মেঘের_আড়ালে_মেঘ”৩৮”
#জেরিন_আক্তার_নিপা

” তুমি কি এটা ভেবে ভয় পাচ্ছ যে, আমার নিজের বাচ্চা হলে আয়ামকে আমি কম ভালোবাসব? ওকে অবহেলা করব?”

“না মেহরীন। তোমার উপর আমার এতটুকু বিশ্বাস আছে। তুমি কখনও আয়ামকে কষ্ট দিতে পারবে না। আয়ামকে অবহেলা করা তোমার পক্ষে সম্ভব হবে না।”

“তাহলে কেন ভয় পাচ্ছ? আয়াম আমার বুকের যে জায়গা জুড়ে আছে সে জায়গা আর কেউ নিতে পারবে না। আমার নিজের সন্তানও না।”

“এজন্য আমি ভয় পাচ্ছি না৷ তোমাকে কীভাবে বোঝাব আমি। আমার ভয়টা অন্য জায়গায়।”

“তুমি ভাবছ তো আমিও হামনার মত যদি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাই!”

ইরফান বোবা দৃষ্টিতে মেহরীনের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইল।

“হামনাকে হারিয়ে আমি ভেতর থেকে ভেঙে পড়েছিলাম। অনেক কষ্টে সব ঠিক হয়েছে। তোমাকে হারিয়ে আমি শুধু ভাঙবই না পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে যাব। তোমাকে হারানোর কথা আমি কল্পনাও করতে পারি না৷ আমাদের আর সন্তানের দরকার নেই। আমরা আয়ামকে নিয়ে খুশি আছি। তোমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমরা বেঁচে থাকলেও বেঁচে থাকার আসল আনন্দ ভুলে যাব।”

মেহরীন হাসল৷ বলল,

“তোমার ছেলেমানুষি কবে যাবে। পৃথিবীর সবাই যদি এই ভয় পেত তাহলে সৃষ্টি জগৎ থেমে যেত৷ আমাদের বাবা মা যদি এই ভয় পেত তাহলে আমরা দুনিয়ায় আসতাম না। একটা মেয়ে বেঁচে থেকে মৃত্যুর যন্ত্রণা ভোগ করে নতুন একটা প্রাণ জন্ম দেয়। এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখায়। আয়াম আমার মাতৃত্বের স্বাদ পূরণ করে দিয়েছে। ওকে নিয়ে আমি সারাজীবন কাটাতে পারব। তবুও আমি একটা বাচ্চা চাই। নিজের মধ্যে থেকে নতুন একটা জীবন জন্ম দেওয়ার অনুভূতি কেমন তা অনুভব করতে চাই। ছোট্ট একটা প্রাণকে দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধরতে চাই। মা হওয়ার সুখ পাশাপাশি কষ্ট ভোগ করতে চাই৷ একজন পূর্ণ নারী হতে চাই।”

“তোমার কিছু হলে…

” আমার কিছু হবে না। আল্লাহ এতটা নিষ্ঠুর না। আয়ামের কপাল থেকে উনি বারবার মায়ের ভালোবাসা কেড়ে নিবেন না৷ তুমি দেখে নিও, এত সহজে আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না। সারাজীবন তোমার সাথে থেকে আমি তোমাকে জ্বালাব। আমাদের ভাগ্য একসাথে জুড়ে আছে। আলাদা হওয়ার জন্য আমরা মিলি নি।”
.
মেহরীন পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট। আজ ওরা সবাই হুরায়রাদের বাসায় এসেছে। বাচ্চাটা পেটে আসার পর থেকে মেহরীনকে কেউ মাটিতে পা ফেলতে দিচ্ছে না। এত সেবা যত্ন পেয়ে তার দম বন্ধ হয়ে আসে। মাঝে মাঝে মনে হয় বাচ্চা নিয়ে সে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে। বাবা তাকেই যেন বাচ্চা ভাবছে। আরে বাবা সে বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে। নিজে তো আর বাচ্চা হয়ে যায়নি। একটু আগে এসেও বাবা লেবুর শরবত দিয়ে গেছেন।

