মেঘের_আড়ালে_মেঘ”৪০”
#জেরিন_আক্তার_নিপা
শেষ পর্ব
রাতে ইরফান ভীষণ বাজে একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠল। সে দেখেছে হামনার কবরের পাশে নতুন একটা কবর। সেই কবরের উপর মেহরীনের নাম লেখা। ঘামে তার পুরো শরীর ভিজে গেছে। পাশে তাকাল ইরফান। আয়াম তার পাশেই ঘুমিয়ে আছে। ছেলেটাকে কত নিস্পাপ লাগছে। আহান হুমায়রার কাছে অন্য ঘরে। এখন হুমায়রাই ওদের দেখাশোনা করে।
.
ইরফানকে দেখে মেহরীন ফ্যাকাশে ঠোঁটে হেসে বলল,
“কেমন আছো তুমি?”
ইরফান বেডে এসে মেহরীনের পাশে বসল। কষ্টে তার বুক ফেটে যাচ্ছে। তবুও মুখে হাসি রাখার চেষ্টা করল। মেহরীন ক্ষীণ গলায় বলল,
“তুমি এতটা রোগা হয়ে গেছ কেন? ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করো না নিশ্চয়ই। চুলগুলোও কেমন এলোমেলো। আমার কাছে এখন একটা চিরুনি থাকলে তোমার চুল আঁচড়ে দিতাম।”
ইরফান অভিমান ভরা গলায় বলল,
“কাল তুমি আমার সাথে দেখা করতে চাওনি কেন? আমি কতক্ষণ বাইরে বসে ছিলাম। তবুও তুমি একবার ডাকলে না! এতটা কঠিন হয়ে গেলে কেন তুমি?”
মেহরীন আবার হাসল।
“কঠিন না গো৷ মায়া কাটাতে চাইছি। তোমাদের দেখলে আমার মায়া বাড়ে। আরও বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। জীবনের প্রতি অভিযোগ করতে ইচ্ছে করে। সৃষ্টিকর্তা কেন সব দিয়ে আমাকে আবার নিয়ে যাচ্ছেন।”
“তোমার কিছু হবে না। আমরা সামনের সপ্তায় অস্ট্রেলিয়া যাব। ডাক্তার বলেছে, তুমি ঠিক হয়ে যাবে।”
মেহরীন মনে মনে বলল, “আমি জানি গো আমার হাতে আর বেশিদিন সময় নেই। শরীরটা যে দিনদিন খারাপ হচ্ছে তা আমিও বুঝতে পারছি।”
“আমার দুই ছেলে কেমন আছে?”
“ভালো৷ হুমায়রা ওদের দেখাশোনা করছে।”
“সেজন্যই তো নিশ্চিন্ত হতে পারছি। হুমায়রা থাকতে ওদের কষ্ট হবে না।”
দু’জনই একে অপরের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইল। ইরফানের চোখ জ্বালা করছে।
“আমাকে একটু আদর করবে তুমি? একটু জড়িয়ে ধরবে? আর কোনদিন তো তোমার আদর পাব না। যতদিন আছি ততদিন নাহয়…
মেহরীন কথা শেষ করার আগেই ইরফান ওকে জড়িয়ে ধরল। শরীরের সব শক্তি দিয়ে মেহরীনকে নিজের সাথে পিষে ফেলতে চাইল। টুপ করে মেহরীনের চোখ থেকে ইরফানের পিঠে একফোঁটা পানি পড়ল।
” জানো আমার না ভীষণ বাঁচতে ইচ্ছে করে। আমি তোমাদের ছেড়ে যেতে চাই না। এই সুন্দর পৃথিবী, আমার ছোট সংসার, তুমি, বাবা, আমার দুই ছেলে, হুমায়রা তোমাদের সাথে থাকতে চাই আমি। অনেক বছর। আয়াম,আহান ওদের মন ভরে আদর করতে চাই। আমার ছেলে দুটাকে মানুষের মত মানুষ করতে চাই। ওদের বড় করে বিয়ে দিয়ে ঘরে ওদের বউ আনতে চাই৷ কিন্তু এসবের কিছুই হবে না। আমার হাতে যে সময়ই নেই। আর মাত্র ক’টা দিন আছে। আমার স্বপ্নগুলো অপূর্ণ থেকে যাবে। আমি চলে যাবার পর ওগুলো নাহয় তুমিই পূরণ করো। ভেবো আমি সব সময় তোমার পাশে আছি। তোমাকে দেখছি, তোমার খুশিতে খুশি হচ্ছি। কোনো কারণে তোমার ঠোঁটে হাসি ফুটলে আমিও হাসছি। পৃথিবীতে না থেকেও তোমাদের মাঝে আমি বেঁচে থাকতে চাই।”
