মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৩৫/৩৬
মোনার কাছ থেকে এমন অনপেখিত জবাব শুনে প্রিয়ম স্তম্ভিত হয়ে রইল। মোনার বলা কথা’টা প্রিয়মের হৃদপিণ্ডে বজ্রর ন্যায় আঘাত করলো। প্রিয়মের মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে আসলো,
-“মোনা তুমি কি বললে?”
মোনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে একটু আগে বলা কথা’টার জন্য ও মোটেও অনুতপ্ত নয়। চেহেরার অভিব্যক্তি আগের মত’ই কঠিন।রাগ চাপিয়ে খুব হিমশীতল গলায় বলল,
-“যা বলেছি তা শুনেছেন।এটা বলার কারণ’টাও তাহলে শুনুন।”
মোনা একটু থামলো। প্রিয়মের মুখের দিকে তাকালো।
প্রিয়মের চোখে মুখের অবস্থা সঙ্কটজনক। প্রখর এক অত্যাশ্চর্য ভাব প্রিয়মের চেহেরায় দীপ্যমান।কারণ’টা শোনার জন্য প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো।
-“আপনার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর আগেও আমি একটা জীবন অতিবাহিত করেছি। সম্পর্কের পর আমি আগের জীবনের সবাই’কে ভুলে যাবো?আমি আপনাকে আগেই বলেছি জ্যাক আমার বন্ধু,আমার শুভাকাঙ্ক্ষী। আমার জীবনে জ্যাক আর আপনার দুই জনের স্থান’ই ভিন্ন ভিন্ন। জ্যাক আমাদের সম্পর্কে তৃতীয় কোন ব্যক্তি নয়। তাহলে জ্যাকের সাথে আপনার তুলনা করার মত অর্থহীন প্রশ্ন কেন করলেন?
আর হ্যাঁ আমি অবান্তর এক উত্তর দিয়েছে। আমার ছোট এই জীবনে বিচিত্র রকমের অভিজ্ঞতা।সেই অভিজ্ঞতা থেকেই উত্তর’টা দিয়েছে।
প্রেম মানে কাউকে বন্দী করে রাখা না। কারো ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণ করা না। প্রেম মানে আপনার পছন্দ-অপছন্দ, খারাপলাগা-ভালোলাগা আমার উপর চাপিয়ে দেওয়া না। আপনি আইসক্রিম খেতে পছন্দ করেন না, আমি পছন্দ করি। এখন কি আমি আপনায় জোর করে আইসক্রিম খাওয়াবো?না,প্রেম মানে দুইজন দুইজনের ইচ্ছা- অনিচ্ছা’কে সম্মান করা।
আপনি আমায় বললেন আমি পুরুষ নিয়ে বাসায় সময় কাটাই। কি জঘন্য একটা কথা বলেছেন! আমার প্রতি বিশ্বাসের ছিটেফোঁটাও নেই। সেখানে প্রেম দিয়ে আমি কি করব?যে আমায় কিছু জিজ্ঞেস না করে,কিছু না বুঝে এসব বলতে পারে তাঁর সাথে সারাজীবন কাটানোর পরিকল্পনা মূর্খতা না? যেখানে বিশ্বাস জিনিস’টা এত ঠুনকো সেখানে কিসের প্রেম?আমার প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মান রেখে যে কথা বলেনা তাঁর সাথে প্রেম!
মানুষ কেন প্রেম করে? সারারাত জেগে ফোনে কথা বলতে?ঘুরতে যেতে? রেস্টুরেন্টে খেতে? নাকি একজন মানুষ পেতে,যে অপরজন’কে সম্মান করবে,বিশ্বাস করবে, সাপোর্ট দিবে? এসবই যদি না থাকে তবে কেন প্রেম? শুধু আপনি না পৃথিবীর ৮০% মানুষ’ই বুঝে না এসব।
আর আমি জ্যাকের কথা কেন বলেছি? কারণ জ্যাক আমায় সম্মান করে, আমার প্রতি’টা কাজে সাপোর্ট দেয়, আমার প্রতিটি সিদ্ধান্ত’কে সাধুবাদ জানায়,জ্যাক ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, আপনার মত উদ্ভট চিন্তা-ভাবনা করে না,জ্যাক সম্পূর্ণ সুস্থ চিন্তাধারার মানুষ।
জ্যাক যদি একজন বন্ধু হয়ে এমন হতে পারে,আপনি একজন প্রেমিক হয়ে কেন এর বিপরীত হবেন?তাহলে আমি আপনার আর জ্যাকের ভিতর থেকে কোন একজন’কে বেছে নিতে দু দন্ড ভাববো কেন?
