#ললাট_লিখন
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৯
আলামিন সাহেব চোখেমুখ গম্ভীর করে রেখেছেন। সামনের ভদ্রমহিলার সম্পর্কে আরশীর থেকে যা শুনেছে তাতে এর পেট থেকে কথা বের করতে হলে খুব কাঠখড় পড়াতে হবেনা। লোভী মহিলা সামান্য কিছু টাকার জন্য মানুষ খুন করতেও দুবার ভাবেনি তাঁকে কিভাবে কন্ট্রোল করতে হয় উনার জানা আছে। আলামিন সাহেবের ধ্যান ভাঙলো জুলেখা বেগমের প্রশ্ন শুনে,
> আমাদের এখানে কি দরকার আপনাদের? ও বাড়ির লোকদের জিঞ্জাসা করুন। ঘরের মধ্যে শত্রু রেখে আমাদেরকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। বড্ড ভূল করেছি লোভে পড়ে মেয়েটাকে ও বাড়িতে বিয়ে দিয়ে।
> সে আপনাদের ব্যাপার লোভে পড়ে মানুষ কতো কিছুই না করে। মানুষ খুন করতে পযর্ন্ত পারে। যাইহোক আপনার স্বামী কোথায়? উনাকে ডাকুন আমাদের সঙ্গে থানায় যেতে হবে।
আলামিন সাহেবের কথা শুনে ভদ্রমহিলা ঘামতে শুরু করলেন। উনার চোখেমুখে আতঙ্ক খেলা করছে। চাপা টেনশন কিছুইতেই ভেতরে দমিয়ে রাখতে পারছে না। ভয়ে উনি কাঁপছেন। আলামিন সাহেব বুঝলেন এটাইতো সুযোগ একে দিয়েই কাজ হবে। উনি ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললেন,
> একটা সুযোগ আছে আপনার কাছে।আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলে আমি কিন্তু আপনার স্বামীকে ছাড়তে পারবো। এবার ভেবে দেখুন বড়লোক বাড়ির একমাত্র ছেলে আর ছেলের বউ গায়েব, উনারা কি আর সহজে ছেড়ে দিবেন? আমাকে আপনি চুপচাপ আসল ঘটনা টা বলেন তারপর দেখুন ওদের জালে ওদেরকেই কেমন ফাঁসিয়ে দেই।
জুলেখা বেগমের চিন্তা হচ্ছে। সত্যিই যদি উনার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায় তখন কি হবে?লোকটার দুহাতের উপরেই সংসার চলে। মানুষটা না থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। । না না কিছুতেই ওকে নিয়ে যেতে দিলে চলবে না।লোকে বলে “পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা” নিয়ে গিয়ে কোন কেসে ফাঁসিয়ে দিবেন সারাজীবন জেলের ঘানি টানতে টানতে জনম যাবে কখনো খোলা আকাশের নাগাল পাওয়া যাবে না। কথাগুলো ভেবে উনি ভাবলেন সবটা খুলে বলবেন কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনে হল স্বামিকে না বলে কি সবটা বলে দেওয়া উচিৎ হবে? কথায় বলে স্ত্রীলোকের বুদ্ধি অনেক ভয়ংকর হয়। উনাকে এভাবে ভাবতে দেখে আলামিন সাহেব তাড়া দিলেন,
> হাতে অনন্তকাল সময় নেই দ্রুত বলুন। হয় বলুন নয়তো আপনার স্বামীকে ডাকুন। থানায় নিয়ে গিয়ে উত্তম মাধ্যম জামাই আদর দিলেই সবটা বেরিয়ে আসবে। ওদেরকে লুকিয়ে রেখে টাকা হাতানোর ষড়যন্ত্র করছেন তাইনা? আমার হাতের জাদু আছে। কথা হজম করে লাভ হবে না। একবার হাত উঠলে সব উগরে দিবে।
> কি বলছেন এসব? কখনও না। আমরা ওদেরকে কোথাও লুকিয়ে রাখিনি। ওরা নিজরাই পালিয়ে গেছে নয়তো কেউ কিডন্যাপ করেছে।
> শশুর বাড়িতে বেড়াতে এসে জামাই মেয়ে পালিয়ে যায় কি অদ্ভুত। এই যে বলবেন নাকি আমি তল্লাশি শুরু করবো।
আলামিন সাহেব কথা টা বলে ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে গেলেন কিন্তু তার আগেই জুলেখা বেগম মুখ খুললেন।
> আপনাকে আমি সবটা বলবো কিন্তু এখানে না। প্লিজ আমার স্বামীকে কিছু করবেন না। আপনারা ফিরে যান আমি সুযোগ মতো থানায় গিয়ে আপনাকে বলে আসবো।
> বিশ্বাস করবো কিভাবে?
