#মেঘবরণ কন্যা
লিখা : সুরমা
পর্ব : ৫
লেখক বাসায় গিয়ে দেখে তার মা নাজনিন আরা রান্না ঘরে।লেখক রান্না ঘরের দরজার সাথে হেলে দাঁড়িয়ে বলে,,,
-এখন কি রান্না করছেন মিসেস রহমান???লেখকের কথা শোনে নাজনিন আরা ফিরে তাকিয়ে দেখে লেখক হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।নাজনিন আরা হাতের কাজটা রেখে লেখকের কাছে এসে বললেন,,,,,
-ফাজিল ছেলে।বাপের নাম ধরে বলছিস??আবার ফোনটা অফ করে রেখেছিস কেন??
-কে বাবা??আমি তার বাবা।সে আমার ছেলে।আরাফ রহমান বাসায় আসলে জিজ্ঞেস করো।আর ইচ্ছে করে ফোন অফ করিনি।অটোমেটিক অফ হয়ে গেছে।মানে ফোনের খাবার শেষ।ভুলে গেছিলাম খাবার দিতে।
-ফাজিল ছেলে কিসব বলে।তোর সাথে আমার ইম্পরট্যান্ট কথা আছে।তুই গিয়ে বস আমি আসছি।
-আচ্ছা তুমি আসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
-ফ্রেশ পরে হবি।আগে আমার সাথে কথা বলবি।
-মনে হয় দরকারটা ইমারজেন্সি??
-হুম
-আচ্ছা তাহলে আমি বসলাম।তুমি ঝটপট চলে আসো।লেখক গিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে।নাজনিন আরা দ্রুত হাত চালালেন।ছেলের উপর কোনো বিশ্বাস নেই।হুটহাট করে হাওয়া হয়ে যাবে।
নাজনিন আরা হাতে কয়েকটা ছবি নিয়ে লেখকের সামনে মুখোমুখি সোফায় বসলেন।লেখক হাসি হাসি মুখে বললো,,,,
-আমার মা জননী, তুমি কি বলতে চাও বলো।আমিতো তোমার অপেক্ষায় আছি।
-এই ছবি গুলো দেখ।হাত বাড়িয়ে নাজনিন আরা ছবি গুলো লেখকের দিকে এগিয়ে দিলেন।লেখক ছবি গুলো হাতে নিয়ে বললো,,,,,
-কে এই সুন্দরী ললনারা?? নাজনিন আরা বললেন,,,,,
-অন্ত,সব সময় ফাজলামি করবি না।অনেক মেয়ে দেখার পর আমি এই তিনটা মেয়েকে তোর জন্য পছন্দ করেছি।এখন তুই দেখে বল এই তিনজনের মধ্যে তোর কাকে বেশি ভালো লাগে।লেখক তিনটা ছবি ভালো করে দেখে বলে,,,,
-আচ্ছা আম্মু,এখান থেকে একজনকে পছন্দ করতে হবে???
-কেন বলতো???
-আসলে আমার তো তিন জনকেই পছন্দ হয়েছে।তাই বললাম আরকি।তুমি চাইলে তিনজনকে আনতে পারো।
-এবার কিন্তু মার খাবি অন্ত।
-যেকোনো একটা কিছু খেতে দিলেই হলো আম্মিজান।আমার যে বড্ড ক্ষিদা লেগেছে। এবার নাজনিন আরা চোখ বড় বড় করে বললেন,,,,,
-এবার কোনো বাহানা দিয়েই আমি তোকে ছাড়ছি না।এখান থেকে যেকোনো একজনের সাথে তোর বিয়ে আমি দিয়েই ছাড়বো।তোর কি বয়স এখন কমছে??বয়স ৩৩+হয়ে গেলো।আমার ছেলেতো বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। আর কয়দিন গেলে তার জন্য মেয়েই খুঁজে পাবো না।বুড়ো ছেলেদের মেয়েরা পছন্দ করে না।পাশের বাসার আছিয়া আপাকে দেখ।কি সুন্দর নাতি নাতনী নিয়ে হেসে খেলে যাচ্ছেন।উনার ছেলে তোর থেকে ১০বছরের ছোট।কথা গুলো বলেই নাজনিন আরা মন খারাপ করলেন।লেখক বুঝতে পারছে তার মা এখন তাকে ইমোশনাল ব্রেকমেইল করবে।লেখক হাত থেকে ছবি গুলো সোফার সামনে রাখা টেবিলের উপর রেখে মায়ের পাশে গিয়ে বসে বললো,,,
-আহা,মন খারাপ করছো কেন?আমি কি না করেছি বিয়ে করবো না??
