#মেঘবরণ কন্যা

লিখা : সুরমা
পর্ব : ৭

লেখক চুপ।মিহিও চুপচাপ কাজ করছে।লেখক বললো,,,,,
-আমার কথা কি কিছু ভাবা যায় না???মিহি মাথা না তুলেই বললো,,,
-আমার হাজবেন্ডকে যদি বলি তাহলে আপনার একটা হাড়ও আস্ত থাকবে না।
-আপনার আমার প্রতি একটুকুও মায়া হবে না???এবার মিহি চোখ তুলে তাকিয়ে বললো,,,,
-আপনি এখন আসুন। কাস্টমার পেছনে সিরিয়াল করেছে।লেখক পেছনে থাকিয়ে দেখে বললো,,,,
-ঠিক আছে।কাজ করুণ। তবে সময় পেলে আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন।লেখক ঘড়ি দেখলো।এখন মিহির ব্রেকটাইম।তার মানে সে এখন লান্স করবে।লেখক ভাবলো মিহির জন্য অপেক্ষা করা যাক।এক সাথে লান্স করবে।লেখক এক পাশে অপেক্ষা করতে লাগলো।
বিশ মিনিট পর মিহি বের হলো।বাসায় যাবে।মিহিকে দেখে লেখক এগিয়ে এসে বললো,,
-চলুন,আজ এক সাথে লান্স করি।
-সরি,আমাকে বাসায় যেতে হবে।আমার মেয়ে এই সময়টা আমার অপেক্ষায় থাকে।আমি না যাওয়া পর্যন্ত সে খাবেও না ঘুমাবেও না।লেখকের একবারের জন্যও হিয়ার কথাটা মাথা আসে নি।লেখক একটা হাসি দিয়ে বলে,,,,
-সরি,,,,
-ইটস ওকে।
-আপনার মেয়ের নাম হিয়া,রাইট?
-জ্বি
-ওকে আসুন।আপনার সাথে লান্স করার খুব ইচ্ছে ছিল। যেহেতু অফিসে হবে না সো একদিন আপনার বাসায় আমাকে ইনভাইট করতে পারেন।যদি আপনার হাজবেন্ড মাইন্ড না করে তাহলে।মিহি হাসলো।
-অফকোর্স। আমার হাজবেন্ড মাইন্ড করবে না।

লেখক নিজের কেবিনে বসে আছে।কিছুতেই ভালো লাগছে না।ভালো না লাগার কারণ মিহিও হতে পারে।লেখক কলমে কামড় দিলো।
-“মিহি নিঃসন্দেহে একজন রূপবতী নারী।গুনেও অতুলনীয়।প্রথম দেখায় যেকোনো ছেলেই পাগল হয়ে যাবে।

কিন্তু তার একটা বাচ্চা আছে।তার মানে মিহিকে এখন নিজের জীবনে চাওয়াও অন্যায়।”লেখক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।হঠাৎ করে মাথাটাও চিনচিন ব্যথা করছে।মনেও হয়তো ব্যথা লাগলো।কিন্তু সেটা লেখক প্রকাশ করলো না।লেখক ফোনটা বের করে তার মাকে কল দিলো।মায়ের সাথে কথা বললে লেখকের ভালো লাগে।প্রথম কল বাজতেই নাজনিন আরা ফোন রিসিভ করলেন।লেখক বললো,,,
-কি করছো মিসেস রহমান?
– তুই কি কখনও মানুষ হবি না??
– আমাকে দেখতে কি মানুষের মতো লাগে না??এত হেন্ডসাম,স্মার্ট। তাও তুমি বলছো আমি মানুষ না???মিসেস রহমান,আপনার স্বামীকে বলবেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করতে।
– আবার??তুই এমন কেন??
– মা জননী,আমিতো এমনেই।
– হয়েছে,এবার বল তুই কি করছিস।
– আমি বসে আছি।
– খেয়েছিস?
– না খাইনি।
– কেন?
– ইচ্ছে করছে না।
– ইচ্ছে করছে না মানে?এক্ষণি খা।খেয়ে আমাকে কল দিবি।
– ওকে।লেখক ফোন রাখলো।

বেশ কয়েকদিন কেটে গেলো।এখন আর লেখক মিহিকে ডিস্টার্ব করে না।এই কয়দিনে একবারো লেখক মিহির কাছে যায়নি।মিহি অবশ্য নিরবে লেখককে খোঁজে ছিল। কিন্তু কোথাও লেখককে পেলো না।আজ মিহি নীল রঙের শাড়ি পড়েছে।হাল্কা একটু সাজগুজও করেছে।বেশ সুন্দর লাগছে।অন্যদিনের থেকে একদম আলাদা লাগছে।যেকোনো ছেলের চোখ আটকে যাবে মিহির উপর।মিহি আজ অফিসে এসেও কাজে লাগে নি।মিহি সোজা লেখকের ক্যাবিনে গেলো।দরজা একটু ফাঁক রেখে দেখলো লেখক কাজ করছে।মিহি বললো,,,,,
-আসবো???লেখক চোখ তুলে দেখে সামনে মিহি দাঁড়িয়ে আছে।নীল শাড়িতে অপরূপ লাগছে তাকে।লেখক মিষ্টি হেসে বললো,,,,
-আসুন,মিহি এগিয়ে গেলো।লেখক আবার বললো,,,,
-পরী কি ভুল করে চলে এসেছে??
-না,ভুল করে আসিনি।ভাবলাম অনেকদিন আপনার সাথে দেখা হয়না।আজকে দেখা করে যাই।লেখক মিহিকে বসতে বললো।মিহি লেখকের মুখোমুখি বসে।মিহি বলে,,,,,
-আজকে কি আপনার একটু সময় হবে??
-কিসের জন্য বলুন তো??
-একটা কফি খেতাম।
-আপনি চাইলে আমি অল টাইম প্রি।আপনার মতো সুন্দরীর সাথে যেকোনো জায়গায় যেতে রাজি।।কোথায় যাবেন বলুন।
-আশেপাশে কোনো কফিশপ নেই??
-আছে।চলুন।

