#মেঘবরণ কন্যা

লিখা: সুরমা
পর্ব : ৬

মিহির কথা শোনে লেখক একটুও অবাক হলো না।বরং নরম গলায় বললো,,,,,
-আমাদের কফি খাওয়ার সাথে কি বাচ্চাটা কোনো ভাবে সম্পর্কিত???মিহি ভ্রু কোঁচকালো।
-আপনার কি মনে হয়??
-মনে হচ্ছে আপনি অনেক ইন্টেলিজেন্স। তা আপনি কিভাবে বুঝলেন আমি আপনাকে লাইন মারার চেষ্টা করছি???
-একটা মেয়ের সব কিছু বুঝার জন্য সিকসেন্স আছে।সে একটা ছেলের চোখ দেখলেই বুঝতে পারে ছেলেটা তার কাছে কি চায়।
-ওও আচ্ছা। তবে আপনি একটু বেশিই মায়াবতী। সাথে বুদ্ধিমতীও।আপনার প্রশংসা না করে পারলাম না।সুন্দরী মেয়েরা প্রচুর ভাব নেয়।একটা ছেলে তার পিছনে কিসের জন্য ঘুরছে তা জানার সত্যেও এমন ভাব নেয় যে সে বুঝতেই পারছে না ছেলেটা কি চায়।ন্যাকা হয়ে যায়।আপনি সেই সুন্দরী মেয়েদের মতো করেন নি।আপনি তাদের দলে নেই,তাহলে তো আপনি অসাধারণ
-আপনি আমার মেয়ের ছবি দেখতে চাইবেন না???এবার লেখক অবাক হয়ে মিহির দিকে তাকায়।মিহি নিজের পার্স থেকে ফোনটা বের করে লেখকের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে,,,,
-আমার মেয়ে।লেখক ফোনটা হাতে নিয়ে পিকটার দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে থাকে।মিহি বলে,,,,
-এবার কি আপনি আমার মেয়েরও প্রেমে পড়লেন নাকি???লেখক নিঃশব্দে হেসে বলে,,,,,
-সো কিউট।যেকোনো মানুষেই এমন একটা মেয়ের প্রেমে পড়বে।আপনার মেয়ে আপনার মতোই মায়াবতী। মিহি হাসলো।কিন্তু কিছু বললো না।সে ফোনটা আবার পার্সে রেখে কাজে লেগে গেলো।লেখক নিরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসতে নিয়ে আবার দাঁড়িয়ে গেলো।লেখক মিহির কাছে এসে বললো,,,,,
– আপনার মেয়ে তার বাবার মতো হয়েছে। রাইট?
– এমনটা কেন মনে হলো বলুন তো??
– কারণ,সে আপনার মতো না।তার মানে আপনার হাজবেন্ডের মতো।
– ধরে নিতে পারেন।
– তার মানে আপনার হাজবেন্ডও সুন্দর,স্মার্ট,হেন্ডসাম।মিহি মাথা তুলে গ্লাসের উপর হাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,,,,,
– আমার হাজবেন্ডকে নিয়ে আপনাকে এতো চিন্তা করতে হবে না।
– হুম।তবে সুন্দরী মেয়েদের হাসবেন্ড সুন্দর হওয়া উচিত না।মিহি অবাক হয়ে বললো,,,,,
– কেন?
– তাহলে মেয়েরা বেশি অহংকারী হয়ে যায়।
– আপনি এখন আসুন।
-আচ্ছা আসছি,তবে আরেকটা কথা বলে যাই।
-কি কথা বলুন,,,,
– আপনার বর কি গুণ্ডা? মিহি অবাক হয়ে বললো,,,,,
-কেন বলুন তো???
-না,আপনার মতো কিউট,সুন্দরী মেয়ের হাজবেন্ড গুণ্ডা হওয়াই উচিত।তার উপর আরো একটা ছোট এঞ্জেল।তাহলে লোকে ভয়ে লাইন মারতে আসতো না।লেখক এবার হো হো করে হাসলো।মিহিও হাসলো।তবে মিষ্টি করে মুচকি হাসলো সে।মিহি বললো,,,,
-আমার বর যদি গুণ্ডা হয় তাহলে কি আপনি আর আমায় লাইন মারবেন না???
-আমি কিন্তু গুণ্ডাদের ভয় পাই না।আসলে আমি নিজেও একজন বড় মাপের গুণ্ডা।এবার মিহি হাসলো।সে মিষ্টি কণ্ঠে বললো,,,,
-আমার বর গুণ্ডার থেকেও ভয়ংকর।লেখক আবারো হাসলো। লেখক দেখলো কাজ রেখে এখানে অনেক সময় নষ্ট করে ফেলেছে। তাই আর কথা বাড়ালো না।

