#মেঘবরণ কন্যা

লিখা: সুরমা
সূচনা পর্ব

আমিই মনে হয় একমাত্র মেয়ে যে পাঁচ বছর রিলেশন করার পর নিজেই নিজের প্রিয়ন্সকে বিয়ে করতে অস্বীকার করলাম।আর এই পাঁচটা বছর মন থেকে একজনকে ভালোবাসার সত্ত্বেও যখন সেই মানুষটাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করলাম তখন নিজের ফ্যামিলির প্রত্যেকটা লোক ক্ষেপে উঠলো।আমাকে তার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য আমার ফ্যামিলি সব রকম কৌশল অবলম্বন করলো।যখন দেখলো আমাকে কোনো ভাবেই তারা রাজি করাতে পারছে না তখন তারা আমাকে ইমোশনাল ব্লেকমেইল করলো।তাতেও যখন কাজ হলো না তখন তারা আমার সাথে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছেদ করলো।আমাকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করলো।মা,বাবা,ভাই বোন থাকার সত্ত্বেও আজ আমার কেউ নেই।আমি একা।লোকের কাছে নিজের পরিবারের পরিচয়টা দিতে পারি না।ফ্যামিলিতে সবাই থাকার পরও আমাকে বলতে হয়,আমার কেউ নেই।আমি একা।আমি বেঁচে থাকার সত্ত্বেও আমার বাবা মা বলে আমার মেয়েটা মরে গেছে।এটা শুনতে যে কতো কষ্ট হয়।সেটা আমার মন শুধু জানে। আমার মতো এমন কপাল ওয়ালা আর কে আছে এই পৃথিবীতে??কথা গুলো বলেই মুচকি হাসলো মিহি।এ হাসি কোনো সুখের হাসি নয়,হাসিটার পেছনে লুকিয়ে আছে অনেক স্মৃতি, দুঃখ আর ভালোবাসা।মিহির চোখ জলে ভরে এলো।এখন যদি চোখের পাতা এক করে তাহলেই চোখ থেকে টপটপ করে বৃষ্টি পড়া শুরু হবে।মিহি মাথা নিচের দিকে দিয়ে মাটির দিকে চেয়ে রইলো।জেনি বুঝতে পারছে মিহির কষ্টটা।মিহি হাত দুটো মুঠো করে নিজের সাথে যুদ্ধ করছে।নিজেকে শান্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে।মেয়েটার সোনার জীবন লোহায় পরিণত হলো।জেনি মিহির মুঠো করা হাতের উপর হাত রেখে বললো,,,,
-কুল,,।মানুষের দুঃখ সব সময় থাকে না।তোরও থাকবে না।তুই দেখবি একদিন তোর নিজেকে পৃথিবীর সেরা সুখি মানুষ মনে হবে।সো কুল,।জেনির কথায় মিহি আবার মলিন হাসি দিয়ে বলল,,,,
-আই য়্যাম ওকে।আমাকে এখন উঠতে হবে।বাসায় আমার মেয়ে একা।ওও আমার অপেক্ষায় আছে।মিহির কথা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো।জেনি আবার মিহির হাত ধরলো।মিহি পেছন ফিরে জেনির দিকে তাকালে জেনি বলে,,,,,
-দুমিনিট বস।কিছুই তো কথা বললাম না।জেনির কথা শোনে মিহি আবার চেয়ার টেনে বসে বলে,,,,,
-কি বলবি বল।আমাকে যেতে হবে।আমার মেয়েটা আমার অপেক্ষায় বসে থাকবে।আমি না যাওয়া পর্যন্ত খাবে না।মিহির কথা শোনে জেনি বলল,,,,
-তোর মেয়ে????এখনও যথেষ্ট সময় আছে।নিজেকে নিয়ে ভেবে দেখতে পারিস।