ইরফান বাচ্চাদের মতো শব্দ করে কাঁদছে। মেহরীন তার চুলে হাত রাখল। তার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে। অনেকক্ষণ দু’জন কাঁদল। কেউ কাউকে ছাড়ল না। ওভাবে থেকেই মেহরীন বলল,
“আজ তোমাকে একটা গল্প শোনাতে চাই। দুই বোনের গল্প। গল্পটা আমার জীবনের সাথে অনেকটা মিলে যায়। আবার তুমি এটাও ধরে নিতে পারো, গল্পটা আমার জীবনেরই।”
“আমি কোন গল্প শুনতে চাই না৷ কিচ্ছু জানতে চাই না আমি। তুমি কথা বলো না।”
“শোনো না একটু। আজ বলতে পারছি। না শুনলে পরে হয়তো আর বলার সময় পাব না। সময় যে খুব কম।”
ইরফান মেহরীনকে ছেড়ে ওর দিকে দেখল৷ মেহরীন বলা শুরু করল।
“দুই বোন। ওরা ছিল যমজ। কিন্তু জন্মের পরেই দু’জন আলাদা হয়ে যায়। ভাগ্য ওদের সাথে নিষ্ঠুর খেলা খেলে। একই হাসপাতালে, একই সাথে ওদের মায়ের সাথে অন্য একটা মা’ও তার মৃত সন্তান জন্ম দেয়৷ দশ মাস দশদিন গর্ভে ধরে, অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করে মা যখন সন্তানের মুখ দেখতে পাননা। সন্তানকে বুকে নিয়ে আদর করতে পারেন না। তখন উনার বুকফাটা কান্না আর পাগলামি দেখে উনার ডাক্তার ননদ সিদ্ধান্ত নেন একটা বাচ্চা এডপ্ট করবেন। প্রথমে বললাম না এক অসহায় গরীব মা একটু আগেই উনার দুই রাজকন্যা জন্ম দেন। মুখে হাসি নিয়ে দুই মেয়ের দিকে তাকিয়ে উনি চোখের জল ফেলেন। আল্লাহ উনাকে দুইটা জান্নাত দান করেছেন। অথচ এই দুই জান্নাতকে লালনপালন, ভরণপোষণ করার সামর্থ্য দেননি। উপরে বসে যিনি সবার জীবন নিয়ে মজার খেলায় মেতে আছেন, উনার পরিকল্পনা ছিল অন্য রকম। সন্তান হারা মায়ের দুই রাজকন্যার মায়ের সাথে কোনভাবে দেখা করিয়ে দেন। সন্তান হারা পাগল প্রায় মা ওই দুই মেয়েকে দেখে নিজের মমতা অনুভব করেন। উনি এক মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে চান। দুই রাজকন্যার মা’ও এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। অবশ্য রাজি না হয়েও উনার কাছে কোন উপায় ছিল না। ভালোবাসার টানে সন্তানকে নিজের কাছে রেখে না খাইয়ে মারার চেয়ে সন্তানহারা ধনী এক মায়ের হাতে তুলে দেওয়াকেই তিনি ভালো মনে করলেন। অন্তত উনার এক মেয়ে তো ভালোভাবে খেয়ে পরে সুখী জীবন যাপন করতে পারবে। উনি অশ্রুসিক্ত নয়নে কাঁপা হাতে নিজের মেয়েকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার আগে একটা কথা নিলেন,
“আপা, আমার কলিজা ছেড়া এক ধনকে আপনার হাতে তুলে দিলাম। আপনি ওকে কখনও জানতে দেবেন না ওর অভাগী জন্মদাত্রী মা ওর সুন্দর ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওকে নিজের থেকে দূর করে দিয়েছে। আপনি ওকে নিজের মেয়ের মত করেই ভালোবাসবেন৷ আমি যেদিন এই দুনিয়ায় থাকব না, তখন যদি পারেন তাহলে ওকে একবার আমার কবরের সামনে নিয়ে দাঁড় করাবেন। আমি উপর দেখে দেখে শান্তি পাব।”
