মেঘের_আড়ালে_মেঘ”২১”
#জেরিন_আক্তার_নিপা

হুমায়রার কথা শেষ হওয়া মাত্র ইরফান গর্জন করে বাঘের মত অনন্তর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। অনন্তর কলার ধরে সে তাকে ঠেলে পেছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মুখে বলছে,

“কুত্তার বাচ্চা! তোর এত বড় সাহস! তুই দুই দুইটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলা করছিস। মেহরীনকে ভালোবাসিস দাবি করে হুমায়রার সাথে এনগেজমেন্ট করেছিস তুই! চিটারের বাচ্চা আমি তোকে ছাড়ব না। তোর মত নীচকে কীভাবে শিক্ষা দিতে হয় তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। তোর মত চোর বাটপার আমি আমার পকেটে নিয়ে ঘুরি।”

ইরফান নিজের রাগের উপর থেকে সমস্ত কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে। সে অনন্তকে সমানে ঘুসি মেরে যাচ্ছে। মুখে, চোখে, ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে অনন্তর। তবুও ইরফান থামছে না। হুমায়রা চিৎকার করে ইরফানকে বলছে,

“দুলাভাই কী করছেন এসব? আপনি ওকে মারছেন কেন? আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন দুলাভাই। ছাড়ুন ওকে। ও মরে যাবে দুলাভাই। দোহাই লাগে ওকে ছাড়ুন। আর মারবেন না।”

ইরফান হুমায়রার কথা বা কান্নার কোন পরোয়াই করছে না। বরং সে আরও রেগে গিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে অনন্তকে আঘাত করছে।

“তোর আসল চেহারা আমি সবার সামনে টেনে বের করে আনব। তুই যে কত বড় ধান্দাবাজ তা তো মেহরীন, হুমায়রা ওদেরকে জানাতে হবে।”

হুরায়রা ইরফানের হাত চেপে ধরল। ওর থেকে অনন্তকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলতে লাগল,

“আপনি পাগল হয়ে গেলেন দুলাভাই। আবোলতাবোল কী বলছেন! অনন্ত আমাকে চিট করেনি। উনি আমাকে ভালোবাসেন। আপনি ভুল ভাবছেন। ওকে ছাড়ুন দুলাভাই। ওর কিছু হলে আমি আপনাকে ছাড়ব না।”

ইরফান হুমায়রার কথা শুনে অনন্তকে আঘাত করা থামিয়ে দিল। অনন্তর ঠোঁট কেটে, নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ইরফান ওকে ছেড়ে দিলে অনন্ত হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। শ্বাস টানতে কষ্ট হচ্ছে তার। হুমায়রা অনন্তকে ধরে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করল। এক নাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছে সে। অনন্তর এই অবস্থা সে সহ্য করতে পারছে না। ইরফানও হাঁপাচ্ছে। অনন্ত হুমায়রার কাঁধে ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ইরফান ওর দিকে জলন্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। পারলে সে এক্ষুনি অনন্তকে চিড়ে ফেলবে। অনন্ত বাঁ হাতে হুমায়রার কাঁধ শক্ত করে চেপে ধরল। ডান হাতে ঠোঁটের রক্ত মুছতে মুছতে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল। ওর হাসি দেখে ইরফানের গা জ্বলে গেল। হুমায়রা তার ওড়না দিয়ে অনন্তর নাকে লেগে থাকা রক্ত মুছে দিচ্ছে। অনন্ত ইরফানকে চোখ টিপ দেয়। ইরফান রেগে আবার ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে অনন্ত কঁকিয়ে উঠে পড়ে যাওয়ার ভাব ধরল। হুমায়রা তাকে সামলে নিয়ে ক্রুদ্ধ গলায় ইরফানকে বলল,

“আপনি মানুষ! নিজে একজন মানুষ হয়ে অন্য একটা মানুষের গায়ে এভাবে কেউ হাত তুলতে পারে! আপনি তো ওকে মেরেই ফেলছিলেন। মানুষের জীবনের মূল্য নেই আপনার কাছে! ”