“আজ অনেক গরম মা। আজ না এসে অন্য একদিন এলেও চলত। তোমার নিশ্চয়ই গরম লাগছে। নাও শরবতটা খাও। লেবুর শরবত, খেয়ে আরাম পাবে। ফ্যানের নিচে এসে বসো৷ আমি ফ্যানটা বাড়িয়ে দিই? না থাক, হঠাৎ গরমে আবার ঠান্ডা লেগে যাবে।”

তার প্রতি বাবার এই বাড়াবাড়ি রকমের ভালোবাসা দেখে বারংবার মেহরীনের চোখ ভিজে উঠে। নিজের বাবার কথা মনে পড়ে যায়।
ইরফানের কথা সে আর নতুন করে কী বলবে! ও তো প্রথম থেকেই পাগল ছিল।
আয়াম সারাদিনে কম করে হলেও দশবার এসে জিজ্ঞেস করবে,

“মাম্মী বোনু এখন কী করছে?”

মেহরীন জানে না ওর মেয়ে হবে কিনা না। তবে আয়াম শিওর ওর মিষ্টি সুন্দর গুলুমুলু একটা বোন হবে। আয়ামের কেন এমন মনে হয়? বোন না হয়ে ভাইও তো হতে পারে৷ আয়ামের যেহেতু মনে হয় বোন হবে তাহলে বোন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বাচ্চাদের ইচ্ছা আল্লাহ অপূর্ণ রাখেন না।
আয়াম মেহরীনের কোলে বসে ওর পেটের দিকে ঝুঁকে এসে বলল,

“বোনু আমরা নানু ভাইদের বাসায় এসেছি। তুমি কিন্তু পেটের ভেতর বেশি দুষ্টুমি করো না। দুষ্টুমি করা ভালো না বুঝলে। তাহলে সবাই তোমাকে পঁচা বলবে।”

আয়াম তার বোনের সাথে কথা বলে৷ ওদের কথা শুনে মেহরীন হাসে। কিছু বলে না। আয়াম তাকে হাসতে দেখে লজ্জা পায়।

“মাম্মী তুমি পঁচা। শুধু হাসো।”

“আমি হাসলে তোমার লজ্জা লাগে? ”

“হুম।”

“আচ্ছা তাহলে আর হাসব না।”

মেহরীন খুব কষ্টে হাসি চাপার চেষ্টা করে। আয়াম তখন ঝট করে তাকে চুমু খেয়ে দৌড়ে চলে যায়। তখনও মেহরীনের চোখ ভিজে যায়। তার ভাগ্যে এত সুখ লেখা ছিল! শেষপর্যন্ত কি এত সুখ তার কপালে সইবে? মেহরীন সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে।

“আল্লাহ আমার এই সুখ তুমি দীর্ঘস্থায়ী কোরো। আমার সংসারে যেন কারো নজর না লাগে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি যেন সবাইকে নিয়ে এই এভাবেই হাসিখুশি থাকতে পারি।”
.
হুমায়রা মেহরীনের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

“তোমার জন্য আমি অনেক খুশি মেহরীন। দোয়া করি তুমি যেন সব সময় এমনই খুশি থাকো।”

মেহরীন হুমায়রার একটা হাত নিজের হাতে নিল। স্বাভাবিক গলায়ই বলল,

“তুমি আমাকে নিজের বড় বোনের মত মানো তো হুমায়রা? হামনার জায়গা তুমি আমাকে দিয়েছ তো।”

“হুম। তোমার মাঝে আমি আপুকে খুঁজে পাই। তোমাদের দু’জনের কত মিল!”

“তাহলে বড় বোনের অধিকার নিয়ে তোমাকে আজ কয়েকটা কথা বলি?”