আপনাদের বাসা থেকে যখন একটা বিশ্রী কারণে বেরিয়ে এসেছিলাম,আমার সে দিনগুলো’তে যদি জ্যাকের সাহায্য না পেতাম আমার কি হত আমি জানি না। আমার জীবনে খুব কম ভালো পুরুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। তাই ভালো পুরুষদের প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা, যেমন জ্যাকের প্রতি।
জ্যাক’কে আমি ভালোবাসি বন্ধু হিসেবে,আপনায় প্রেমিক হিসেবে।সেখানে জ্যাক আর আপনার মাঝে তুলনা আসে কোত্থেকে?আর আপনি নির্বোধের মত তুলনা করেছেন, আমি আমার নিজের মত ভেবে উত্তর দিয়েছি।”
মোনা বলা শেষ করে লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলল।প্রিয়মের অভিব্যক্তি দেখার জন্য তাকালো। প্রিয়ম অন্যদিকে ফিরে আছে। কিছুক্ষণ প্রগাঢ় নিস্তব্ধতার মাঝে যাপিত হলো। নিস্তব্ধতা’কে অবকাশ দিয়ে প্রিয়ম চাপা মর্মপীড়া গলায় নিয়ে বলল,
-“তোমার কথার সারাংশ হলো তোমার জীবনের প্রতি’টা পদক্ষেপে জ্যাকের ভূমিকা বেশি।তুমি যেমন’টা চাও ঠিক তেমন জ্যাক।তাই তুমি জ্যাক কে বেছে নিবে। তোমার কথায় যুক্তি আছে।”
প্রিয়ম মোনার দিকে ফিরে তাকায়।প্রিয়মের চোখ গুলো গাঢ় নীলাভ রং ধারণ করেছে। উগ্র রোষে চোখ গুলো ধিকধিক করছে। ভিতরের তীব্র ক্রোধ যা প্রিয়মের গলার স্বরে প্রকাশ পায়নি। প্রিয়মের কথায় মনে হয়েছে তীব্র যন্ত্রনায় কাতর স্বরে বলেছে। মুহূর্তে’ই প্রিয়মের গলার স্বর বদলে যায়। আক্রোশপূর্ণ গলায় বলল,
-“তোমার প্রতি আমার ভালবাসা সকল যুক্তির ঊর্ধ্বে। সকল যুক্তি সেখানে পরাস্ত।জ্যাক তোমার জন্য কি করেছে কি না করেছে এসবে আমার কিছু যায় আসে না। তোমার জন্য যা দরকার এখন সব আমি করবো।‌‌‌এখন জ্যাক’কে কি দরকার? তোমায় সাপোর্ট দিবো, তোমায় সম্মান করবো। কিন্তু শর্ত শুধু একটা, জ্যাকের সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ থাকতে পারবে না তোমার। হ্যাঁ আমি স্বার্থপরের মত কথা বলছি,আমি বিবেকহীন অসুস্থ মানুষের মত কথা বলছি। তোমার জন্য আমি বিবেকহীন, অসুস্থ,স্বার্থপর। আমি জ্যাক’কে বরদাস্ত করতে পারবো না।”
মোনা হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে রইল। নির্বাক হয়ে রইল।জটিল এক গোলক ধাঁধায় পড়ে গেলো। প্রিয়মের একগুঁয়েমি কথায় মোনা স্তব্ধ হয়ে রইল। এমন একজন মানুষ’কে নিয়ে কাটানো আদৌ সম্ভব?যে ক্লেশের ভয়ে মোনা ভালোবাসা’কে উপেক্ষা করেছে সেই ক্লেশে মোনা দগ্ধ হচ্ছে। জগতের কি অদ্ভুত নিয়ম! যে যন্ত্রনা মোনা কখনো বহন করতে চায় নি, সে যন্ত্রনা এখন মোনার রগে রগে পীড়া দিচ্ছে। মোনা তীব্র নৈরাশ্য ভরা গলায় বলল,
-“প্লীজ আপনি চলে যান।আপনার এই বিবেকবর্জিত সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দিবেন না। আমি নিজের কাছে নিজে লজ্জিত, অনুতপ্ত।”
-“জ্যাকের প্রতি এত বিমুগ্ধ তুমি,এত ভালোবাসা তোমার। তাহলে আমি কে? আমার সাথে কেন সম্পর্ক জড়ালে?”
