজ মনে দোল খেতে থাকে।
অন্যদিকে দুই কপোত-কপোতী উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় উঠে বসে আছে। আজ রাত টা তারা ঘুমায় নি। তাদের জীবন টা কেমন জানি ফেকাশে হয়ে গেছে না আছে তারে কোন রঙের ছোঁয়া৷ সবকিছুই যেন বর্ণহীন।
এত নিরবতার মাঝে ইউভী পাংশুটে ভাব নিয়ে বলে উঠে
_জানো সামিহা। আমি একজন নরপশু। যে নিজেই নিজের বাবাকে খুন করতে দ্বিধা করিনি। কত নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছি। আমি আবার আগের ইউভী হতে চাই সামিহা যে সবাই কে ভালোবাসতো। তাকেও সবাই ভালোবাসতো। আমি সেই ইউভী হতে চাই যে বন্ধু ছাড়া সবকিছুতে অন্ধ ছিল। হিংস্র পশু হয়ে বাঁচতে খুব কষ্ট হয়।
সব কিছু সহজ না ইউভী। তোমাকে বলা হয়েছিল পরে চাইলেও তুমি পিছু ফিরে তাকাতে পারবেনা৷ তুমি শোনোনি একবার এই রকম গন্তব্যস্থীর করলে সে পিছু ফিরে তাকাতে পারেনা। তুমিও পারবেনা৷
সামিহা এই সব বলে ভাবতে লাগে, আমিও চাই ভালো হতে তবে কখনো তা সম্ভব না ইউভী। তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু আমার হাত থেকেই তোমার নিস্তার নেই। সবকিছুতে রয়েছে মরণ খেলা। আমার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তোমাকে বলি দিতে হবে৷ যার জন্য তোমাকে আমার আটকাতে হবে। এই সব ভেবে সামিহা আবার বলে উঠে,
তুমি নিজের বাবার খুনী। এত মানুষ কে হত্যা করেছো। তুমি নিজে যদি ভালো হতেও চাও তাহলে তোমাকে জেলে যেতেই হবে সেখানে হয়ত তোমার ফাঁসি না হলে যাবতজ্জীবন কারাদণ্ড হবেই। তার থেকে তুমি তোমার উদ্দেশ্য অটল থাকলে অমর হতে পারবে। এইটা কি লাভ না বল??
কিন্তু আমান আমাকে বলেছিল আমি ভাল হয়ে গেলে তারা আমায় অনেক ভালোবাসবে। সে আমার কিছুই হতে দিবেনা। আগের বারের মত আমাকে বাঁচাবে। ইউভী হাসি মুখে বলে উঠে। কিন্তু সামিহা তার হাসিতে না হেসে তিক্ততার সাথে বলে উঠে,
মূর্খের মত কথা বলোনা। যাকে তুমি মারতে চেয়েছো সে তোমাকে ভালোবাসবে? তাও এত কিছুর পর তুমি ভাবলে কিভাবে??
সামিহার কথা শুনে মূহুর্তের মধ্যে ইউভীর মন খারাপ হয়ে যায়। সে সামনে তাকিয়ে ভাবে, আজ যদি সে লোভে পড়ে না আসতো তাহলে তার জীবন আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতই হত৷ যদি সে ডায়েরীটা নে পেত আজ তাকেও সবাই ভালোবাসতো৷ এ সব ভাবতে ভাবতে ইউভীর গাল বেয়ে এক ফোটা অশ্রু কণা পরে যায়৷
ভদ্রতা কি বুঝ?? বেয়াদব কোথাকার। দেখা যাচ্ছে কেউ দরজা খুলে দিচ্ছেনা এইভাবে কেউ বার বার নক করে?? আর এই বাড়িতে তোমার কি চাই?
শ্রাবণ সারারাত কাজ করেছিল সকালে ঘুমাবে কিন্তু তখনও ব্যস্ত থাকায় দুপুরে গোসল করেই ঘুমিয়ে পরে। একটু ঘুম না হতেই কলিং বেল বেজে উঠে। সে ভেবেছিল কেউ হয়ত দরজা খুলে দিবে কিন্তু বার বার কলিং বেল বাজার কারণে নিজেই এসে দরজা খোলে। দরজা খুলেই সে সামিহাকে দেখে। বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পরে যায়।ইচ্ছে হয় সামিহাকে বেধড়ক মারুক কিন্তু সে পারেনা। যার জন্য সে প্রশ্ন টা করে,,
না মানে কয়েকদিন ছিলাম না। তাই শুভ্রার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিলো। শুভ্রা কে পেলে সব বলে দিবো।
( এর মাঝেই মিরা চলে আসে। সে শ্রাবণের হসপিটালের একজন ডাক্তার। তারা এর আগে একই মেডিকেল স্টুডেন্ট ছিল। বলতে গেলে শ্রাবণের আমান বাদে সে এক মেয়ে বান্ধবী আছে। যে কাজের জন্য অন্য জায়গায় ছিল। এতদিন পর ফিরে এসেছে সে এসে বলে,,)
কে আপনি? কাকে চান? ভিতরে আসুন।
সামিহা ভিতরে ঢুকতে চাইলে শ্রাবণ বলে উঠে মেরু তুই চুপ কর৷ এই মেয়ের হাবভাব ভালো না। একে একদম এলাউ করবিনা। এই তুমি বের হও তো।
(এই বলে শ্রাবণ তাকে বাহিরে টেনে এনে দার করায়। সে জানে এই মেয়ে মোটেও সুবিধার না। সেদিন হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায় আবার এতদিন পর আছে। দরকার নাই এমনিতে অনেক ঝামেলা আছে। কিন্তু সামিহা যাওয়ার বদলে চেচামেচি শুরু করে দেয়। এতে শুভ্রা আর আমান ও বের হয়ে আসে শুভ্রা সামিহা কে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। শুভ্রা কে দেখে শ্রাবণ থেমে যায় কারণ শুভ্রা অনেক কিছুই জানেনা৷ তার সামনে এমন কিছু করা উচিত না যাতে আমান যে ইউভী না এইটা বের হয়ে আসে)
কোথায় ছিলি এতদিন? আমার বিয়েতেও ছিলিনা? সব কিছু খুলে বল তো
শুভ্রার কথা শুনে সামিহা কাঁদো কাঁদো মুখের ভাব নিয়ে তার বানানো গল্প শুরু করে দেয়
দোস্ত তুই বলার পর আমি শপিং এ যাচ্ছিলাম। হঠাৎ অনেকজন আমার সামনে এসে দাঁড়ায় তারা আমার গাড়ি লূট করে আর আমাকে বলে আমার মা খুব অসুস্থ।সে বিশ্বাস করতে না চাইলে তাকে তার মার ছবি দেখানো হয়। তারাই আমার ভিসা করে দিয়েছিল যার জন্য আমি চলে গিয়েছিলাম।
কিন্তু তোকে খবর কে দিয়েছিল?? তাদের চিনিস? অচেনা লোক তো খবর দিবেনা?