“হুম বলো।”

“তুমি তো এটা মানো কোন একজনের জন্য কখনোই কারো জীবন থেমে থাকে না। তোমার সাথে যা ঘটে গেছে তা হয়তো চেষ্টা করেও ভুলতে পারবে না। কিন্তু হুমায়রা সত্যটাকে মেনে নিয়ে জীবনে এগিয়ে যাওয়াই কি বুদ্ধিমানের কাজ না? তুমি নিজেও কিন্তু একসময় তোমার দুলাভাইকে বোঝাতে। তাহলে এখন নিজের বেলায় বুঝতে চাইছো না কেন। দেখো কারো জন্য যে আমাদের জীবন থেমে থাকে না। তা তোমার দুলাভাইকে দেখেও বুঝতে পারো। উনি তোমার বোনকে ভুলে যাননি। ওকে মনে রেখেও কিন্তু আমাকে উনার জীবনে জায়গা দিয়েছেন।”

এতটুকু বলে মেহরীন হুমায়রার মুখের দিকে তাকাল। ওর হাতে মৃদু চাপ দিলো। হুমায়রা অসহায় চোখে মেহরীনকে দেখছে।

“মেহরীন, আমি সব বুঝি। তবুও নিজের মনকে মানাতে পারি না। জীবনে একজন মানুষকেই ভালোবেসেছিলাম আমি। সেই মানুষটাই অমানুষ প্রমাণ হলো। আসলে কী জানো, জীবনে কখনো ঠকিনি আমি। হঠাৎ করে আমার সাথে এমন কিছু ঘটলো তো তাই নতুন করে অন্য কাউকে বিশ্বাস করতে ভয় পাই।”

“তুমি সময় নাও। সবাই তো আর একরকম হয়না বোন। একজন তোমাকে ঠকিয়েছে বলে যে বাকিরাও এমন করবে তা তো নয়। তোমার ভয় কাটিয়ে, তোমার বিশ্বাস জেতার জন্য নতুন মানুষটাকে একটা সুযোগ তো দিতেই পারো।”

হুমায়রা হাসল।

“বাবা তোমাকে সব বলেছে, না! এইজন্যই আজ তোমরা আমাদের বাসায় এসেছ!”

“আঙ্কেল তোমাকে নিয়ে চিন্তা করেন।”

“বাবাটা না একটা পাগল! ”

“তুমি কিন্তু বলেছ আমাকে তুমি বড় বোন বলে মানো। বোনের অধিকার নিয়ে তোমাকে বলছি, তুমি অন্তত একটা বার ছেলেটার সাথে দেখা করো।”

“আচ্ছা করব।”

“সত্যি! ”

“হ্যাঁ। তোমার কথা আমি ফেলতে পারব না। এটা বাবা খুব ভালো করেই জানে। তুমিও কিন্তু জানো। আর তাই সবাই মিলে প্ল্যান করে আমাকে ফাঁসালে।”

মেহরীন কিছু বলল না। শুধু হাসল। যাক, হুমায়রা ছেলেটার সাথে দেখা করতে রাজি হয়েছে এটাই অনেক।
.
ডেলিভারির টাইম এগিয়ে আসছে। ইদানিং মেহরীনের কেমন ভয় ভয় লাগছে। এতদিন তার ভয় লাগত না। এখন ভয় লাগে। মনের মধ্যে বাজে চিন্তা আসে। ইরফানও হয়তো তার মনের অবস্থা কিছুটা আন্দাজ করতে পারে। কিছুদিন আগে আয়াম ছয় বছরে পা দিয়েছে। ছেলেটা যেন হুট করে অনেকটা বড় হয়ে গেছে। নিজের কাজগুলো নিজেই করে এখন। মেহরীনের যত্ন-আত্তিতেও তার পুরো মনোযোগ আছে। আয়ামকে দেখে মেহরীনের বুক প্রশান্তিতে ভরে উঠে। ছেলেটাও তার বাবার মতন দায়িত্ববান হয়েছে। মেহরীন মুখে কারো কাছে কিছু না বললেও তার মন জানে, সে এই মানুষগুলোকে ছেড়ে যেতে চায় না। আরও অনেক বছর মানুষ গুলোকে সাথে নিয়ে বাঁচতে চায়।

