মেঘের_আড়ালে_মেঘ”১৫”
#জেরিন_আক্তার_নিপা

এক সপ্তাহ লাগলেও অনন্ত ঠিকই নানা ভাবে মেহরীনকে রাজি করিয়ে ফেলেছে। বাবার মত মানুষটার খুশির কথা ভেবেই মূলত এই নাটকটা করতে রাজি হয়েছে মেহরীন। তবে মানুষটাকে ধোঁকা দিয়ে এই খুশি দেবার কোন মানে হয় না। বিয়ে তেমন ঝাঁকজমক ভাবে হবে না। ইরফানের বাবা তার শ্বশুর, হুমায়রা, আয়াম। ইরফানের ইচ্ছে ছিল শুধু কাগজে কলমে সই করে বিয়ের ঝামেলাটা সেরে ফেলবে। কিন্তু বাবা কাজী ডেকেছেন। ইরফান মনে মনে রাগ চেপে রেখে বাবার বাড়াবাড়ি সহ্য করছে। মেহরীন চাপা গলায় বারবার ইরফানকে জিজ্ঞেস করছে,

“কাজীটা নকল তো? আসল কাজী ধরে নিয়ে আসেননি তো আবার?”

“সব নকল। কাজী নকল। আমি নকল, আপনি নকল, এখানে যারা আছে সবাই নকল। মনে করুন আপনি চোখের সামনে যা যা দেখছেন সবই নকল।”

মেহরীন শাড়ির আঁচল আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে চিন্তিত মুখে সবাইকে দেখছে।

“মনে করে নিলাম সবই নকল। আসলে নাটকই তো করছি আমরা। বাস্তবে বিয়ে করছি নাকি! তবুও তো সাইনটা করলে আর কবুল বলে ফেললে আমি আপনার “বউ” হয়ে যাব। হুমায়রা তো আমাকে এখন থেকেই আপনাকে তুমি করে বলতে বলছিল। বিয়ের পরে বাবা না জানি আরও কত কিছু করান।”

“হুমায়রা! বাবা, হুমায়রা এরা আমাকে পাগল না বানিয়ে শান্তি পাবে না।”

“শুনুন, আপনিও কি আমাকে তুমি করে বলবেন?”

“জানি না।”

“আপনি জানেনটা কী হ্যাঁ? কথায় কথায় জানি না, জানি না। আপনি আসলে জীবনে কিছুই জানেন না।”

ইরফান রাগী চোখে মেহরীনের দিকে তাকাল। কিন্তু মেহরীন ভস্ম করে দেওয়া চোখে কাজীকে দেখছে। মেহরীন লাল শাড়ি পরেছে। খোঁপা করা চুল। খোঁপায় দু’টা লাল গোলাপ গোঁজা। ইরফান কয়েক মিনিট মুগ্ধ চোখে মেহরীনকে দেখে চোখ সরিয়ে নিয়ে এসেছে।
ওরা দু’জনই কাগজে সই করে দিল। ইরফান মনে মনে জানে কাজীটা নকল। সে নিজে তার বন্ধুকে কল করে বলেছে সে যেন নকল কাজী পাঠায়। মেহরীন অনেক্ষণ সময় নিয়ে ইতস্তত করে কবুল বলে দিল। বলেই ইরফানের কানে ফিসফিস করে বলল,

“আপনি কিন্তু বলেছিলেন কাজী নকল। বিয়েটাও কিন্তু নকল।”

“আপনি এই কথাটা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন কেন? আমি নিজেই তো নকল কাজীর ব্যবস্থা করলাম।”

হুমায়রা পাশ থেকে বলল,

“বিয়ে হওয়ার এক মিনিটও হয়নি। এখনই ফিসফিস! বাবাহ!”

আয়াম ইরফানের কোলে এসে বলল,

“পাপা বিয়ে করলে কি কবুল বলতে হয়?”

অসহায় মুখে ইরফান বলল,

“হ্যাঁ বাবা।”

“তুমি মাম্মীকে বিয়ে করেছ?”

