#মেঘের_আড়ালে_মেঘ”৩১”
#জেরিন_আক্তার_নিপা
অনেকক্ষণ এলোমেলো ভাবে হেঁটে বৃষ্টিতে ভিজে জুবুথুবু হয়ে মেহরীন বাড়ি ফিরে। আয়াম স্কুল থেকে ফিরে মাম্মীর অপেক্ষায় না খেয়ে বসে আছে। আজ মেহরীনের মন ভালো নেই। অনন্তর কষ্ট সে অনুভব করতে পারছে। আচ্ছা ইরফানের সাথে দেখা হওয়ার আগে অনন্ত যদি মেহরীনকে এভাবে মাঝ রাস্তায় একা ছেড়ে দিত। হঠাৎ ওর হাত ছেড়ে দিয়ে বলত, মেহু আমি তোকে আর ভালোবাসি না। আমার জীবনে নতুন একজন এসেছে। আমি তাকে বিয়ে করব। তুই আমাকে ক্ষমা করে দে। তাহলে কি মেহরীন পারত, নিজেকে সামলে নিতে? পারত অনন্তকে ক্ষমা করে দিতে?
আজ তো সে অনন্তর সাথে এমনটাই করেছে। একসাথে জীবন কাটানোর কথা দিয়ে মাঝপথে এসে অনন্তর হাতটা ছেড়ে দিয়েছে।
অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজার কারণে মেহরীন কাঁপছে। তার ঠোঁট নীলচে হয়ে গেছে। বাবা মেহরীনকে দেখেই বললেন,
“এভাবে ভিজলে কেন তুমি? কোথায় গিয়েছিলে মা? কী হয়েছে তোমার?”
বাবার কথা মেহরীনের কান পর্যন্ত পৌঁছালো না। সে ক্লান্ত পায়ে ঘরের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। আয়াম পেছন থেকে ডাকছে।
“মাম্মী! মাম্মী তুমি বৃষ্টিতে ভিজেছ? আমিও ভিজব মাম্মী। চলো না আবার ভিজি।”
মেহরীন কারো কোন কথার উত্তর না দিয়ে ঘরে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। বেশ অনেকটা সময় নিয়ে কাপড় পাল্টে বেরিয়ে আসে। কান্না করায় তার চোখ ফোলে গেছে। অনন্তর জন্য খারাপ লাগলেও আজ তার নিজেকে হালকা লাগছে। মনের উপর থেকে ভারী একটা পাথর নেমে গেছে।
.
সারাদিন আর বৃষ্টি হয়নি। দিনটা বেশ পরিষ্কার ছিল। ঝকঝকে রোদ। তবে মাঝে মাঝে আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেলেও বৃষ্টি নামেনি। সে নিয়ে আয়াম পুরোটা দিন মন খারাপ করে বসে থেকেছে। মেহরীন অনেক চেষ্টা করেও, চকলেট, আইসক্রিমের লোভ দেখিয়েও তার মান ভাঙাতে পারেনি। মেহরীন তার সাথে কোন কথা বলতে গেলেই মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে ঘুরে বসেছে।
“আয়াম বাবু এমন কেন করছো? মাম্মীকে এভাবে জ্বালাতন করে কেউ! তুমি না গুড বয়।”
“তুমি পঁচা মাম্মী। তোমার সাথে আমি কথা বলব না।”
“আমি কী করব বলো৷ বৃষ্টি তো আর আসেনি। এলে তো তোমাকে নিয়ে ভিজতামই।”
“সকালে যখন এসেছিল তখন কেন ভিজোনি? তুমি একা একা বাইরে থেকে ভিজে এসেছ। আমাকে সাথে নাও নি কেন?”
মেহরীন এই অবুঝকে কীভাবে বোঝাবে এখন?
