শিশির_কণা
শামসুল ইসলাম
#(পর্বঃ-৯)

-” আলহামদুলিল্লাহ ভালোকথা, মেয়েডার বাপটাপ নেই ভালো হবেনে, যেদিকে আমার শইতান ছেলেডা যদি মানুষ হয় তালিতো বেশি ভালোকতা। যাইহোক শুভ কাজে দেরি কত্তি নেই, আজ রাত্তিরিই বিয়ে।”
মাথার ভিতরে ভনভন করে ঘুরছে, চোখে সরিষার ফুল দেখছি। গ্রামের সবাই মুখ নিচু করে ফেললো, কেউকেউ অসহায়ের মজা লুফে নিচ্ছে।
আরুজ মাতব্বর বড়ো মামাকে বললেন-
-” আলতাফ মিয়া, তুমরা বাড়ি যেয়ে বিয়ের আয়োজন করোগে।আমরা রাত্তিরি ইশার পর আসবানে, বিয়ের জন্যি যা যা লাগে সবকিছু জুগার জান্তি করে কিনে আনবানে। তুমরা খালি মেয়েডা দিলিই হবে, আর কিছু লাগবেনা আমাগেরে।”
মামা কোনো কথা বললেন না, গম্ভীর ভাবে এক পলক তাঁর দিকে তাকিয়ে চলে আসলেন।
আম্মু অনবরত কাঁদছেন, আরুজ মাতব্বরের সিদ্ধান্ত শুনে। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি, সবাই আমাকে বাড়িতে আনলেন। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এ বিয়ে করার পুর্বেই আমি দরকার হয় বিষ খেয়ে মারা যাবো, কিন্তু কখনোই ড্যানিকে বিয়ে করবো না।
বড়ো মামা নানু ভাইকে বললেন-
-” বাজান, কণাকে একনি ঝিনেদাই তানিয়ার বাসাই পাটিয়ে দিই, এদিকি আমি সামলাবানে। আপনি একনি কণা মণি ও তাহমীনাকে নিয়ে মাঠের মধ্যি দিয়ে চলে যাও।”
আমরা কালক্ষেপণ না করে দ্রুতপায়ে মাঠের ভিতর দিয়ে ভিন্ন পথে ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম।
দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ অতিক্রম করে আল্লাহর অশেষ রহমাতে রাস্তাই উঠে বাস পেয়ে যাই। বাসে উঠে সরাসরি কালীগঞ্জ তারপরে গড়াই পরিবহণে ঝিনাইদহ পৌঁছালাম।
আমাদের পৌঁছাতে রাত ৯ টা বেজে গেলো। তারপরে অটোই উঠে খালামণির বাসাই যাই।
ওহ!! আরেকটি কথা বলা হয়নি, তানিয়া হচ্ছেন আমার বড়ো খালামণি আর আম্মু হচ্ছেন তাহমীনা দুইবোন তাঁরা। সবিস্তারে আমাদের কথা শুনলেন, আমাদের নাস্তাপানি করালেন।
পুর্বে কখনো খালামণির বাসাই আমরা আসিনি, তাই নতুন পরিবেশ। খালামণির একটিমাত্র মেয়ে আছেন, অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছেন। খালু সরকারি কর্মকর্তা।
খালা আমাকে বললেন-
-” মা নিচেই নেমে শিশিরের দোকান থেকে দুইটা মুরগিরডিম এনে দিসতো, আমি তোর নানার জন্য পানি গরম করব পায়ে ঢালবেন তাই। যেয়ে শুধু নাম বলবি যা চাবি তাই দিবে। সাথে তোরা দুইবোন আইসক্রিম খাস।”
শিশিরের নাম শুনে বুকের ভিতরে দুন্দুভিধ্বনির শব্দ হলো, নিজেকে সামলে নিয়ে মণিকে সাথে নিয়ে নিচে নামলাম।

