শুভ্রনীড়
পর্ব০৪
#Shamu_Choudhury
আমানের কেয়ারাটেকার জসিম আলী এসে আমান কে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। সে আমান কে নিজের ছেলে ভাবে উনার কোন ছেলে নাই, আমানের মা মারা যাওয়ার পর তার কাছে থেকে আমান বড় হয়েছে আর তিনি কখনোই ভাবেন নি আমান উনার মালিকের ছেলে,তিনি আমান কে সবসময় আগলে রেখেছে,আজ তার এই অবস্থা দেখে নিজেই তার চোখের পানি আটকে রাখতে পারেন না। দৌড়ে আমানের কাছে যায়, পার্লস রেট বোঝা যাচ্ছেনা,বুক থেকে এখন ও রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে, নিঃশ্বাস কোন মতে চলতেছে, এক মুহুর্তে তার মনে হল তার ছেলে আর বেচেঁ নেই। সাথে সাথে শ্রাবণ কে ফোন করলেন
_____একটু আগে যা হয়েছিল,,,
আমানকে শ্রাবণ ফোন করে বলে যে ইউভীর কোন গুপ্তচর তাদের সাথে আছে যে সব তথ্য ইউভীকে দেয় আর তার গুপ্তচর তাকে বলে দিয়েছে যে শুভ্রা আমান’স স্কোয়াড এ আছে। এইটা শুনে আমান তখন সেখান থেকে অন্য রাস্তা দিয়ে তার আমান’স স্কোয়াড এ আসে। আর ইউভীর আসার অপেক্ষা করে। সে মনে মনে ভাবে এইভাবে আর কতদিন? ইউভীকে বুঝানো উচিত,শুভ্রার বদলে আমান যা চাইবে তাই দিবে এমনকি নিজের জীবনও তবুও সে শুভ্রার কোন ক্ষতি হতে দিবেনা। এইভাবে পালিয়ে বাচা যায়না হয়ত দেখা গেল রাগের বশে শুভ্রাকে সে মেরে দিবে। আজ সে ইউভীর সাথে বিহিত করতে চায়,,,
প্রায় আধঘন্টা পর ইউভী আমান’স স্কোয়াড এ আসে তাকে এতদিন পর নিজের সামনে দেখে আমান অনেক খুশি হয়। ইউভী এসেই শুভ্রা কে ডাকতে থাকে আমান যে তার সামনে দাড়িয়ে সে মনে হয় তা দেখতেই পায়নি। পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খোজাঁর পর ইউভী যখন শুভ্রার দেখা পেলনা তখন সে আমান কে বলে উঠল,,,
-আর কত পালিয়ে রাখবি? শু কে ধরা দিতেই হবে তোকে আগেই বলেছি শু কে আমার চাই। তোকে এতদিন তোর বাবার জন্য বাচিঁয়ে রেখেছি এখন তো তোর বাবা বেচেঁ নাই, তুই ও মরে যা আমান। তুই মারা গেলে শু কে আমি এমনি পেয়ে যাবো।
___আমান একটু চুপ থেকে বলে উঠে,, এইগুলা তোমায় মানায় না ইউভী, তুমি সেই আগের রুপে ফিরে এসো। এইভাবে আর কত??
_ইউভী তা শুনে বিকট ভাবে হেসে উঠে যেন তার হাসিতে মুক্তা না ঝরে হিংস্রতা ফুটে উঠেছে, আর সে বলে,,,
এত কিছু বুঝিনা তুই কি শুর খোজঁ আমাকে দিবি? আচ্ছা খোঁজ দেওয়া লাগবেনা তুই মরে যা আমি এমনি ওকে খুজে বের করব। কারণ তুই বেচেঁ থাকলে শু কে মারতে পারবোনা। (এই কথা বলা শেষ না হতেই ইউভী আমানের বুকে ছুরি চালিয়ে দেয়)
সাথে সাথে রক্ত গলগল করে বেরিয়ে পরে। আমান ইউভীর দিকে করুণ ভাবে তাকায় দেখে ইউভী হাসতেছে, সে বলে
-তুমি তো এমন ছিলেনা ইউভী ,শুভ্রা আর শ্রাবণের কোন ক্ষতি করোনা, ওরা অনেক ভালো, তুমি এই রাস্তা থেকে ফিরে আসলে! দেখবে ওরা তোমায় আমার মত ভালবাসবে, এইগুলা থেকে ফিরে এসো___
(এই বলে আমান ফ্লোরে পরে যায়, চোখ থেকে তার দুই ফোটা পানি গাল দিয়ে গড়িয়ে পরে, ইউভী তখন ও তার দিকে তাকিয়ে ছিল তার চোখে এখন পানি।
চোখ বন্ধ হওয়ার আগে আমান বলে উঠে,
__তোমার শু কে বড় বেশি ভালবাসি,তার থেকে একটু বেশি তোমাকে ভালবাসি ভাই।
এই বলে আমান বেহুশ হয়ে যায়। তার শেষ কথা “একটু বেশি তোমাকে ভালবাসি ভাই” সে ইউভী কে ভাই ডাকল। তার চোখ থেকেও এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরল। ইউভী করুণ হাসি দিয়ে বলে উঠল,