লেখক আর মিহি কফিশপে বসে আছে।কেউ কোনো কথা বলছে না।লেখক অবশ্য কয়েকবার মিহিকে আড় চোখে দেখেছে।বলতে গেলে চুরি করে দেখেছে।মিহির চোখের আড়ালে।এমন একজন সুন্দরীকে দেখার জন্য যদি এটুকু অন্যায় করতেই হয় তাহলে প্রবলেম কি এটুকু অন্যায়ে??লেখক নিরবতা ভেঙ্গে বললো,,,,
-এখন যদি আপনার স্বামী এখানে এসে আপনাকে আমার সাথে দেখে তাহলে কি প্রবলেম হবে না???মিহি হাসলো।কিছু বললো না।লেখক বললো,,,,
-হাসলেন যে??
-এমনি।
-আচ্ছা কোনোভাবে আপনি আমার প্রেমে পড়ে গেলেন নাতো??কথাটা বলে লেখক হাসলো।মিহি ঠোঁট বাকিয়ে বললো,,,,,
-আবার শয়তানী করছেন??
-আমি সিরিয়াস,,,
-আমি বিবাহিত এটা জানার পরও আপনি আমাকে লাইন মারেন??
-কোথাও কি লিখা আছে বিবাহিত মেয়েদের লাইন মারা যাবে না??
-আচ্ছা আপনি বিয়ে করছেন না কেন??
-এখনও আপনার মতো সুন্দরী পাইনি তাই।এবার মিহি হাসলো।লেখক অবাক হয়ে মিহির হাসি দেখলো।মুখ থেকে হাসির সাথে মুক্তা ঝড়ে পড়লো।লেখকের ইচ্ছে করছিল সেই মুক্তাগুলো কুড়িয়ে নিতে।মিহি বললো,,,,
-আপনার মতো শয়তানকে কে বিয়ে করবে শুনি???
-যদি কোনো সুন্দরীর দয়া হয়।চাইলে আপনিও করতে পারেন।আমি মানা করবো না।লেখক আর মিহির কথা বেশ জমেছে।দুজনে হেসে হেসে কথা বলছে।

জেমি কফিশপে ঢুকেই মিহির দিকে নজর পড়লো।মিহি বেশ হাসছে।কিন্তু মিহির সাথে কে বসে আছে??ছেলেটা কে??ছেলেটা বিপরীত দিকে ফিরে বসে আছে।জেমি তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।জেমিকে দেখে মিহি এবং লেখক অবাক হয়ে গেলো।সাথে জেমিও অবাক।মিহি কিছু বলার আগেই লেখক বললো,,,,
-জেমি,তুই??এবার মিহি আরো অবাক হলো।সে হা করে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো।জেমি বললো,,,,
-তার আগে বল তুই এখানে কেন??তাছাড়া মিহিকে কেমনে চিনিস??মিহি বললো,,,
-আমি উনার অফিসেই কাজ করি।কিন্তু তহই???জেমি একটা চেয়ার টেনে বসলো।তারপর বললো,,,,
-অন্ত ভাইয়া আমার কাজিন।কিন্তু তুই তো অন্তরাল স্কয়ারে কাজ করিস।এটার মালিক অন্তভাইয়া????মিহি বললো,,,
-অন্ত???লেখক হেসে বললো,,,,,,
-আমাকে বাসায় আত্মীয়রা অন্ত বলেই ডাকে।আর এই কম্পানিটার শেয়ার কিছুদিন আগে কিনলাম।বাট তোর সাথে তো অনেকদিন যাবৎ দেখা নেই।তাই তুই জানিস না।কিন্তু আমি ভাবছি,,,,,
-মিহির সাথে তোর পরিচয় কিভাবে???
-মিহি আর আমি স্কুল ফ্রেন্ড।আমরা এক সাথে পড়াশোনা করেছি।আমাদের ভার্সিটিও এক।লেখকের চোখ ছোট হলো।জেমিতো ইঞ্জিনিয়ার।আর মিহিও যদি ওর সাথে পড়াশোনা করে থাকে তাহলেতো ওরও অনেক যোগ্যতা। বাট সে তাদের শপে সামান্য একজন সেলার হলো কেন????

চলবে——-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here