“হুম।”

“পাপা আমিও বিয়ে করব।”

ইরফানের কাশি উঠে গেল। মেহরীন ফিক করে হেসে ফেলল।

“বিয়ে! হ্যাঁ বাবা করবি তো। আমরা সবাই বিয়ে করব। দাদু করবে, আমি করব, তুমি করবে।”

পাশ থেকে বাবা ইরফানের কথা শুনে ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন। ছেলে যে রাগে এসব বলছে তা তিনি ভালো করেই বুঝতে পারছেন। ইরফান রাগ করুক আর যা-ই করুক। মেহরীনকে বিয়েটা তো করেছে। মেহরীন এখন এই বাড়ি ছেড়ে আর কোথাও যাবে না। মেয়েটা মিষ্টি। আস্তে আস্তে ঠিক ইরফানের মনে জায়গা করে নিতে পারবে।
হুমায়রা, তার বাবা চলে গেলে মেহরীন আয়ামকে নিয়ে ঘরে আসে। ইরফান তার ফোন খুঁজে পাচ্ছে না। সে মেহরীনকে ফোনের কথা জিজ্ঞেস করলে মেহরীন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল।

“বিয়ে হয়েছে এখনও এক ঘন্টা হয়নি। আর এর মাঝেই আপনি আমাকে নিজের কাজের লোক ভাবতে শুরু করেছেন? আমি শুধু আয়ামের দেখাশোনা করব। আপনার ফোন কোথায় রেখেছেন তা দেখার দায়িত্ব আমার না। নিজের জিনিসের নিজে খেয়াল রাখতে শিখুন।”

ইরফান রেগে গিয়েও কিছু বলল না। স্টাডি রুমে চলে গেল সে। ওখানে টেবিলের উপর তার মোবাইল ফোন পেল। ফোন হাতে নিয়ে তার বন্ধুর অনেকগুলো মিসড কল দেখতে পেল। ইরফান চিন্তায় পড়ে গেল।

“আকরাম এতগুলো কল করেছে কেন? ওর কিছু হয়েছে নাকি?”

ইরফান কল ব্যাক করল।

“কিরে এতগুলো মিসড কল কেন তোর? কী হয়েছে? সব ঠিক আছে তো?”

“তুই জিজ্ঞেস করছিস কী হয়েছে? দোস্ত যে নকল কাজীটাকে তোর বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম ও মাঝ রাস্তা থেকে ফিরে এসেছে। ওর মেয়ের বাচ্চা হবে। মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে শুনে লোকটা তোর বাসায় যেতে পারেনি।”

ইরফানের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। চিৎকার করে উঠল সে।

“কি! কী বলছিস তুই এসব! তাহলে যে কাজীটা একটু আগে বিয়ে পড়াল সে কে? অহ গড! তোর উপর ভরসা করে আমি কত বড় ভুল করেছি। বাবা যে কাজীকে আসতে বলেছে সে-ই এসেছে তাহলে। তার মানে আমাদের সত্যিকারের বিয়ে হয়ে গেছে! ওই মেয়েটা সত্যি সত্যিই এখন আমার বউ! আল্লাহ, কী করলি তুই এটা। তোর ভাড়া করা লোক আসতে পারেনি ভালো কথা। তুই আমাকে জানাবি না।”

“জানানোর জন্যই তো কল করেছি। দেখ কম করে হলেও পঞ্চাশটা মিসড কল দিয়েছি। তুই তো কল তুলিস নি।”

“ওরে গাধা রে! ফোন আমার কাছে ছিল না। তুই আমার বাড়ির ঠিকানা জানতি না? এখানে এলে তোকে কেউ মেরে ফেলত?”

“তোর বিয়েতে তো যেতে বলিসনি। বিনা দাওয়াতে কীভাবে যেতাম।”

“আহাম্মকের বাচ্চা। এইজন্য তুই আজ পর্যন্ত কোন কেস জিততে পারিসনি। জিতবি কীকরে? তুই তো আস্ত একটা গাধা। তোকে গাধা বললে গাধাও লজ্জা পাবে। তুই আর কখনও আমার সামনে আসবি না।”

“দোস্ত রেগে যাচ্ছিস কেন? আমি জানতাম নাকি তোর বাপও কাজী ডেকেছে। তুই তো বলিসনি।”

“একটা কথাও বলবি না তুই। তোর জন্য আমার কত বড় সর্বনাশ হয়ে গেছে তুুই বুঝতে পারছিস না।”

“তুই পুরুষ মানুষ। তোর সর্বনাশ কীভাবে হবে? দোস্ত তুই চিন্তা করিস না। আমি নিজে তোদের ডিভোর্স করিয়ে দেব। তোদের কেসে এক পয়সাও নেব না। কথা দিচ্ছি।”

“তোকে সামনে পেলে মাটিতে পুঁতে রাখতাম গাধা। ফোন রাখ। তোকে কিচ্ছু করতে হবে না। যা করার আমিই করব।”

ইরফান কল কেটে দিয়ে টেবিলের উপর মোবাইল ছুঁড়ে রাখল। দুই হাতে চুল টেনে ধরে বলল,

“এই গাধার বাচ্চাকে ভরসা করাই আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল হয়েছে। এর জন্য সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে গেল। মেয়েটা জানতে পারলে আমাকে কী করবে আল্লাহই জানে।”

“মেয়েটা আপনাকে খুন করবে।”

দরজার কাছ থেকে মেহরীনের গলা পেয়ে ইরফান ওর দিকে তাকায়। মেহরীন আগুন চোখে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান ঢোঁক গিলে মনে মনে বলল,

“এইরে! মেয়েটা সব শুনে ফেলেছে নাকি?”

