#মেঘের_পালক
পর্ব- ১২

দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসল। অনেক আইটেমের মধ্যে সবচেয়ে ভালো হয়েছে রূপচাঁদা মাছ ভুনা। বেশি করে টমেটো আর ধনেপাতা দিয়ে করা রান্না। একেবারে চেটেপুটে খেল সবাই৷ খাওয়ার সময়টা কারো কথা কারো মনে রইল না৷ সবাই ক্লান্ত শরীর টেনে যার যার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। কথা হলো সন্ধ্যায় সবাই লনে বসবে। একসাথে চা খাবে আর পরবর্তী দিনের পরিকল্পনা করবে।

অরিনের ঘুম একটু পরেই ভেঙে গেল। কী এক অস্থিরতা তার মাঝে ভর করেছে যেন৷ সে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। সবাই যার যার ঘরে। গাছপালার ফাঁক দিয়ে কমলা সূর্য উঁকি দিচ্ছে। তেড়ছা আলো চোখে লাগছে বলে একটু সরে দাঁড়াল সে। আর তখন চোখে পড়ল ছাউনিটা। ভেতরে কেউ আছে! ভালো করে তাকাল সে। হ্যাঁ, দুটো মানুষ। একটা ইনায়া, অন্যটা প্লাবন! এখনো গল্প শেষ হয়নি? অজান্তেই চোখে পানি চলে এলো অরিনের। সে ঘরে চলে গেল। শুয়ে পড়ল বিছানায়। পড়েই রইল মটকা মেরে। সন্ধ্যার চা পানের আসরে অনেক ডেকেও তাকে নিতে পারলেন না মা।

রাতে খেতে বসে ইনায়া ঘোষণা করল, “কাল আমার জন্মদিন৷”

কেউ তেমন আগ্রহ দেখাল না তার জন্মদিনের প্রতি৷ শুধু ইনায়ার মা বললেন, “আরে তাই তো! আমি ভুলেই গেছি৷ তোর বাবা অবশ্য কিছুদিন আগে মনে করেছিল, তোর জন্য গিফটও কিনে রেখেছে। এদিকে আমি ভুলে বসে আছি।”

ইনায়ার মা অতি সরল ধরণের মোটাসোটা মহিলা। যে যা বলে তাই বিশ্বাস করে টাইপ সরল। এটুকু সময়ে তার ব্যাপারে সবার বোঝা হয়ে গেছে৷

স্বাধীন এবার বলল, “জন্মদিনের অগ্রীম শুভেচ্ছা।”

ইনায়া প্রত্যুত্তরে বলল, “উহু, এসব বলে হবে না।”

“তাহলে?”

“পরে বলছি।”

খাওয়াদাওয়া শেষে বড়রা গল্পে বসে গেল। ছেলেমেয়েরা গিয়ে জুটল বড় হলঘরে। সোফা পাতা চারধারে। একটা বড় টেলিভিশন সাঁটা দেয়ালে। টেলিভিশনে চলছে একটা হাসির নাটক। যতটা না হাসির, তারচেয়ে বিরক্তিকর। কারন কিছু ঘটার আগেই ব্যাকগ্রাউন্ডে হাসির শব্দ বেজে উঠছে।

ইনায়া এবার বলল, “তোমরা আমাকে রাত বারোটায় সারপ্রাইজ দেবে বুঝলে? আমার প্রিয় স্ট্রবেরি ফ্লেভারের কেক আনবে। আর হ্যাঁ…” প্লাবনের দিকে তাকিয়ে চোখ একটু বাঁকিয়ে বলল, “আমার সারপ্রাইজ হওয়া ছবি তুমি তুলে দিও প্লিজ?”

সারপ্রাইজ দেয়া পরের কথা, ইনায়ার কথায় সবাই সারপ্রাইজড হয়ে বসে রইল। মাথা খারাপ নাকি? এদিকে টিভিতে হাসাহাসির মাত্রা বেড়ে গেছে।

অরিন শুধু কটমট করে তাকিয়ে রইল প্লাবনের দিকে।

কে কী করবে বুঝতে পারছে না। স্বাধীন বলল, “এসব ঝামেলা আমি নিতে পারব না।”

নয়ন একটু ইতস্তত করে বলল, “কিন্তু বেচারি মন খারাপ করবে।”

“করলে করুক!”

হুমায়রা বসেছিল অরিনের পাশেই। সে বলে উঠল, “মজা হবে একটা পার্টি হলে। কেউ কেক আনো না! এদিকে বেকারি দেখেছিলাম আসার সময়।”

স্বাধীন হাই তুলে বলল, “তুমিই চলে যাও না?”

হুমায়রা মন খারাপ ভাব করে বলল, “মা যেতে দেবে না।”

স্বাধীন আরেকটা হাই তুলে বলল, “আমাকেও না।”

প্লাবনের মাথায় তখন দুষ্ট বুদ্ধি খেলা করছে। অরিনকে আরও জ্বালানো যায় কেমন করে বুঝে গেছে। বেশি জ্বলে গেলে নিশ্চিত তাকে বাঁধা দেবে ইনায়ার সাথে জড়াতে! কত দেখল এরকম সিনেমাতে! এবার নিজেও হয়ে যাক সিনেমার নায়ক!

সে ইচ্ছে করে অরিনের পাশে গিয়ে বসল। ফেসবুকে ইতিমধ্যে ইনায়ার সাথে অ্যড হয়ে গেছে সে। ইনায়া তার গোমড়ামুখের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছে, জার্নি করে ক্লান্ত।

একটু পরেই আরেক পোস্টে হাসিমুখের ছবি দিয়ে লিখেছে, জায়গটা সুন্দর, সো ফিলিং হ্যাপি।

প্লাবন অরিনকে দেখিয়ে দেখিয়ে ইনায়ার সবগুলো ছবিতে লাভ রিয়েক্ট দিল। আঁড়চোখে দেখল, অরিনের হাত মুঠি হয়ে গেছে।

(চলবে)

সুমাইয়া আমান নিতু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here