#মেঘের_আড়ালে_মেঘ”২৬”
#জেরিন_আক্তার_নিপা
মেহরীন ঠাস করে অনন্তর গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। অশ্রুসক্ত চোখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছ! এতগুলো মাস ধরে আমার সাথে মিথ্যা বলে এসেছ! তুমি আমার সাথে এমনটা করেছ অনন্ত! আমি পৃথিবীতে তোমাকে সবচে বেশি বিশ্বাস করতাম। তুমি এভাবে আমার বিশ্বাস ভাঙতে পারলে? এসব করার আগে আমার কথা একটাবারও ভাবলে না!”
অনন্ত মেহরীন দুই হাত চেপে ধরে বলল,
“মেহু, মেহু তুই আমার কথাটা শোন। আমি তোর জন্য এসব করেছি। আমি তোকে ভালোবাসি। তোকে খুশি রাখতে চাই আমি।”
মেহরীন ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“এমন সুখ আমি কখনও চাইনি। তোমাকে আমি একবারও বলেছি, আমার টাকা পয়সা ধনসম্পত্তি লাগবে। বলেছি বলো? আমি শুধু তোমাকে নিয়ে ছোট একটা সংসার বাধার স্বপ্ন দেখেছি। তুমি আমাকে নিয়ে দরদাম করেছ! উনার কাছে আমাকে বিক্রি করেছ। উনি ভালো মানুষ বলে কখনো আমার দিকে তাকিয়েও দেখেননি। উনার জায়গায় অন্য কেউ হলে নিশ্চয়ই আমাকে সাত লাখ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে এক বছরের জন্য ঘরে সাজিয়ে রাখত না। তুমি একবার ভাবতে পারছো কী করেছ তুমি? আমি তো এসবের কিছুই জানতাম না। উনি যদি আমার সাথে জোরজবরদস্তি করার চেষ্টা করত। আমার উপর সত্যিই স্বামীর অধিকার ফলাতে চাইত!”
কথাগুলো বলে দুই হাতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়ল মেহরীন।
“মেহু তুই আমাকে ভুল বুঝিস না।”
“এখনও তোমাকে ভুল না বুঝতে বলছো! আমি ভাবতে পারছি না। তুমি এতটা নিচে নামতে পারলে!”
“ওই ইরফান তোর কানে আমার নামে বিষ ঢেলেছে, তাই না? তাই তুই এসব বলছিস। আমি জানি এগুলো তোর কথা। এই কথাগুলো ইরফানের। তুই তোর জবানিতে ইরফানের শেখানো কথা বলছিস। ওই লোকের তোর উপর মন এসে গেছে। ও তোকে পেতে চায়। তাই তোকে আমার বিরুদ্ধে করতে চাইছে।”
“উনাকে নিয়ে তুমি একটা বাজে কথাও বলবে না। উনার নাম মুখে আনবে না তুমি। তুমি শয়তান হলে, উনি ফেরেশতা। উনার মত মানুষ হয়না। ”
“শয়তান! হ্যাঁ আমি শয়তান। তোকে পাওয়ার জন্য শয়তান হতে হলে, হবো। তবুও তোকে আমি অন্য কারো হতে দেব না। তুই আর কখনও ওই ইরফানের কাছে ফিরে যেতে পারবি না। তুই আমার। শুধু আমার মেহু তুই।”
“আমি কখনও তোমার ছিলাম না। আর না এখন আছি। উনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আমি উনার স্ত্রী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই পরিচয় নিয়েই আমি বাঁচতে চাই। তুমি চাইলেও আমাকে পাবে না। আমি উনার কাছে ফিরে যাচ্ছি। তুমি একা ছিলে, আর সারাজীবন একাই থাকবে। এই পৃথিবীতে কেউ তোমার আপন হবে না। এটাই তোমার শাস্তি। তোমার মত লোভী মানুষ একা একাই মরবে।”
অনন্ত লাফিয়ে উঠে বসল। তার পুরো শরীর দরদর করে ঘামছে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেছে সে? না, স্বপ্ন কীভাবে দেখবে? সে ঘুমায় নি। রেস্টুরেন্ট থেকে অপমানিত হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে সোফায় হেলান দিয়ে বসে ইরফানের কথাই ভাবছিল সে। হঠাৎ কীভাবে চোখটা লেগে এলো। তন্দ্রামত কিছু একটা হচ্ছিল। তার মধ্যেই এই স্বপ্ন। ইদানিং মেহরীনকে হারানোর ভীষণ ভয়ে আছে সে।