লেখক নিজের কেবিনে বসে আছে।কাজ করছে।লেখকের চায়ের প্রতি একটা নেশা।বলতে গেলে লেখক এই নেশায় আসক্ত ।চা ছাড়া চলেই না তার।কাজ করতে করতে কয়টা চা যে শেষ করলো সে নিজেও জানে না।টুংটুং শব্দে লেখকের ফোনটা বাজছে।লেখক ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো মা কল করছে।লেখক বললো,,,,
-মা জননী,মনে পড়লো এই অদমকে???
-মনে পড়বে না কেন??কি করছিস বল??
-কাজ করছি
-খেয়েছিস।
-না এখনও খাইনি।খাবো।তুমি খেয়েছে??
-না আমরাও খাইনি।এইতো এখন খাবো।খাওয়ার আগে তোকে কল দিলাম।তুই তো একটা কল দিলি না।
-আমি ভাবলাম তুমি আরাফ রহমানের সাথে এখন প্রেম করায় ব্যস্ত আছো।তাই তোমাদের প্রেমের ব্যঘাত ঘটায় নি।
-চুপ কর।সব সময় ফাজলামি করিস।বিয়ে করালে এখন তুই দু একটা ছেলের বাপ থাকতি।তোর বাচ্চা কাচ্চা কি শিখবে তোর থেকে???
-আম্মু,তোমার জন্য যদি একটা বাচ্চাওয়ালা বউ নিয়ে আসি তাহলে কেমন হয় বলোতো??কষ্ট ছাড়াই অটোমেটিক একটা ফুটফুটে পরীর মতো নাতনী পেলে।কেমন হয় বলোতো????তোমাকে দাদি দাদি বলে ডাকবে।আমাকে বাবা, ইন্টারেস্টিং না??
-এই তুই কি চুপ করবি?এবার কিন্তু তোর গালে লাগাবো।কি সব বলছি আবোলতাবোল??
-আরে মা জননী,চ্যাতলে কেন??
-ফাজিল ছেলে,তুই আমাকে মা বলবি না।ফোনটা রাখ।কি সব বলছিস জানিস???
-ওকে,তাহলে এখন থেকে খালাম্মা ডাকি।খালাম্মা,তুমি এখন খেয়ে নাও।ক্ষুদা মনে হয় বেশি লাগছে।তাই অল্পতে রাগ বাড়ছে।
-ওফফ আমি আর তোকে নিয়ে পারিনা।যেমন বাপ তেমন তার ছেলে।নাজনিন আরা ফোন কাটলেন।ছেলেটা একদম বেশি ফাজিল।কি সব কথা বলে।বাচ্চাওয়ালা মেয়ে বিয়ে করবে।রেডিমেড নাতনী পাবো।ফাজিল কোথাকার। সামনে থাকলে থাপ্পড় মেড়ে মুখ বাকিয়ে দিতাম।

