#রজনীগন্ধা
#অলিন্দ্রিয়া_রুহি
#পর্ব_২

রজনীর ঘরটা বিশাল বড়। এত বড় রুম রজনী টিভি-সিরিয়ালে দেখেছে, বাস্তবে দেখার সুযোগ কখনো হয়নি। সে কতক্ষণ ‘হা’ করেই তাকিয়ে রইল। ঢোক চেপে নাছির উদ্দীনের দিকে তাকাল। বিস্ময় গোপন করতে না পেরে বলল, ‘আমি এই ঘরে থাকব?’

–‘জি মা। স্যার তোমার জন্য এই ঘরটা খালি করিয়েছে।’ জবাব দিলেন নাছির উদ্দীন।

–‘এত বড় রুম…!’ রজনী কোনোভাবেই নিজের চমকটুকু ঢাকতে পারছে না।

রজনীর কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে সবকিছু। কয়েক ঘন্টা আগে যেই মেয়ে কোথায় থাকবে, কী খাবে, এই চিন্তায় অন্য একটি ব্যক্তির কোলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিল, সেই মেয়েটির চোখেমুখে এখন খুশির ঝিলিক। তার দুর্বল শরীর একদম চাঙা হয়ে উঠেছে। ঝরঝরে লাগছে নিজেকে। রজনী মনোযোগ সহকারে পুরো রুমটা দেখতে লাগল। মাঝখানে চারকোণা বড় বেড, কমপক্ষে চারজন শোয়া যাবে! এতবড় বেড দিয়ে করবে টা কী রজনী? এক ঘরেই তিন তিনটে জানালা। রোদে ঝলমল করছে তাই। বাহিরে পড়ন্ত বিকেল, একটা জানালার গ্রিল ধরে ধরে নীলমণি লতা বেয়ে বেয়ে উপরে উঠে গেছে, রজনী গিয়ে সেই লতাগুলো ছুঁতেই আরও অবাক হয়ে গেল, ‘এগুলো প্লাস্টিকের?’

–‘হ্যাঁ, আর্টিফিশিয়াল।’ নাছির উদ্দীন ঠোঁট টিপে হাসছে। রজনীর বাচ্চা বাচ্চা উচ্ছ্বাসে সে খুব মজা পাচ্ছে।

–‘আমি ভাবলাম জীবন্ত। ধরার উপায়ই নেই যে প্লাস্টিকের।ইশ! কী সুন্দর…’

ম্যানেজার নাছির উদ্দীন মৃদু হাসলেন।

–‘স্যার বাহির থেকে নিয়ে এসেছে।’

–‘ওমা! এগুলো এই দেশের না?’

–‘নাহ।’

রজনী অবাক নয়নে নীলমণি লতাগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। পরমুহূর্তেই ঠোঁটে হাসি ফুঁটিয়ে বলল, ‘হিরো সাহেবের বাড়ি! না যেন জাদুঘর। কত্ত কিছু দেখার মতো আছে!’

নাছির উদ্দীন এগিয়ে গিয়ে রজনীর পাশে দাঁড়ালেন, বললেন, ‘এসব পড়ে দেখলেও চলবে মা। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। এই ঘরেই এটাচড বাথরুম আছে। ওই যে ওদিকটায়… তোমাকে দেখে এখনো বেশ ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত মনে হচ্ছে।ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ এসো, কেমন?’

রজনী মাথা হেলিয়ে জবাব দিল, ‘জি, আচ্ছা।’

নাছির উদ্দীন চলে যাওয়ার পরও মিনিট পাঁচ যাবত পুরো ঘর ঘুরে ঘুরে দেখল রজনী। যাই দেখে তাই সুন্দর, সবকিছুতে অদ্ভুত মুগ্ধতা…
তবে রজনীর সবচেয়ে বেশি পছন্দ হলো পর্দা গুলো। পাতলা ফিনফিনে সাদা পর্দার গায়ে হালকা নীলের ছোঁয়া। দেখলে কেন জানি নীল আকাশ আর সাদা মেঘের ভেলার কথা মনে পড়ে যায়। তাকালে শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে।