মেহরীন ঝড়ের বেগে ছুটে এসে ইরফানের সামনে দাঁড়াল। কিড়মিড় করে ওকে জিজ্ঞেস করল,

“একটু আগে ফোনে যা যা বলছিলেন তা কি সত্যি? সত্যিই আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে? আমরা সত্যিকারের হাজবেন্ড ওয়াইফ! কী হলো? কথা বলছেন না কেন। বলুন, আপনি ফোনে যা যা বলেছেন তা সত্যি?”

ইরফান নিচু গলায় হ্যাঁ বলল। মেহরীন রাগ সামলাতে না পেরে ইরফানের গলা চেপে ধরল। ওকে ঝাকাতে ঝাকাতে বলতে লাগল,

“কত বড় ইতর লোক আপনি! আমাকে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে করে নিয়েছেন! আপনাকে আমি মেরেই ফেলব। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে জেনেও এই কাজ করলেন আপনি? আমি আপনার বাবার কথা ভেবে আপনাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। আর আপনি কি-না আমাকেই ধোঁকা দিলেন! আপনার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। মেরেই ফেলব আপনাকে।”

ইরফান কাশছে। গলা থেকে মেহরীনের হাত সরাতে চেষ্টা করেও পারছে না।

“কী করছেন? ছাড়ুন আমাকে। পাগলামি করবেন না। এসব করে কোন কিছু সমাধান হবে না।”

“সব সমাধান হবে। আপনি মরে গেলেই সব সমাধান হবে। তখন আমি আর আপনার বউ থাকব না।”

“আমি আপনার হাতে মরলে আপনাকেই তখন জেলে যেতে হবে। তার থেকে ভালো ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে আমরা একটা সমাধান বের করি।”

মেহরীন এখনও ইরফানকে ছাড়ছে না। সে একই রকম ভাবে বলে যাচ্ছে,

“আপনি আমাকে ডিভোর্স দেন। এক্ষুনি ডিভোর্স দিবেন। আমি আপনার বউ হয়ে একদিনও থাকব না। ডিভোর্স দিন বলছি। দিন।”

“ডিভোর্স কি আপনার মুখের কথা! আপনি বললেন আর আমি ডিভোর্স দিয়ে ফেললাম।”

“তার মানে আপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন না!”

“দেব না কখন বললাম। বলেছি ডিভোর্স দিতে সময় লাগবে। আগে তো আপনি আমাকে ছাড়ুন। তারপর আমি ডিভোর্সের ব্যবস্থা করছি।”

“ছেড়ে দিলেই আপনি পাল্টি খাবেন।”

“খাব না কথা দিচ্ছি। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ছাড়ুন প্লিজ।”

মেহরীনের হাত এবার কিছুটা আলগা হলো। ইরফান ঝাড়ি দিয়ে ওর হাত সরিয়ে নিজের গলায় হাত বুলাতে লাগল। দম বেড়িয়েই যাচ্ছিল প্রায়। হঠাৎ মেয়েটার গায়ে এত জোর এলো কোত্থেকে? হাত ছাড়াতেই পারছিল না। রাগে মানুষের গায়ের শক্তি বেড়ে যায় নাকি!

“কালই আপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন।”

“কাল কীভাবে সম্ভব? কোর্টে ডিভোর্সের জন্য এপ্লাই করতে হবে। তারপর ওখান থেকে নোটিশ পেলে তবেই না ডিভোর্সের কাজ আগাবে।”

“এসব করতে কত দিন সময় লাগবে?”