অনন্ত চুলের মধ্যে হাত চালিয়ে পিছন দিকে সোফায় হেলান দিলো।
“তোকে আমি হারাতে পারব না মেহু। আর ওই ইরফানকেও জিততে দেখতে পারব না। আজ ওর জিত হয়েছে। তাই বলে প্রতিবারই যে ও জিতে যাবে এমনটা আমি হতে দেব না।”
অনন্ত কিছুক্ষণ চুপচাপ পড়ে থেকে কিছু ভাবল। তার মাথায় একটা আইডি এলে ঝট করে উঠে দাঁড়াল। ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল,
“থ্যাংক্স মেহু। স্বপ্নে এসে তুই আমাকে দারুণ একটা আইডিয়া দিয়ে গেলি। এইজন্যই তোকে এত ভালোবাসি আমি।”
অনন্ত পায়চারি করতে করতে একা একাই কিছু একটা ভেবে হাসছে।
“আমি শয়তান! ইরফান ফেরেশতা! ওকে আমি তোর চোখে শয়তান বানিয়ে ছাড়ব মেহু। এমন চাল চালব যে, ইরফান সত্য বললেও তুই বিশ্বাস করবি না। ইরফান অনেক উড়েছ তুমি। কিন্তু শেষ চালে যে আমি বাজিমাত করব। তোমার কাছে যতই প্রমাণ থাকুন না কেন তুমি এখন আর আমার চুলটাও ছিড়তে পারবে না। আমার নেক্সট চালের জন্য রেডি হয়ে থাকো তুমি।”
.
ইরফান রেগেমেগে তাকে কথাগুলো বলে বেরিয়ে যাবার পরপরই মেহরীন ব্যাগ গুছিয়ে নেয়। আজই এই বাড়ি থেকে চলে যাবে সে। এখানে থেকে মানুষের উপকার করে কথা শুনতে রাজি না ও। আয়াম তার নানু ভাইয়ের সাথে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসেছে। মেহরীন পায়ে ব্যথা পেয়েছে শুনে হামনার বাবা তাকে ডেকে পাশে বসিয়ে তার মাথায় হাত রেখে স্নেহভরা গলায় বলল,
“নিজের খেয়াল রাখবে তো মা। তোমার কিছু হলে আমার আয়াম নানুভাইকে কে দেখবে? মা রে আমার নাতিটা তার একটা মা’কে হারিয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছে। তুমি হামনার জায়গায় ওর মা হয়ে এসেছ। তোমাকে পেয়ে আমার নাতির মুখে আবার হাসি ফিরে এসেছে। তোমাকে পেয়ে আমরা আবারও হাসতে শিখেছি। তুমি এই বাড়িতে আসায়, বাড়ির মানুষ গুলো আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তুমি আমার মেয়ের সংসারটাকে, আমাদের খুব অল্প সময়েই নিজের করে নিয়েছ। আমরা তোমাকে হারিয়ে বাঁচতে পারব না মা। তোমার কিছু হলে এবার আমরা মরেই যাব। হামনা আমার বড় মেয়ে ছিল। প্রথম সন্তানদের ভালোবাসা কতটা তা তুমি এখন বুঝবে না মা। তুমি আমার হামনার মত দেখতে। আমার কাছে তুমিই আমার হামনা।”
মেহরীন এ বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছে। আজই হয়তো এই মানুষ গুলোকে ছেড়ে চলে যাবে সে। এখন হামনার বাবার কথাগুলো শুনে চোখের জল আটকে রাখতে পারল না মেহরীন। নিজের বাবার ভালোবাসা তার ভাগ্যে ছিল না। যে বাবা তাকে লালনপালন করেছে, তিনিও বেশিদিন তার সাথে থাকতে পারল না। এই বাড়িতে এসে একটা না, দু’টা বাবা পেয়েছে সে। এখন উনাদেরও ছেড়ে চলে যেতে হবে ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসছে ওর। মেহরীনকে কাঁদতে দেখে উনি বললেন,