“হুমায়রা, আমার কথা শোনো। এই জানোয়ার মানুষ না। মানুষের মত দেখতে শুধু। তুমি ওর আসল রূপ দেখোনি বলে ওকে মানুষ মনে করছো। এই লোক জানোয়ারের থেকেও অধম। ও তোমাদের দু’জনকে ঠকাচ্ছে।”

ইরফান আরও কিছু বলার আগে অনন্ত কাশতে লাগল। অনন্তর এই সবই যে নাটক তা ইরফান ভালো করেই বুঝতে পারছে। তার ইচ্ছে করছে, এক্ষুনি যদি অনন্তকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে পারত। অনন্ত কাতর গলায় কাশতে কাশতে বলছে,

“হুমায়রা, আমি কী অন্যায় করেছি জানি না। তোমার দুলাভাই আমাকে কেন মারছেন তাও জানি না। উনি আমার নামে কেন এসব অপবাদ দিচ্ছেন? আমি তো আজকের আগে উনাকে কখনও দেখিনি। উনার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই। না উনি আমাকে চিনেন আর না আমি উনাকে চিনি। তারপরও উনি….

ইরফান হুংকার ছাড়ল।

” চুপ হারামীর বাচ্চা। নাটক করে পার পেয়ে যাবি ভেবেছিস! যতই নাটক করিস, তোর কোনো নাটকই আজ কাজে দিবে না। তোর সব সত্য আমার সামনে এসে গেছে।”

অনন্ত এখনও নাটক চালিয়ে যাচ্ছে,

“দুলাভাই আমি আপনার কী ক্ষতি করেছি বলুন। আপনি কেন আমার সাথে এমন করছেন? আমি তো শুধু হুমায়রাকে ভালোবেসেছি।”

“চুপ করলি না তুই! তোর জিভ টেনে ছিড়ে ফেলব বাস্টার্ড।”

হুমায়রা রাগে দুঃখে চেঁচিয়ে বলল,

“অনেক হয়েছে দুলাভাই। অনেক বলে ফেলেছেন আপনি। আপনাকে সম্মান করি বলে এই না যে, আপনি যা খুশি তাই বলবেন আর আমরা চুপ করে শুনব। অনেক সহ্য করেছি। আর না। ওকে নিয়ে আপনার যখন এতই সমস্যা, তাহলে আপনি আসতে পারেন। ওকে নিয়ে আপনার মুখ থেকে আর একটা বাজে কথা সহ্য করব না আমি। বোন মারা গেছে। এখন আপনার মত দুলাভাই থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। চলে যান আপনি আমাদের বাড়ি থেকে। আর কখনও এ বাড়িতে আসবেন না। আপনার সাথে কোনো ধরণের সম্পর্ক রাখতে চাই না আমরা। আপনি সম্মান পাওয়ার যোগ্য না।”
.
ইরফান এখনও অনন্তর দিকে তাকিয়ে দরজার সামনেই আছে। অনন্তও পলকহীন দৃষ্টিতে ওকেই দেখে যাচ্ছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম হচ্ছে ওর। ইরফান এতক্ষণ তার কল্পনায় ডুবে ছিল। হুমায়রা ওদের দু’জনকে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,

“আপনারা দু’জন দু’জনকে কি আগে থেকে চিনেন?”

ইরফান মাথা নাড়িয়ে ডাহা মিথ্যা বলল,

“উঁহু। আজই আমাদের প্রথম দেখা। কি, বলেন ভায়রা ভাই? ”

অনন্ত ভেবেছিল আজই তার খেল খতম। ইরফান এক্ষুনি হুমায়রাকে সব সত্যি বলে দিবে। শুধু বলবেই না, সাথে তার কলার ধরে বের করে দিবে। কিন্তু অনন্তর সব ভাবনা মিথ্যা করে দিয়ে ইরফান হুমায়রাকে কিছুই জানাল না। লোকটা চাইছে কী? তাকে নিয়ে খেলছে! অনন্ত ভেবে পাচ্ছে না ইরফান মিথ্যা কথা কেন বলল। তার মাথায় এই মুহূর্তে কী চলছে? ইরফান ভ্রু উঁচিয়ে অনন্তর জবাব জানতে চাইল।
তাড়াহুড়ো করে অনন্ত বলল,

“হ্যাঁ, হ্যাঁ। আজই প্রথম দেখা।”

