#শাপলার_মৃত্যু (৮)
[১৮+ সতর্কতা]
নিরূপমার সামনে কনস্টেবল দাঁড়িয়ে আছে। থরথর করে কাঁপছে সে। নিরূপমা শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
জল খাবেন?
কনস্টেবল হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। তাকে জল খেতে দেওয়া হল।
দক্ষিণ দিক থেকে দমকা হাওয়া তেড়ে আসছে। দমকা হাওয়ায় শরীর হীম হয়ে আসছে। নিরূপমার মনে হল বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ পাচ্ছে সে। দ্রুত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে আরো অনেকগুলো তাজা প্রাণ চলে যাবে। অজানা আতঙ্ক নিরূপমার মনে জেঁকে বসল।
সে কনস্টেবলকে জিজ্ঞেস করল,
আপনার নাম?
হরিশ।
হরিশ সাহেব। আপনার সাথে আগামীকাল যে ঘটনাটি ঘটেছে তা খুলে বলুন। আমি রিকোয়েস্ট করে বলছি, ঠিক যা ঘটেছে সেটিই শেয়ার করবেন। বানিয়ে বা বাড়িয়ে কিছু বলবেন না।
হরিশ মাথা নেড়ে বলল,
জ্বে আচ্ছা।
শুরু করুন।
ম্যাডাম, গতকাল রাতের শেষভাগে আমার খুব জোরে ‘ইয়ে’ চাপে।
‘ইয়ে’ চাপে মানে?
মানে ‘ইয়ে’, মানে ম্যাডাম..
ইয়ে ইয়ে করছেন কেনো? যা বলতে চান সোজাসুজি বলুন।
গতকাল রাতের শেষ ভাগে আমি মূত্র বিসর্জন দিতে যাই ম্যাডাম।
হরিশের কথা শুনে নিরূপমার হাসি পেল বটে, তবে বহু কষ্টে সে হাসি চাপিয়ে রাখল। যত যাই হোক, কর্মক্ষেত্রে ‘প্রফেশনালিজম’ নামক বস্তুটি বজায় রাখা জরুরি। সে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
তারপর কি হয়েছে?
হরিশ ইশারায় একটি গাছ দেখিয়ে বলল,
আমি এই গাছের গোড়ায় দাঁড়িয়ে কাজ সারছিলাম ম্যাডাম। তখন দেখলাম নদীর পাড় ঘেঁষে সাদা শাড়ি পরা একটি প্রেতাত্মা ভেসে ভেসে যাচ্ছে।
এরপর?
এরপর কি হয়েছে মনে নেই ম্যাডাম।
জাফর বলল,
ম্যাডাম, হরিশকে সকালে সেন্সলেস অবস্থায় পাওয়া গেছে।
নিরূপমা সব বুঝে ফেলেছে এমনভাবে মাথা নাড়ল।
জাফর নিরূপমার কানে ফিসফিস করে বলল,
কি করবো ম্যাডাম?
হরিশকে দুই দিনের ছুটি দিয়ে দিন সম্ভব হলে। বেচারা দারুণ ভয় পেয়েছে। ডিউটি করতে পারবে কিনা এ নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
ঠিকাছে ম্যাডাম। আমি বড় স্যারের সাথে কথা বলে হরিশকে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
ঠিকাছে।
ম্যাডাম, ডঃ আশুতোষ ব্যানার্জি ফোন করেছিলেন।
কি বলেছেন?