যখন তোকে দরকার ছিল তখন তুই অনেক দূরে ছিলি, একাকিত্ব আমাকে শেষ করে দিয়েছে, যদি সেদিন ডায়েরিটা না পেতাম যদি সুইসাইড ফরেস্ট এ না যেতাম যদি তার সাথে আমার না কথা হত তাহলে আমি তোদের মনের মতই থাকতাম।
আমাকে মাফ করে দিস আমি পিছনে তাকাতে পারবোনা। আমার যে করেই হোক তোর মত শু কে মেরে ফেলতে হবে না হলে আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছাবো না।
এই কথা বলে ইউভী চোখ মুছে চলে যায় বালি দ্বীপে, যাওয়ার আগে আমানের কেয়ারটেকার কে ফোন করে বলে আমান কে কেউ খুন করেছে, সে পরে আছে আমান’স স্কোয়াড এ, সে যেন তাকে নিয়ে গিয়ে কবর দেয়,,, এই কথা শোনার সাথে সাথে জসীম আলী চলে আসে। তারপর বর্তমানে,,,,,
শ্রাবণ আমানের কম্পানিতে পার্টনার শীপে থাকলেও সে অনেক বড় এক ডাক্তার কেননা, তার মা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন নি,যার অভাবে পরে মারা যান। তখন শ্রাবণ ছোট ছিল তাই সেও কিছু করতে পারেনি শুধু ভেবেছিল বড় হয়ে তার মায়ের মত অন্য মায়েদের বাচাঁবে, তার মা জসীম আলীর বোন ছিলেন,, পরে সে আর আমান একসাথে জসীম আলীর কাছে মানুষ হন।
সে ডাক্তার বিধায় বিচলিত না হয়ে জসীম আলীকে বলেন আমানের নিঃশ্বাস চলছে নাকি তা চেইক করতে, তিনি আমানের নাকের কাছে হাত রেখে দেখেন চলছেনা, একটু আগেই তো আস্তে আস্তে শ্বাস-প্রশ্বাস চলতেছিল,তিনি ভড়কে যান। ডুকরে কেদেঁ উঠেন, আর শ্রাবণ এই কথা শোনর পর তাকে আশ্বাস দেন যে আমানের কিছু হবেনা। কিন্তু ভিতর ভিতর সেও ভেংগে পরেছিল। সে জসীম আলীমে একটা বোতলের শিপি, ছোট ছুরি আর একটা পাইপ আনতে বলেন, শ্রাবণ ভিডিও কলে সব শিখে দিবে আর উনি সেই অনুযায়ী কাজ করবেন এই কথা শুনে জসীম আলী বলেন সে এইসব করতে পারবেনা এতে আমানের বেশি ক্ষতি হবে, শ্রাবণ তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে বেশি দেরি করলে আমান কে বাচাঁনো যাবেনা।
শ্রাবণ শিখিয়ে দেয় জসীম আলী সেইভাবে কাজ করে তারপর আমান চোখ খুললে তাকে সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এই হাসপাতাল গরীবদের জন্য আমান আর শ্রাবণ বানিয়ে দিয়েছিল আজ তাতেই আমান কে ভর্তি করানো হয়। তারপর তাকে এমারজেন্সি তে নিয়ে অপারেশন করা হয়। ডাক্তর বলেন যদি একদিনের ভিতর তার জ্ঞান না ফিরে তাহলে সে কোমায় চলে যাবে,
পরেরদিন সকাল বেলা আমানের জ্ঞান ফিরে, সে চোখ খোলে তার পাশে সে শ্রাবণ কে দেখতে পায়, আমানকে হাসপাতালে নিলে সেও সাথে সাথে ইন্দোনেশিয়ার জন্য বেড়িয়ে পরে। সে মাঝরাতেই হাসপাতালে পৌঁছে যায়, সারারাত তার ঘুম হয়নি, আমান ছাড়া তার কেউ নাই, বার বার জসীম আলীকে বলেছেন আমান ঠিক হয়ে যাবে তো? একটাই ভাই আমার। কিছু হয়ে গেলে আমিও বাচবোনা চাচা। এই বলে আর একটু পর পর কেদে উঠে,,
ভোরবেলা আমানের জ্ঞান ফিরলে দেখে শ্রাবণ তার কাছেই বসে আছে, তার চোখ ফোলা সে বুঝতে পারে শ্রাবণ কাল সারারাত জেগে জেগে কেদেঁছে। আমান শ্রাবণ কে জানায় সে ঠিক আছে। তার দুইদিন পর আমান কে জাপানে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে শুভ্রাও আছে। শুভ্রাও মোটামুটি সুস্থ। সেখানে যাওয়ার পর শ্রাবণ আমানকে বলে,,
_ইউভীর খোজঁ পেয়ে গেছি,তুই একবার বল তাকে মেরে দিব।
__এই রকম বলিস না শ্রাবণ তোর মত সেও আমার ভাই, তাকে মারলে আমি বাচঁবো কিভাবে বল? তার উপর নজর রাখ আসলে সে কি চায়? তার উদ্দেশ্য কি? সে কেন শুভ্রা কে চায়?? শুভ্রা কে এই নিয়ে কিছু বলাও যাবেনা ওই ইউভী বলতে পাগল। এইটার সু্যোগ ইউভী নিচ্ছে। কিন্তু আমাদের মাঝে কে এমন আছে যে সব জানে??