-ভাবার মতো টাইম আমার নেই।আর এখন নতুন করে কি ভাববো??যদি ভাবার হতো তাহলে তো আরো আগেই ভাবতাম।মাহমুদকে ফিরিয়ে দিতাম না।ওকেতো অনেক ভালোবাসতাম।যা হোক,,এই টপিক নিয়ে আমি নতুন করে আলোচনা করতে চাইছি না।মিহির কথায় জেনি দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লো।তারপর বলল,,,,
-ওকে।তবে অনেকদিন পর তোর সাথে দেখা হয়ে আমার বেশ ভালো লাগছে।তা হঠাৎ এদিকে আসলি কি মনে করে??
-জবের জন্য ইন্টার্ভিউ দিয়ে আসলাম।
-এখানে??
-হুম
-কোথায়??
-অন্তরাল স্কয়ার
-ওয়াও,অন্তরাল স্কয়ার খুব নাম করা শপ।আমি কয়েকবার এখানে ট্রাই করেছিলাম।বাট পাই নি।তো তোর ইন্টার্ভিউ কেমন হলো??আর আগে যে জবটা করতি???
-আগেরটা সেলারি খুবই কম।আমার মেয়ে বড় হচ্ছে।ওর খরচ বাড়ছে।এখন তো সেইভিং করা উচিত।কয়দিন পর ওকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে।তাই নিউ জব খুঁজছিলাম।তখন হঠাৎ এক কলিগ এটার কথা বললো।আর ইন্টাভিউ ভালো হয়েছে,জয়েনিং লেটার দিয়ে দিসে।১তারিখ জয়েন করতে হবে।
-কোন পোস্টে??
-সেলার,,
-হোয়াট???তুই সামান্য সেলারের কাজ করবি???তোর তো এর চেয়ে অনেক বেশি যোগ্যতা।আই থিংক তুই এর থেকে ভালো কিছু রিজার্ভ করিস।জেনির কথায় মিহি আবার হাসলো।মিহির হাসিতে এবার জেনি বিরক্তিবোধ করলো।জেনি বললো,,,,
-আমি হাসার মত কি বললাম???
-তেমন কিছু না।তবে আমার কেন জানি হাসি পেলো।আসলে মানুষ চায় অনেক কিছু।সব কিছু কি একজন পায়???এবার জেনি ভ্রু কোঁচকালো।মিহি মুখে হাসি এনে বললো,,,,
-মহান আল্লাহ তাআলা কাউকে নিরাশ করেন না।মানুষের সব চাওয়া তিনি পূরণ করেন।তবে তার জন্য পরিশ্রম করতে হবে।ধৈর্য ধারণ করতে হবে।আমিও একদিন মনের মতো কিছু পাবো।তার জন্য আমি শূন্য থেকে নিজেকে ইমপ্রুভ করছি।তাছাড়া জবটা আমার দরকার।এই জবটা করে যে সেলারি পাবো আমার জন্য যথেষ্ট। তাই নিচ্ছি। এবার একটা কথা বল,তুই কি এখানেই থাকিস??
-হুম,অন্তরাল স্কয়ারের উত্তর দিকে হেঁটে গেলে পাঁচ মিনিটের পথ,,ডব্লিউ ব্লি ফ্ল্যাটের তিন তলায়।
-আমাকে একটা হেল্প করতে পারবি??
-কি রকম হেল্প??
-এখানে আশেপাশে আমার একটা বাসার দরকার ছিল।আসলে আমার লান্সে ১ঘন্টা ব্রেক আছে।আমি এই সময়টা বাসায় গিয়ে আমার মেয়ের সাথে সময়টা কাটালাম।এতে আমার উপকার হবে।মেয়েকেও যথেষ্ট সময় দিতে পারবো কাজটাও করতে কারবো।
-আমার পাশের ফ্ল্যাটে দেয়ালে দেখলাম লিফলেট টানানো। দুটো রুম খালি আছে।বাসাটাও বেশ সুন্দর।হাইপাই রুম।এডজাস্ট বাথরুম।তবে ভাড়াটা মনেহয় একটু বেশি।
-প্রবলেম নেই,তোর কি এখন একটু সময় হবে??
-হুম আমিতো এখন ফ্রি আছি।বাসায় যাচ্ছিলাম মাঝখানে তোর সাথে দেখা হয়ে গেলো।কেন সময় থাকলে কি করবি??
-তোকে নিয়ে বাসাটা দেখে কথা বলতাম।আমি থাকি গাজীপুর। এখন গাজীপুর থেকে তো এখানে এসে কাজ করা পসিবল নয়।
-ঠিক আছে চল।