ল্যাবে যেতে বলেছেন। কেস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
চলুন তাহলে যাওয়া যাক।
***
ডঃ ব্যানার্জি মনযোগের সহিত দ্বিতীয় লাশটি পর্যবেক্ষণ করছেন। মেয়েটি শাপলার বয়সী। নাম রিনা। তাকে ঠিক একই ভাবে মারা হয়েছে যেভাবে শাপলাকে মেরে ফেলা হয়েছিল।
নিরূপমা জাফরের পিছে পিছে ল্যাবে ঢুকলো। ল্যাবে ঢোকার সাথে সাথে তার মনে হল সে অর্ধেক জমে গেছে। এখানে চব্বিশ ঘন্টাই বিজবিজ শব্দে এসি চলে। কোলাহলে পরিপূর্ণ এই শহরের মাঝেই যেনো অন্য একটি দুনিয়া হল এই ফরেনসিক ল্যাব।
যেখানে শহরের আনাচে কানাচে পরে থাকা নিথর দেহগুলোকে একত্রিত করা হয়।
জাফর ল্যাবে ঢুকে ডঃ ব্যানার্জির সাথে হাত মেলালো। এরপর নিরূপমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
ইনি প্রাইভেট ডিটেক্টিভ মিসেস নিরূপমা চক্রবর্তী। বিখ্যাত ক্রিমিনাল লইয়ার ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীর স্ত্রী। ম্যাডাম, আমাদের কেসের প্রধান ইনভেস্টিগেটিং অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।
হ্যালো ডঃ ব্যানার্জি। নাইস টু মিট ইউ।
হ্যালো মিসেস চক্রবর্তী। তবে আমাদের সাক্ষাৎ হওয়াটা ‘নাইস’ নাকি ‘আনপ্লিজেন্ট’ সেটা একটু পর বোঝা যাবে।
নিরূপমা হেসে বললেন,
একথা বলছেন কেনো?
ডঃ ব্যানার্জি বললেন,
বলছি কারণ রিনার পোস্টমর্টেমে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর তাকে ভারী পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে মেরে ফেলা হয়েছে।
নিরূপমা এবং জাফর অবাক হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাঁকালো। এতটুকু বাচ্চাকে ধর্ষণ করা হয়েছে ভাবতেই নিরূপমার চোখ ভিজে উঠল। কিভাবে পারে এরা পশুসুলভ আচরণ করতে?
নিরূপমা দাঁতের ফাঁক দিয়ে মনের অজান্তেই গালি দিয়ে উঠল,
বাস্টার্ড! সিমেন পাওয়া গিয়েছে?
না। তবে ভাজাইনাতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
সিমেন পাওয়া গেলো না কেন?
বিষয়টা নিয়ে আমিও অবাক হয়েছি। পানি দিয়ে উক্ত স্থান না ধুলে অবশ্যই সিমেনের উপস্থিতি থাকার কথা।
যদি ধর্ষক ধর্ষণের পর সত্যিই উক্ত স্থান জল দিয়ে ধুয়ে ফেলে, তাহলে রেপিস্টকে ধরতে ভালো বেগ পেতে হবে ডঃ ব্যানার্জি।
অবশ্যই। রেপিস্ট চালাক একই সাথে চতুর। সেজন্যই আপনার ‘নাইস টু মিট ইউ’ এর উত্তরে ‘সেইম টু ইউ’ বলা হয় নি।
নিরূপমা হাসল। ডঃ ব্যানার্জির গালেও হাসির রেখা।
জাফর ফিসফিস করে বলল,
ম্যাডাম, এখন কি করবো?
কি আর করবেন? নতুন উদ্যমে কেসের ইনভেস্টিগেশন শুরু করুন। বুঝলেন মিস্টার জাফর! এই কেসটির গভীরতা ঠাহর করা যাচ্ছে না। ব্ল্যাক হোলের মত টেনে নিয়ে যাচ্ছে তিমিরাচ্ছন্ন জগতে।
দেখতে দেখতে দুটো খুন হয়ে গেল। এখনো ক্রিমিনালের ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে পেরেছি কিনা জানি না।
তবে আমার মন অন্য কথা বলছে।
কি কথা ম্যাডাম?
ক্রিমিনাল আমাদের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ আমরা তাকে কিঞ্চিৎ পরিমাণে সন্দেহও করছি না।
মিস্টার জাফর, পুলিশের টহলের ব্যবস্থা আরোও জোরালো করতে বলুন। ক্রিমিনাল তার পরবর্তী ভিক্টিমের আশায় ফাঁদ পেতে বসে আছে কিনা, আমরা জানি না। রিস্ক নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
ওকে ম্যাডাম। আমি বলে দিচ্ছি।
(চলবে…)