রাতে মেহরীন ইরফানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। ইরফান এখন গভীর ঘুমে। কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই। আজ সকাল থেকেই পেটে কেমন একটু একটু ব্যথা হচ্ছিল। সে কাউকে কিছু বলেনি। কয়েকদিন ধরেই তো এমন ব্যথা হচ্ছে। একটু পরে ব্যথা কমেও যায়। আজও সেরে যাবে ভেবে মেহরীন প্রথমে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু এখন ব্যথা যেন একটু বেশিই মনে হচ্ছে। আস্তে আস্তে বাড়ছে, কমছে না। মেহরীনের অস্থির লাগছে। আজকের ব্যথা সহ্য করার মত না। তবুও এতক্ষণ দাঁত কিড়িমিড়ি খেয়ে শুয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে যেন ব্যথা তিনগুণ বেড়ে গেল। মেহরীন অস্থির হয়ে উঠে বসেছে। ইরফানকে জাগাবে কিনা ভাবছে। বেড থেকে উঠে পড়ে সে ঘরজুড়ে পায়চারি করতে লাগল। না, আর সম্ভব না। মেহরীন পেট চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করার চেষ্টা করছে। শেষে না পেরে সে ইরফানকে ডাকল।

“এই শুনছো৷ ওঠো না একটু। আমার পেটে ব্যথা হচ্ছে। মনে হচ্ছে আজই কিছু একটা হবে। এই…

কয়েকবার ডাকার পরেই ইরফান হুড়মুড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসল। এক লাফে বেড থেকে উঠে এসে মেহরীনকে ধরল। উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইল,

” কী হয়েছে তোমার? পেইন হচ্ছে? ”

“হুম। ভীষণ ব্যথা। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তুমি কিছু করো।”

ইরফান হঠাৎ ঘুম থেকে জেগেছে। তার শরীর কাঁপছে। মাথা ফাঁকা লাগছে। এই মুহুর্তে তার কী করা উচিত ভেবে পাচ্ছে না। মেহরীনকে সে কষ্টে দেখতে পারে না। মেহরীন ইরফানের হাত খামচে ধরল।

“আমার ভয় লাগছে। তুমি আমার পাশে থেকো।’

ইরফান মনে মনে নিজে ভয় পেলেও মেহরীনকে সাহস দিচ্ছে।

” ভয় কিসের! আমি তো আছিই। তোমার কিছু হবে না। এক্ষুনি তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাব৷”

“আয়ামকে একটু ডাকো না গো৷ আমার ছেলেটাকে একটু দেখি।”

মেহরীনের এই সময় কী পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে তা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম হচ্ছে। চোখ মুখ নীলচে হয়ে আসছে। শক্ত করে ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে সে। ইরফানকে সে আঁকড়ে ধরে আছে তবুও তার হাত কাঁপছে। ইরফান একবার দেয়ালে টানানো ঘড়ির দিকে তাকাল। রাত একটা। সে গলা উঁচিয়ে বাবাকে ডাকতে লাগল।

“বাবা! বাবা…

সেই রাতেই মেহরীনকে হাসপাতালে নেওয়া হলো। ফুপি খবর পেয়ে দশ মিনিটের ভেতরে চলে আসে। হুমায়রাও রাতের বেলায়ই হাসপাতালে হানা দেয়। মেহরীনকে ডেলিভারির জন্য ভেতরে নেওয়া হয়। শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সে ইরফানের হাত ধরে রাখে। আয়াম অবাক চোখে দাদুর পাশে দাঁড়িয়ে এসব দৃশ্য দেখছে। সে বুঝতে পারছে মাম্মীর কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সে এটা বুঝতে পারছে না মাম্মীর কষ্ট কীভাবে কমানো যাবে। মাম্মীকে কাঁদতে দেখে সে-ও কাঁদছে। হুমায়রা এসে আয়ামের পাশে দাঁড়াল। ওর হাত ধরে মুখের দিকে তাকিয়ে আশ্বাস দেওয়ার মত করে হাসল একটু। হাসি এলো না। বরং কান্নার মত দেখাল।
.
ফজরের সময়। আজানের ধ্বনিতে যখন চারদিক মুখরিত ঠিক তখনই ভেতর থেকে নবজাত শিশুর কান্নার শব্দ ভেসে আসে। পৃথিবীতে এসে সে সবাইকে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। কান্নার আওয়াজ শুনেই বাবা বলে উঠলেন,

” আলহামদুলিল্লাহ!”

