গল্পঃ:-শান্তির খোঁজে
পর্ব:-০২
Writer:-Hassab bin Ahmed.
বউ বাসর ঘরে বসে আছে । আমি খাবার নিয়ে রুমের দিকে গেলাম । মনে হচ্ছে আমার শরীর কপছে । যাই হোক সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকলাম কিন্তু আমার বউ সেখানেই বসে আছে। সালামের উত্তর মনে হয় দেয় নি। আমি আবার সালাম দিলাম তিনি মাথা ঝাকিয়ে পিছনে সরে গেলেন। খাবার টেবিলে রেখে দিয়ে । আমিও খাটে বসলাম আর বললাম
আমি:- ভালো আছেন?
বউ:-…………….(চুপচাপ)
আমি:- কি হলো কথা বলবেন না?
বউ:-…………..
আমি:- খিদে পেয়েছে?
বউ:-…………..
আমি এখনো আমার বউ র চেহারা দেখিনি। তবে নামটা কজি সাহেব বলার সময় মনে করে রেখেছিলাম। আমার বউ র নাম হুমাইরা । সুন্দর তাই না । নামটা আমারো বহুত পছন্দ হয়েছে । (হুমাইরা মানে যে মেয়ে রাগলে তার গাল লাল হয়ে যায় । হজরত মুহাম্মদ সাঃ মা আইশা কে আদর করে হুমাইরা বলে ডাকতেন)
তাই ভাবলাম আগে চেহারা টা তো অল্প দেখি।
আমি বল্লাম আপনার চেহারা টা অল্প দেখাবেন
এই বলে আমার হাত হুমাইরা র কপালের দিকে এগিয়ে দিয়েছি। ওমনি হাত ধরে ফেলেছে। ওফ কি এক অনুভুতি । মেয়েদের হাত যে কেনো এতো নরম হয় 😯।
হুমাইরা:- দেখুন আমার উপর স্বামীর অধিকার খাটাত আসবেন না। আমি আপনার সংসার করতে পারবোনা।
কথাটি শুনার পর আমার বহুত কষ্ট হচ্ছিলো । আমি জিবনে বহুত কস্ট পেয়েছি কিন্তু কোখোনো এতো কস্ট পাইনি ।
আমি:- কেন? আপনার কি বিয়েতে মত ছিলো না?
হুমাইরা:- আমি এতো কিছু বলতে পারবোনা । আমি ডিভোর্জ চাই।
আমার কেনো জানি এখন কান্না পাচ্ছে । মনে হয় ভিতরে সব কিছু ভেংগে চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে গেছে।
নিজেকে সান্ত করে।
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে আপনি ডিভোর্জ পেয়ে যাবেন। কিন্তু আমার ভুল টা বলতে পারেন। আমার সাজানো জিবটা এভাবে ভেঙে দেওয়ার মানে কি?
হুমাইরা:- দেখুন এখানে আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। আপনার সংগে সংসার না করার বহুত কারণ আছে যেমন:- আপনি দারি রাখেন , আপনি টাকনুর উপর কাপড় পিন্ধেন, তাঁর পর আপনি উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ছাত্র (botany) আর আমার সব থেকে অপছন্দনীয় বিষয় হলো উদ্ভিদ বিজ্ঞান।
আমি:- এই সাধারণ বিষয় নিয়ে আপনি ডিভোর্জ চাচ্ছেন?
হুমাইরা:- হয়তো আপনারা কাছে এইটা সামান্য কিন্তু আমার কাছে বহুত বড়।
ডিভোর্জের কারণ জানার পর তো আমার রাগ উঠে গেছে। রাগ করেই বললাম
আমি:- আপনার জা ইচ্ছে তাই করেন । কিন্তু দেখুন আমাদের বিয়ে হয়েছে তার জন্য দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে। আপনি নামাজ পারবেন?
হুমাইরা:- আমি আগেই বলেছি আমার ধর্ম ভালো লাগে না। আর এই জন্যই তো ডিভোর্জ চাচ্ছি । আসতে না আসতেই নামাজ পড়ার আদেশ করেছেন।
আমি কিছু না বলে চলে গেলাম অজু করতে। তাঁর পর নামাজ পরে বারান্দায় বসে আছি । ১ ঘন্টা হয়ে গেছে এখানে বোসে আছি। কেনো জানি আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। জানি না এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে আমার।
হঠাৎ আমি জেনো বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। সময় জেন থমকে দাড়িয়েছে। আমি চেয়ে আছি এক অপরিচিত মুখের দিকে। যে মুখ আমি কখনো দেখিনি। মানুষ এতো সুন্দর হয় কিভাবে। এমন সময় ঐ মুখথেকে শুনলাম…
হুমাইরা:- শুনসেন?