“তুমি তো ছোট, বাবা। বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার ঠান্ডা লাগবে৷ জ্বর আসবে। তখন পাপা তোমার সাথে আমাকেও বকা দিবে।”
“তুমি পঁচা।”
মেহরীন আয়ামকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দিল। আয়াম অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। ওর রাগ করে মুখ গোমড়া করার ভাবটা দেখে মেহরীন হেসে ফেলে ওকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আয়াম মেহরীনের থেকে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নিজেকে মুচড়িয়ে মেহরীনের হাত ফসকে বেরিয়ে যেতে চাইছে।
“ছাড়ো মাম্মী, ছাড়ো। তুমি পঁচা। আমার কোন কথা শোনো না তুমি। আমিও তোমার কথা শুনব না।”
আয়ামকে জড়িয়ে ধরে মেহরীন ভাবতে লাগল, ইরফানের ভালোবাসা না পাক। এই ছেলের জন্য সে সারাজীবন এভাবেই কাটিয়ে দিতে পারবে। আয়ামকে জড়িয়ে ধরে একযুগ পার করে দিতে তার একটুও কষ্ট হবে না। আয়ামের মা হয়ে ওর রাগ, মানঅভিমান ভাঙানোর জন্য হলেও মেহরীন এই সম্পর্কে নিজেকে বেধে রাখবে। মেহরীন মনে মনে বলল,
” এই জীবনে আমি যা পেয়েছি, আল্লাহ কাছে যা কিছু দিয়েছেন, তার মধ্যে আমার জীবনের সবথেকে বড় পাওয়া তুমি বাবা। তুমি আমাকে মাতৃত্বের সুখ দিয়েছ। অনেক ভাগ্য করে আমি তোমাকে আমার ছেলে করে পেয়েছি। রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও তোমার সাথে আমার যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, এই সম্পর্কের মায়া আমি কখনও কাটাতে পারব না। আল্লাহর দেওয়া আমার জীবনের সবথেকে বড় উপহার তুমি। আমার সাত রাজার ধন তুমি। আমার চাঁদ মানিক বাবা।”
মেহরীনের চোখ ভিজে উঠেছে। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এসেছে। আয়ামের মাথায় গভীর চুমু খেল সে। আয়ামকে আরও শক্ত করে বুকে চেপে ধরল।
.
ঠিক সন্ধ্যার পরপরই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। মেহরীন আয়ামের রাগ যাও একটু ভাঙাতে পেরেছিল। কিন্তু এই সময় বৃষ্টি এসে তার সব কষ্ট ভেস্তে দিল। আয়াম আবার বৃষ্টিতে ভেজার জেদ ধরেছে। আয়াম মেহরীনের হাত ধরে টানতে টানতে বলছে,
“মাম্মী ওঠো। বৃষ্টি হচ্ছে ভিজবে চলো। ওঠো।”
“এখন তো রাত হয়ে গেছে বাবু।”
“হোক। তুমি চলো। আসো আমার সাথে। চলো।”
“আয়াম এটা কিন্তু ঠিক না। জ্বর এলে পাপা অনেক বকবে।”
“না,না। তুমি চলো। আসো তুমি।”
এই নাছোড় ছেলের সাথে সে কখনও পেরে উঠবে! মেহরীনকে উঠতে হলো। সে বাবাকে বলে আয়ামকে নিয়ে ছাদে বৃষ্টিতে ভিজতে চলে এলো। ভিজতে পেরে আয়াম মহা খুশি। মেহরীন ছাদের রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে ইরফানের সাথে তার প্রথম দেখা হওয়ার দিনটার কথা ভাবছে। সেদিও এমনই বৃষ্টি ছিল। আজকেও এমনই বৃষ্টির মধ্যে অনন্তর সাথে তার সব সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে। সারাটাদিন অনন্তর কথা ভেবেছে সে।
“তোমাকে নিয়ে আমার খারাপ লাগা, সহানুভূতি কাজ করলেও ভালোবাসাটা ফুরিয়ে গেছে। জানি আমি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না। আমি তোমার জায়গায় থাকলে কখনও তোমাকে ক্ষমা করতাম না। তাই তোমার থেকে ক্ষমা পাওয়া আশাও করি না। তবুও তুমি আমাকে ঘৃণা করো না। তোমার ঘৃণা নিয়ে বাকি জীবন কাটাতে আমার যে ভীষণ কষ্ট হবে।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। আয়াম বৃষ্টির পানি হাতে নিয়ে ওর দিকে ছিটিয়ে দিচ্ছে।
ইরফান বাড়ি ফিরে বাবার কাছ থেকে শুনে রুমে না গিয়েই ছাদে চলে এসেছে। ছাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে মেহরীনকে দেখছে। মেয়েটা তাকে ভালোবেসে সত্যি সত্যিই কষ্ট পাচ্ছে। এই মুহূর্তে ইরফান কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। মেহরীনকে আর কষ্ট দিবে না সে। ভালোবাসতে না পারলেও মেয়েটার যত্ন নিতে তো পারবে। হামনা কখনও ফিরে আসবে না এটা সে-ও ভালো করেই জানে। তবুও এতদিন মনকে বোঝাতে পারেনি।
“তোমাকে আমি আর ফিরিয়ে দেব না মেহরীন। এবার তোমাকে নিজের করে নেব। ওই অনন্তর কাছে তোমাকে ফিরে যেতে দেব না। সারাজীবন নিজের কাছেই আগলে রাখব।”
.