নেমেই আটদশ মিনিট হাটার পর দেখতে পেলাম একটা দোকান, যার নাম দেওয়া “শিশির স্টোর”। নাম দেখে চিনতে কষ্ট হলো না, কাছে যেয়ে দেখি অবাক কাণ্ড, দোকানদার কালো একটা মানুষ। ইয়াবড়ো দাড়ি, সাথে বড়ো পাঞ্জাবী ও টুপি পরা। হুজুর একটা, আমরা যেয়ে দোকানের সামনে দাড়ালাম। অনেকক্ষণ হলো দাড়িয়ে আছি, দেখলাম খরিদ্দারকে কেমন মূল্যায়ন করেন। ক্যাবলা মার্কা কালো লোকটি দেখি কানে হেডফোন ভরে চোখ বন্ধকরে কি শুনে আল্লাহপাক ভালো জানেন।
মণি কয়েকবার সালাম দিলো, কিন্তু কোনো সব্দ নেই। আমি একটা চকলেট বের করে হুজুরের গায়ে ছুঁড়ে মারলাম। খুব মজা পেলাম, চকলেট গায়ে লাগার সাথেসাথে লোকটি লাফিয়ে উঠে গা ঝাড়তে লাগলো। আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছে মোনেমোনে এই কারনে, যে লোকটি সম্ভাব্য টিকটিকির ভয় পাই যারকারনে এমন ফাল দেওয়া।
হুজুরটি লাফদেওয়ার সাথেসাথে আমাদের দিকে একপলক তাকিয়েই তার দৃষ্টি অবনত করে নেই। আমি কিছুটা ব্যঙ্গার্থসুরে বললাম-
-” হুজুর মানুষ কেউ অতো মোন দিন দিয়ে গান শুনে?”
মনে হচ্ছে লোকটি লজ্জাই কালো মুখটি গোলাপি করে ফেলছে, যাইহোক কথা না বাড়িয়ে দুইটা মুরগীরডিম নিলাম। সাথে দুইটা কোন আইসক্রিম দিতে বললাম, সেগুলো নিয়ে চুপচাপ চলে আসতে লাগলাম।
হঠাৎ লোকটি বললেন-
-” আপু টাকা না দিয়ে চলে যাচ্ছেন?”
-” তানিয়া আন্টির লোক আমরা।”
-” ওহ আচ্ছা আচ্ছা! ঠিকআছে যাঝাকুমুল্লাহ।”
আমার মনের ভিতরে সবসময় ইবলিশে কুতকুতি দেই মানুষের বিরক্ত করার জন্য, স্বভাবটা অনেক পুরনো আবার সাথে নামটি হচ্ছে শিশির যা আমি বর্তমান সহ্য করতে পারিনা এনামে কাউকে। ভাবলাম লোকটাকে একটু মুরগী বানাই আরো ডিম পাড়ুক সকালে এসে নিয়ে যাবো আবার। গত কয়েকটি কারনে আমি নিরাশ হয়ে গেছিলাম যারকারনে এসব ভুলে গেছিলাম। হঠাৎ আজ ইচ্ছা হলো হুজুরকে একটু কাঠি দিই, সেই নিয়েত করে দোকানের দিকে আবার গেলাম। যদিও মণি বারবার বলছে আপু বাড়াবাড়ি হচ্ছে, দ্রুত বাসাই চল।
আমি যেয়ে বললাম-
-” আপনার পছন্দমত একপাতা কাছের চুরি দিন।”
-” দুঃখিত আপু মহিলাদের কসমেটিস কিছু বিক্রি করি না।”
আমি ভেংচি কেটে বললাম-
-” কি হুজুর আমার!! মহিলাদের কসমেটিস বিক্রি করেনা আবার কানে হেডফোন লাগিয়ে অশ্লীল গানবাজনা শুনতে পারে।”
হুজুর একবার আমাদের দিকে অনিচ্ছাবশত তাকিয়েছিল আর তাকাইনি। মাথা নিচু করেই হুজুর বললেন-
-” না জেনে মানুষকে সন্দেহ করাটা অনেক পাপ, আমি মিশরের ক্বারি আব্দুল বাছিতের তেলায়ত শুনছিলাম।”
আমিতো বোকা হয়ে গেলাম, কথা না বাড়িয়ে বাসাই চলে গেলাম বেকুবের মতো।