প্রিয়মের কথার প্রত্যুত্তরে মোনার চিৎকার দিতে ইচ্ছে হলো। প্রিয়মের মূর্খতাপূর্ণ আচরণে মোনা প্রচণ্ড হতাশ। মোনা বিরক্ত’তে চোখ বন্ধ করে বলল,
-“হ্যাঁ জ্যাকের প্রতি আমি বিমুগ্ধ। জ্যাক চমৎকার একজন মানুষ। একজন চমৎকার মানুষ প্রেমিক ব্যতীত অন্য কিছু’ই হতে পারে না?বন্ধু হতে পারেনা? আপনায় বুঝাতে আমি ব্যর্থ, আমি গুছিয়ে জবাব দিতে পারছি না। আমার মাথা কাজ করছে না। আপনি যান দয়া করে।”
রাগের অনলে উত্তপ্ত নেত্রে মোনার দিকে অনিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রিয়ম। মোনার অসহ্য লাগছে প্রিয়ম’কে, তীব্র অসহ্য। মোনা অসহ্য, বিরক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে। প্রিয়মের ক্রোধান্মাত্ত দৃষ্টি ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে গেলো কেন জানি। প্রিয়ম খুব শান্ত গলায় বলল,
-“তুমি আমার ভালোলাগা।আর আমি নিজের পছন্দের জিনিস একান্ত নিজের রাখতে পছন্দ করি। তোমাকেও তেমন থাকতে হবে মোনা। আর সেখানে যদি জ্যাক বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় আমি জ্যাক’কে মেরে ফেলতে দু’বার ভাববো না।”
মোনা নিষ্প্রাভ দৃষ্টিতে তাকালো প্রিয়মের দিকে। এ মুহূর্তে প্রিয়মের প্রতি কোন রকম আবেগ, ভালোবাসা কিছু’ই কাজ করছে না। মোনার শুধু মনে হচ্ছে ওঁর সামনে বিবেক বুদ্ধিহীন,নির্বোধ একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মোনা তাচ্ছিল্য ভরা গলায় বলল,
-“এসব নিয়ে জ্যাক’কে যদি আপনি একটা কথা বলেন—”
মোনার কথা শেষ না হতেই প্রিয়ম গর্জে উঠে । প্রিয়মের চোখ দুটি যেন উজ্জ্বল অগ্নিশিখা। বলে,
-“কি করবে তুমি শুনি? জ্যাকের জন্য এত জ্বলে কেন তোমার?”
মোনা এসবের উত্তর না দিয়ে বলে,
-“জ্যাক’কে খুন করবেন না?খুন তো দশ বছরের একটা বাচ্চাও করতে পারে। অন্ধকারে পিছন থেকে গলা বরাবর ছুরির একটা আঘাতে’ই খুন করা যায়। আপনি মানসিক ভাবে অসুস্থ।”
মোনা একটু থেমে চিৎকার দিয়ে বলে,
-“যান আপনি বেরিয়ে যান এখান যান।”
পলকেই বিশাল এক পরিবর্তন হলো প্রিয়মের।প্রিয়ম ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলল। সকল রাগ,ক্ষোভ,ক্রোধের যেন নিরসন হলো। নিচু স্বরে আস্তে করে বলে,
-“আচ্ছা চলে যাচ্ছি। কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর দেও। আমাদের বাসা থেকে কি বিশ্রী কারণে তুমি চলে এসেছো?”