সেই রাত থেকেই মেহরীনের গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে। মাম্মীর এই অবস্থার জন্য বেচারা আয়াম পাপার কাছে কম বকুনি খায়নি। কাঁদো কাঁদো মুখে আয়াম মেহরীনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
“মাম্মী, তোমার কষ্ট হচ্ছে? আমার জন্য তোমার জ্বর এসেছে?”
জ্বরে কাঁপা কন্ঠে মেহরীন বলে,
“না বাবু। তোমার জন্য কেন জ্বর আসবে। জ্বর কি তুমি দিয়েছ?”
“পাপা বলছে কেন তাহলে?”
মেহরীন জ্বরে কাঁপছে। তবুও মুখে রাগী ভাব ফুটিয়ে সে ইরফানের দিকে তাকায়।
“আপনি আমার ছেলেকে বকছেন কেন হ্যাঁ? ওর জন্য আমার জ্বর এসেছে বলছেন, কত বড় সাহস আপনার। আয়ামকে সরি বলুন।”
“যাহ বাবা! মা ছেলে মিলে এখন আমাকেই বকাবকি করা হচ্ছে! রাতের বেলা কি আমি বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়েছিলাম!”
“রাতের বেলা নাহয় আমরা মা ছেলে মিলে একটু বৃষ্টি বিলাশ করতে গিয়েছিলাম। তাই বলে আপনি আমার সামনে আমার ছেলেকে বকবেন?”
“আচ্ছা বাবা সরি। ছেলেকেও সরি। মাম্মীকেও সরি। এবার হয়েছে? নাকি কান ধরে সরি বলতে হবে?”
“হয়েছে আয়াম? দেখলে তো আমি তোমার পাপাকেই বকে দিয়েছি। এবার তুমি মুখ ঠিক করো। হুতুমপেঁচার মত লাগছে তোমাকে।”
আয়াম ফিক করে হেসে দিয়ে মেহরীনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওকে জাপটে ধরে বলে,
“আই লাভ ইউ মাম্মী। তুমি অনেক ভালো। তুমি পৃথিবীর বেস্ট মাম্মী।”
মেহরীনের চোখ ভরে এলো। ইরফান হাসি হাসি মুখে ওদের মা ছেলের ভালোবাসা দেখছে। আজ মনে হচ্ছে, সে যেন তার আগের জীবন ফিরে পেয়েছে। আজ শুধু তার সাথে হামনা নেই। তবে হামনার জায়গায় মেহরীন আছে।
.
পরের তিনটা দিন বাবা ছেলে মিলে মেহরীনের সেবা যত্নে কোন কমতি রাখেনি। মেহরীন জ্বরে এতটাই হালকা হয়ে পড়েছে উঠে বসে নিজের হাতে খেতেও পারছে না। আয়ামের কথায় ইরফানকে মেহরীনকে খাইতে দিতে হচ্ছে। ইরফান মেহরীনের মাথায় পানি ঢেলেছে আয়াম বিলি কেটে দিয়েছে। টানা দুই রাত ইরফান মেহরীনের মাথার পাশে বসে নিদ্রাহীন রাত কাটিয়েছে। আয়ামও জেদ করে বাবার সাথে জেগেছে। এসব দেখে বারংবার মেহরীনের চোখ ভিজে এসেছে। আল্লাহ তার কপালে এত সুখ লিখে রেখেছে! ছোট থেকেই তার কোন সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। মেহরীন আজ আল্লাহর কাছে খুব করে চাইছে, তার এই সুখ যেন মৃত্যু পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
“আল্লাহ তোমার কাছে জীবনে তেমন কিছুই চাইনি আমি। তুমি যা যা দিয়েছ তা নিয়েই খুশি থাকতে চেয়েছি। আজ তোমার কাছে আমার একটাই দোয়া। আমাকে তুমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগ পর্যন্ত এই সুখ দিও৷ আমি আয়াম, উনাকে ছেড়ে যেতে চাই না। তুমি আমার এই নতুন সংসারে কারো নজর লাগতে দিও না।”
.