“নব্বই দিন তো লাগবেই।”

“নব্বই দিন। মানে পুরো তিনটা মাস। এই তিন মাস আমাকে আপনার বউ হয়ে থাকতে হবে! অসম্ভব। অনন্ত জানতে পারলে আমাকে মেরে ফেলবে।”

অনন্তর কথা উঠলে ইরফান তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে মনে মনে বলল,

“অনন্ত! কাকে ভয় পাচ্ছে! যে মানুষটা নিজেই টাকার বিনিময়ে গার্লফ্রেন্ডকে অন্য কারো বউ হতে দিয়েছে। সে নাকি সত্যিকারের বিয়ের কথা শুনলে মেরে ফেলবে! হাহ্।”

“আপনি তো এক বছরের চুক্তিতে বিয়ের নাটক করতে রাজি হয়েছিলেন।”

“সেটা মিছেমিছি বিয়ের কথা ছিল। সত্যিকারে বিয়ে হয়ে যাবে এটা জানলে কখনোই রাজি হতাম না আমি। এইজন্য কারো ভালো করতে নেই। উপকার করতে গেলেই বাঁশ খেতে হয়।”

“উপকার! সাত লাখ টাকা নিয়ে এখন বলছে উপকার করছে। তাহলে কি মেহরীন সত্যি সত্যিই ওর বয়ফ্রেন্ডের টাকা নেওয়ার ব্যাপারে কিছু জানে না? নাকি পুরোটা দু’জনের সাজানো নাটক। অভিনয় করছে মেয়েটা আমি শিওর।”

“কী ভাবছেন আপনি? ”

“কিছু না।”

“দেখুন যতদিন পর্যন্ত ডিভোর্স না হয়, আপনি কিন্তু ভুলেও আমাকে নিজের বউ ভাববেন না। আমি নিজে এই বিয়ে মানি না। আপনিও মানবেন না।”
.
পরের দিন সকালে বাড়ির বউয়ের মত মেহরীন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য ব্রেকফাস্ট বানায়। বাবাকে ডেকে তুলে ঘরে চা দিয়ে আসে। ডাইনিং টেবিল সাজাতে সাজাতে মেহরীনের অনন্তর কথা মনে পড়ল। মানুষটা এতটা কঠিন মনের। কাল সারাদিন কল দেয়নি। রাতেও না। অনন্ত জানে মেহরীন লোকটাকে মিছেমিছি বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। মেহরীন স্বপ্নেও কল্পনা করেনি অনন্ত তাকে এই কাজ করার জন্য অনুমতি দিবে। অনন্ত শুধু অনুমতি দেয়নি, সে মেহরীনকে নানা ভাবে বুঝিয়েছে সে যা করছে তাদের অন্যায় কিছু নেই। একটা বুড়ো মানুষ, আর একটা বাচ্চার খুশির জন্য করছে।
খাবার টেবিলে মেহরীন ইরফানের বাবাকে আঙ্কেল ডাকলে উনি রাগ করার ভান করে বললেন,

“এখনও তুমি আমাকে আঙ্কেল ডাকবে মা? এখন তো আমি তোমার শ্বশুর। শ্বশুরকে কেউ আঙ্কেল ডাকে। আমাকে তুমি বাবা ডাকবে না?”

মেহরীন মৃদু হেসে বলল,

“ডাকব বাবা। তবে একটু সময় লাগে। হঠাৎ করে সম্পর্ক পরিবর্তন হয়ে গেল তো। এখনও অভ্যাস হয়ে উঠেনি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। সময় নাও। কিন্তু মা আমাকে বাবা ডাকার পাশাপাশি ইরফানকেও তুমি করে ডাকতে হবে।”

ইরফান এতক্ষণ চুপচাপ খাচ্ছিল। বাবার কথা শুনে চোখ তুলে তাকাল।

“বিয়ের পর স্বামীকে আপনি বলা যাবে না, তুমি করেই বলতে হবে। এই নিয়ম কোথায় লেখা আছে বাবা? আপনি ডাকলে পাপ হবে?”

“তুই কোন কথা বলবি না। তোর মা আমাকে তুমি ডাকত। হামনাও তোকে তুমি ডাকত। মেহরীনও তোকে তুমি ডাকবে।”

হামনার কথা উঠলে ইরফানের মন খারাপ হয়ে গেল। হামনার জায়গা সে অন্য কাউকে দিয়েছে ভাবতেই মেজাজ চড়ে গেল। ইরফান প্লেট ঠেলে সরিয়ে উঠে গেল। বাবার হামনার কথা ইরফানের সামনে বলা উচিত হয়নি। ছেলেটা হামনাকে অনেক ভালোবাসতো। এখনও বাসে। ইরফান হয়তো কখনও হামনাকে ভুলতে পারবে না। বাবাও দুঃখ পেলেন। আয়াম মাঝ থেকে বলে বসল,

“দাদু মাম্মীর নাম তো হামনাই। মাম্মীকে তুমি মেহরীন ডাকছো কেন দাদু? মাম্মীর কি দু’টা নাম?
মাম্মী তোমার কয়টা নাম? তুমি পাপাকে আপনি বলো কেন?”