নাজনিন আরা একা একা কথা বলতে বলতে ড্রয়িংরুমে গেলেন।আরাফ রহমান ড্রয়িংরুমে বসে ছিলেন।তিনি দেখলেন নাজনিন আরা রেগে আছেন।তিনি বললেন,,,,
-কি ব্যাপার? তুমি এমন রেগে আছো কেন??
-রেগে থাকবো না??তোমার ছেলে কি সব বলে জানো,বাচ্চা ওয়ালা বউ আনবে।আরাফ রহমান হো হো করে হেসে দিলেন।নাজনিন আরা এবার আরো রেগে গেলেন।তিনি বললেন,,,,
-হাসছো কেন?হাসির মতো কি বলছি আমি???
-তুমি অন্তর কথা শোনে রাগ হচ্ছো??
-রাগ হবো না?কথাটা শোনতে খারাপ দেখায়।
-ওও কিন্তু কাঠি কথাই বলেছে।বাচ্চা সহ বউ।বিষয়টা কিন্তু খারাপ না।তুমি একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করো।তুমি বউও পেলে নাতনীও পেলে।আমিও দাদু হয়ে গেলাম।আরাফ রহমান হাসতে লাগলেন।নাজনিন আরা রেগে বললেন,,,,,
-যেমন ছেলে তেমন বাপ।

হিয়া কল করেছিল।মিহি বেশ কিছুক্ষণ হিয়ার সাথে কথা বললো।এখন অদ্ভুত রকম ভালোলাগা কাজ করছে।মুখটা হাসি হাসি।যদিও হাসার মতো কোনো কথাই বলেনি।হঠাৎ কারো কথায় মিহি সামনে তাকালো।লেখক সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মিহি লেখকের কথা খেয়াল করেনি।শুধু শব্দটা কানে এসেছিল।লেখক বললো,,,,,
-হাসছেন যে???কিছু হয়েছে??
-হাসার জন্য কি কোনো কারণ লাগে???
-লাগে না???
-না,হাসার জন্য মনটা ফ্রেশ থাকাই তো যথেষ্ট। মন যদি ফ্রেশ থাকে তাহলে কারণ ছাড়াই হাসা যায়।তা আপনি ঘুরে ফিরে আমার কাছেই কেন আসেন বলুন তো???
-এটার উত্তরটা কি এখনি লাগবে??
-না,পরে দিলেও চলবে।
-তাহলে পরেই বলি।এখন একটা কথা বলুন তো,আপনার প্রিয় রং কি??
-কেন?আমার প্রিয় রং দিয়ে কি করবেন?
-শার্ট বানিয়ে পরবো।
-ওও আচ্ছা। শার্ট বানানোর জন্য কি আমার পছন্দের রংটাই লাগবে???
-আমার উপর যদি আপনার দয়া হয় তাহলে আপনি আমাকে আপনার প্রিয় কালারে একটা শার্ট গিফট করতে পারেন।মিহি হাসলো।তারপর বললো,,,,
-আমার বর জানলে আপনার হাত পা গুরিয়ে দিবে।
-তারপর কি আপনি আমার সেবা করবেন??মিহি চোখ বড় বড় করে লেখকের দিকে তাকালো।লেখক আবার বললো,,,
-তোমার মতো সুন্দরীর সেবা পাওয়ার জন্য আমি বিছানায় পড়ে থাকতে রাজি।মিহি কথা বাড়ালো না।মাথা ঝাকিয়ে হাসলো।ভালোই তো,সুযোগ বুঝে তুমিও বলা হচ্ছে।ফাজিল একটা।লেখক নিজের ডেক্সে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।কিছুক্ষণ গিয়ে আবার ফিরে আসলো।মিহি লেখকের দিকে তাকালো না।লেখক মিহির দিকে ঝুকে গিয়ে বললো,,,,,
-আচ্ছা বাচ্চা আছে ভালো কথা।হাজবেন্ড থাকাটা কি খুব জরুরি ছিল??মানে বাচ্চা তো আমারও পছন্দ।এবার মিহি অদ্ভুত চোখে লেখকের দিকে তাকালো।লেখক এই চাহনিতেই ভস্ম হয়ে গেলো।

চলবে———–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here