শুভ্রনীড়
পর্ব০৯
#Shamu_Choudhury
ডুকরে কাদঁতে কাদঁতে আমান বেহুশ হয়ে গিয়েছিল, সে কেন এই রকম করেছিল তাও শ্রাবণ জানেনা। একটু আগেই আমানের জ্ঞান ফিরে, জ্ঞান ফিরার পর আমান যেইগুলা বলে শ্রাবণ তা শুনে নিজেকে বাকশক্তিহীন ভাবে। এইগুলা কি আদৌও সম্ভব???
সেদিন সিসিটিভি ফুটেজ এ আমান খুনির পায়ে একটা ট্যাটু দেখেছিল সেইম ট্যাটু আমানের পায়েও ছিল। আমান ছাড়া সেইম ট্যাটু ইউভীর পায়ে রয়েছে। আলভী রাহমান কে ইউভী মেরেছে এইটা সে বিশ্বাসই করতে পারেনি। ইউভী এত নৃশংস ভাবে নিজের বাবাকেই খুন করবে সে কখনো ভাবেনি, আমানের কল্পনার বাহিরে। সে ইউভীকে কত বিশ্বাস করতো সে ভাবতো ইউভী যতই খারাপ হোক সে কখনো কাউকে আঘাত করতে পারবেনা৷
এই জন্য তো একবার ইউভীর নামে মার্ডার কেইস হলে,ইউভীকে আমান মিথ্যা প্রমানের স্বাক্ষ্য দিয়ে জেল থেকে বের করে এনেছিল। তাতে ইউভীর উক্তি ছিল এই রকম সে কিছুই করেনি,
ড্রাইভ করার সময় কিছু লোক হেল্প চাইলে ইউভী তাদের হেল্প করে, পরর্বতীতে তারাই তাদের লোক কে মেরে ইউভীকে ফাঁসিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ইউভীর বিরুদ্ধে পোক্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ থাকলেও আমান তা বিশ্বাস করেনি। সে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেছিল ইউভী। সে নিরীহ মানুষদের প্রতি অবিচার করেছিল এইটা ভেবে নিজেকে তার খুন করতে ইচ্ছে করছে। সেদিন যদি সে সব কিছু ভেবে দেখতো, আজ এত বড় পাপ করা থেকে বেঁচে যেত। সে ইউভীকে খুজতে চায় তাকে প্রশ্ন করতে চায় সে কেন নিজের বাবাকে খুন করেছিল? কি কারণে?
সে কেন খুনী বানিয়েছে নিজেকে??
এই সবের মাঝে দুইদিন চলে যায়, আমান নিজেকে দোষী ভাবলেও সে চায় সবাই তাকে আগের মত দেখুক তাই তার প্রচেষ্টা
_আরে ভাই বলনা?? এই রকম কেন করতেছিস? সেই কখন থেকে বলে যাচ্ছি, কিছু তো টিপস দিবি নাকি??
(লাগাতার বার বার শ্রাবণ কে আমান এক কথা বলে যাচ্ছে। যে আমান কে রোমান্সের কিছু টিপস শিখিয়ে দিতে। শ্রাবণ এক কথায় বলে দেয় সে পারবেনা৷ তবুও আমান তার পিছু ছাড়েনা। অবশেষে তারা নেট ঘাটতে লাগল,কেননা শ্রাবণ এখনও ওসব প্রেম ট্রেম করেনি রোমান্স কিভাবে করে সে কিভাবে বলবে?? তার উপর তার আবার টিপস চাই)
শুভ্রা তার বেল্কুনিতে অবস্থানরত স্যাকুলেন্ট গুলোতে পানি দিচ্ছিলো। আমান এসেই তাকে জড়িয়ে ধরে। শুভ্রার বুঝতে বাকি থাকেনা রোজকার অভ্যাস এইটা তার। শ্রভ্রা চুপ করে মুচকি হেসে পানি দিতে থাকল। আমান তার নড়চড় না দেখে বলে উঠে,,