এই এত ভালো ভালো জিনিস দেখে হঠাৎই রজনীর মনটা খুব ভার হয়ে এলো। এরকম একটা সংসারের স্বপ্ন সেও দেখেছিল, যখন প্রথম অভির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। হয়তো এত দামী জিনিস তার সংসারে থাকত না,কিন্তু এরকম পরিপাটি ভাবে গুছিয়ে রাখতে চেয়েছিল রজনী। সেই স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে গেল। বাস্তবতার ধরা ছোঁয়ার বাইরে…
রজনী বুকের হাহাকার আড়াল করে বাথরুমে ঢুকে আরেক দফা স্তব্ধ হলো। এত সুন্দর বাথরুম সে তার ইহ-জীবনে কখনো দেখেনি। বাথটাব-টাই তো যত বড় তত বড় রজনীদের বাসার খাটটাও ছিল না! রজনী খালি বাথটাবে উঠে বসল। বাথটাবের কোলের মধ্যে ঢুকে গুটিশুটি মেরে বসে রইল ‘দ’ ভঙ্গিতে। তার চোখের দৃশ্যপটে হাজারও স্মৃতির ভীড়, চোখ দুটো অনায়াসে ঘোলা হয়ে এলো। এভাবে কতক্ষণ বসে ছিল, রজনী নিজেও জানে না। একসময় প্রবল শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেল।

_________
চোখ মেলতেই রজনী হকচকিয়ে গেল। সে দ্রুত মাথা উঁচু করে সোজা হয়ে বসল। তার সামনে আদ্র দাঁড়িয়ে, পেছনে নাছির উদ্দীন। আদ্র’র হাত ধরে একটি ফুটফুটে শিশু দাঁড়িয়ে, পুরো বারবি ডল… এইটুকুন মেয়ের কী গভীর চোখ! রজনী একদৃষ্টে অর্থির দিকে তাকিয়ে রইল। অর্থিকে সে চেনে। টিভিতে অনেকবার তার বাবার সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে দেখেছে রজনী, কখনো যে এই মেয়েটিকে সরাসরি দেখবে, সে কল্পনাও করেনি।

আদ্র ভ্রু কুঁচকে রজনীর দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করছে। তার কপালে সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ম কয়টি ভাঁজ। রজনী যখন তার পায়ে পড়ে একটি থাকার জায়গা চেয়েছিল, তখন আদ্র হকচকিয়ে যায়। কোনোরকমে রজনীকে দাঁড়াতে বলে চলে যায় কেবিন ছেড়ে। নাছির উদ্দীনের সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করে। তখন সেখানে অর্থি উপস্থিত ছিল। অর্থি বলল, ‘পাপা, উনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। উনাকে রেখে দাও। আমি সারাদিন উনার সঙ্গে খেলবো।’

আদ্রও ভেবে দেখল, এতে অর্থিও হ্যাপি, মেয়েটিরও একটা থাকার স্থান হলো। পরে রজনীকে নিয়ে বাসায় আসে সে। নিজের ঘর থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হওয়ার পর আদ্র শুনলো, নাছির উদ্দীন চিন্তিত স্বরে বলছেন, ‘রজনী মা তো বাথরুম থেকে বের হচ্ছে না। অনেকবার ডেকেও কোনো সাড়াশব্দ পাই নাই স্যার।’

তখন আদ্র নিজেও চিন্তায় পড়ে যায়। তার কাছে সব রুমের, এমনকি সব ঘরের বাথরুমের চাবি আছে। তাই আদ্র দ্রুত চাবি নিয়ে এসে বাথরুমের লক খুলে ভেতরে ঢুকল। আর ঢুকেই অবাক চোখে দেখল, মেয়েটি গুটিশুটি মেরে আরাম করে ঘুমোচ্ছে। নাছির উদ্দীন রজনীকে ডাকতে নিলেও আদ্র হাত ইশারায় মানা করে। কেন জানি, মেয়েটির এত আরামের ঘুম নষ্ট করতে ইচ্ছে হচ্ছিল না আদ্র’র। কিন্তু রজনীই তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে জেগে যায়। তারপর থেকে কেমন ঘোরলাগা চোখে অর্থির দিকে তাকিয়ে আছে।

আদ্র টের পেল, অর্থি তার হাত থেকে নিজের ছোট্ট হাতটি বের করে নিয়েছে। আদ্র পাশে তাকাল। অর্থি ততক্ষণে দুই পা এগিয়ে গেছে। একদম বাথটাবের সামনে গিয়ে থামল। কোমরে দুই হাত রেখে বড়দের মতো শাসনের ভঙ্গিতে রিনরিনে কণ্ঠে বলল, ‘এভাবে কেউ বাথরুম আঁটকে ঘুমায়? সবাই কত ভয় পেয়ে গেছিল, জানো আন্টি?’