সেদিনের এই ঘটনা বাইরের কেউ জানল না। এমনকি ওদের বাবারাও না। তিনজন মহিলা এই নির্মম গোপন সত্যটা নিজেদের ভেতর এক রহস্য হিসেবে রেখে দিলেন। ওই দুই বোনও জানলো না একই মায়ের পেট থেকে জন্ম নিয়েও ওরা দু’জন সম্পূর্ণ আলাদা পরিবেশে, অচেনা হয়ে বড় হবে। ভবিষ্যতে যদি কখনও ওদের দেখা হয়, ওরা সামনাসামনি হলে একে অপরকে দেখে অবাক হবে। বিস্ময় প্রকাশ করবে। তবুও কখনো কেউ কাউকে বোন বলে চিনবে না।”
মেহরীন থেমে দম নিল। এক নাগাড়ে অনেকক্ষণ কথা বলতে পারে না সে। হাঁপিয়ে ওঠে। ইরফান অবাক চোখে মেহরীনের দিকে তাকিয়ে আছে।
ও আবার বলতে লাগল।
“ভাগ্য দুই বোনের কখনও মুখোমুখি হতে দিবে না বলেই হয়তো ছোট বোনের সামনে আসার আগেই বড় বোনকে দুনিয়া থেকে তুলে নিল। উপরে যিনি আছেন তিনি হয়তো সত্যিই তার সৃষ্টি নিয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনা করতে ভালোবাসেন। আর তাইতো বড় বোন মারা যাবার পর ওরই ছেলের সাথে এক বৃষ্টির দিনে তার বোনের দেখা করায়। ওর স্বামী, ছেলে দু’জনই প্রথম তার যমজ সেই ছোট বোনটাকে দেখে ও ভেবে ভুল করে। প্রকৃতি রহস্যময়। সে রহস্য করতে পছন্দ করে। আর তাইতো এই রহস্য এতদিনেও খুলতে দেয়নি। যার কারণে ওদের পরিবারের কেউও একই চেহারার হবার পরও সেই মেয়েটিকে চিনতে পারল না। সবার মনে শুধু একটাই প্রশ্ন থেকে গেল, দু’টা মানুষের মধ্যে এতটা মিল কীভাবে হতে পারো! এক মায়ের গর্ভে না জন্মেও কীভাবে দু’জনের চেহারা একরকম! শুধু এটুকুই নয়, প্রকৃতি বড় বোনের স্বামীর সাথে ছোট বোনের ভাগ্য জুড়ে দেয়। ওদের বিয়ে হয়। ওর ছেলে খালামনির মাঝে তার মা’কে খুঁজে পায়। খালামনিও বোনের ছেলেকে আদর ভালোবাসা দিয়ে মাতৃত্বের সুখ পায়। যা ও ছোট থেকে পায়নি কিন্তু ওর বোন পেয়েছে সে সবই ওকে পাইয়ে দেয়। পরিবার, পিতার স্নেহ, বোনের আদর, স্বামীর ভালোবাসা। সবকিছু ওই হতভাগী ছোট বোনটাকে পাইয়ে দেয়।
সৃষ্টিকর্তার কী সুন্দর পরিকল্পনা তাই না! ভাবলে অবাক লাগে। দুই বোন জন্মের পর থেকেই ওরা আলাদা ভাবে বড় হয়। সেভাবেই হোক সুখ, দুঃখ নিয়ে নিজেদের জীবনে এগিয়ে যায়। হাঠাৎ করে উনি একজনকে নিজের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে ওর জায়গায় ঠিক ওরই মত দেখতে অন্য একজনকে বসিয়ে দেয়। সমাজ, পরিবার, মানুষজন, ভালোবাসা সবই ঠিক থাকে। মাঝ থেকে শুধু দু’জন মানুষের অদলবদল হয়। একটা সময় আবার সেই ছোট বোনটাও তার অতীত জানতে পারে। তার যমজ বোনের সম্পর্কে জানতে পারে। ও সব জানতে পারে ঠিকই। কিন্তু এমন একটা সময়ে জানতে পারে যখন সে চাইলেও ওই বোনটাকে জড়িয়ে ধরতে পারবে না। একটিবার আপু বলে ডাকতে পারবে না। দু’চোখ ভরে দেখতে পারবে না ওদের মধ্যে কতটা মিল। ওরা ঠিক কতটা একরকম দেখতে। ওদের চেহারার মিল থাকলেও ওদের চরিত্রের অমিল আছে কিনা। কিছুই দেখার বা জানার সুযোগ নেই। তার বোনটা যে দুনিয়াতেই নেই।”