মোনা উত্তর দিলো না। প্রিয়ম কিছুক্ষণ মোনার দিকে উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকলো। মোনা’কে নিরুত্তর দেখে প্রিয়ম পুনরায় বলল,
-“বলবে না তুমি। আচ্ছা আমি যাচ্ছি।”
প্রিয়ম নির্বিবাদে চলে গেলো। মোনা তাকালো না সেদিকে। শরীর,মন দুটো’ই শৈথিল্য হয়ে গেছে। মোনা দুর্বল পায়ে হেঁটে গিয়ে দরজা বন্ধ করল। ভিতর থেকে তীব্রবেগে কান্না বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। এই কান্নার নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। মোনার মর্মদেশে অতি যন্ত্রনা অনুভূত হচ্ছে। মোনা কান্না গিলে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। মোনা কাঁদতে চায় না,কারো জন্য কাঁদতে চায় না। এসব তুচ্ছ কারণে কাঁদতে চায় না।আত্মক্ষোভে মোনা ফেটে পড়েছে। সমস্ত বারণ, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মোনার চোখ বর্ষনমুখর হয়ে পড়েছে। মোনার গণ্ডদেশ নোনা সলিলে প্লাবিত হচ্ছে। বুক জুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে মহাপ্রলয়। নয়ননীর আপন গতিতে বিসর্জিত হচ্ছে। মোনার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে। কত সময় ওভাবে পেরিয়ে গেছে হিসেব নেই। কান্না থামতে কয়েক ঘণ্টা লেগেছে। এক সময় কান্না থেমে গেলেও অদ্ভুত এক যন্ত্রনা মোনার বুকের ভিতর’টা আচ্ছন্ন করে রেখেছে।‌ ক্রমন্বয়ে যন্ত্রনা’টা তীক্ষ্ণ হচ্ছে। মোনা মুমূর্ষু রোগীর ন্যায় বিছানায়’ই পড়ে থাকলো।
_____
প্রেম নামক এক অনুভূতি’তে কয়েক ঘণ্টা আগেও মোনা আবিষ্ট ছিলো। প্রিয়মের কথা মনে পড়তেই শরীর,মন জুড়ে হিমশীতল এক শিহরণ জাগতো। অথচ এখন মোনার সবকিছু তেতো লাগছে। বিমর্ষ হয়ে পড়েছে মোনা। সন্ধ্যার ম্লান আলো শহর জুড়ে ব্যাপ্ত হচ্ছে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেলো। নিশান পায়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। মোনা উঠে বসে। মোনার গলার স্বর ভারি শুনাচ্ছে। ক্লান্ত গলায় বলল,
-“দেখি পা দেখি। ব্যথা হচ্ছে খুব?”
নিশান মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে। মোনা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে বিছানা ছাড়ে। এক হাতে পানির গ্লাস,অন্য হাতে করে ওষুধ নিয়ে আসে। পানির গ্লাস’টা বেড সাইডে রেখে নিশান’কে ওষুধ খেয়ে নিতে বলল। কিছুক্ষণ নিশানের পাশে শূন্যমনে বসে থাকে। মাথায় ভিতর নানান চিন্তা উঁকি দিচ্ছে। প্রিয়মের কথা ভাবছে, সুন্দর মুহুর্ত গুলোর কথা ভাবছে। আফসোসে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হয়ে আসে, চোখ ভিজে ওঠে। নিশানের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল,
-“ব্যথা কমেছে?”
নিশান ততক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে। মোনাও শুয়ে পড়লো। প্রিয়ম কল,ম্যাসেজ কিছুই দেয়নি। যেখানে বোঝাপড়ার এত ঘাটতি সেখানে ভালোবাসা টিকে কখনো?দুইজন দুই মেরুর মানুষ, বিপরীত চিন্তাধারায় মানুষ। মোনা ঘুমানোর চেষ্টা করে। শুধু এপাশ-ওপাশ করছে ঘুম আসছে না।প্রিয়মের বলা কথা গুলো বার বার মোনার কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। রাতে তেমন ঘুম হলো না।
সকাল বেলা জানালার কাঁচ ভেদ করে সূর্যালোক তির্যক ভাবে রুমে প্রবেশ করলো। মেঝেতে কয়েক খন্ড সূর্যরশ্মি চঞ্চল ভাবে বিচরণ করছে। মোনা ঘুম থেকে উঠে বসে। চোখ দুটি’তে প্রদহ হচ্ছে , মোনা নিভু নিভু চোখে তাকায়। মাথার ভিতর ঝিমঝিম করছে।ঘুম ভাঙতে’ই বিশাল এক শূন্যতায় মোনার বুক চিঁড়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে।
নিশানের পায়ে ব্যথার কারণে মোনা বাসায়’ই থাকে। মোনা সমীর আর শ্রুতির কথা ভাবে। কি দারুন প্রেম ওঁদের! মোনার ক্ষোভ হয়,ভাবে ভাগ্যই খারাপ। খারাপ ভাগ্য নিয়ে ভালো কিছু আশা করা’টা বোকামি ছাড়া আর কি?