আজ চতুর্থ দিন মেহরীন অনেকটাই সেরে উঠেছে। গত দু’দিন আয়ামের স্কুল কামাই হয়েছে। আজ মেহরীন সকাল সকাল উঠে আগের মতই আয়ামকে রেডি করিয়ে বাবার সাথে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়েছে। ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ক্লান্ত হয়ে মেহরীন ঘরে এসে বসে। জ্বর সারলেও শরীরটা এখনও অনেক দুর্বল। একটু হাঁটাহাঁটি করেই মাথা ঘুরছে। ইরফান বাইরে থেকে মেহরীনকে খুঁজে রুমে এসে দেখে সে বসে আছে। বেচারিকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ইরফান বলল,
“আপনাকে সকাল সকাল উঠে এত কাজ কে করতে বলেছে?”
“কারো করতে বলতে হবে কেন? আমার কাজ আমি করব না?”
“অসুস্থ শরীর নিয়েও কি কাজ করতে হবে? একদিন একটু রেস্ট নেওয়া যেত না।”
“আমি রেস্ট নিলে আয়ামকে কে রেডি করাবে। বুয়ার হাতে আমি আমার ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে শুয়ে-বসে থাকব নাকি?”
মেহরীনের এই কথার পর ইরফানের আর কিছু বলার থাকে? মেহরীনের মুখে ‘আমার ছেলে’ কথাটা শুনে ইরফানের সত্যিই ভালো লাগছে। ইরফান সেদিন রাতেই মেহরীনকে মনের কথা বলবে ভেবেছিল।
“মেহরীন আমি তোমাকে হয়তো এখন ভালোবাসি না। কিন্তু আমরা একসাথে থেকে ভালোবাসার চেষ্টা তো করতে পারি। এতদিন আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছি। আজ কি তুমি আমাকে একটা সুযোগ দিবে?”
ইরফানের আর এই কথাগুলো বলা হলো না। মেয়েটা যে জ্বরে পড়েছিল তার কথা বোঝার মত অবস্থা ছিল নাকি?
দেখতে দেখতে আরও দু’টা দিন কেটে গেল। ইরফান আজ সকালে এতো তাড়াহুড়ো করে অফিসে বেরিয়েছে যে, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নিজের ফোন, ফাইলের ব্যাগটা পর্যন্ত ফেলে গেছে।
“মানুষটা যে কী করে! ফোন, ফাইলপত্র বাড়িতে ফেলে গিয়ে অফিসে কী কাজটা করবে শুনি? না, আমি এটাই বুঝি না বাড়ি থেকে বের হবার সময় এত তাড়াহুড়া করার কী আছে? উনাকে কি বস চাকরি থেকে বের করে দিবে? উনি যখন ইচ্ছে তখন অফিসে গেলেও তো কিছু বলার মত কেউ নেই।”
মেহরীন ভাবল আয়ামকে আনতে যাওয়ার পথে ইরফানের অফিস হয়ে গিয়ে ফোন, ব্যাগ দিয়ে যাবে। এসব ছাড়া অফিসে গিয়ে এখন নিশ্চয়ই নিজের উপর চিল্লাপাল্লা করছে।
.
অনন্ত মেহুর মুখে ওসব কথা শোনার পর সেদিন থেকে আর একবারও মেহুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেনি। সে নিজেকে সময় দিয়েছে।
এখান থেকে ওদের তিনজনের গল্পের মোর অন্য দিকে ঘুরে যেতে পারতো।
ইরফানের প্রতি মেহরীনের অনুভূতির কথা শুনতে অনন্ত পিছিয়ে যেতে পারত। কিন্তু সে এমনটা করবে না। এই গল্পের হিরো নয়, ভিলেন হবে সে।
” আমাদের এই জীবন গল্পের ভিলেন আমি, মেহু। আর এই ভিলেন কারো দয়া, ক্ষমা, সহানুভূতি চায় না। এই ভিলেন তোকে পেয়ে সবার ঘৃণা নিয়েও বাঁচতে পারবে। আমাদের গল্পে জিত আমারই হবে।
এই গল্পের শেষ পাতায় ইরফানের কোন জায়গা নেই। তুই আমার ছিলি। আমারই থাকবি। তোকে আমার করে পেতে যদি, আমার তোর উপর জোর প্রয়োগ করতে হয়। তাহলে আমি তাই করব। হয় দু’জন একসাথে বাঁচব। আর নাহয় মরতে তো পারব।”
.