মিহি আর জেনি দুজনেই উঠলো।ফুটপাতের রাস্তা ধরে দুজনে হাঁটছে।দুজনেই চুপ।জেনি নিরবতা ভেঙ্গে বললো,,,,,
-সেদিন আন্টির সঙ্গে দেখা হয়েছিল।জেনির কথা শোনে মিহি চমকে উঠে।সে দাঁড়িয়ে যায়।মিহিকে দাঁড়াতে দেখে জেনিও দাঁড়ায়।মিহি জেনির দিকে চেয়ে বলে,,,
-আম্মু কেমন আছে??
-তোর কথা আমাকে জিজ্ঞেস করছিল।তুই কেমন আছিস?কোথায় আছিস??কিন্তু তোর সাথে তো আমার যোগাযোগ ছিল না।তাই আন্টিকে কোনো ইনফরমেশন দিতে পারিনি।আন্টিতো খুব কান্না করে দিয়েছিল।জেনির কথা শোনে মিহির কলিজায় ব্যথা লাগলো।কতো সুখের দিন ছেড়ে চলে এসেছে সে।কতোই না আনন্দের ছিল সেই দিনগুলো।কে জানতো,তার জীবনে এমন একটা দিন আসবে??মিহিকে চুপ থাকতে দেখে জেনি বললো,,,
-তুই কিন্তু নিজের বাসায় ফিরে যেতে পারিস।আন্টি আঙ্কেল তোকে এখনও মিস করে।তোকে খুব ভালোবাসে।তুই কিন্তু আবার একটা সুন্দর জীবন পেতে পারিস।ফিরে যা নিজের বাবা মায়ের কাছে।জেনির কথায় মিহি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললো,,,,
-জানিস,আমার মেয়েটা খুব কিউট।আমাকে দেখলেই মাম্মাম বলে কোলে ঝাপিয়ে পড়ে।আমার গলা জড়িয়ে ধরে মুখে একের পর এক চুমু খায়।ময়না পাখির মতো মধুর কণ্ঠে কথা বলে।তার মুখে যেন পৃথিবীর সমস্ত মায়া।সারাদিনের ক্লান্তির পর যখন ওর মুখটা দেখি নিমিষে আমার সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।ওকে বুকে নিলে আমার সমস্ত পৃথিবীটা সুখে সুখে খেলা করে।ওর চেয়ে দামি আমার কাছে আর কিছুই নেই।তুই যদি ওর সাথে একবার কথা বলিস,তুই নিজেও পাগল হয়ে যাবি।তোর ইচ্ছে করবে ওকে বুকে নিয়ে কয়েক জনম পাড় করে দিতে।আমারও তাই ইচ্ছে করে।আমি অনেক সুখে আছি রে।আমি পৃথিবীর সমস্ত মানুষ ছাড়তে পারলেও আমার মেয়েকে ছাড়তে পারবো না।মিহির কথা শোনে জেনি আর কিছুই বললো না।জেনি খুব ভালো করেই জানে মিহিকে বুঝানোর সার্ধ তার নেই।তাই অযথা বলে লাভ নেই।

কিছুক্ষণ হাঁটার পর তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছায়।মিহি জেনিকে নিয়ে বাসাটা দেখে।বাসাটা সত্যি সুন্দর।কিন্তু ভাড়াটা অনেকটা বেশি।তবে রুমে সব রকম ফার্নিচার আছে।আগের ভাড়াটেরা সব রেখে গেছে।তাই কষ্ট করে গাজীপুর থেকে এখানে ফার্নিচার আনতে হবে না।মিহি মালিকের সাথে কথা বলে বাসাটা কনফার্ম করে ফেলে।তাছাড়া আশেপাশে সে কিছু চিনেও না।বাসা খালি আছে এমন ইনফরমেশনও তার কাছে নেই।তাই আপাতত এটা নেওয়া যাক।পরবর্তীতে যদি কম টাকায় কোনো বাসা পাওয়া যায় তখন বাসা না হয় চেঞ্জ করে নিবে।

চলবে——-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here