-সত্যি তুই রাজি???বল তুই এবার বিয়ে করবি?
-হুম রাজি।তবে আমাকে আর কয়টা দিন সময় দাও।আমি তোমার জন্য হুরপরী নিয়ে আসবো।ছেলের কথা শোনে এবার নাজনিন আরার মন আরো খারাপ হয়ে গেলো।তিনি একটু রেগে বললেন,,,
-আর কয়টা দিন?? কতদিন শুনি???বুড়ো হয়ে গেলে বিয়ে করবি??
-তুমি একবার নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখো।তোমার ছেলে এখনও যথেষ্ট স্মার্ট ,হেন্ডসাম।আগামী দশ বছরেও কিচ্ছু হবে না।মেয়েরা তখনও লাইন ধরবে তোমার ছেলের জন্য।লেখক নাজনিন আরাকে জড়িয়ে ধরলেন।কিন্তু নাজনিন আরার মন ভীষণ ভাবে খারাপ হলো।ছেলেটাকে বুঝানো যায় না।কিছুতেই এই ছেলেটা বুঝবে না।তার বয়সী ছেলেরা এখন দু একটা বাচ্চার বাপ।আর তিনি নিজ ছেলেকে হাজার বার বলেও বিয়েতে রাজি করাতে পারছেন না।নাজনিন আরা বললেন,,,,
-সিরিয়াসলি বলতো তুই কবে বিয়ে করবি??মায়ের কথা শোনে লেখক মাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,
-এবছরেই বিয়ে করবো।না না,তিন মাসের মধ্যেই তোমার কন্য বউ নিয়ে আসবো।এবার খুশি তো??নাজনিন আরা এবার মহা খুশি।ছেলে নিজের মুখে যখন বলেছে তখন কথার খেলাপ হবে না।তিনি খুশি হয়ে বললেন,,,,,
-আচ্ছা। এবার গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি তোর জন্য গাজরের হালুয়া করেছি।
পরদিন লেখক সকাল সকাল অফিসে এসে হাজির।সারা রাত মিহির কথা মনে পড়ছিল।চোখের সামনে মেয়েটার চাঁদের মতো মুখটা ভেসে উঠেছিল।কি অপরূপ সুন্দর্যের অধিকারি হতে পারে একটা মেয়ে।কতো স্নিগ্ধতায় জড়িয়ে থাকতে পারে কারো কণ্ঠে।লেখক কল্পনায় মগ্ন হলেন।ভালো লাগছে একটা মেয়েকে নিয়ে ভাবতে।লেখকের সারাটা রাত কাটলো স্বপ্ন দেখে।
মিহি অফিসে ঢুকেই প্রথমে দেখলো লেখককে।লেখকও মিহিকে দেখে অবাক হলো।আজকে মিহিকে অসাধারণ লাগছে।নীল রং এর সালোয়ারকামিজ। মেয়েদের নীল রং এ অসাধারণ লাগে।তবে এতোটা সুন্দর লাগে লেখক জানতো না।লেখক এগিয়ে এলো মিহির দিকে।সে অপলক ভাবে মিহিকে দেখছে।মিহি বললো,,,,
-কারো দিকে এভাবে অপলকভাবে তাকানো ঠিক না।মিহির কথায় লেখক থমথম খেয়ে গেলো।তবুও চোখ সরালো না।লেখক বললো,,,
-স্বর্গের হুরপরী যদি ভুল করে পৃথিবীতে চলে আসে তাহলে পৃথিবীর লোকতো তাকিয়েই থাকবে।এবার মিহি স্থির হয়ে দাঁড়ালো।তারপর বললো,,,,,
-সুন্দরী মেয়ে দেখলেই বুঝি তাকিয়ে থাকতে হয়???