ও তাহলে এইটাই হুমাইরা। কিন্তু ও আবার এখানে এলো কেন?. চোখের জল মুছে।
আমি:- জি বলুন। আবার কি চান?
হুমাইরা:- ভিতরে আসবেন প্লিজ। আমার এক একা ভয় করে। আসলে একা কখনো ঘুমাইনি তো তাই‌। এই কথা শুনার পর আমি কি করব বুঝতে পারছি না। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
হুমাইরা:- কি হলো অভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
আমি:- না মানে। কখনো একলা ঘুমায়নি মানে বুঝতে পারলাম না 😠
হুমাইরা:- আমার সংগে আমার ছোট বোন থাকতো। তো আপনি মুখ টা ওরকম করে রাখছেন কেনো আমি কি ভুল কিছু বলেছি?
সাজিদ:- না ঠিক আছে চলুন।
বউ আমার খাটে বসে আছে আর আমি ছোফায়।
সাজিদ:- আপনি ঘুমিয়ে যেতে পারেন ।
হুমাইরা:- আমি ঘুমাবো না । রাতে যদি আপনি খারাপ কিছু করেন?
কথা শুনে আনে তো আমার শুধু রাগ উঠছে। তাঁর পরেও সান্ত গলায় বল্লাম
সাজিদ:- এই টুকু বিশ্যাস করতে পারেন। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনার অনুমতি ছাড়া কখনো স্বামীর অধিকার খাটাত আসবো না।
এখন ২ টা বেজে গেছে হুমাইরা ঘুমিয়ে পড়েছে । বহুত গল্পে পড়েছিল ঘুমালে নাকি মেয়ে মানুষ কে সুন্দর দেখায়। কিন্তু এতো সুন্দর দেখা যায় জান ছিলো না । হুমাইরার চুল গুলো ওর মুখের ওপর এসে গেছে সরিয়ে দিতে বহুত ইচ্ছে করছে কিন্তু সেই অধিকার যে আমার নেই । 😟
কখন ঘুমিয়ে গেছি বলতে পারবো না আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভেংগে গেলো। উঠেই আমার চোখ হুমাইরার মুখের ওপর গেলো । মনে মনে ভাবলাম যদি আমাকে মেনে নিতে তাহলে হয়তো এখন একটা চুমু দিয়ে মযজিদে চলে যেতাম । কিন্তু সবার কপালে যে সব কিছু নেই । আমি মজযিদ চলে গেলাম । সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে মনে হয় মসজিদে এসে বরো অপরাধ করে ফেলেছি। একজন তো বলেই দিলো ভাই আজকেও মসজিদে😲। আমি শুধু একটু হাসি দিলাম। রুমে ফিরে দেখি হুমাইরা নেই উঠে গেছে । এই সুযোগে আমি ঘুমিয়ে গেলাম।
*
আব্বু:- হুমাইরা মা আমাকে এক কাপ চা দেও তো। আর শুনু সাজিদ যদি তুমার সংগে খারাপ আচরণ করে তাহলে আমাকে বলবে ।
আম্মু:- না না সাজিদ কখনোই কিছু বলবে না মা। আগের সাজিদ আর এই সাজিদের মধ্যে বহুত পার্থক্য আছে। আচ্ছা বাদ দাও কিছু খেয়েছো মা।
হুমাইরা:- না মা। সব ঠিক আছে।
( আগের সাজিদ আর এখনকার সাজিদ মানে নিচ্ছয় কিছু রহস্য আছে যা আমাকে জানতেই হবে) মনে মনে
আম্মু:- ঐ তো সাজিদ ওঠে গেছে তুমরা দুজন খেয়ে নাও।
হুমাইরা:- আচ্ছ। ঠিক আছে মা।
চার দিনে এভাবেই কেটে গেলো।
রাতে আমি নিজেই বললাম
আমি- ছাদে যাবেন?
হুমাইরা- কেন?