কেন ভালোবাসতে গেল প্রিয়ম’কে?এমন একটা মানুষের সাথে সারাজীবন কাটানো কখনো সম্ভব না।‌ ধারালো একটা কষ্ট মোনায় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। মোনার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
(চলবে)

মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৩৬
দুই দিন এভাবে কেটে যায় প্রিয়ম কোন রকমের যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি। মোনা অনুতাপের শিখায় দগ্ধ হচ্ছে।প্রিয়ম’কে ভালোবেসে অনুশোচনা করছে। মোনার চোখ দুটি আপনাআপনি ভিজে ওঠে। খুব দীর্ঘ সময় না, মাত্র কয়েক’টা দিন কেটেছে প্রিয়মের সাথে।সেই প্রেমময় অনুভূতি গুলো ফ্যাকাশে,বিবর্ণ হয়ে বুকের মাঝে চাপা যন্ত্রনার ন্যায় বিচলন করছে। নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে মোনার। বুকের ভেতর আকাশসম হাহাকার। মোনা বুঝে গেছে প্রিয়মের সাথে পথচলা কঠিন। মোনা সব ভুলে যেতে চায়।এসব নিয়ে ভাবতে চায় না,কষ্ট পেতে চায় না। কিন্তু প্রগাঢ় এক ক্লেশ আপন নিয়মে যন্ত্রনা দিচ্ছে। প্রিয়ম একবারও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি,তবে কি প্রিয়মের কাছে ক্ষণকালের বিভ্রম ছিলো? নিজেকে সংযত করতে না পারার গ্লানি নতুন করে নাড়া দিয়ে উঠেছে।প্রিয়ম’কে নিয়ে চিন্তা মাথা থেকে নামাতে পারছে না।‌‌‌‌ বিষাক্ত এক যন্ত্রনায় মোনা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
মোনার শরীর, মন ভীষণ ভাবে নিস্তেজ হয়ে গেছে। একদিকে বিচিত্র রকমের চিন্তা মোনার মস্তিষ্ক প্রবরণ করে রেখেছে অন্যদিকে চরম একাকিত্বে মোনা কাহিল হয়ে পড়েছে। অবকাশ দরকার এর থেকে।নিজের মন’কে শক্ত করার চেষ্টা করছে মোনা।ছোট বেলা থেকে কষ্ট যার সহচর,সে কেন হবে ভালোবাসার কাঙ্গাল?সম্পর্কে জড়ানোর পর মোনা সব বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসেছিল।‌ আর এখন সব যেন আগের তুলনায় প্রখর হয়েছে।
নিশানের পায়ের ব্যথা কমে এসেছে, হাঁটলে একটু ব্যথা হয়।মোনা ঠিক করেছে আজ ভার্সিটি’তে যাবে। লম্বা এক সাওয়ার নেয়।ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে চিত্তক্ষোভ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। তোয়ালে দিয়ে উদাস মনে চুল গুলো মুছে।এর ভিতর নিশান স্কুলে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। মোনা চোখ লাল করে তাকিয়ে ধমকে ওঠে,
-“বলেছিনা পায়ের ব্যথা ভালো হলে যাবে। হাঁটাহাঁটি করলে ইনফেকশন হবে। আর একটা কথা বলবে না।”