-সুন্দরীদের দিকে তাকিয়ে না থাকলে যে পাপ হয়।ওরা চায় তাদের দিকে ছেলেরা বোয়ালমাছের মতো হা করে তালিয়ে থাকবে।না হলে মেয়েটার অস্বস্তি লাগে।মিহি বলার মতো কিছু পেলো না।তবে বুঝতে পারলো ছেলেটা অসম্ভব ধরনের ফাজিল।মিহি টপিক চেঞ্জ করে নরম গলায় বললো,,,,
-আমাকে দেখা হয়ে থাকলে আপনি এখন আসুন।আমার কাজ আছে।কাস্টমার আসতেছে।
-আপনার সাথে একটু কথা ছিল।যদি এই বান্দার উপর একটু অনুগ্রহ করতেন খুব উপকার হতো।
-সরি,আমার সময় হবে না।এবার লেখক গালে হাত দিয়ে গ্লাসে হেলান দিয়ে দাঁড়ি বললো,,,,,
-আপনি কিন্তু সত্য খুব সুন্দর।কিন্তু আজকে ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগছে।
-থ্যাংকইউ।
-ওয়েলকাম।মিহি কাজ করছে।লেখক দাঁড়িয়েই আছে।কিছুক্ষণ পর মিহি বললো,,,,
-আপনার কি কোনো কাজ নেই???
-আগে কোনো কাজ ছিল না।এখন থেকে একটা জব পেয়েছি।আই মিন এক সুন্দরী মেয়েকে পাহারা দেওয়া।মিহি লাজুক হেসে মাথা নাড়ালো।লেখক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,,,,,
-আচ্ছা আপনি এতোটা মিষ্টি করে কিভাবে হাসেন বলুন তো।কারো হাসিও এতো মিষ্টি হয় আগে জানতাম না।মিহি কম্পিউটারে টাইপ করছিল।লেখকের কথা শোনে মিহি বললো,,,,,
-আপনি এতো ফাজিল কিভাবে হলেন বলুন তো???আমিও জানতাম না একটা লোক কিভাবে এতো ফাজিল হয়।
-ইশ,এতক্ষণ একটা সুন্দরী মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।আপনি আমার একটু প্রশংসাও তো করতে পারতেন।যেমন ধরুন,আপনি এতোটা মিষ্টি হলেন কিভাবে।তাহলে কথাটা কতো স্মার্ট হতো।ফাজিল বললেন,এটা কি স্মার্ট ওয়ার্ড হলো??
-আপনার কোন দিক দিয়ে মনে হলো আপনাকে মিষ্টি বলা যায়??? আপনি তো আসল ফাজিল লোক।এবার লেখক সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তারপর বললো,,,,,
-আসলে ছোটবেলা থেকে এতো মিষ্টি খেয়েছি যে আমার মনে হয় আমার সব কিছু মিষ্টিময়।চাইলে একটু টেস্ট করে দেখতে পারেন।এবার মিহি কঠিন চোখে লেখকের দিকে তাকালো।লেখকের মনে হলো লেখক এবার ছাই হয়ে যাবে।লেখক আমতা আমতা করে বললো,,,,
-আমি চেটেছুটে টেস্ট করতে বলিনি।অন্য ভাবেও টেস্ট করতে কারেন।আপনার যেভাবে মন চায়।মিহি আগের মতোই চেয়ে আছে।লেখক এবার বললো,,,,
-ওকে টেস্ট করা লাগবে না।আচ্ছা আমরা কি এক কাপ কফি খেতে খেতে কথা বলতে পারিনা??এই ধরুন,,আমাকে কি বলা যায়,আমি কেমন এসব বললেন।আসলে আপনার মতো কোনো সুন্দরীর মুখ থেকে আমার সম্পর্কে জানলে ভালো লাগতো।এই আরকি।মিহি আবার কাজ করতে করতে বললো,,,,,,
-লাভ নাই।লেখক অবাক হয়ে বললো,,,,
-কিসের লাভ বলুন তো???
-আমার একটা তিন বছরের মেয়ে আছে।
চলবে——-