> দয়াকরে বিশ্বাস করুন। আপনাদের সঙ্গে গেলে সবাই সন্দেহ করবে। পড়াই আমাদের একটা সম্মান আছে।
> আচ্ছা যাচ্ছি তাহলে। চলে আসুন সময় করে।
আলামিন সাহেব কথাটা বলে পকেট থেকে চশমা টা নিয়ে বাঁকা হেসে চোখে পড়তে পড়তে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। উনার প্লান কাজ করছে। এই মহিলাকে দিয়েই উনি গুপ্ত দরজার তালা খুলবেন। আজ পযর্ন্ত কোনো কেস উনি অসম্পূর্ণ করে ছেড়ে দেননি।এর শেষ পযর্ন্ত দেখবেন। কথাটা ভাবতে ভাবতে উনি গাড়ি নিয়ে চৌধুরী বাড়ির দিকে ছুটলেন। ওবাড়িতেও কিছু একটা ঝটকা লাগিয়ে দিতে না পারলে কিছুতেই শান্তি হচ্ছে না। আলামিন সাহেব চৌধুরী বাড়ির গেটে গাড়ি থামিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে দূরে একটা ছেলের উপরে নজর গেলো। ছেলেটা কফির মগ নিয়ে বাগানে পায়চারি করছে। আলামিন সাহেব আড়চোখে তাকিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন। মিসেস চৌধুরী অসুস্থ হয়ে গেছেন ছেলের শোকে। উনি বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন তাই তাকে সেলাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। আলামিস সাহেব ডাইনিং রুমে এগিয়ে যেতেই চৌধুরী সাহেব উনাকে বসতে বলে কফি আনতে বললেন। হুকুমের দুমিনিট পরেই এক ভদ্রমহিলা কফি নিয়ে হাজির হলেন। ভদ্রমহিলা বেশ পরিপাটি করে শাড়ি দিয়ে মাথায় ঘুমটা দিয়ে রেখেছেন। গায়ে সাদা কালো রঙের তাঁতের শাড়ি। দেখে মনে হচ্ছে উনি বেশ সৌখিন।আঁড়চোখে দেখে আলামিন সাহেব কফির কাপে মুখ ঢুবি বললেন,
> উনি কে হয় আপনার?
> আমার বোন।
> আপন?
> মায়ের পেটের না হলে কি সে আপনার হয়না? উনি অনেক বছর আমাদের সঙ্গেই আছেন। সুখ দুঃখের সাথী।
> সঙ্গে থাকলেই কি হবাই সঙ্গী হয়ে যায়?। অনেকেই আছে পেছন থেকে ছুরি চালাই। যাইহোক ওসব বাদ দিন। আমি ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম উনারা বলছেন আপনাদের এখান থেকে কেউ ওদের রাতে নিয়ে এসেছে।
> মগের মুল্লুকপাইছ। আমার ছেলের কিছু হলে সবগুলোকে আমি গুলি করে মারবো। আমার একমাত্র ছেলে।
কথাটা বলেই উনি কেঁদে উঠলেন। উনার কষ্টটা আলামিন সাহেব বুঝতে পারছেন। উপযুক্ত ছেলের কাধে ভর করে কোথায় বাকী জীবনটা নাতি নাতিরদের সঙ্গে গল্প করে কাটিয়ে দিবে সেই বয়সে এখন ভারসাম্যহীণ ছেলকে কাধে নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে। বাবা হিসেবে এটা উনার কাছে চরম ব্যার্থতার। আলামিন সাহেব উনার কাধে হাত রেখে বললেন,
> কষ্ট পাবেন না আল্লাহ্ উপর ভরসা রাখুন। আল্লাহ্ তার প্রিয় বান্দার পরীক্ষা নেন।ধরুন না এটা আপনার পরীক্ষা। ধৈর্য্য ধরুন ফল পাবেন। আঙ্কেল আমি একটা অনুমতি চাই যদি দিতেন।
চৌধুরী সাহেব চোখের পানি মুছে বললেন,
> সংকোচ করছো কেনো বলো?
> ইনভেস্টিগেশনের সুবিধার জন্য সবাইকে আলাদা আলাদা প্রশ্ন করতে হবে। দেখুন ওদের কথা যদি সত্যিই হয়? আপনাদের নাম করে ওদেরকে ও বাড়ি থেকে রাতের অন্ধকারে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন এই লোকটা কে বা কি তার উদ্দেশ্যে সবতো জানতে হবে?
> তোমার মতো করে তদন্ত করো। আমি আছি তোমার সঙ্গে।
> ধন্যবাদ আপনাকে। আমি একে একে সবাইকে থানায় ডেকে নিব। এখন আসছি। ভালো থাকবেন। আর ঐতিহ্য কে নিয়ে একটুও চিন্তা করবেন না। কথা দিচ্ছি সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দিব।
> আল্লাহ্ ভরসা বাবা।
আলামিন সাহেব দ্রুত বাইরে বেরিয়ে আসলেন। হাতের মুঠোফোনটা অনবরত বাঁজতেই আছে। থানা থেকে ফোন দিচ্ছে না পেরে টেক্সট পাঠিয়েছে জুলেখা বেগম থানায় বসে আছে। আলামিস সাহেব আবারও উনার চিরচারিত বাঁকা হাসিটা দিয়ে উনি দ্রুত গাড়িতে বসতেই গাড়ি ছুটে চলল থানার দিকে।
অন্যদিকে আরশীর জ্বরটা কিছুটা কমে এসেছে। ঐতিহ্য ওর নাস্তা করতে সাহায্য করছে। ছেলেটা পরম যত্ন নিয়ে ওর সেবাযত্ন করছে। আরশীর মনে অন্য একটা চিন্তা দোল খাচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে লোকটা কথা বলতে পারবেব কিন্তু কেমন হবে উনার কন্ঠ? গম্ভীর নাকি সুরেলা মেয়েদের মতো? উনি যেমন সুন্দর নিশ্চয়ই উনার কন্ঠ ও তেমনই হবে।
চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।
(আসূন নামাজ ও কোরআন পড়ি।)