মোনার কর্কশ গলার ধমক শুনে নিশান মাথা নিচু করে গুটিগুটি পায়ে, রং আর কাগজ নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। মোনা ভার্সিটির উদ্দেশ্য বের হয়। সকাল থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি পড়ছে, বৃষ্টি যেন নিস্তেজ শরীরে আকাশ থেকে ক্লান্ত ভাবে পড়ছে। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে না আবার কমছেও না একবারে। মোনা বাস্টস্যান্ডে ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। কোন কঠিন রোগ থেকে সদ্য সেরে ওঠা রোগীর ন্যায় ক্লান্ত চেহেরা। মোনার নিষ্প্রাভ চোখ দুটি হন্য হয়ে একদিক ওদিকে তাকাচ্ছে। প্রিয়মের উপর প্রচণ্ড অনীহা,অথচ অদ্ভুত এক কারণে আবার প্রিয়ম’কে খুঁজছে।শোঁ শোঁ করে বাস এসে থামে। মোনা বাসে ওঠে। মনের কোন এক কোণে অদ্ভুত এক শূন্যতা,রিক্ততা। বাস চলতে শুরু করে। মোনা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মোনার দৃষ্টি থমকে যায়,বুকের পাঁজর কাঁপিয়ে ধ্বক করে ওঠে। আর একটু হলেই যেন হার্ট বিকল হয়ে যেত। প্রিয়ম একটা রেস্তোরাঁ থেকে বের হচ্ছিলো। মোনা শুধু এক পলক দেখেছে। মোনার তীব্র থেকে তীব্রতর যন্ত্রনা হচ্ছে। মোনা চোখ বুঁজে থাকে।
প্রিয়মের সাথে প্রেমের আগের দিন গুলোর কথা ভাবছে মোনা।প্রিয়ম বেহায়ার মত মোনার অপমান সহ্য করে যেত।আর এখন?মোনা তাচ্ছিল্যপূর্ণ মনে হাসে। নিদারুন এক বিষাদ সে হাসি’তে।
বাস এসে ভার্সিটির সামনে থামে। মোনা বাস থেকে নামে। একটু দূরেই ওয়াটস আর শ্রুতি দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে।ওয়াটসের সাথে শ্রুতির এত সখ্যতা, সমীর কি এ নিয়ে কিছু বলে না?মোনা ওঁদের দিকে এগিয়ে যায়। মোনা’কে দেখে ভুত দেখার মত চমকে ওঠে।শ্রুতি প্রথমে আমুদে হয়ে উঠলেও খানিক বাদে অনুযোগের সুরে বলে,
-“মোনা তুমি এমন কেন বলে তো? কোথায় ছিলে এ কয়দিন?ফোন’টা পর্যন্ত ধরো নি।”
একটু থেমে ওয়াটস এর দিকে তাকিয়ে আবার বলে,
-“আমি তো ঠিক করেছিলাম ওয়াটস,সমীর আর আমি মিলে তোমায় খুঁজতে বের হবো।”
মোনা অতীব কষ্টে করে একটু হাসলো। একটা ক্ষীণ শ্বাস ফেলে বলল,
-“অসুস্থ ছিলাম একটু। তোমরা কেমন আছো?”
ওয়াটস বলে,
-“আমিও তাই ভেবেছিলাম তুমি হয়ত অসুস্থ । আমরা খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছিলাম। তুমি একটু নোটিশ করবে তো আমাদের।”
কিছুক্ষণ ওঁদের সাথে কথা বলে কেটে যায়। মোনা উদাসচিত্তে দুই একটা কথা বলছে আবার হঠাৎ হঠাৎ নানান ভাবনায় বিবশ হয়ে যাচ্ছে। ক্লাস শুরু হয়, মোনার তিক্ত লাগছে সবকিছু। ক্লাস শেষ হওয়ার পর মোনা চিন্তান্বিত গলায় শ্রুতি’কে জিজ্ঞেস করে,
-“আচ্ছা ওয়াটস আর তোমার ফ্রেন্ডশীপ নিয়ে সমীর কিছু বলে না?”
মোনার কথা শুনে শ্রুতির কপাল কুঞ্চিত হয়। যেন মোনা কোন অবান্তর প্রশ্ন করেছে।‌‌‌ শ্রুতি হেসে বলে,
-“কি অদ্ভুত প্রশ্ন! সমীর কি বলবে?সমীর আমার সকল কাজ কে সম্মান করে, আমাদের ফ্রেন্ডশীপকে ও। আর রিলেশনশিপের বিশ্বাস হলো মৌলিক বিষয়,যেটা আমাদের মাঝে সম্পূর্ণ আছে।তুমি হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন করলে?”