অনন্ত ইরফানের অফিস রুমে ওর সামনের চেয়ারটায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। আজ হঠাৎ অনন্তর এখানে আসার কারণ ইরফান ধরতে পারছে না। অনন্ত আজ বেশ রিল্যাক্স মুডে আছে। তার মুখে মৃদু হাসি। এই হাসির মানে অনেক ভেবেও ইরফান বের করতে পারছে না।
“মিস্টার ইরফান! ভালো খেলই খেলেছেন আপনি। আমাকে হারানোর সব রাস্তা যখন বন্ধ দেখলেন তখন আপনি এই রাস্তা আপনালেন!”
তীক্ষ্ণ চোখে অনন্তকে দেখছে ইরফান।
“মানে? কিসের রাস্তা! কোন ব্যাপারে কথা বলছেন আপনি?”
অনন্ত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ইরফানও তার সাথে দাঁড়াল।
“আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল। পুরুষ জাত। মেয়ে লোভী তো হবেই। তার উপর মেহু দেখতে আপনার বউয়ের মত। হুবহু বউয়ের চেহারার একটা মেয়ে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা আপনার সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াবে, রাতে আপনার সাথে এক ঘরে এক বিছানায় থাকবে আর আপনার তার প্রতি লোভ জাগবে না! মেহুর শরীর পেতে চান আপনি তাই না?”
অনন্ত আরও কোন জঘন্য কথা বলার আগেই ইরফান ওর কলার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড়িয়ে বলছে,
“বাস্টার্ড! যাকে ভালোবাসিস তাকে নিয়ে এমন কথা বলতে মুখে বাঁধে না তোর! মেহরীনের প্রতি আমার লোভ জেগেছে! ”
অনন্ত হাসছে। বলছে,
“কেন, জাগেনি? পুরুষ মানুষ নন আপনি? নাকি আপনার মাঝে কোন সমস্যা আছে ভাইজান? ”
ইরফান নিজের রাগ সামলাতে না পেরে অনন্তর মুখে সমানে ঘুসি মেরে যাচ্ছে। অনন্ত বাধা দিচ্ছে না। সে পাগলের মত হাসছে।
“কুত্তার বাচ্চা! তোর মত জানোয়ারকে খুন করতে আমার হাত কাঁপবে না। তুই নিজে ওকে আমার কাছে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে বেঁচে দিয়েছিস।”
“এক বছরের জন্য। এক বছরের জন্য বেঁচেছি ইরফান। কিন্তু তুই শালা ওকে সারাজীবন জন্য ভোগ করার প্ল্যান করে নিয়েছিস। কী দেখিয়ে মেহুকে পাগল করেছিসরে শালা? তোর জন্য মেহু আমাকে ছেড়ে দিল। তুই ওকে এমন কী দিয়েছিস যেটা ও আমার কাছে পেত না। আমি ওকে কোনটা দিতে পারতাম না? কিসের জন্য মেহু আমাকে ছেড়ে তোর কাছে থাকতে চাইছে বল। বল শালা।”
“ভালোবাসা। সম্মান, যা তুই ওকে কখনো দিসনি। আর কখনও দিতে পারবিও না।”
“ভালোবাসা! তোদের এই ভালোবাসায় ইয়ে করি আমি শালা। ভালোবাসা বলতে কিছু আছে রে? সবই তো শরীরের চাহিদা। এই কয়দিনে এত্ত ভালোবাসা দিয়েছিস তুই মেহুকে! বাবা! আমার এক বছরের ভালোবাসা তোর দুই, তিন মাসের ভালোবাসার সামনে কম পড়ে গেল! আমাকে বোঝাস তুই শালা। মেহু আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিত। আমি ওর চাহিদা বুঝতাম না। কিন্তু তুই ঠিকই বুঝেছিস। শুধু বুঝিসই নি, ওর চাহিদা পূরণও করেছিস।”
মেহরীন এইসব কথাগুলো শোনার পর আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। সে দরজা ধরে ধপ করে বসে পড়ল। পেছনে কিছু একটা শব্দ পেয়ে ইরফান অনন্তকে ছেড়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে মেহরীনকে দেখতে পায়। সর্বনাশ! তার মানে মেহরীন ওদের সব কথা শুনে নিয়েছে!
অনন্তও মেহরীনকে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সে ভাবেনি মেহরীন এই সময় এখানে এসে তাদের কথাগুলো শুনে ফেলবে। অনন্ত ইরফান যে যেখানে ছিল সেখানে দাঁড়িয়েই মেহরীনের দিকে চেয়ে আছে।
চলবে___