মেয়ে_তো_হবে_এমনই
১
– কিসের মেয়ে সুন্দর?মেয়ে সুন্দর কাকে বলে জানো?চোখ হবে বড় বড়, লাইক রসগোল্লা সাইজ।ওয়েট হবে ফিফটি ফাইভ প্লাস, নট শুটকি।আর হাইট হবে ৫’৪”, নট হিল সাইজ এন্ড নট লিলিপুট।
অভির কথা শুনে তার বোন অর্পা বলল,
– তোর কীসব চয়েজ ভাইয়া! চোখ হবে রসগোল্লা সাইজ!এই রসগোল্লা সাইজ মানে বুঝিস?চুরির মত গোল গোল।বলবি হরিণী চোখ দরকার।আর ওয়েট হবে পঞ্চান্ন?
গালে হাত দিয়ে গাল হা করে বলল অর্পা।এরপর আবার বলল,
– এখন তো মেয়েদের ওয়েট পঁয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে খোঁজে মানুষ।আর তুই কিনা আগে ভাগেই হাতির বাচ্চা চাইছিস?কী রুচি রে তোর!
– তোমার রুচিশীলতার তো লা জাবাব!
ঠোঁট উল্টিয়ে বলল অভি।তারপর ধমকে বলল,
– এই তুই চুপ যা।আমার বউ যে হবে তাকে এমনই হতে হবে। আর যদি না হয় তাহলে আমি ওকে আমার বেডের চাদর ধোয়া ছাড়া আর কোনোকিছুই করতে দেবোনা বলে দিলাম।
দুই ছেলে মেয়ের কথা এতক্ষণ আমেনা বেগম বসে বসে গিললো।এরপর অভিকে বলল,
– তোর বিয়ে না করার ফন্দী বাদ দে।আগে মেয়ে দ্যাখ তারপর বকবক কর।
আমেনা বেগম মেয়ের ছবি অভির হাতে দিতে গেলে অর্পা ছোঁ মেরে ছবিটা নিয়ে বলল,
– আজ কাল কেউ এভাবে ছবি দেখে না মা।
– তো কীভাবে দেখে?
– আরে তুমি কিছু বুঝবানা।এই ভাইয়া তুই মেয়ের প্রফাইলে যা।ওখানে প্রফাইলে মেয়ের ছবি দেওয়া আছে। আজ কাল ফেসবুকে ছবি দেখে মানুষ।
অর্পা নিজের ফোন থেকে মেয়ের প্রফাইলে ঢুকে তার প্রফাইল পিকচার অভির সামনে মেলে ধরলে।পিকচারে দুটো মেয়ের ছবি।একজন কিসিং স্টাইলে ঠোঁট চোখা করে আছে অন্যটা এক চোখ টিপে চোখ মারার স্টাইলে আছে।অভি অর্পার দিকে চোখ গরম করে তাকালো।বলল,
– এই দুই অটিস্টিকের মধ্যে মেয়ে কোনটা?
অর্পা হাসতে হাসতে বলল,
– চোখ লির করে আছে যে।
অভি ভালো করে তাকিয়ে দেখে বলল,
– আর পাশেরটা নিশ্চয় মেয়ের বান্ধবী?আমি দেখেছি সবসময় পাত্রীর থেকে পাত্রীর বোন অথবা বান্ধবীর চেহারা বেশি সুন্দর হয়।এই ক্ষেত্রেও তাই।
– কী বলছিস তুই?মেয়ের থেকে মেয়ের বান্ধবীকে বেশি ভালো লাগলো তোর?
– অবশ্যই।দেখ আমি যেমনটা যেমনটা চেয়েছি তার সবটায় মেয়ের বান্ধবীর মধ্যে।চোখদুটো কী সুন্দর রসগোল্লার মত। আর সাস্থ্যও মাশাআল্লাহ্ মেয়ের থেকে ফিট।শুধু হাইটটা বুঝতে পারছিনা।
অভি ফটোটা মায়ের সামনে মেলে ধরে বলল,
– তবে আমি মেয়ের বান্ধবীকেই বিয়েটা করি?দেখো তোমার চয়েজ থেকে আমার চয়েজ কত বেটার!