রজনী মিনমিনিয়ে জবাব দেয়, ‘সরি।’

–‘আর কখনো এরকম কোরো না আন্টি। তোমার ঘুম পেলে বেড আছে তো। নাকি বেডটা পছন্দ হয়নি তোমার?’

রজনী দ্রুততার সঙ্গে বলল, ‘না, না, খুব পছন্দ হয়েছে।’

–‘ঠিক আছে। আমরা যাই, তুমি তাড়াতাড়ি নিচে আসো। আমারও ক্ষিদে পেয়েছে। একসাথে খাবো।’

রজনী মাথা কাত করে।
অর্থি গিয়ে তার পাপার হাত ধরল। বলল, ‘চলো পাপা, আমরা যাই।’

আদ্র’র ঠোঁটের কোণায় ঈষৎ হাসি। এই মেয়েটি এইটুকুন বয়সে এত পেঁকে গেছে! কী পাঁকা পাঁকা কথা! আদ্র চট করে অর্থিকে কোলে তুলে নিতেই, অর্থি চেঁচালো, ‘এহহে… কোলে নিলে কেন? আমি কী ছোট্ট বাচ্চা নাকি?’

–‘না, তুমি বুড়ি। পেঁকে একেবারেই টসটসে হয়ে গেছো। পাঁকনি…’

অর্থিকে নিয়ে আদ্র বেরিয়ে গেল। পেছন পেছন নাছির উদ্দীনও চলে গেল। রজনী হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। পরমুহূর্তেই একরাশ অযাচিত লজ্জা তাকে আষ্টেপৃষ্টে ঘিরে ধরে। সে হাটুতে মুখ গুঁজে ভাবে, কী লজ্জাজনক ঘটনা টাই না ঘটলো! উনিও বা কী ভাবছেন? ইশ… একে তো উনাকে ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে, তার উপর আবার এরকম আচরণ!
রজনী লজ্জা সামলে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ঘর ছাড়ল।

_________
রজনী ডাইনিং রুমে এসে দাঁড়াল ভয়ে ভয়ে। পেটের মধ্যে ইদুর দৌঁড়াচ্ছে তার৷ সে ভাবল, একটা প্লেটে খাবার নিয়ে নিজের ঘরে বসে খাবে। এতবড় হিরোর সঙ্গে একসাথে বসে খাওয়া? অসম্ভব…! সেই বা কী মনে করবে?

রজনী নিঃশ্বাস ফেলে টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াল। কাচুমাচু হয়ে আছে সে। আদ্র গম্ভীরমুখে স্যান্ডউইচ চাবাচ্ছিল, রজনীকে দেখে দ্রুত স্যান্ডউইচ টুকরোটি গিলে নেয়। বলল, ‘এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন।’

রজনী কণ্ঠ খাঁদে নামিয়ে বলল, ‘না, মানে.. আমি আমার ঘরে গিয়ে খাব ভাবছিলাম।’

–‘কেন? এখানে বসে খেতে সমস্যা কী?’

–‘না, কোনো সমস্যা নেই। তারপরও, আপনি এত বড় মানুষ…’

রজনী আরও আড়ষ্ট হয়ে পড়ল। আদ্র মৃদু হেসে বলল, ‘আপনি বসুন। আমি বাঘ না, ভাল্লুকও না। আর এত বড় কেউ না। সাধারণ জনগণ। বুঝেছেন?’

রজনী মাথা কাত করে বুঝালো, সে বুঝেছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে প্রচুর অবাক হলো। এই মানুষটার ভেতর একটুও অহংকার নেই, নেই কোনো গৌরব! কত সাদামাটা… অথচ কপাল দেখো। এনার বউ এনাকে ফেলে চলে গেছে! রজনী দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সব ভালোমানুষের সাথেই খারাপ ঘটনা ঘটে ভেবে তার মন খারাপ হয়ে গেল।

–‘কী ব্যাপার? বসছেন না কেন?’

