#শাপলার_মৃত্যু (পর্ব ৪) [১৮+]

নিরূপমা জিজ্ঞেস করল,
কি করেছে মকবুল?

মনির বলল,
মকবুলের সাথে হোসেন মিয়ার ঝামেলা হইছে মাঝখানে।

কি নিয়ে?

মনির ইতস্তত করে বলল,
ঘটনা বেশিদিন আগের না আফা। এইতো মাস কয়েক হইব। শাপলারে হের মা ভর দুপুরে বাজারে পাঠাইছিলো লবণ আনার জন্য। বাজার আবার দুপুরের পর সুনসান থাকে। মানুষজন খুব বেশি থাকে না। ছেড়িডা লবণ আনতে গেছে। হেই সুযোগটা মকবুলে কুকামে লাগাইছে।

নিরূপমা জিজ্ঞেস করল,
কেমন কুকাম?

মনিরের স্বভাবেও দোষ আছে। দোকানের দরজা অর্ধেক লাগাইয়া দিয়া মাইয়ার ওইসব জায়গায় হাত দিছে। মানে বুঝেনই তো কোনসব জায়গার কথা কইতাছি।

নিরূপমা হ্যাঁ সূচক মাথা ঝাঁকালো। জাফর বলল,
তারপর কি হয়েছে?

আল্লাহর কি রহমত দ্যাহেন! গেরামেরই আরেক মহিলা হেইডা দেইখা চিল্লাচিল্লি লাগায়া দিছিলো। শাপলার বাড়িতে খবর পাঠানো হয়। হোসেন বাজারে আইসা মকবুলরে মারবার গেছিল।

নিরূপমা অবাক হয়ে বলল,
হোসেন সাহেব মারতে গিয়েছিলেন?!

হ গেছিলো তো! লোকের মুখে শুনছি দু এক ঘা লাগাইছে। মকবুল নাকি রাগে কি সব কইছে।

জাফর জিজ্ঞেস করল,
কি বলেছে?

মনির এবার হেসে বলল,
বুঝেন না স্যার? গেরামের মানুষ। কিছু হইলেই খালি মাইরা ফেলনের ভয় দেহায়।

হুম বুঝলাম।

নিরূপমা চায়ের কাপ রেখে উঠে দাঁড়াল। বলল,
ধন্যবাদ আপনাদের সহযোগিতা করার জন্য।

মনিরদের বাড়ি থেকে বের হতে হতে জাফর বলল,
ম্যাডাম, মকবুল অবশ্যই আপনার সাসপেক্টদের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে?

নিরূপমা হেসে বলল,
একটা মার্ডার কেসে ভিক্টিমের সাথে জড়িত সবাই সাসপেক্ট। কারণ কাউকে মার্ডার করার জন্য পিওর মোটিভ লাগে। ম্যালাফাইড ইনটেনশন এর প্রয়োজন হয়। ম্যালাফাইড ইন্টেনশন কি জানো তো?

জ্বি ম্যাডাম। Bad faith!

এক্স্যাক্টলি। এখন আমাদের খুঁজে বের করতে হবে ব্যাড ফেইথ এর সাথে নিখুঁত মোটিভে কে এমন কাজটা করল।

ম্যাডাম আপনি কি এখন আবার শাপলাদের বাড়ি যাবেন?

না জাফর। আমি বাড়ি ফিরে যাবো।

বাড়ি ফিরবেন?

হুঁ। কেস স্টাডি করার জন্য আমার একটু নিজস্ব সময় দরকার।

ঠিকাছে ম্যাডাম। চলুন আপনাকে জীপে করে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসছি।

চলুন।

নিরূপমা বাড়ি ফিরে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে নিলো। এরপর রান্নাঘরে গিয়ে এক মগ কফি বানালো। এরপর তার ছোট্ট স্টাডি রুমটির দিকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো।

নিরূপমার স্টাডি রুমটি বাড়ির পূর্ব দিকে। এই রুমটি আগে স্টোর রুম ছিলো। স্টোর রুমটিকে নিজের মত সাজিয়ে নিয়েছে সে। তবে মজার বিষয় হল এই রুমে কোনো ইলেক্ট্রিসিটির কানেকশন নেই। সন্ধ্যার পর নিরূপমার স্টাডি রুমের চতুর্দিকের দেয়ালে ঝোলানো হারিকেনের টিমটিমে আলো জ্বলে।
প্রচন্ড গরমেও সে ঘর্মাক্ত অবস্থায় কেস স্টাডি করে যায় আপন মনে।