তার কথা মুখে বেজে যাচ্ছে। হুমায়রা হেসে বলল,

“আচ্ছা। ভেতরে আসুন দুলাভাই। আমি চুলায় রান্না চাপিয়ে এসেছি। আপনারা বসে গল্প করুন। আমি যাই।”

হুমায়রা চলে গেলে ইরফান পকেট থেকে রুমাল বের করে অনন্তর দিকে এগিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“কপালের ঘামটা মুছে নে। তোর হাতে এখনও কিছু সময় বাকি আছে। এত জলদি ঘাবড়ে গেলে হবে? কাহিনী তো এখনও অনেক বাকি আছে।”

ইরফান প্রথমে হুমায়রার মুখে অনন্তর পরিচয় শুনে সত্যিই অনন্তকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু সে অত কাঁচা খেলোয়াড় না৷ ভবিষ্যত ভেবে তবেই কাজ করে সে। এই টাইপের কেসে হুট করে কিছু করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায় না। যা করার প্রমাণ সহ ধৈর্য ধরে করতে হবে। অনন্তর সত্যি হুমায়রাকে তো জানাবেই। সাথে মেহরীনের চোখের পর্দাও সরিয়ে দিবে। মেয়েটা যাতে এই ভণ্ড লোকটার আসল চেহারা দেখতে পারে। তাই এখন একটু অনন্তকে খেলানো যাক। বেড়াল যেমন ইঁদুরকে মারার আগে ইঁদুরকে নিয়ে খেলে। তেমনই ইরফানও অনন্তর নিয়ে খেলবে।
ইরফান অনন্তর দিকে তাকিয়ে হাসল,

“ভায়রা ভাই! খুব শীঘ্রই আপনার সুদিন আসতে চলেছে। অপেক্ষা করুন। আর বেশি দেরি নেই। আগে আগে দেখুন আপনার সাথে আর কী কী হয়। দুই নৌকায় পা দিয়ে তো অনেক দূরই এগিয়েছেন। এবার যখন আপনার পায়ের নিচের দুই নৌকা দু’দিকে যাবে, তখন আপনি কোথায় পড়বেন ভেবে দেখেছেন। আগে না ভাবলে এখন ভাবুন। হাতে সময় হাতে।”
.
খেতে বসে হুমায়রার সামনে ইরফান অনন্তকে বাজিয়ে দেখছে। অনন্ত বেচারা তার জীবনে হয়তো এমন পরিস্থিতিতে আর কখনও পড়েনি। বেচারা না পারছে খাবার গিলতে না পারছে ইরফানের প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দিতে। হুমায়রা সামনেই বসে আছে। ইরফানের প্রশ্ন সে এড়িয়ে যেতেও পারছে না।

“ভায়রা ভাই, তা দিনকাল কেমন যাচ্ছে? সব ঠিক? ”

“হুম।”

“আজকাল কী করছেন আপনি? মানে কাজকর্ম, চাকরিবাকরির কথা জিজ্ঞেস করছি।”

“প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করছি।”

“ওহ ভালো,ভালো। লেগে থাকুন, মানে চাকরিতে।”

ইরফান হুমায়রাকে উদেশ্য করে বলল,

“ছোট ভাইয়ের সম্পর্কে তুমি কতটা জানো শ্যালিকা? আগে কারো সাথে চক্কর টক্কর ছিল নাকি? বলা তো যায় না দিনকাল যা পড়েছে। কাউকে বিশ্বাস নেই। তাই আগে থেকেই খোঁজ খবর নিতে হয়।”

“দুলাভাই উকালতি করতে করতে আপনার মন ভীষণ সন্দেহপ্রবন হয়ে গেছে। সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখেন। আপনার চোখে কেউ ভালো না,তাই না?”

“উঁহু ভুল বললে। আমার চোখে যাদের চরিত্র তেমন সুবিধার ঠেকে না তাদেরকেই আমি সন্দেহ করি। আসলে আজকাল ভালো মানুষ খুব বেশি একটা চোখে পড়ে না। চোর বাটপার গুলোই বেশি চোখে পড়ে। ”

“আপনি তো মুখ দেখে বলে দিতে পারেন কার মধ্যে কতটা ভেজাল আছে। ওকে দেখে বলুন তো ও আমাকে কোনোদিনও ধোঁকা দিবে কিনা?”