আমেনা বেগম বসা থেকে দাঁড়িয়ে খুব কড়াকন্ঠে বলল,
– এক থাপ্পড়ে তোমার দাঁত ফেলে দেবো আমি।আমি সিলেক্ট করি পাত্রী আর আমার ছেলে সিলেক্ট করে পাত্রীর বান্ধবী। আজকে সন্ধ্যায় মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবি।
অভি নির্বাক চোখে মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো। সন্ধ্যা সাতটায় মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা। সেখানে ছ’টায় মেয়ের নাম্বারে ফোন করলো অভি।ফোনটা মাধুর বদলে স্মিতা রিসিভ করলো।স্মিতার চিকন কন্ঠে হ্যালো শুনে অভি দুই সেকেন্ড চুপ থেকে বলল,
– দেখুন আপনি মাধু না যাদু জানিনা, আপনার সঙ্গে আমার দেখা করার কথা ছিল সন্ধ্যা সাতটায়।কারণ ওই সময় আমার অফিস থেকে বের হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু অতি এক্সাইটমেন্টের চোটে এখনি বেরিয়ে এসেছি।তো আমি ধানমন্ডি *** রেস্টুরেন্টে আসছি আপনারাও চলে আসুন।
স্মিতা একটু থতমত খেয়ে গেলো অভির কথা শুনে।ভেবেছিল বান্ধবীর হবুবরের সঙ্গে একটু জমিয়ে মজা নেবে।কিন্তু বান্ধবীর হবুবরের কথাবার্তা শুনে গলা শুকিয়ে কাঠ।স্মিতা বলল,
– আচ্ছা আসছি।
অভি ফোনটা কেটে দিতেই মাধু বলল,
– ব্যাটা কী বলল যা শুনে তুই আচ্ছা আসছি বললি?
– আমাদের এখনি বের হতে বলল।উনি অতি এক্সাইটমেন্টের চোটে অফিস থেকে এখনি বেরিয়ে এসেছে।
– কী ছেলেরে বাবা! বাট ওয়েট, আমাদের যেতে বলল মানে? ও কী বলেছে আপনারা আসুন?
– আরে আমিও তো সেটাই ভাবছি উনি জানলো কী করে যে আমি তোর সঙ্গে যাবো?আর আমি তো নিজের পরিচয়ই দেইনি।দেওয়ার আগেই মাধু না যাদু বলে কথা বলা শুরু করে দিলো।
– কী? মানে আমার নাম কে ভ্যাঙ্গানো!
অভির পৌঁছানোর পূর্বেই মাধু আর স্মিতা রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেলো।একদম কর্ণারে গিয়ে বসলো ওরা দুজন।ওদের আসার পাঁচ মিনিট পরই অভি এলো।খুঁজতে খুঁজতে ওদের কর্ণারে পেয়ে অভির মেজাজ গেলো চোটে।কোনো ভদ্রতা ছাড়াই অভি স্মিতার পাশে গিয়ে বসলো।স্মিতার সিনক্রিয়েটের আগেই অভি শার্টের কলার থেকে টাই লুস করতে করতে বলল,
– খামোখা না শুনে না জেনে আগেই তিরিং বিরিং করবেন না। আমিই অভি।
কথাটা বলে গলা থেকে টাইটা একদম খুলেই ফেলল।মাধু অভির কান্ড কারখানা দেখে থ বনে চেয়ে আছে।আর স্মিতার চোখ তো রসগোল্লার সাইজ থেকে রাজভোগের সাইজে রূপান্তরিত হয়েছে।অভি রেস্টুরেন্ট ঢুকে স্মিতাকেই আগে দেখতে পায় আর মাধুকে সে পেছন থেকে দেখে।অভি শার্টের দুটো বোতাম ছেড়ে দিয়ে স্মিতার দিকে তাকালো।
– স্যরি ম্যাম।আসলে আমি গরম একদম সহ্য করতে পারিনা। তাই যেখানে যে অবস্থাতেই থাকি, গরম লাগলে আগে নিজেকে মুক্ত করি।
স্মিতার ঠোঁটের লাল লিপস্টিক দেখে অভির গা কেমন ঘীন ঘীন করে উঠলো।ওকে বলল,
– ম্যাম আপনি গরমে এই রাঙাচোঙা ভারী লিপস্টিক কীভাবে পড়ে আছেন? আমার গরম লাগছেনা ঠোঁটে?