“পাগলী মেয়ে কাঁদছো কেন? বাবার সামনে মেয়ে কাঁদলে বাবার কষ্ট হবে না? মা তুমি আমাকে একটা বার বাবা বলে ডাকবে? আমার হামনার মুখে বাবা ডাক তো আর কখনও শুনতে পারব না। তোমার মুখে বাবা ডাক শুনলে আমার মনে হবে হামনা আমাকে বাবা ডাকছে। তোমরা দু’জন তো একই রকম দেখতে। তোমার মাঝে আমি আমার হামনাকে খুঁজে পাই।”
মেহরীন চোখে পানি মুখে হাসি নিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই উনাকে বাবা ডাকল। উনি চলে যাবার পর মেহরীন রুমে গিয়ে মন খুলে কাঁদলো। তার ভাগ্যটা এমন কেন? কোন আপন মানুষই কেন বেশিদিন তার কাছে থাকে না? সুখ তার দুয়ারে এসে তার হাতে ধরা দেয় খুব অল্প সময়ের জন্য। ছোট থেকেই বেশিদিন সুখী থাকতে পারে না সে। তার ভাগ্যে লম্বা খুশি লেখা নেই।
.
মেহরীন আয়ামকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে লাগেজ বের করে বেডের উপর রাখল। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে। আয়ামকে ছাড়া থাকতে তার কষ্ট হবে। আয়ামেরও কষ্ট হবে। কিন্তু সে চাইলেও তো সারাজীবন আয়ামের পাশে থাকতে পারবে না। তার চলে যাওয়ার ব্যাপারে বাড়ির কেউ কিছু জানে না। বাবাকে কিছুই বলতে পারেনি সে। আয়ামকে বলেও লাভ নেই। ওর এখনও এই বোঝ হয়নি। ইরফানের ফেরার অপেক্ষায় বসে আছে শুধু সে। ইরফান এলে ওকে বলেই বিদায় হবে।
ইরফান টাই ঢিলে করতে করতে ঘরে ঢুকল।
আজকের জেতা কেসে হেরে গেল সে। সব প্রমাণ তার পক্ষেই ছিল। তবুও লাস্টে কীভাবে যেন সব হাতছাড়া হয়ে গেল।
ইরফানের মন আগে থেকেই সপ্তম আকাশে উঠে আছে। ঘরে এসে মেহরীনকে লাগেজ নিয়ে রেডি হয়ে বসে থাকতে দেখে মেজাজ আরও বিগড়ে গেল।
“কোথাও যাচ্ছেন আপনি?”
“হ্যাঁ।”
“কোথায়? ”
“তা জেনে আপনার কাজ কী? আমি যেখানেই যাই না কেন আপনার বাড়িতে আর একদিনও থাকব না।”
“আচ্ছা থাকতে হবে না। কিন্তু আপনি এখন যেতে পারবেন না।”
মেহরীন এই কথা শুনে চেতে উঠে ঝাঁঝালো গলায় বলল,
“কেন? এখন কেন যেতে পারব না! এখানে রেখে আপনি আমাকে আরও অপমান করতেন? সকালের ওইটুকু অপমানে মন ভরে নি আপনার। আমি এখনই যাব। আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই আমি।”
মেহরীন লাগেজ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। সারাদিন বাড়ির বাইরে কাজের চাপ, এখন আবার ঘরের এই ঝামেলা। ইরফানের সত্যিই এসব আর ভালো লাগছে না।
ইরফান মেহরীনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কঠিন গলায় বলল,
“কাল সকালে আপনার যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যেতে পারেন। আমি আপনাকে আটকাব না। কিন্তু এখন এই রাতের বেলায় আপনাকে যেতে দিতে পারব না আমি। রাস্তায় আপনার কিছু হয়ে গেলে সেই দায়ভার আমার উপর এসে পড়বে। আপনার কারণে কোন ঝামেলায় পড়তে চাই না আমি। তাই চুপচাপ আজকের রাতটা কাটিয়ে কাল সকালে আমার বাড়ি থেকে বিদায় হোন। আমারও মাথা ব্যথা দূর হবে। রোজ রোজ এই প্যারা জাস্ট অসহ্য।”