ইরফান স্থির দৃষ্টিতে অনন্তর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

“এক পার্সেন্টও গ্যারান্টি নেই। চায়না মাল। পুরোটাই ভেজাল। যেকোন সময় ধোঁকা দিতে পারে।”

হুমায়রা ইরফানকে দেখে বোঝার চেষ্টা করছে ইরফান মজা করছে কি-না৷ কিন্তু ওর চোখ মুখ দেখে হুমায়রা বুঝতে পারল না। অনন্ত থতমত খেয়ে পানি খাচ্ছে। পরক্ষণেই ইরফান হেসে ফেলল।

“আরে শ্যালিকা ঘাবড়ে যাচ্ছ কেন? মজা করছিলাম। কে কাকে ধোঁকা দেবে এটা তো সময়ই বলে দেবে৷ আমি আগে থেকে কীভাবে বলবো বলো?”

“হুম।”

“তা আমার শ্যালিকার সাথে দেখা হওয়ার আগে আপনার কোন গার্লফ্রেন্ড ছিল?”

অনন্ত হুমায়রার দিকে দেখল। ইরফান সবই জানে। দ্বিধাগ্রস্ত গলায় বলল,

“না।”

এই কথায় হুমায়রার মুখে হাসি ফুটে উঠল। ইরফানও রহস্যময়ী হাসি হাসল। তারপর বলল,

“বাহ! তাহলে তো বলা যায় আমার শ্যালিকা ভীষণ লাকি। আপনার সব ভালোবাসা ও একাই পাবে। অন্য কেউ ভাগ বসাতে আসবে না।”

অনন্ত মাথা নিচু করে রাখল। ইরফান ইচ্ছে করে তাকে এমন সিচুয়েশনে ফেলছে। মনে মনে মজা নিচ্ছে তার।
.
খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইরফান আর অনন্ত বেরিয়ে এলো। হুমায়রা আয়ামকে রেখে দিয়েছে। কিছুতেই আজ আয়ামকে দেবে না সে। রাস্তায় বেড়িয়ে অনন্ত মুখ খুলল,

“আপনি কী চাইছেন মিস্টার ইরফান?”

ইরফান এতক্ষণ নিজেকে সামলে রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। কারণ সে হুমায়রার সামনে উল্টাপাল্টা কিছু করে হুমায়রাকে কষ্ট দিতে চায়নি। সময় এলে অনন্তর সত্যি হুমায়রাকে ঠিকই জানাবে সে। কিন্তু এখন এখানে হুমায়রা নেই। তারা এখন একা আছে। ইরফান অনন্তর কলার চেপে ধরে কিড়মিড় করে বলল,

“স্কাউন্ডেল! তুই জানিস না আমি কী চাইছি? প্রথমে নিজের গার্লফ্রেন্ড। আর এখন হুমায়রা! আমি তোর সম্পর্কে আরও জঘন্য কিছু শুনলেও অবাক হবো না৷ যে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে দরদাম করতে পারে, সে পৃথিবীর জঘন্য থেকে জঘন্যতম কাজটাও করতে পারবে। আর কয়টা মেয়ের ফিলিংস নিয়ে খেলেছিস তুই? আর কয়জনের জীবন নষ্ট করেছিস। হুমায়রাকে আমি তোর সম্পর্কে কিছু বলিনি কারণ আমি চাই না ও কষ্ট পাক। তুই নিজে এনগেজমেন্ট ভেঙে দিবি। সব দোষ নিজের উপর নিবি৷ নইলে তোর সত্য তোর গার্লফ্রেন্ডের কানে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না। কথাটা মনে রাখিস।”

সাপের বিষদাঁত ভেঙে দেওয়ার পরও তার তেজ যায়নি, অনন্তর দশা হয়েছে এমন। ইরফানের হাত ধরে ওর কলার ছাড়িয়ে নিতে নিতে অনন্ত বলল,