স্মিতা বা মাধু কোনো জবাব দিলোনা।স্মিতা একদম এক কোণে পাথর হয়ে বসে আছে।অভি আবার বলল,
– আর আপনারা এত জায়গা থাকতে এই চিপার মধ্যে এসে বসেছেন কেন?আমি কী আপনাদের বিএফ লাগি যে চুপিচুপি এক কোণে বসে হাত ধরাধরি, জাপ্পি-টাপ্পি, কিসিং-টিসিং করে বিদায় নেবো?
মাধু আর চুপ থাকতে পারলোনা অভির ব্যবহারে।অভি আসার আগে দুটো কফি অর্ডার করেছিল ওরা দুজন।টেবিলের ওপর পাঁচ টাকার একটা কয়েন সহ আরো একশো ষাট টাকা রেখে অভির দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে স্মিতাকে বলল,
– স্মিতা ওঠ।আমি বাসায় যাবো।
টেবিলে কয়েন রাখার আওয়াজ পেয়ে অভি এতসময়ে মাধুর দিকে তাকালো।এদিকে স্মিতা বের হওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেও দেয়ালের মত হয়ে অভির বসে থাকার জন্য আর বের হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেনা।মুখ কালো করে স্মিতা তাকিয়ে থাকলো অভির দিকে।মাধুর দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে স্মিতাকে হাতের ইশারায় দাঁড়াতে বলল।এরপর নিজেই উঠে দাঁড়িয়ে স্মিতাকে বের হওয়ার সুযোগ করে দিলো।ততক্ষণে মাধুও উঠে দাঁড়িয়েছে যাওয়ার জন্য।স্মিতা বেরিয়ে যেতেই অভি মাধুর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।কেমন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে অভি মাধুকে বলল,
– মাধু! রাইট?
মাধু কী জবাব দেবে ভেবে পেলোনা।অভি খুব শান্ত ছেলের মত হয়ে মাধুর সামনে হাতজোড় করে বলল,
– আমি দুঃখিত মাধু, আমার ব্যবহারের জন্য।পাঁচটা মিনিট বসে কথা বলতে পারি আমরা?
অভির ভদ্র আচরণ দেখে স্মিতা মাধুকে ইশারায় বসতে বলল। মাধু বসলো, পাশে এসে স্মিতাও বসলো।অভি মাধুর মুখোমুখি বসে বলল,
– আপনি এখন কী করছেন মাধু?
– বিবিএ ফাইনাল ইয়ার এখন। গম্ভীরভাবে বলল মাধু।
– আমি আমার বাবার বিজনেস দেখাশোনা করি।
– ওহ্ আচ্ছা।
– আপনার কী আর কিছু জিজ্ঞেস করা বা কিছু বলার আছে?
– জ্বী আছে।
– তবে বলে ফেলুন।
মাধু একটু দম নিয়ে বলতে শুরু করলো,
– দেখুন আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে কিনা জানিনা।তবে আপনার বাবা-মা খুব পছন্দ করেছেন আমাকে।কিন্তু আমি এই বিয়েটা করতে পারবোনা।
– কারণ তো আছে নিশ্চয়?আমার ব্যবহারের জন্য নয় তো?
– না, আপনার জন্য নয়।আমার রিলেশন আছে।আর আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।
– তাহলে বাসায় বললেই তো হয়।আমাকে কেনো বলছেন?
– বাসায় বলেছি তারা কেউ রাজি নয়।
– ওহ্ তাহলে ছেলে নিশ্চয় জবলেস।
– একদমই নয়।ও আপনার থেকেও অনেক হাইয়ার এডুকেটেড। ও থাকে অ্যামেরিকা।মানে ও একজন অ্যামেরিকান।বাঙ্গালী নয়।
অভি ভ্রু কিঞ্চিৎ উঁচু করে লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়লো।মাধু বলল,
– আগামী মাসেই ও দেশে আসবে আমাকে নিতে।
– রিলেশন নিশ্চয় ফেসবুকে নয়?