আয়ামের প্রশ্ন শুনে মেহরীন, বাবা দু’জনই স্তব্ধ হয়ে রইল। আয়াম প্রশ্ন করতে শিখেছে। তার ছোট মাথায় আজ এই প্রশ্নগুলো এসেছে। কাল সে বুঝতে পারবে। বাবা মেহরীনকে চোখে ইশারা করল। মেহরীন ব্যস্ত হয়ে আয়ামকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,

“কে বলেছে আমার নাম মেহরীন? বাবা তো আদর করে আমাকে মেহরীন ডাকে। তোমার পাপা তোমাকে আদর করে ডাকে না! তেমনই।”

“ওহহ। দাদু তোমাকে আদর করে ওই নামে ডাকে।”

“হ্যাঁ বাবা।”

“তুমি তাহলে পাপাকে আপনি করে বলো কেন? তুমি তো পাপাকে তুমি করে বলতে।”

“আমি তোমার পাপার সাথে দুষ্টুমি করি বাবা। আচ্ছা আয়াম চায় না মাম্মী পাপাকে আপনি বলুক। মাম্মী আর পাপকে আপনি বলবে না। এবার আয়াম হ্যাপি?”

“হুম। তুমি আমার ভালো মাম্মী। তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি।”

“আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা।”
.
আয়ামকে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে মেহরীন এখন বেকার বসে আছে। কোন কাজ নেই তার। ঘরের সব কাজ বুয়া এসে করে দিয়ে গেছে। মেহরীন ভাবছে এভাবে বাড়িতে বসে না থেকে নাচের ক্লাসে আবার জয়েন করবে। ইরফান এর জন্য অনুমতি দিবে তো?

“অনুমতি দিবে না কেন? সে আমাকে না করার কে? আর উনার থেকে অনুমতি নেওয়ার কথা ভাবছিই বা কেন আমি? মিথ্যে বিয়ের বদলে সত্যি বিয়ে হয়ে গেছে বলে উনি আমার জীবনে একদম নাক গলাতে পারবেন না। আমি উনাকে সেই অধিকার দেব না। আমি আবার নাচ শেখাতে যাব। উনি না করলেও যাব। হুহ্, দেখি উনি আমাকে আটকাতে পারেন কি-না।”

মেহরীন বাবার কথায় গেস্ট রুম থেকে ইরফানের রুমে শিফট হয়েছে। সে লাগেজ থেকে তার কাপড় গুলো বের করে আলমারিতে রাখতে যাচ্ছিল। আলমারিতে এখনও হামনার কাপড় রাখা আছে। কত্তগুলো সুন্দর সুন্দর শাড়ি! এসব নিশ্চয়ই হামনারই। মানুষটা মারা যাবার পরও তার সবকিছু একই রকম আছে। কত ভাগ্য নিয়ে দুনিয়ায় এসেছিল সে। তার স্বামী তাকে পৃথিবীর সবচে বেশি ভালোবাসে। মৃত্যুর পরও দুনিয়া থেকে তার অস্তিত্ব মুছে যায়নি। এমন ভালোবাসা কয়জন পায়? মেহরীন পাবে? ইরফান হামানকে যতটা ভালোবাসে, অনন্ত কি তাকেও এরকম ভালোবাসতে পারবে? আলমারি থেকে হামনার কাপড় সরিয়ে বা হামনার কাপড়ের পাশে নিজের কাপড় রাখতে ইচ্ছে হলো না মেহরীনের। এই জায়গা একমাত্র হামনারই। মেহরীনের এখানে কোন জায়গা নেই। সে হামনার জায়গা নিতেও চায় না। হামনার শাড়ি গুলো ছুঁয়ে দেখছে সে। হঠাৎ তার চোখ এক কোনায় লাল রঙের কিছু একটার উপর পড়ে। কী ওটা? মেহরীন ধরবে না ধরবে না করেও মনের কৌতূহল মেটানোর জন্য জিনিসটা হাতে নিল। একটা ডায়রী।

চলবে___

আপনাদের মন্তব্য আশা করছি🌝
যারা এখনও গ্রুপে জয়েন হননি। তাদের জন্য গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। গ্রুপে জয়েন হয়ে নিন।

https://www.facebook.com/groups/928548141001685/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here