“হুমায়রাকে আমি ছেড়ে দেব। নিজের উপর দোষ নিয়ে এনগেজমেন্টটাও ভেঙে দেব। কিন্তু তবুও তুমি মেহুকে কিচ্ছু বলতে পারবে না ইরফান। মেহুকে তোমারও দরকার। আমার সত্য বলে দিলে আমিও মেহুকে আমাদের ডিলটার কথা জানিয়ে দেব। তখন ও নিজেই তোমার বাড়ি থেকে চলে আসবে।”

অনন্তর কথা শুনে ইরফান হো হো করে হাসতে লাগল।

“কী গাধারে তুই! আমি সত্যিই তোকে এতটা গাধা ভাবিনি। আমার ভাবনা থেকেও বেশি গাধা তুই। তুই মেহরীনকে আমাদের ডিলের কথা বললে মেহরীন আমাকে ভুল বুঝবে! আহা! আর তোকে কী করবে ও? চুমু খাবে? ডিল নিয়ে আমার কাছে কে এসেছিল? আমি তোর কাছে গিয়েছিলাম? নাকি তুই আমার কাছে এসেছিলি? মেহরীন থাকতেও হুমায়রার সাথে এনগেজমেন্ট করেছে কে? মেহরীন আমার কেউ হয়না। ও চলে গেলেও আমার বিশেষ কিছু যাবে আসবে না। কিন্তু ও তো তোর গার্লফ্রেন্ড। সত্যিকারে ভালোবাসিস কিনা জানি না। তবুও তো ব্রেকআপের কষ্টটা তো পাবি। হুরায়রাও নিশ্চয়ই তোকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে না।”

অনন্তর মুখে একরাশ কালো মেঘ এসে ভীড় করল। সত্যিই তো। ইরফানের কিছুই যাবে আসবে না। ফাঁদে তো পুরোপুরি ভাবে সে ফেঁসেছে। ইরফানের বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলে উল্টো তার মুখোশই ফাঁস হয়ে যাবে।

“আমার কথা শুনে চললেই বরং এখন তোর মঙ্গল। তোর মত কাঁচা খেলোয়াড় আমি না। আমাদের সব কথা রেকর্ড করে রেখেছি আমি। মেহরীন যতই তোর ভালোবাসায় অন্ধ হোক। ওই প্রমাণ গুলো দেখলে নিশ্চয়ই আমার কথা বিশ্বাস করবে।”

“তুমি এসব কিছুই করবে না ইরফান। মেহুকে আমার থেকে দূরে করে চাইলে তোমাকেও এর পরিণাম ভোগ করতে হবে।”

“আমার তোর থেকে মেহরীনকে দূর করতে হবে না। একদিন মেহরীন নিজেই তোর জঘন্য রূপটা দেখতে পাবে। সত্য বেশি দিন চাপা থাকে না। একদিন না একদিন তো তোর সত্য সবার সামনে আসবেই।”

“হুমায়রাকে আমি ছেড়ে দেব। মেহুকে নিয়ে তোমাদের জীবন থেকেও অনেক দূরে চলে যাব। আবার সব আগের মত হয়ে যাবে। ততদিন তুমি মেহুকে কিছু বলবে না।”

“যাকে ভালোবাসিস দাবি করিস তাকে মিথ্যা বলে অন্ধকারে রাখতে এতটুকুও অনুশোচনা হচ্ছে না?”

“আমি যা করছি তা মেহুকে সুখী রাখার জন্যই করছি। ওকে আমি সত্যিই ভীষণ ভালোবাসি।”