★★★
রাতের খানাপিনা পর্বঃ পরিসমাপ্তি করলাম, আমি আর মণি একরুমে শুলাম। মণি বললো-
-” আপু দেখেছো আল্লাহপাকের কি দয়া!! তিনি তোমাকে কঠিন বিপদে রক্ষা করেছেন। তিনি তোমাকে রক্ষা না করলে এতক্ষণ আমার পাশে নই ড্যানির পাশে শুতে হতো।”
-” ঠিক বলেছিস, আল্লাহ রক্ষাকর্তা।”
-” আরেকটি কথা!! তুমি কিন্তু দোকানদারের সাথে কাজটা ঠিক করোনি।”
-” চুপকর কর! ঠিক বেঠিক তুই কি বুঝিস? শিশির নামের কাউকে দেখলেই ঘৃণা করে আমার।”
-” সবাইকে এক পাল্লাই ওজন করতে নেই, নামের সাথে সবার চরিত্র এক নই। যেমন সাকিব নামে তিনজন ব্যক্তি আছেন, আমরা অধিকাংশ দুজনকে চিনি আরেক জনের চিনিনা।
প্রথম জন হলেনঃ- বাংলার বিখ্যাত জলচিত্র নায়ক সাকিব খান, কে না চিনি তাকে!
দ্বিতীয় জন হলেনঃ- বাংলার বিখ্যাত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।
তৃতীয় জন হলেনঃ- হাফেজ নাজমুস সাকিব।
উপরের দুইজনকে চিনি এই হাফেজকে চিনিনা, তাঁরা অভিনয় ও খেলা করে সবার কাছে প্রিয় তারকা হয়ে আছেন। কিন্তু হাফেজ নাজমুস সাকিব বিশ্বের শতাধিক রাষ্ট্রকে পিছনে ফেলে কোরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্বের প্রথম হয়েছিল, তার কথা তো কেউ জানিনা। তাহলে তুমি নাম দিয়ে বিচার করবে না মানুষকে তাঁর কর্ম দেখে বিচার করবে।
নাজমুস সাকিব দিয়ে ইউটিউবে সার্চ দিয়ে তেলায়ত শুনে দেখো অন্তর ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
আমি আর কথা বাড়ালাম না, তবে একটু মণিকে কাটি দিতে মোন চাইলো। তাই বললাম-
-” হুজুরকে বেশ পছন্দ হয়েছে মনে হচ্ছে?”
-” হ্যাঁ অবশ্যই অনেক পছন্দ হয়েছে।তাঁর পোশাকআশাক বাহ্যিক আচরণে যতোটুক বুঝতে পারলাম ততোটুকুতে বুঝলাম লোকটি খারাপ নই। তবে ছেলেটা যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তোমাকে তাঁর সাথে শাদী করাবো খালামণিকে বলে।”
আমার রাগ উঠে গেলো, মুখে ভেংচি দিয়ে বললাম-
-” আমার বয়ে গেছে এই খ্যাত মার্কা কালো হুজুরকে বিয়ে করতে, বরং তুই করে নে বিয়ে তাকে।”
-” সেটা হলে তো খুব ভালো হতো, আমার সাদাচামড়া লাগবেনা শুধু দ্বিনদার ছেলে হলেই হবে।”
-” ভালো কথা, ঘুমা গুড নাইট।”
-” তুমি দেখছি সব গিলে খাইছো! তোমাকে ঘুমের একটা দো’আ শিখিয়েছিলাম তা কি ভুলে গেছো?”
-“হ্যাঁ, মনে করিয়ে দে”
-”
بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ أَمُوتُ وَأَحْيَا

হে আল্লাহ ! আপনার নাম নিয়েই আমি মরছি (ঘুমাচ্ছি) এবং আপনার নাম নিয়েই জীবিত (জাগ্রত) হবো।