এক দমে কথাগুলো বলে ইরফান গটগট করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। মেহরীন বেচারি হতবুদ্ধি হয়ে ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে। সে রাগ করে চলে যেতে চাইছে এই লোক কি এটাও বুঝতে পারছে না! তাকে আটকাতে চাইলো তো না-ই উল্টো কাল সকালে বাড়ি থেকে বিদায় হতে বলে দিল! তার জন্য কোন ঝামেলায় পড়তে চায় না, এইজন্য রাতে যেতে দিচ্ছে না। মানে তার প্রতি লোকটার একটুও মায়া দয়া নেই! সে চলে যেতেই চাইছিল, ইরফান বাধা দেয়নি এটা তার জন্যই ভালো। তবুও কেনই যেন মেহরীনের মাথায় আগুন জ্বলছে। রাগে গা রি রি করছে।
” পাষণ্ড, নিষ্ঠুর, পাথর। মন বলতে কিচ্ছু নেই। নিজেই আমাকে অপমান করল। আমি রাগ করেছি সেটাও বুঝতে পারছে না। কোথায় একটু আমার রাগ ভাঙাবার চেষ্টা করবে তা না, মুখের উপর বলে গেল আমি উনার মাথা ব্যথা! আমি উনাকে প্যারা দেই!”
মেহরীন নিজেও ভাবল, এই রাতের বেলায় কোথায় যাবে সে? আগের বাসাটা তো কবেই ছেড়ে দিয়েছে। অনন্তর কাছে যাওয়া যায়। কিন্তু অনন্তর কাছে যেতেও তার মন সায় দিচ্ছে না। যতই হোক সে এখন অন্য একজনের বউ। এখনও তার ডিভোর্স হয়নি। এই অবস্থায় সে কীভাবে গিয়ে প্রেমিকের বাসায় উঠবে!
রাতটা সে এখানেই থাকবে ভাবল। কিন্তু এই রুমে ওই লোকটার সাথে না। একদমই না। তাই মেহরীন তার জন্য আগে যে গেস্ট রুম রেডি করার হয়েছিল, সেখানে চলে গেল। ইরফান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মেহরীনকে দেখতে না পেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সোফার উপর টাওয়েল ছুঁড়ে রেখে বিছানায় গিয়ে আয়ামের পাশে শুয়ে পড়ল। কপালে হাত রেখে ভাবছে সে। এক সময় ভাবতে ভাবতেই গভীর ঘুরে তলিয়ে গেল সে।
.
সকালে ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই ইরফান মেহরীনের খোঁজে এলো। রাতে রাগের মাথায় সকালে চলে যেতে বলেছিল বলে কি সত্যিই মেয়েটা চলে গেছে? দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ইরফান দেখল, না মেহরীন যায়নি। তবে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বসে আছে। ইরফানকে দেখেই মেহরীনের গা জ্বলে গেল।
” চলে গেছি কিনা দেখতে এসেছেন! চলেই যাচ্ছি। আপনি বললেও আপনার বাড়িতে থাকব না আমি।”
ইরফান ভেতরে এলো। মেহরীন ওকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলে ইরফান ওর হাত ধরে ফেলল। এই প্রথম ইরফান মেহরীনের হাত ধরেছে। তাকে স্পর্শ করেছে। মেহরীন ভেতরে ভেতরে কেঁপে ওঠে অবাক নয়নে ওর দিকে তাকাল।
“আপনার বাড়ি থেকে কিছু নিয়ে যাচ্ছি না। আমি আমার জিনিস গুলোই নিচ্ছি। বিশ্বাস না হলে ব্যাগ চেক করতে পারেন। আপনি যে আমাকে বিশ্বাস করেন না তা আমি খুব ভালো করেই জানি। এই জন্যই তো ঘুম থেকে উঠেই দৌঁড়ে এসেছেন। ভেবেছেন আপনার বাড়ি থেকে চুরি করে যদি স্বর্ণ গয়না নিয়ে চলে যাই।”
মেহরীনের এসব কথা শুনে ইরফানের ইচ্ছে করছে ওর গালে ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দেয়। রাগের মাথায় মুখ দিয়ে যা আসছে তাই বলছে। রাগ তো তারও হয়,তখন কি সে এসব বলে!