– জ্বী ফেসবুকেই।আর এই নিয়ে আপনি কোনো প্রশ্ন করবেন না।আপনাকে আমার বাসা থেকে সবাই পছন্দ করেছে।এখন আমাকে আপনার পছন্দ হলে বিয়ের ডেট ফাইনাল করে ফেলবে তারা।কিন্তু…
– কিন্তু আপনাকে তো আমার পছন্দ হয়নি।
কথাটা শুনে অপমানে থমথমে হয়ে গেলো মাধুর মুখটা।মনে মনে খুশি হওয়ার কথা ছিল মাধুর।কিন্তু অভির ডিরক্টেলি রিফিউজড যেন মাধু মেনে নিতে পারছে না।অভি এবার স্মিতাকে বলল,
– আমি কী আপনার সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারি? মানে একটু আলাদাভাবে।যদি আপনার আপত্তি না থাকে।
স্মিতা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মাধুর দিকে তাকালো।মাধু মুখে জোর করে হাসি টেনে বলল,
– ওর কোনো আপত্তি নেই।প্লিজ আপনারা কথা বলুন আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।
মাধু বাইরে এসেছে প্রায় বিশ মিনিট হলো।ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড রাগ লাগছে মাধুর।পঁচিশ মিনিটের মাথায় মাধু দেখলো অভি আর স্মিতা খুবই খুশি মুখে বেরিয়ে আসছে। মাধুর সামনে এসে অভি পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে পাঁচ হাজার টাকা নিলো।তারপর মাধুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
– আসলে মেয়ের মুখ দেখলে নাকি দিতে হয়।সে মেয়ে পছন্দ হোক বা না হোক।আসি, ভালো থাকবেন।আর আপনার কোনো চিন্তা নেই আমাকে নিয়ে।
অপমানে মাধুর ইচ্ছে করছে অভির গালে ঠাঁটিয়ে দুটো চড় দিতে। অভি স্মিতার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো।মাধু স্মিতাকে নিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে প্রশ্ন করলো ওকে,
– কী এমন কথা বললি ওই অসভ্য ছেলের সঙ্গে? পাঁচ মিনিটের কথা বলে পাক্কা বিশ মিনিট সময় নিলি?
স্মিতা কেমন লজ্জা পেয়ে বলল,
– আমরা না মুখে বলতে লজ্জা লাগছে।তুই বাসায় যা আমি তোকে টেক্সটে জানাবো।
মাধু একদম অবাক।পাশ থেকে গাড়ির হর্ণ পেয়ে ফিরে তাকালো ওরা।অভি গাড়ি থামিয়ে স্মিতাকে বলল,
– ড্রপ করে দিতে পারে তোমাকে?
স্মিতা আহ্লাদে আটখানা।অভি দরজা খুলে দিতেই স্মিতা দৌঁড়ে চলে গেলো।পিছু ফিরে মাধুকে বলল,
– মাধু তুই দাঁড়িয়ে থাকলি কেন?আয়!
অভি বলল,
– আরে আসুন না!গাড়িতে উঠলে তো আর বিয়ে হচ্ছেনা।
মাধু স্মিতার দিকে চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে গাড়িতে উঠলো।স্মিতাও পেছন সিটে বসতে গেলে অভি বলল,
– এই তুমি আমার পাশে এসে বসো না! না হলে তো আমাকে ড্রাইভার লাগবে।
গাড়িতে বসে অভি স্মিতাকে জিজ্ঞেস করলো,
– তোমার ওয়েট কত? স্যরি কিছু মনে করোনো এমনিই জানতে ইচ্ছা হলো।
– না না কী মনে করবো! ফিফটি এইট।
– ওয়াও, নাইস।মেয়ে তো হবে এমনই।দেখতে হবে তরমুজের মত মিষ্টি আর রসালো।যাতে খেতে মজা লাগে।
অভির কথা শুনে স্মিতা খেলো বিশম আর মাধুর লজ্জায় এমন অবস্থা যেন গাড়ি থেকে নেমে দৌঁড় দিতে পারলে রক্ষা এই লজ্জার হাত থেকে