–‘জি, বসছি।’

রজনী চেয়ার টেনে বসল। টেবিলে হরেক পদের খাবারের ছড়াছড়ি। খাবারের জিভে পানি এনে দেওয়া সুবাসে পুরো ঘর মৌ মৌ করছে। কিন্তু এখন এইমুহূর্তে কোনো ধরনের ফাস্টফুড আইটেম খেতে ইচ্ছে করছে না। একটু ভর্তা টাইপ কিছু দিয়ে কয়টা ভাত খেতে ইচ্ছে করছে। টেবিলের উপর ভাতও আছে, কিন্তু ভর্তার মতো কিছু চোখে পড়ছে না। রজনী কোনটা খাবে, কীভাবে খাবে, এইসব ভেবে ভেবে হাত গুটিয়ে বসে রইল। তার মাথা আবার ঝিমঝিম করছে। এখানে আদ্র সাহেব না থাকলেই বোধহয় ভালো হতো।

ক্ষণকাল কাটল। আদ্র খাচ্ছে, আর চুপচাপ রজনীর দিকে তাকিয়ে আছে। রজনীর পেছনের গল্পটা তার খুব জানতে ইচ্ছে করছে। জিজ্ঞেস করলেই হয়ত বলে দিবে। কিন্তু আদ্র’র জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে না। কী না কী ভাবে! রজনীর অস্বস্তি আদ্র টের পেল। সে খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়াতেই, রজনী একটু চমকে লাফিয়ে উঠল। আদ্র হতভম্ব গলায় বলল, ‘রিল্যাক্স!’

রজনী হাসল, মলিন ঠোঁটে চোরা হাসি। আদ্র জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি তো কিছুই খাচ্ছেন না। কেন?’

–‘ইয়ে মানে…’ রজনী কাইকুই করে। কী বলবে ভেবে পেল না। আদ্র এক সেকেন্ড থেমে বলল, ‘আমি অন্তরাকে ডেকে দিচ্ছি। ও এই বাসায় খাবার দাবারের দিকগুলো খেয়াল রাখে। যখন যেটা খেতে ইচ্ছে করবে, ওর কাছে চাইবেন। অস্বস্তিবোধ করবেন না। এখন বলতে গেলে, এটা আপনারও বাসা,যেহেতু আপনি থাকছেন। আপনার যা খেতে ইচ্ছে করছে অন্তরাকে বলুন। ওকে?’

রজনী হ্যাঁ, না কোনোকিছু জবাব দিতে পারল না। আদ্র বেরিয়ে গেল, পনেরো সেকেন্ডের মাথায় অন্তরা এসে রুমে ঢুকলো। রজনীর মনে হলো, এই লোকটি অসম্ভব ভালো… অসম্ভবের উপরে যদি কোনোকিছু থেকে থাকে, তবে সেই লেভেলের ভালো। আদ্র চলে যাওয়ায় রজনী খানিকটা স্বস্তিও পেল। অন্তরাকে জিজ্ঞেস করল, ভর্তা পাওয়া যাবে কী-না।

_________
খাওয়া দাওয়া শেষে রজনীর মনে পড়ল, অর্থিকে তো আর দেখল না। মেয়েটা বলেছিল, তারও ক্ষিদে পেয়েছে এবং সে অপেক্ষা করবে। কোনটা অর্থির রুম রজনী জানে না। বিশাল বড় বাড়ির এই এক সমস্যা। চারিদিকে ঘর, ঘর, আর ঘর। রজনী মৃদু শ্বাস ফেলে উদ্দেশ্যহীন হাঁটতে লাগল। কাউকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। রজনী অনুমান করল, হয়তো দোতালায় আদ্র সাহেব এবং অর্থি থাকে। তাকে দেওয়া হয়েছে নিচতলার একটি ঘর।
রজনীর খুব ইচ্ছে করছে ফুটফুটে পুতুলটির সঙ্গে দেখা করতে৷ কিন্তু সাহস করে উপরে উঠতে পারছে না।

হঠাৎ মোতালেব সামনে পড়ে গেল। তার হাতে র‍্যাপিং পেপারে মোড়ানো কী যেন, ওটা নিয়ে দোতালার সিড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। হয়ত উপরে উঠবে। রজনীকে দেখতে পেয়ে মোতালেব এক হাত নাড়ল, ‘আরে সিস্টার… কেমন আছেন?’

রজনী ঠোঁটে হাসি আঁকলো, ‘হ্যাঁ ভাই, ভালো।’

–‘যাইতাছেন কই?’

–‘এমনিই, হাঁটছি। এখনো তেমন কিছু চিনি না তো।’

–‘চিনা যাইবেন আস্তেধীরে।’

–‘জি। আপনি কী উপরে যাচ্ছেন?’

–‘হ.. অর্থি মামনীর গিফট আছে এই প্যাকেটে।’

–‘ও… আচ্ছা শুনেন, আমার একটা কাজ করে দিবেন?’

–‘বলেন সিস্টার।’

–‘অর্থি মামনীর সঙ্গে আমি দেখা করতে চাই। কিন্তু উনার রুম কোনটা জানি না। কীভাবে দেখা করি?’