_জানিনা রে। হতে পারে আমান এই বলে সামিহা শুভ্রার দিকে তাকায়। তার ও আমানের কথা মনে পরে। এতদিন তার মনেই ছিলোনা।এতদিনে আমান কে সে দেখেইনি। আজব একবার অন্তত চোখে পরার কথা ছিল। শুভ্রা এত ভাবেনা। সে সামিহাকে আমান আর তার পিক দেখায় আর বলে এইটা তার ইউভী৷
সামিহা সব জেনেও কিছু বলেনা এমন ভাব করে সে ইউভীকে প্রথম দেখছে। আর সে তো জানে আসল ইউভী কে? কিন্তু সে শুভ্রা কে কিভাবে বলবে খুজে পায়না৷ তাকে এমন কিছু মনে করে দেওয়া উচিত যা আমানের কাছে নাই। যা প্রমান করে দিবে আসল ইউভী কে?
এর মাঝে আমান শুভ্রাকে ডেকে পাঠায়। শুভ্রা চলে গেলে সামিহা ইউভী কে ফোন করে।
হ্যালো,,
হ্যাঁ হ্যালো। তোমাকে কেউ কিছু বলল? এতদিন কোথায় ছিলে?
না এখনও কেউ কিছু বলেনি আমি সব বুঝে নিব। শুভ্রা কে আমানের কথা বলার পর তুমি শুভ্রার সামনে আসলে তাকে নিয়ে যাওয়া সহজ হবে। তারপর আমাদের উদ্দেশ্যে হাসিল হবে।
হুম ঠিক আছে। (এই বলে ইউভী ফোন কেটে দেয়। সে চায়না শুভ্রা মারা যাক। এ জন্য যা করার সে করবে। সে আর কাউকে মারতে চায় না সে বাচঁতে চায় বাচাঁতে চায়)
___হ্যাঁ আমায় ডেকেছিলে??
হুম কোথায় থাকো সারাদিন?আমান শুভ্রাকে কাছে টেনে নিয়ে বলে।
আমায় ছাড়া বুঝি আপনার চলে না?
উহহ, প্রাণ ছাড়া কেউ বাচঁতে পারে? আমার প্রাণপাখি তো তুমি। তুমি ছাড়া বাচঁতে না পারলে চলবো কিভাবে??
হুম তাই তো। আর আমায় ছাড়া আপনাকে চলাও লাগবেনা বুঝছেন। আপনার ছায়াবিনী ছায়া হয়ে থাকবো। বলেন ডাকলেন কেন? এতদিন পর সামিহা এসেছে।
সামিহার সাথে থাকা লাগবেনা৷ ওর থেকে মিরা বেশি ভালো ওর সাথে থাকবা। আচ্ছা তোমার বান্ধবী এতদিন কোথায় ছিল?
আন্টির অসুস্থতার জন্য সে বাসায় গিয়েছিল।
অহ। সে তো জানতোনা আমরা এখানে আছি। কেউ ই জানেনা তাহলে সে খোঁজ পেলো কিভাবে? তুমি বলেছো শুভ্রা??
না না। সামিহার সাথে তো আমার কথায় হয়নি। শ্রাবণ ভাইয়া হয়ত বলেছে।
আমান বলে উঠে, জানিনা কেন ছায়াবিনী। সামিহাকে আমার ভালো মনে হয়না। তুমি কিছু মনে করো না। কিন্তু তার থেকে সাবধানে থেক প্লিজ।
আচ্ছা আমি জানি অই অনেক ভালো। আমি ওর কলিজা ওর থেকে কোন ভয় নেই। চাচ্চুর কি হল? কিছু জানা গেলো?? শুভ্রা করুণ কন্ঠে বলে উঠে।
অনেক কিছু জানা গেছে প্রাণপাখি। আমার সাথে আসো। এই বলে শুভ্রাকে আমান নিয়ে যায়_____
চলবে???