আমি- গাছে নতুন ফুল ফুটছে মনে হয়। দেখবেন।
হুমাইরা- চলুন।
ছাদে আসলাম।
আমি- আজ আকাশের চাঁদটা অনেক সুন্দর।
হুমাইরা- হ্যাঁ।
আমি- দোলনাতে বসবেন?
হুমাইরা- কেন?
আমি- বসেন বলছি।
পকেট থেকে একটা নুপুর বের করলাম।
– এটা আপনার জন্য।
হুমাইরা- লাগবে না আমার।
আমি- আমি পড়িয়ে দেই?
হুমাইরা- এইসব করে আমার মন পাবেন না।
আমি- সেটা জানি। সেইজন্য বলছিলাম
আমি পড়িয়ে দেই?
হুমাইরা-………………
আমি- নুপুরগুলো আপনার পায়ে ভালোই
লাগছে।
হুমাইরা- কোথায় থেকে কিনেছেন এইদুটো?
আমি- কিনি নাই তো।
হুমাইরা- তাহলে কি চুরি করেছেন?
বলেই জোরে হাসতে লাগলো।
আমারো হাসি পেল।
আমি- এইদুটো আমার মায়ের।
হুমাইরা- আমি দুঃখিত। আসলে বুঝতে পারি
নি।
আমি- ঠিক আছে। ফুলের গাছগুলো আমার
লাগানো। স্কুলজীবন থেকেই
গাছগুলো লাগাতাম। এখন আর তেমন সময়
হয় না যত্ন করার।
হুমাইরা- একটা কথা বলি যদি কিছু না মনে
করেন।
আমি- একটা কেন? হাজারটা বলেন কিছু
মনে করবো না।
হুমাইরা- আপনি এমন কেন?
আমি- কেমন?
হুমাইরা- এইযে আপনারা এতো ধনী। চাল-চলন কেমন
অদ্ভুতের মতো। আবার নামাজ ও পরেন।
আমি:- আপনি কি আমাকে সত্যি ভালো বাসেন না?
হুমাইরা:- আমি আগে প্রশ্ন করেছি আগে আপনি উত্তর দেন?
আমি:- কারণ আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি।
হুমাইরা:- আমিও তো আল্লাহ কে বিশ্বাস করি। কিন্তু আমি নামাজ আদায় করি না?.
আমি :- তার মানে তুমি বিশ্বাস করো যে আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তাহলে বলো আমাদের সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে কি এই প্রশ্নর উওর সব থেকে ভালো কে বলতে পারবে?
হুমাইরা:- আল্লাহ।
আমি:- তুমি কি জানো আমাদের সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে কি? আল্লাহ কি বলেছন?
হুমাইরা:- না তো। আর এই প্রশ্ন তো আমার মনে কখনো আসেনি ?
আমি:-শুনো তাহলে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরা যারিয়াতের ৫৬ নং-আয়াতে বলা হয়েছে
“আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে।” তাঁর মানে আমাদের সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে হলো সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করা।
হুমাইরা:- একটি প্রশ্ন করি?
আমি :- একটি কেনো যোতো খুসি করো ? অন্তত এই উছিলায় তোমার সঙ্গে কথা তো বলতে পারছি । আমি মানুষের কাছে শুনেছি ” তুমি যাকে ভালোবাসবে তার সঙ্গে কথা বলতেও ইচ্ছে করবে সব সময়” । আর আমি তুমাকে বহুত ভালো বাসি।
( আমি যখনি ভালো বাসার কথা বলি তখনি লজ্জা পায় । তাহলে কি ও আমাকে ভালো বাসে)
হুমাইরা :- মা বলছিলো আগের সাজিদ আর এখনকার সাজিদের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে । আপনি কি আগে এই হুজুর ছিলেন না কি এর আরালে কিছু কাহিনী আছে? বলবেন কি?
আমি :- আমার পরিবর্তনের এর একটি কাহিনী আছে। অবশ্যই বলবো কারণ তুমি আমার স্ত্রী । আমার অর্ধেক । আজ তুমি যদি আমাকে ভালো বাসতে তাহলে হয়তো তোমার কলে মাথা রেখে এই গল্প টা বলতাম ।আর বলতে পারো এটা আমার একটা স্বপ্ন ও ছিলো । থাক লাগবে না এমনিত বলি।
চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here