মোনা অন্য দিকে তাকিয়ে খুব সন্তপর্ণে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কেবল আস্তে করে বলল,
-“এমনি জানতে ইচ্ছে হলো।”
ভার্সিটি শেষে মোনা কিছু’টা পথ শ্রুতির সাথে যায়।শ্রুতির বাসা ভার্সিটির কাছেই। এরপরে মোনা একা একা হাঁটছে। গুড়িগুড়ি ফোঁটায় বৃষ্টি অবিরাম পড়ে চলেছে। মোনা আকাশের দিকে তাকায়, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ।মোনার মনের মত বিষণ্ণতায় ছেয়ে আছে অম্বর। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ এসে মোনার হাত ধরে হেঁচকা টান দেয়। মোনা প্রচণ্ডভাবে চমকে উঠে ত্রাসিত চোখে তাকায়। প্রিয়ম দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়মের চুল গুলো বৃষ্টিতে ভিজে চোখ অবধি লেপ্টে আছে, চুল থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ছে নাক-মুখে। চোখ গুলো ঘোলাটে দেখাচ্ছে, উদ্ভ্রান্তের মত চাহনি। মোনা কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল প্রিয়মের দিকে। খুব শীতল গলায় বলল,
-“আপনি!”
-“হ্যাঁ আমি। দুই দিনে একবারও আমার খোঁজ নেওয়া যায় নি মোনা?”
মোনা হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল,
-“বলেছি না আমার সামনে আসবেন না কখনো। অসহ্য লাগে আমার।”
মোনা ঠান্ডা গলায় বলছে কথা গুলো কিন্তু ভিতরে প্রচণ্ড আক্রোশ। মোনা একটু থেমে আবার বলল,
-“পৃথিবী’তে না আমি আপনার জন্য সৃষ্টি হয়েছি,না আপনি আপনি আমার জন্য। আমরা দুইজন দুই মেরুর মানুষ, আমাদের পথ ভিন্ন ভিন্ন। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। অনুরোধ আপনার কাছে, কখনো আমার সামনে আসবেন না।”
মোনা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অন্যদিকে ফিরে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি ক্রমশ বাড়ছে।প্রিয়ম কাতর গলায় বলল,
-“আসলে কি হয়েছে জানো মোনা?তুমি আমায় নিয়ে দ্বিধান্বিত। তাই যে কোন বিষয়ে সর্বপ্রথম আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা মনে আসে তোমার,তোমার মনে হয় তুমি ভুল করেছো আমার সাথে সম্পর্ক জড়িয়ে।তুমি আমায় নিয়ে সন্দিহান। হ্যাঁ আমি ওইদিন অন্যায় কিছু কথা বলেছি,উচিত হয়নি আমার ওসব বলা। আমার রাগ হয়েছিল,আর রেগে গেলে আমি জ্ঞানশূন্য হয়ে যাই।ভুল করেছি বলে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিবে, শুধরে নেওয়ার সুযোগ দিবে না? আসলে আমার ছেড়ে চলে যাওয়ার চিন্তা তোমার অস্থিমজ্জায় গেঁথে আছে। তুমি সব সময় ভাবো—”
মোনা চাপা গলায় চিৎকার করে উঠল। চোখ মুখ ইস্পাতের মত কঠিন।প্রিয়মের কথাটা অসমাপ্তই থেকে গেলো। মোনা শক্ত গলায় বলল,
-“আমার যেতে হবে।আমি সব ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনার কথায় আমার সিদ্ধান্ত বদলাবে না।”
প্রিয়মের চোখে মুখে অসহায় ভাব ফুটে উঠলো। অস্থির গলায় বলল,
-“মোনা, আমি জ্যাক কিংবা তোমাদের বন্ধুত্বের বিষয়ে কিছু বলব না। একবার সুযোগ দেও।আমি কত প্রেম করেছি, ওঁরা আমার চোখের সামনে অন্য মানুষ’কে চুমু খেলেও আমি ঈর্ষান্বিত হইনি। অন্য পুরুষের সাথে রাত কাটালেও আমি ডেকে জিজ্ঞেস করিনি। তোমার বেলায় অন্য আমি হয়ে যাচ্ছি মোনা।”