ইরফান বুঝতে পারল, অনন্তর চোখে কখনও তার অপরাধ ধরা পড়বে না। সে এখনও এটাই বলছে যে, সে যা করছে তা সঠিক। কোন অন্যায় সে করছে না। মেহরীনকে সুখে রাখার জন্য ওকে ধোঁকা দিচ্ছে। যে নিজের ভুল বুঝতে পারে না, সে সেই ভুলগুলোর জন্য অনুতপ্ত হবে কীভাবে?
.
ইরফান বাড়ি চলে এলো। মেহরীন ইরফানের উপর অভিমান করে আছে। ইরফান ঘরে এসে দেখল মেহরীন বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে। অনন্ত বিকারগ্রস্থ একটা মানুষ। সে আরও বড় ক্রাইম করতে পারবে। মানুষ খুন করেও সে বলবে আমি কোন অন্যায় করিনি। তার কষ্ট দূর করার জন্য আমি তাকে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিয়েছি। এরকম একটা মানুষকে চোখ কান বন্ধ করে মেহরীন ভালোবাসে কীভাবে? অনন্তর উপরের সব রাগ এখন মেহরীনের উপর এসে পড়ল। ইরফান ওয়াশরুম থেকে চেঞ্জ করে এসে মেহরীনের দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মেহরীন মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে ফিরে বসে ছিল। ভেবেছিল ইরফান তাকে জিজ্ঞেস করবে, এখন পা কেমন আছে? ব্যথা কমেছে? ডাক্তারের কাছে যেতে হবে? ইরফান চলে গেলে মেহরীন রেগে গিয়ে বালিশ ধরে নিচে ছুড়ে ফেলল।

“আজব মানুষ! দেখে গেছে আমি পায়ে ব্যথা পেয়েছি। সারাদিন আমার একটা খোঁজ নিবে তো দূর এখন বাড়ি ফিরে একবার জিজ্ঞেস করলো না পর্যন্ত, আমি কেমন আছি। এত অহংকার! একটু জিজ্ঞেস করলে কি মুখ পঁচে যেত। পৃথিবীর সব ভালোবাসা, কেয়ার হামনার জন্য। আমি তো হামনার মতই দেখতে তারপর আমাকে এত অবহেলা!”

মেহরীন নিজেও বুঝতে পারছে না, ইরফান তাকে অবহেলা করায় তার এত কষ্ট হচ্ছে কেন? সে কেন ইরফানের মনোযোগ পেতে চায়। ইরফান তার কেয়ার করবে না এটাই তো স্বাভাবিক। সে ইরফানের কে হয়? তবুও মনটা ভীষণ জেদ করছে।

“একটা মানুষ অসুস্থ থাকলে তার খোঁজ নেয়া মানবিকতার মধ্যে পড়ে। এই লোক তো আমার দিকে তাকিয়েও দেখল না। এত্ত ভাব! এত্ত দাম!”

ওদিকে ইরফানও বুঝতে পারছে না সে মেহরীনের উপর এতটা রেগে যাচ্ছে কেন? মেহরীনের যাকে ইচ্ছে তাকে ভালোবাসবে। যার সাথে থাকতে মন চাইবে তার সাথেই থাকবে। যাকে বিয়ে করতে মন চাইবে তাকে বিয়ে করবে। এতে তার তো কিছু আসা যাওয়ার কথা না। তবুও তার এত ফারাক পড়ছে কেন? এই মেয়েকে নিয়ে ভাবার তার প্রশ্নই আসে না।

“গাধা! মাথামোটা! বলদ, নইলে কেউ ওই বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষকে ভালোবাসে। আট/নয় মাসেও উনি মানুষকে চিনতে পারলো না। আট, নয় মাস কি কম সময়! মানুষ এতটা অন্ধ হয় কীভাবে? এই মাথামোটা বলদ মেয়ে আবার আমার হামনার মত দেখতে! অসহ্য, ইচ্ছে করছে চড়িয়ে ওই মেয়ের আক্কেল ঠিক করি। যাকে তাকে বিশ্বাস করে বসে থাকলেই হলো।”

ইরফান পায়চারি করছে আর কথাগুলো বলছে।

“ওই হুমায়রা তো এই মেয়ের থেকেও বড় গাধা। একটা মানুষের ব্যাপারে কিছু না জেনে, কোন খোঁজ খবর না নিয়ে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল। এনগেজমেন্টও করে ফেলেছে! যার যা খুশি তা করুক। সবাইকে নিয়ে ভাবার আমার অত ঠেকা পরেছে কেন? নিজের ভালো নিজে না বুঝলে জাহান্নামে যাক। আমার কিছু করার নেই। কয়জনকে নিয়ে ভাবব আমি? কাকে কাকে বাঁচাব? সব গর্দভ তো আমার কাছেই এসে পড়েছে।”

চলবে___

নাইস,নেক্সট কমেন্ট করবেন না দয়া করে।
নেক্সট পর্ব কাল রাতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here