উচ্চারনঃ- বিস্‌মিকাল্লা-হুম্মা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া”
” সাথে আরো কিছু কর্ম আছে শুনবেনা?”
-” হ্যাঁ বল?”
-” না, বলবো না!”
-” কেন!!”
-” তুমি হুজুর দের দেখতে পারো না তাই।”
-” আহারে তোর দেখি তাঁর জন্য দরদ উপচে পড়ছে।”
-” হ্যাঁ অবশ্যই, কারন তাকে আমার বুবুর বর বানাবো।”
বর কথা শুনে মাথাই বিগাড় উঠলো, রাগ করে বললাম-
-” বকবক না করে ঘুমা, তাছাড়া এই রাতে কানের নিচে একটা দিবো তখন প্যানপ্যানানী ভালো লাগবেনা।”
-” হা হা হা ভালোই লাগে কণাপু তোমার, খালি রাগ করার গুনটা খুব বেশি তাছাড়া অন্য কাজকামের গুন নেই।”
-” মণি!! আমাকে রাগাসনে কিন্তু!!”
-” আচ্ছা হুজুরের বউ হাহাহা।”
-” আবার?”
-” আচ্ছা বলছি না, তবে আসল কথা বলি ঝগড়াঝাঁটি না করে।”
-” আচ্ছা বল?”
-” শুয়ার পুর্বে আইতাল কুরসি পড়ে বুকে ফুক দিবে। সাথে ৩৩ বার সুবহানআল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়বে মোট ১০০ বার। তারপরে তিন কুল পড়বে।”
-” তিন কুলটা আবার কি?”
-” সুরা ইখলাস, ফালাক, নাসকে তিন কুল বলা হয়। এটা পড়ে সমস্ত শরির মর্দন করবে। তারপরে ইস্তেগফার পড়বে, তবে আমরা যেটা পড়ি “আসতাগ ফিরুল্লাহা রব্বি মিনকুল্লি জামবিউ………” এটা পড়বে না। এটার থেকে সহিহ দো’আ আছে যা রাসুল (সাঃ) নিয়মিত পড়তেন।”
-” কি সেটা?”
-” ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবা করা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্‌র শপথ, নিশ্চয় আমি দৈনিক সত্তর -এর অধিকবার আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি।”

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “হে মানুষ, তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে তাওবা কর, নিশ্চয় আমি আল্লাহ্‌র কাছে দৈনিক একশত বার তাওবা করি।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “যে ব্যক্তি বলবে,
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ القَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيهِ

আমি মহামহিম আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি চিরস্থায়ী, সর্বসত্তার ধারক। আর আমি তাঁরই নিকট তওবা করছি।’

উচ্চারনঃ- আস্তাগফিরুল্লা-হাল ‘আযীমল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কায়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি”

আল্লাহপাক তাকে মাফ করে দিবেন যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালায়নকারী হয়।”
(হাদিসটি সহিহ)
এটা পড়ে কয়েকবার দুরুদে ইবরাহীম যেটা সালাতের ভিতরে পড়ি, পড়া শেষ করেই ঘুমের দোয়াটি পড়ে ঘুমাবে।”