__তোমাকে কি নামে ডাকলে খুশি হবে? ময়না পাখি,টিয়া পাখি,চড়ুইপাখি, বাবুই পাখি,জান পাখি না অন্য কোন পাখির নাম??
(এই রকম প্রশ্ন শুনে শুভ্রা কি রিয়্যাক্ট করবে ভেবে পাইনা এইটা আবার কি বাচ্চামো?? আমান আবার বলে উঠে,,)
__প্রাণপাখিইইইইইই
(বলেই সে এক নয়নে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে থাকে,শুভ্রা কি রিয়াকশন দিবে তা দেখার জন্য শুভ্রা আমানের দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয়। আমান বলে প্রাণপাখি তে তাহলে তুমি খুশি?? আচ্ছা সেইটাই বলব)
_কি বাচ্চা দের মত করতেছেন?? এইগুলা ডাকের থেকে তো বেশি খুশি হই আপনার ওইটা দেখে(এই বলে শুভ্রা গাল টিপে হাসতে থাকে)
_আমান বেকুবের মত বলে কোনটা দেখে? বল আমি সেইটাই দেখাবো
_শুভ্রা আমানের গাল টেনে বলে,
আপনার টোল মার্কা হাসি দেখে।
আমান ফিক করে হেসে বলে,,
__কিইইই?? হাসি তাও আবার টোল মার্কা??এই বলে সে হাসতে থাকে। শুভ্রা রাগী লুকে তার দিকে তাকিয়ে চলে যেতে লাগলে আমান এক হেচকায় বুকে জড়িয়ে তাকে বলে,,
_প্রাণপাখি,,,,
জানো আমার হৃদ্ররাজ্যের
রাজরাণী শুধুই তুমি__
তোমাকে আমার হৃদরাজ্যের
হৃদমহলের অলিতে গলিতে
তোমায় বিরাজমান রাখতে চাই।
কানায় কানায় তোমার ভালবাসা দিয়ে
সবকিছু পরিপূর্ণ করতে চাই,
তোমার সৃতিচারণ কে
পুষ্প আকারে
আমার হৃদমহলের উদ্যানে
সজ্জিত করে রাখতে চাই।
আমি আর কাউকে না শুধু আমার ছায়াবিনী কেই চাই চাই চাই____
(এই বলে আমান শুভ্রার কপালে চুমু খেয়ে বলে হবেনা আমার ছায়াবিনী? থাকবেনা আমার ছায়া হয়ে? শুভ্রা অশ্রুসিক্ত লোচনে আমানের দিকে তাকিয়ে বলে,,
__আমি আপনার ছায়াবিনী হতে চাই
যে অন্ধকারে আপনার পাশে থাকবে,,
আমি আপনার ছায়া হয়ে থাকতে চাই
যে আলোতেও আপনার পাশে থাকবে।
আমি আপনার ছায়াবিনী ছায়া হতে চাই,
যে চাইলেও কখনো আপনাকে ছেড়ে যেতে পারবেনা আর কখনো যাবেওনা।।।
এই বলে আমানের বুকে শুভ্রা মাথা রেখে আবার ও বলে,
_জানেন আপনার ব্যক্তিত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি, কথাবার্তা, চালচলন ইত্যাদি সবকিছু আমাকে টানে, শুধু টানে না বার বার ভালবাসতে বাধ্য করে। আমি জানিনা আপনার মাঝে কি আছে তবুও আমি আপনার মাঝে সুখ খুজে পাই। এই যে আপনার বুকটাতে যে সুখ তা পৃথিবীর অন্য যে কোন সুখ কে হার মানাতে প্রস্তুত।
__দিনশেষে তুমি আর শ্রাবণ ছাড়া আমার কেউ নেই প্রাণপাখি।
ভালোবাসি বড় বেশি
(এই বলে আমান তাকে আরোও শক্ত করে বুকে ধরে রাখে যাতে তার ছায়াবিনী কে সবসময় সে পাশে পায়))
____অন্য দিকে
সামিহা ফিরে আসতে চেয়েও আসেনি। তাদের প্রধান ইউভী আর সামিহাকে এক লোক কে খুন করতে পাঠিয়েছে। তাদের প্রধান চায় এক হাজার লোকের শির(মাথা)। তধন্ন্যে নয়শত নব্বই টি তিনি পেয়েছেন। বাকি শুধু দশ টি এই দশ টির জন্য লোক বাছাই করা শেষ তার মাঝে একটিকে তারা আজ খুন করতে যাচ্ছে আর শেষ শিরটি হবে শুভ্রার। কেননা,,তাদের প্রধান যখন ইউভীর বাবাকে খুন করতে বলে সে রাজি হয়না। যখন সে রাজি হয়না তখন ইউভীকে বলা হয় তার বাবার উনার সব সম্পত্তি ইউভীর আরেক ভাইকে দিতে চায়৷ ইউভী জানতোনা তার কোন ভাই ছিল। প্রধান ইউভীকে অনেক মিথ্যা ভুল ভাল বুঝায়। উনি বলেন ইউভী যখন বাসায় ফিরতোনা তার বাবা অন্য মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করতেন তারা বাবা ছিল ফুর্তিবাজ। এজন্য তার মায়ের অসুখ হলেও তার বাবা মেয়েতে মত্ত ছিল যার কারণে ইউভীর মা অকালেই মারা যায়। এরূপ অনেক কিছু বুঝানোর কারণে ইউভী তার বাবা কে খুন করতে রাজি হয়। সে তার বাবার কে প্রথমে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করে যার কারণে তার বাবাকে মারার আগে ইউভী এই সব কিছু বল্লেও তার বাবা প্রতি উত্তরে তাকে সঠিক টা জানাতে পারেন নি। প্রধান বলেছিল তার বাবাকে খুন করে তার শির এনে দিতে। কিন্তু যতই হোক আলভী রাহমান ইউভীর বাবা ছিলেন তাই ইউভী তার বাবার শিরঃচ্ছেদ না করেই ফিরে আসে। ফলস্রুতে এখন তাকে শুভ্রার শির এনে দিতে হবে।
কিন্তু ইউভী জানেনা এই সব কিছু তার প্রধানের চাল। তার প্রধানের শেষ স্বিকার শুধু শুভ্রা না ইউভী সামিহা দুজনেই। সে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এত খুন করে আসতেছে শুধু তাদের যাদের রাশি প্রধানের কোন রাশিমালার সাথে মিলে যায়। কিন্তু সে জানেনা এসব কুসংস্কার ব্যতীত কিছুই না।
____
সামিহা আর ইউভী প্রতি বারের মত সহজেই এবারো একটা খুন করে প্রধানের কাছে ফিরল। তারা এমন সূক্ষ ভাবে কাজ করে ফিরেছে যে তাদের দেখলে যে কেউ বলবে এরা খুন করা তে দক্ষ বৈকি অন্য কিছুনা।
প্রধানের ইউভী আমানের মত আগে অনেক অনেক দাস ছিল। তারা খুন করে প্রধানের ইচ্ছামত শির সংখ্যা পূর্ণ করলেই প্রধান তাদের নির্মম ভাবে মেরে ফেলতো। এখনও তার ব্যতিক্রম হয় না এবার পালা আসবে সামিহা আর শুভ্রদের। এই ভেবে প্রধান অট্টহাসিতে মেতে উঠে।
এসব কিছু যেন সামিহা আর ইউভীর আড়ালে আবডালে লুকিয়ে তাই তারা কিছুই জানতে পারেনি।
চলবে??