“কোথায় যাচ্ছেন আপনি? আপনার ওই বয়ফ্রেন্ডের কাছে? ”
“ওর কাছে যাই বা জাহান্নামে যাই। তাতে আপনার কী?”
“আমারই তো সবকিছু।”
মেহরীন কথাটা বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে তাকাল।
“কাগজে কলমে আইনি ভাবে আপনি এখনও আমার স্ত্রী। আমাদের এখনও ডিভোর্স হয়নি।নিজের নামের সাথে আমার নাম জুড়ে নিয়ে আপনি বয়ফ্রেন্ডের কাছে গিয়ে থাকতে পারেন না। যতদিন না আমাদের ডিভোর্স হয় ততদিন এখানেই থাকবেন আপনি।”
“থাকব না।”
“থাকবেন।”
“বলেছি না থাকব না। আপনার বাড়িতে কেন থাকব আমি? ”
“আমি বলেছি তাই থাকবেন। এখন আমি আপনার স্বামী। আপনার উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আমার কথা শুনতে বাধ্য আপনি।”
“কী ঢংয়ের স্বামী স্বামী করছেন হ্যাঁ! আপনি ধোঁকা দিয়ে আমাকে বিয়ে করেছেন।”
“যেভাবেই করি। সেটা কেউ দেখছে না। আপনি এখন আমার বউ হওয়া স্বত্বেও অন্য একটা পুরুষের সাথে থাকলে ওটা বরং সবাই দেখবে।”
মেহরীন ইরফানের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। লোকটা শুধু নিজের সম্মানের জন্য তাকে যেতে দিচ্ছে না। নইলে ঠিকই যেতে দিত। তার প্রতি কোন মায়া থেকে তাকে বাধা দিচ্ছে না। ডিভোর্স হলে সে চলে যেতে পারবে। এটা ভেবেই হঠাৎ
কান্না পেয়ে গেল তার। মেহরীনের চোখ ছলছল করছে।
“আমি কখনও আয়ামের মা হতে পারব না। এই বাড়ির কারো সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আপনি নিজেই এই কথা বলেছেন। তাহলে কেন আমি এই মিথ্যে সম্পর্কে নিজেকে জড়িয়ে রাখব? আয়ামের জন্যই তো আমি এখানে এসেছি।”
বলতে বলতে মেহরীনের চোখ থেকে গাল বেয়ে টুপ করে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। ইরফান মেহরীনের হাত পেছন দিকে মুড়িয়ে নিয়ে ওকে নিজের কাছে আরেকটু টেনে আনলো। ওর চোখে চোখ রেখে বলল,
“আমার মুখের কথাই কি সব? আপনি বুঝেন না আয়াম আপনাকে নিজের মা ভেবে নিয়েছে। বাবা আপনাকে উনার ছেলের বউ ভেবে নিয়েছে। আপনার অজান্তেই এই বাড়ির সবার সাথে আপনার অদৃশ্য একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। আপনি চাইলেও এখন এই সম্পর্ক থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন না।”
মেহরীন অশ্রুভেজা চোখে ইরফানের চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে জানতে চাইল।
“আয়াম আমাকে মা ভেবে নিয়েছে। বাবা আমাকে ছেলের বউ ভেবে নিয়েছে। আর আপনি? এই বাড়ির সবার সাথে আমার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আপনার সাথে কি আজ পর্যন্ত আদৌও আমার কোন সম্পর্ক গড়ে উঠেছে? আমার এই বাড়িতে থাকা আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?”
চলবে___
গল্প সম্পর্কিত সকল আপডেট পেতে গ্রুপে চোখ রাখুন।
👇
https://www.facebook.com/groups/928548141001685/?ref=share