___আমাদের মাঝে এমন কাউকে পাইনি যাকে সন্দেহ করা যাবে। তাও আমি খোঁজ নিচ্ছি।এই বলে শ্রাবণ যেতে লাগলে আমান বলে উঠে,
__ভাবছি শুভ্রা কে বিয়ে দিবো শ্রাবণ,,
তুই কি বলিস?
_আমানের এই রকম কথা শুনে শ্রাবণ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় আর বলে, তুই পাগল নাকি আমান?? কার সাথে বিয়ে দিবি?
শুভ্রা কোনদিন বিয়ে করবেনা তাছাড়া সে ইউভীকে বিয়ে করতে চায়। অন্য কাউকে না
_আমান মুচকি হেসে বলে উঠল,,
তাহলে তাই হোক তার সাথে ইউভীর বিয়ে হক কি বলিস। যা শুভ্রা কে গিয়ে বল ইউভী তাকে বিয়ে করতে চায় সে কি বিয়ে করবে??
(শ্রাবণ কিছু বলতে লাগলে আমান বলে উঠে আগে গিয়ে বল তোকে সব পরে বলব। সে আমানের কথা মত শুভ্রার রুমে যায়। গিয়ে দেখে শুভ্রা এক পা খাটের নিচে ঝুলিয়ে রেখেছে আরেকপা সামিহার উপর দিয়ে রেখেছে। সামিহা বেচারি ঘুমে,আর শুভ্রা ঘুমায়নি তবে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবতেছে,,,,
__আসতে পারি?? (শ্রাবণ শুভ্রার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে)
__এইবার আপনাকে কি জামাই ভেবে আপ্যায়ন করা লাগবে?? এসেই তো গেছেন, আবার ঢং করতেছেন কেন?(শুভ্রা বিরক্তি কন্ঠে বলে উঠে)
(তার এই রকম কথা শুনে শ্রাবণ কি বলবে ভেবে পায়না একে তো আমান কি বলল তার মাথার উপর দিয়ে গেছে তার উপর শুভ্রার এই রকম কথা)
___ইয়ে মামানে অই যে ইয়ে
শুভ্রা বিরক্তিতে উঠে পরল আর বলল
__ কি ইয়ে ইয়ে করতেছেন? মনে হচ্ছে এই প্রথম আমার সাথে কথা বলতেছেন। ঠিক সময়ে বিয়ে দিলে তো দশটা বাচ্চার বাপ হতেন এখন দেখতেছি কথাও ঠিকমত বলতে পারতেছেন না
এই কথা যেন শ্রাবণ এর ইগোতে লাগে সে বলে,,
__দেখুন একে তো আমান তার উপর আপনি এইভাবে আমার সাথে কথা বলতে পারেন না। আর আমার গফ এর অভাব নাই। আপনার চটাং চটাং কথা শুনে কি বলব বুঝতে পারিনি। আর আপনার আমরা বিয়ে দিতে চাই, বিয়ে করবেন??
___শুভ্রা অবাকের উপর অবাক। এরা কি ওকে বিয়ে দিতে এনেছে নাকি আজব ক্যাম্নে কি ভাই। শুভ্রা রেগে কিছুর বলার আগেই শ্রাবণ বলে,,
__ভেবে নেন করবেন নাকি বর কিন্তু ইউভী। সে ডিরেক্ট আপনাকে বিয়ে করতে চায়, সব উটকো ঝামেলা ছাড়াই
(শুভ্রা ভেবে পায়না তার কি বলা উচিত। সে মনে হয় এত খুশি তার জীবনেও হয়নি। হায়্ সে ইউভী কে বিয়ে করবে?? সত্যি?? সে এক কথায় রাজি হয়ে যায়। শ্রাবণ চলে গেলে সে সামিহাকে জাগায় আর জড়িয়ে ধরে বলে,,)
__দোস্ত,,,,,, জানিস ইউভী নিজেই এখানে আসছে এসে বলছে সে নাকি আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি তো এক কথায় রাজি। তুই কি বলিস? আমার তো আর তর সইতেছেনা রে
এই কথাই যথেষ্ট ছিল সামিহার মন ক চূর্ণ-বিচূর্ণ করার জন্য। সেও তো ইউভী কে ভালবাসতো। সে কি পাবেনা তাকে? হয়ত সবার ভাগ্যে সবাই থাকেনা। তবুও সে মিথ্যে হাসিতে শুভ্রা কে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানায়।
চলবে?
(ভাল থাকুন,সুস্থ থাকুন, নামাজ কায়েম করুন। একদিন পর পর গল্প আসবে ধন্যবাদ)