এর ভিতর ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। প্রিয়ম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাকভেজা হচ্ছে। প্রচণ্ডবেগে উত্তল বৃষ্টি, সাথে দমকা বাতাস। মোনার হাতের ছাতা’টা এত বাতাসে নড়বড়ে হয় যাচ্ছে। মোনাও প্রায় অর্ধেক ভিজে গেছে। প্রিয়ম মোনার উত্তরের অপেক্ষায় অধীর হয়ে আছে। মোনা’কে নিরুত্তর দেখে প্রিয়ম আবার অধৈর্য হয়ে বলল,
-“একবার তো সুযোগ দিবে মোনা?আমি জ্যাক’কে স্যরি বলব প্রয়োজন বোধে। মোনা আমি থাকতে পারছি না তোমায় ছাড়া, আমার প্রচণ্ড যন্ত্রনা হয়।”
মোনা প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
-“নিশান ঝড় বৃষ্টি ভয় পায়। বাসায় যেতে হবে আমার।”
মোনা হাঁটতে উদ্যত হলে প্রিয়ম পথ রুখে দাঁড়ায়। বৃষ্টির বেগ ক্রমে ক্রমে বেড়েই চলেছে। সেই সাথে বেড়ে চলেছে মোনা’কে হারানোর শঙ্কায় প্রিয়মের অসহায়ত্ব। প্রিয়ম নির্বাক দৃষ্টিতে তাকায়। উপায়হীন হয়ে নিস্তেজ গলায় বলল,
-“একটা বার সুযোগ দিবে না তুমি? ভবিষ্যতে যদি তুমি আমায় ছেড়ে যাওয়ার মত কারণ পাও তাহলে ছেড়ে যেয়ো।আমি তোমার কল্পনার মানুষ’টা হবো।তোমায় সাপোর্ট দিবো,সম্মান করব,তোমার ইচ্ছা-অনিচ্ছার গুরুত্ব দিবো, তোমায় স্বাধীনতা দিবো।”
প্রিয়মের কথায় মোনার অন্তরতম প্রদেশে ঝড় বৃষ্টির মত তাণ্ডব শুরু হয়। গত দুই দিনের যন্ত্রনা কিংবা সিদ্ধান্তের কথা ভেবে মোনা বিমুখ হয়ে পড়ে। অনিচ্ছাকৃত ভাবেও মোনার নেওয়া শক্ত সিদ্ধান্ত গুলো অচিরেই যেন ধুয়ে মুছে গেলো। মোনা আবার দুর্বল হয়ে পড়ে। মোনা কোন উত্তর দেয় না। প্রিয়ম পথ ছেড়ে দেয়,মোনা হাঁটতে থাকে। উত্তাল ঝড়, বৃষ্টি’তে ভিজে গেছে পুরো।অকারণেই মাথার উপর ছাতা’টা। প্রিয়ম মোনার পিছু পিছু হাঁটছে। মোনা প্রিয়মের দিকে তাকাচ্ছে না।প্রিয়মের দিকে তাকালে’ই মোনা মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ে যেন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
-“মোনা কিছু বলো প্লীজ।আমি তো বলছি জ্যাক’কে আমি স্যরি বলব। জ্যাকের বিষয়ে কিছু বলবো না। এক বার সুযোগ চেয়েছি শুধু।”
প্রিয়মের কথা গুলো মোনার কানে বিদ্ধ হয়। এই স্বর,এই মুখ,এই চাহনি মোনার প্রথম প্রেমানুভূতির কারণ,প্রথম ভালোবাসা। এ উপেক্ষা করা যে কঠিনতর কাজ। প্রথম স্পর্শনুভূতি,প্রথম চুমু মোনার চোখের সামনে পর্দার মত ভাসছে।মোনা তাকাচ্ছে না প্রিয়মের দিকে,কোন কথার উত্তর দিচ্ছে না। ভার্সিটি থেকে মোনার বাসা বেশ দূরে, এত দূরের পথ কিভাবে পেরিয়ে এসেছে?কত সময়ে পেরিয়ে এসেছে মোনার খেয়াল নেই। মোনা বাসার ভিতরে ঢুকে যায়। প্রিয়ম বৃষ্টির ভিতর বাসার গেটের সামনে দাঁড়ি থাকে। মোনা নেশাগ্রস্ত মানুষের মত রুমে ঢুকে। জানালার ফাঁক দিয়ে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকে প্রিয়মের দিকে। তারপর মোনা ভেজা কাপড় বদলে নেয়। প্রিয়ম তখনো বাসার সামনে দাঁড়ানো। মোনা জানালা বন্ধ করে বসে থাকে।প্রিয়ম কতক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো মোনা জানে না।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here