আচ্ছা পড়ছি, দুইবোন দো’আ দুরুদ পড়ে গভীর ঘুমে ডুবে যাই।

★★★
ঘুম থেকে উঠে আম্মু নাস্তা করে নিলেন, খালামণিকে বললেন-
-” মেয়ে দুইটা তোর কাছে রেখে দিলাম, বাজানরে নিয়ে আমি বাড়ি যাচ্ছি। ওদিককার অবস্থা সামলাতে হবে আমাদের।”
আম্মু যাওয়ার সময় বললেন-
-” সভ্য মেয়ের মতো থাকবি, তোকে নিয়ে ভয়ে থাকি না জানি কখন কি অঘটন ঘটাস। সর্বদা মণির কথা শুনবি।”
আমি আর কি বলবো বলেন? সবাই তো জানেন আমি কেমন!
কিছু বললাম না, মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললাম-
-” আচ্ছা থাকবো।”
বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলো, আমার পরিক্ষার সময় ঘনিয়ে এলো। এদিকে মণির এইসএসসি পরিক্ষা শেষকরে ঝিনাইদহ সাকসেস বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দিলাম।
আমি পড়াশোনা নিয়ে অনেক ব্যস্ত, খালামণি অনেক খেয়াল করেন আমাদের পড়াশোনা নিয়ে। মাঝেমধ্যে ভেবে পাইনা আমরা তাহমীনার মেয়ে না তানিয়া খালামণির মেয়ে!! খুব আদর করেন আমাদের।
পরিক্ষার সময় ঘনিয়ে এলো, আর মাত্র ১৫ দিন পর পরিক্ষা। আজ ভোরে ফজরের সালাত আদায় করে পড়তে বসেছি, এখন বাজে ৯ টা এর মাঝে আর উঠাউঠি নেই। হঠাৎ খালামণি ডাক দিলেন-
-” কণামা এদিকে আই একটু?”
আমি যেভাবে ছিলাম সেভাবেই চলে গেলাম, দেখি ড্রয়িং রুমে অপরিচিতা একজন মহিলা বসে আছেন। সাথে মণিও আছে, আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না, কি হচ্ছে। মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
-” মাসাআল্লাহ খুব সুন্দরী, তো মা তোমার নাম কি?”
-” সামিমা আক্তার কণা”
-” কিসে পড়ছো মা?”
-” অনার্স ২য় বর্ষ কেমিস্ট্রি।”
-” কে, সি কলেজ?”
-” এম এম কলেজ যশোর।”
-” আচ্ছা যাও মা পড়াশোনা করো।”
কিছুই বুঝলাম না, কি হচ্ছে এসব। মণিকে ইশারা করে ডাকলাম-
-” মণি লোকটাকে চিনিস?”
-” হ্যাঁ আমার বোনের হবু শাশুড়ি মা।”
আমি বোকার মতো প্রশ্ন করলাম-
-” আমি ছাড়া তোর আবার কোন বোনের বিয়ে?”
-” তুমি বোনের বিয়ে গো কণাপু!”
-” কি বলিশ! আমার বিয়ে আমি জানিনা!!”
-” হ্যাঁ এই বিয়ের ঘটকালি আমি করেছি হাহাহা!”
-” কি! কবে আর কারসাথে?”
-” আজ আম্মু আসছেন, সাথে নানা নানি মামারাও। ছেলেপক্ষের লোকজন আজ সন্ধাবেলা তোমাকে দেখতে আসবেন, যদি উভয় পক্ষের মতামত সাথে বর কনের পছন্দ হলেই আজ বিয়ে।”
আমার মাথাই আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, এতকিছু হলো অথচ আমি জানিনা!!
এ বিয়েশাদী মানিনা আমি, পড়াশোনা করবো এখন বিয়ের চিন্তাভাবনা মাথায় নেই।
এসব বকবকানি শুরু করে দিলাম, মণি বললো-
-” একথা বলোনা চান্দু, তোমার জন্য আমার বিয়ে হচ্ছে না। তোমার রাস্তা পরিস্কার করেই আমি বিয়ে করবো হাহাহা।”
-” মণি একদম ফাজলামি করবিনা! আমি বিয়ে করবো না না না।”
-” না করিস না কর আমি করবো, যা খালামণিকে বলে আই।”
-” দাড়া তোর বিয়ের ভূত নামাচ্ছি, যাচ্ছি খালামণির কাছে?”
দ্রুতবেগে কাছে এসে জড়িয়ে ধরে মণি বললো-
-” সরি সরি আপু, আমি মজা করলাম।”
-” তাহলে সত্যিকরে বল ছেলে কে?”
-” ছেলে খুব ধার্মিক দ্বিনদার, নম্রস্বভাব ও মার্জিত আচরণ।”
এসব বলতে বলতে দেখি আম্মু হাজির। আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন, কিছুই বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে এসব।
আম্মু আমাকে বললেন-
-” মারে আল্লাহপাক কপাল গুনে একটা সুপাত্রের সন্ধান মিলিয়ে দিয়েছেন। তুই যেন এই মায়ের আশা নিরাশা করিসনা।”

মুখটা নিমিষে বিবর্ণ হয়ে গেলো আমার। আম্মুর মুখের কথা শুনে আর কিছু বলার ইচ্ছে হলোনা অকপটে মেনে নেওয়া ছাড়া।…………(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here