মেহরীন থামছে। থেমে থেমে দম নিয়ে জিড়িয়ে আবার বলছে,
“তুমি ভয় পেতে না তোমার ছেলেকে আমি হয়তো কোনোদিন অবহেলা করব। ওকে কীভাবে অবহেলা করব আমি বলো? ওর মা’কে যে আমি কখনও দেখিনি। যে বোনটা জন্মের পরেই আমার থেকে আলাদা হয়ে গেছে তার ছেলেকে কীভাবে কষ্ট দেব আমি! বোনটা যে দুনিয়ায় নেই। তার ঘরসংসার স্বামীকে যদি আমি আপন করে নিতে পারি তাহলে তার ছেলেকে কেন পারব না। এই ছেলেটা যে আমার বোনের কলিজা ছেড়া ধন। আমাকে দিয়ে যাওয়া ওর সবথেকে বড় উপহার। এই উপহারের অবমাননা আমি কীভাবে করব!
ইরফান কোন কথা খুঁজে পেল না। সে ঠিক কতক্ষণ পাথর হয়ে বসেছিল তা সে নিজেও জানে না। মেহরীন নিজেই বলল,
“আজ তুমি চলে যাও। আমি এখন একটু শুয়ে থাকব। ভীষণ ঘুম আসছে। তুমি বরং কাল একবার এসো৷ ছেলে দু’টাকেও নিয়ে এসো। ওদের দেখতে খুব ইচ্ছে করে।”
ইরফান উঠল না। মেহরীনের পাশে বসে রইল। মেহরীনের কেনই যেন হঠাৎ করে খুব কান্না পাচ্ছে। সে এখন একটু কাঁদতে চায়। ইরফানের সামনে কোনোভাবেই কাঁদা সম্ভব না। মানুষটা বাইরে থেকে কাউকে কিছু বুঝতে না দিলেও মেহরীন জানে ভেতরে ভেতরে কতটা ভেঙে পড়েছে। মেহরীনকে তো চলেই যেতে হবে। যাবার আগে এই মানুষটাকে কষ্ট পেতে দেখতে পারবে না সে। তার ভাগ্য কেন এমন? কেন বেশিদিন সুখ ভোগ করতে পারে না সে? সে একটু সুখী হলেই প্রকৃতি তাকে নিয়ে নতুন খেলা রচনা করে। প্রকৃতি কি তার সুখ সহ্য করতে পারে না? নাকি তাকে নিয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনা রচনা করে মজা পায়?
মেহরীনের চোখের কোণ বেয়ে উষ্ণ গরম পানি গড়িয়ে পড়ছে। মাঝে মাঝে থেকে থেকে শরীর
কেঁপে উঠছে।
.
বিকেলে হাসপাতালে অনন্ত আসে। মেহরীন নার্সের মুখে অনন্তর নাম শুনে অবাক হয়না। সে জানে অনন্ত আরও দশ বছর পরও যদি জেল থেকে ছাড়া পেত তাহলেও সে সবার আগে মেহরীনের কাছেই আসত। সে নার্সকে না করে দেয়। বলে দেয়,
“উনাকে গিয়ে বলবেন আমি এই নামের কাউকে চিনি না। অনন্ত নামের কারো সাথে কখনও পরিচয় ছিল বলেও মনে পড়ছে না। তাই সম্পূর্ণ বাইরের একজন অচেনা লোকের সাথে দেখা করতে বা কথা বলতে চাই না।”
“আচ্ছা।”
নার্স চলে যাচ্ছিল। পেছন থেকে মেহরীন ডেকে বলল,
“শুনুন। উনি যদি জোর করে আমার সাথে দেখা করতে আসতে চান, তাহলেও আপনারা আসতে দিবেন না। গার্ড দিয়ে উনাকে আটকাবেন। এই জীবনে আমার হাতে আর যতগুলো দিন আছে, সে দিনের মধ্যে আমি শুধু এই মানুষটাকেই চোখের সামনে দেখতে চাই না। আর উনাকে আরেকটা কথা বলবেন যে, মেহরীন নামে অতিবোকা একটা মেয়ে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। তার প্রতি মেয়েটার আর কোন রাগ,ঘৃণা, অভিযোগ কিছুই নেই। তার কাছে মেয়েটার একটা শেষ ইচ্ছা এই, সে যদি পারে তাহলে বাকি জীবনটা যেন একজন সৎ মানুষ হয়ে কাটায়।
.