–‘ওওও.. আইচ্ছা আমি আগে যাই। গিয়া মামনীরে জানাই। তারপর আইসা আপনেরে তার রুমে নিয়া যাবোনি, ওকে? এইখানে খাঁড়াইয়া থাকেন। আমি যামু, আর আসুম।’

এই বলে মোতালেব চলে গেল। রজনী দাঁড়িয়ে রইল।
মোতালেব দরজায় নক করতেই আদ্র ধীর কণ্ঠে বলল, ‘শশশশ.. কাম সাইলেন্টলি।’

মোতালেব পা টিপে একপ্রকার নিঃশব্দে ঘরে ঢুকল। অর্থি ঘুমোচ্ছে, এই জন্যেই আদ্র শব্দ করতে মানা করে দিয়েছে। মোতালেব গলার স্বর নিচু করে বলল, ‘স্যার, অর্থি মামনীর উপহার।’

–‘ওই টেবিলে রেখে যাও।’ আঙুল দিয়ে ইশারা করে দেখালো আদ্র। মোতালেব প্যাকেটটা নামিয়ে রেখে বিনীত ভঙ্গিতে বলল, ‘স্যার, রজনী সিস্টার অর্থি মামনীর সাথে দেখা করতে চাইছে। আমি তারে গিয়া বইলা দেই যে মামনী ঘুমায়।’

–‘এক মিনিট, এটা বলার দরকার নেই। তুমি গিয়ে তাকে এই রুমে পাঠিয়ে দাও। তার সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে।’

–‘জি, আইচ্ছা।’

মোতালেব নিচে নেমে এসে বলল, ‘সিস্টার, উপরে গিয়া ডান দিকের কোণার ঘরটা।’

–‘ধন্যবাদ ভাই।’

রজনী অর্থির ঘরের দিকে পা বাড়াল।
দরজা খোলা, দরজা বরাবর বিছানা দেখা যাচ্ছে, সেখানে অর্থি গুটিশুটি মেরে ঘুমোচ্ছে। দীর্ঘ আখিপল্লব, কী ঘন! গাঢ় কালো… রজনী একদৃষ্টে অর্থির ঘুমন্ত মুখপানে তাকিয়ে রইল। পেছনের টেবিলের কাছে যে আদ্র দাঁড়িয়ে, সে টের পেল না। রজনী নিঃশব্দে হেঁটে হেঁটে অর্থির শিয়রে বসল,পেছনে পিঠ দিয়ে। তার পিঠের পেছনে আদ্র দু’হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রজনীর কর্মকান্ড দেখছে।

ক্ষণকাল চুপ করে বসেই রইল অর্থি। তার চোখ দুটো ভেঙে আসতে চায়। এত সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা ফেলে কোনো মা কী পারে অন্য পুরুষের হাত ধরে চলে যেতে? পারে, অর্থির মা পেরেছে। এইটুকুনি বাচ্চা, মায়ের আদর ছাড়া বড় হচ্ছে। আদ্র সাহেবও সিনেমা নিয়ে সবসময় ব্যস্ত। বাচ্চাকে সময় নিশ্চয়ই তেমন একটা দিতে পারে না। এই জন্যেই অর্থি কেমন গম্ভীর গম্ভীর…

রজনী আলতোভাবে অর্থির একটা গাল ছুঁয়ে দিল। এত মৃদু ভাবে, যেভাবে বাতাস ছুঁয়ে যায়, ঠিক তেমন। ঘরে এসি চলছে। গায়ের উপর পাতলা চাদর, সেটাকে বুক অবধি টেনে দিয়ে খুব আস্তে, সন্তপর্ণে অর্থির মুঠো করা হাতের তারায় চুমু খেল। তারপর ধীর পায়ে উঠে দাঁড়াল। পেছন ঘুরতেই প্রচন্ড রকমের শক খেল, আদ্রকে দেখে। একেবারে ভূত দেখলে মানুষ যেভাবে চমকে উঠে, ঠিক সেভাবে। মুখ দিয়ে মৃদু শব্দে গোঙানির মতোও বের হয়ে এলো। বিস্ফোরিত নয়নে রজনী তাকিয়ে রইল। আদ্র’র পেট ফেটে হাসি পেলেও, সে ভ্রু কুঁচকে ফেলল।

চলবে…
~সবাই একটু রেসপন্স কইরেন, গঠনমূলক মন্তব্য কইরেন। তবেই না লেখার প্রতি আগ্রহ জাগে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here