ইরফান পায়চারি থামিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। মেহরীন কেমন আছে এটা না জানা পর্যন্ত সে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবে না। আয়াম হুমায়রার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। সেজন্য হুমায়রা উঠে দাঁড়াতে গিয়েও পারল না। ইরফান দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। একজন নার্স হাসি মুখে বেরিয়ে এলো। উনি নিজে থেকে কিছু বলার আগেই ইরফান বলে উঠল,

“আমার ওয়াইফ কেমন আছে? ও ঠিক আছে তো?”

“হ্যাঁ, মা বেবি দু’জনই সুস্থ আছে।”

কথাটা শুনে ইরফান এবার যেন দেহে প্রাণ ফিরে পেল। নার্স আগের মতই হেসে বলল,

“কংগ্রাচুলেশনস মিস্টার ইরফান। আপনি দ্বিতীয় বারও ছেলের বাবা হয়েছেন। আপনার ওয়াইফ ফুটফুটে একটি ছেলে জন্ম দিয়েছেন। উনারা মা ছেলে দু’জনই এখন ভালো আছেন। একটু পরেই উনাকে ক্যাবিনে নেওয়া হবে। আপনি আপনার ছেলেকে দেখতে পারেন।”

ইরফান কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল। খুশিতে তার চোখ ছলছল করছে। মেহরীন, বেবি দু’জনই ঠিক আছে। এর বেশি আর কী চায় সে!
পাশ থেকে বাবা খুশিভরা গলায় বলে উঠলেন,

“আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! হে মালিক, তোমার দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া। তুমি আমার ছেলের বউ, নাতিকে সুস্থ রেখেছ। তোমার কাছে এর বেশি আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।”

সকালে যখন আয়াম বাবুকে দেখল তখন সে খুশি হওয়ার সাথে দুঃখও পেল একটু। মুখ কালো করে বলল,

“আমি তো বোন চেয়েছিলাম মাম্মী। তুমি আমাকে বোন না দিয়ে ভাই দিলে কেন?”

মেহরীন হেসে ফেলল। তার এই ছেলে এতটা সহজ কেন! বাবু ড্যাবড্যাব করে আয়ামের দিকে চেয়ে আছে।

“দেখো বাবা বাবু তোমাকে কীভাবে দেখছে। বাবু ভাইয়াকে চিনে ফেলেছে। ”

মেহরীন যখন বাবুকে আয়ামের কোলে দিল আয়াম তখন বাবুর নরম তুলতুলে শরীর স্পর্শ করে প্রায় চেঁচিয়ে বলে উঠল,

“মাম্মী! বাবু তো কত সফট! ও কত ছোট! দেখো আমাকে দেখছে ও। কী সুন্দর চোখ! আমার বোন লাগবে না মাম্মী। আমি ভাইকেই অনেক আদর করব। আমার সব খেলনা ওকে দিয়ে দেব। বাবু, তুমি আমার সাথে খেলবে? হ্যাঁ! মাম্মী দেখো ও হাসছে। ও আমার সাথে খেলবে। দেখো ও হাসছে। বাবু আমাকে ভাইয়া বলো। আমি তোমার ভাইয়া বুঝেছ। তোমার আমাকে ভাইয়া ডাকতে হবে। আমি তোমাকে চকলেট দেব।”

ছোট বাবু আয়ামের কথা কী বুঝল সে-ই জানে। আয়ামের কথার উত্তরে ওর দিকে তাকিয়ে হাত পা নেড়ে হাসছে সে। হয়তো রক্তের টান এরকমই হয়। বড় ভাইকে চিনে ফেলেছে সে।

আয়াম বিস্ময়ে, খুশিতে কেঁদে ফেলল। মেহরীনও কাঁদছে। আজ তার জীবনের সবথেকে বড় খুশির দিন। সে আজ পূর্ণ। সৃষ্টিকর্তা তার সব চাওয়া পূরণ করেছেন। এই জীবনে তার আর কিছু চাওয়ার নেই। তার দুই মানিক। তার কলিজার টুকরা দু’জন। যাদের দেখে সে বাকি জীবন দুঃখহীন ভাবে কাটিয়ে দিতে পারবে। ইরফান মেহরীনের কাঁধে মৃদু চাপ দিল। ইশারায় কাঁদতে বারণ করে চোখের পানি মুছে দিল।

চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here