রাতে ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছে। ঝুম বৃষ্টি। মেহরীন হাসপাতালের বেডে শুয়ে পাশের জানালা দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বৃষ্টি দেখছে। তার তীব্র ইচ্ছে হচ্ছে, তার কয়েকজন কাছের মানুষের সাথে বাইরের বৃষ্টিতে ভিজতে যেতে। শেষ বারের জন্য এই সুন্দর নিষ্ঠুর প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে। এই অন্ধকার রাত, এই বৃষ্টির মধ্যে নিজেকে সপে দিতে। চোখ বন্ধ করে নতুন এক জীবনে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আফসোস, চাইলেও সে এমনটা করতে পারছে না। তার ইচ্ছেটা শেষ বারের মত পূরণ করতে পারছে না কারণ আপন মানুষগুলো এই মুহূর্তে তার পাশে নেই। খুব শীঘ্রই সে চিরতরে এই মানুষকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবে। সম্পূর্ণ নতুন একটা রাজ্যে। অজানায় পা দিবে। মেহরীন ঘাড় ফিরিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল। তার চোখের সামনে সেই দিনটা ভেসে উঠছে সেদিন আয়াম, ইরফানের সাথে তার প্রথম দেখা হয়েছিল।
হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টিতে না ভেজার তাড়ায় একটা মেয়ে রাস্তার পাশে দোকানের বারান্দায় আশ্রয় নিল। বৃষ্টি মেয়েটার এতই প্রিয় ছিল যে, সে না ভিজলেও হাত দিয়ে বৃষ্টি ধরার লোভ সামলাতে পারল না। মেয়েটা দু’পা সামনে এগিয়ে এসে বৃষ্টিতে হাত মেলিয়ে দিল। বৃষ্টির ফোঁটা গুলো হাতে স্পর্শ হতেই অন্যরকম এক ভালোবাসা মন ছুঁয়ে গেল তার। মেয়েটা চোখ বুঁজে হাত দিয়ে বৃষ্টির পানি নিয়ে খেলা করছে। আর ঠিক তখনই রাস্তার ওপাশ থেকে চার/পাঁচ বছরের একটা ছেলে বৃষ্টির মধ্যে ভিজে দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“মাম্মী! ”
সমাপ্ত
আসসালামু আলাইকুম।
দীর্ঘসময় নিয়ে গল্পটা আজ শেষ হলো। জানিনা আপনাদের মন কতটা ছুঁতে পেরেছে। আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। বাকিটা পাঠকের হাতে। এতদিন পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগুক বা খারাপ লাগুক আশাকরি আপনারা ছোট করে হলেও রিভিউ দিয়ে জানাবেন। তবেই তো আমি আমার ভুল ধরতে পারব। আর হ্যাঁ এন্ডিং আমি আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম। হ্যাপি বা স্যাড, নিজেদের মত করে নাহয় একটা কিছু ভেবে নেবেন।
শেষ পর্বে অন্তত সাইলেন্ট রিডার্সরা সাড়া দিবেন।
নতুন গল্প কয়েকদিন পর থেকে শুরু হবে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন। সাবধানে থাকবেন। নিজেদের ও পরিবারের খেয়াল রাখবেন। ধন্যবাদ 🌸
রিভিউ আমার গ্রুপে দিতে পারেন।
.
https://www.facebook.com/groups/928548141001685/?ref=share