আজ স্টাডি রুমের আরামদায়ক চেয়ারে বসে সে চোখ বুজে রইল। হয়তো শারীরিক দুর্বলতার কারণেই তার কালঘুমের মত এলো। কিন্তু আধো ঘুম আধো জাগনা অবস্থাতেই সে ভয়ংকর একটি স্বপ্ন দেখল।
নিরূপমা দেখল,
নদীর পাড়ে সাদা শাড়ি পরনে একজন মহিলা ধীর গতিতে হাঁটছে। নিরূপমা কৌতুহল এড়াতে না পেরে তার পিছু নিল। কিছুদূর যাওয়ার পর মহিলাটি আচমকা দাঁড়িয়ে গেলো।
নিরূপমা নরম গলায় জিজ্ঞেস করল,
কে? কে ওখানে?
সাদা শাড়ি পরা মহিলাটি উত্তর দিল না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।
নিরূপমা পুনরায় জিজ্ঞেস করল,
এত রাতে আপনি নদীর ধারে কি করছেন?
মহিলাটি এবারো কোনো উত্তর দিল না। তবে তার মুখ থেকে ‘গড়গড়’ জাতীয় অদ্ভুত শব্দ বের হতে লাগল।
নিরূপমা এবার ঘাবড়ে গেলো। সে উত্তেজিত হয়ে মহিলাটির খুব কাছাকাছি চলে আসলো। এমতাবস্থায় মহিলাটি তার দিকে ফিরে তাঁকালো।
মহিলার চেহারা দেখে নিরূপমার দম বন্ধ হয়ে এল। সে কোনোভাবেই নিশ্বাস নিতে পারছিলো না। নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে নিরূপমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।

সে চোখ মেলে দেখে প্রকৃতি সন্ধ্যার চাদর জড়িয়েছে গায়ে। থোকায় থোকায় অন্ধকার। দূরের মসজিদ থেকে আজানের সুর ভেসে আসছে। ভেসে আসছে মন্দিরের ঘন্টার ধ্বনি। হঠাৎ নিরূপমার গা শিউরে উঠল। এই কেসের প্রথম ক্লু মনে হয় সে খুঁজে পেয়েছে।

নিরূপমা স্টাডি রুম থেকে বের হয়ে জাফরকে ফোন করল।

ম্যাডাম।

জাফর। হোসেনের বড় ভাই কোথায় থাকে, কি করে ডিটেইলস বের কর। আমরা আগামীকাল তার সাথে কথা বলতে যাবো।

শাপলার বাড়িতে যাবেন না ম্যাম?

অবশ্যই যাবো। তবে আমার মনে হচ্ছে, হোসেনের বড় ভাইয়ের বাড়িতে গেলে আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইনফরমেশন পাবো যা আমাকে এই কেস সলভ করতে সাহায্য করবে।

ঠিকাছে ম্যাডাম।

নিরূপমা ফোন কেটে দিল। সাথে সাথে ডোরবেল বাজল। নিরূপমা দরজা খুলতেই ইন্দ্রজিৎ ঢুকল। তার হাতে ফুলের তোড়া।
নিরূপমা ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
ফুলের তোড়া কেন? আজকে কি বিশেষ কোনো দিন?
ইন্দ্রজিৎ অবাক হয়ে বলল,
হ্যাঁ। অবশ্যই। তুমি ভুলে গেছো?
নিরূপমা চিন্তায় পড়ে গেল। সে আসলেই মনে করতে পারছে না। আজকে তার জন্মদিন না। তাদের এনিভার্সারিও না। তাহলে আজকে কি এমন বিশেষ দিন যে ইন্দ্রজিৎ ফুলের তোড়া নিয়ে হাজির হল?

নিরূপমা আঁকুতি করে বলল,
ও ইন্দ্র! আজকে কি দিন বল না গো। একদম মনে করতে পারছি না।

নিরূপমার অপ্রকৃতস্থ ভাব দেখে ইন্দ্রজিৎ হেসে ফেলল। নিরূপমার কপালে ছোট্ট একটি চুমু এঁকে বলল,
আমার বউটা তার নিজস্ব ফিল্ডে ফিরেছে। ফুল আনার জন্য এর চেয়েও বড় কোনো দিন বা উপলক্ষের প্রয়োজন পরে? কনগ্র‍্যাচুলেশন্স!

নিরূপমার চোখ আনন্দে ভিজে উঠল।

চলবে….

লেখা, আতিয়া আদিবা
জনরাঃ থ্রিলার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here