#মেঘবরণ কন্যা

লিখা : সুরমা
পর্ব : ৪

মিহি হাতের কাজ তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিচ্ছে। এখনি ব্রেক টাইম দিবে।তাকে বাসায় যেতে হবে।যদিও বাসাটা বেশি দূরে নয়।তবুও যদি হাতের কাজটা আগে শেষ করে রাখে তাহলে ব্রেক টাইমের সাথে সাথেই সে বাসায় যেতে পারবে।মেয়েটাকে দুমিনিট সয়ম বেশি দিতে পারলে মেয়েটা খুশি হবে।এমনিতেই এতো ছোট বাচ্চা মাকে ছাড়া একা একা থাকে।

লেখক সাহেব এখনও দাঁড়িয়ে আছে।কোনো একটা জায়গায় কখনও পর্যন্ত এতটা সময় নষ্ট করেনি লেখক সাহেব।আজই প্রথম।তাও আবার একটা মেয়ের জন্য।কেন জানি ইচ্ছে করছে না যেতে।হুম,মেয়েটাকে দেখার লোভ কিছুতেই সামলাতে পারছে না লেখক।মেয়েটা একদম সাধারণ পোশাকে আছে।না আছে কোনো সাজ না আছে কোনো প্রকার মেকাপ।তবুও তাকে অসাধারণ লাগছে।এর আগে এতো স্নিগ্ধ কাউকে দেখেনি লেখক।এযেন মেয়ে নয়।হুর।স্বর্গ থেকে আসা কোনো হুরপরী। মেঘ কন্যা।

ব্রেক টাইমে মিহিকে পাস নিয়ে বের হতে দেখে লেখক এগিয়ে গেলো দরজার দিকে।মিহি লেখকে দেখে দাঁড়াল।লেখক বলল,,,,,
-আপনি এখন ক্যান্টিনে যাবেন??
-না,ক্যান্টিনে যাবো না।আমি এখন বাসায় যাবো।
-আপনার হাতে কি একটু সময় হবে আমার জন্য??
-কেন বলুন তো?
-এক কাপ কফি খাওয়ার ইচ্ছে ছিল আপনার সাথে।সাথে একটু আলাপ করতাম।আপনার সম্পর্কে জানতাম।আপনার নামটাও তো জানলাম না।লেখকের কথায় মিহি একটুও বিচলিত হলো না।সে নরম কণ্ঠে বললো,,,,,
-সরি,আমাকে বাসায় যেতে হবে।এখন সময় হবে না।মিহি হাঁটলো।লেখকও মিহির পেছনে গেলো।মিহি দেখলো লিফট এখন ৯তালায়।সে বাটন স্পেস করে লিফটের জন্য অপেক্ষা করছে।মিহির পেছনে লেখকও দাঁড়িয়ে আছে।লেখক আবার বললো,,,,,
-বাসায় একদিন না গেলে কি বেশি প্রবলেম হবে??বা ১০মিনিট লেইট করে গেলে??লেখকের দিকে মিহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,,,,,
-আপনার বয়স কতো???এবার লেখক নার্ভাস হলো।হুটহাট করে কেউ এভাবে বয়স জিজ্ঞেস করে লেখকের জানা ছিল না।লেখক একটা হাসি দিয়ে নিচের দিকে তাকালো।তারপর বললো,,,,,
-আমার বয়স জেনে কি করবেন???
-কিছু করবো না,তবে আমি যদি ভুল না করি তাহলে আপনার বয়স ৩০+ হবে।এবার লেখক অবাক হলো।মেয়েটার ধারণা খারাপ না।লেখক আবার মিষ্টি করে হাসলো।তারপর বললো,,,,,,
-হুম।আমার বয়স ৩৩ বছর।
-আপনাকে কি এখন ২০ বছরের ছেলেদের মতো পাগলামি করা মানায়???এবার লেখক স্থির হয়ে গেলো।লিফট চলে আসায় মিহি লিফটে উঠে যায়।কিন্তু লেখক উঠলো না।লেখক ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।মাথাটা একদম নিচু করে।লেখক ভাবলো,,,,
“সত্যি এই বয়সে তাকে কি এমন পাগলামি করা মানায়?যখন প্রেম বা মেয়েদের পেছনে ঘুরার বয়স ছিল তখন সে নিজের কেরিয়ার,নিজেকে নিয়ে বিজি ছিল।আর এখন এই বয়সে এসে একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলো?বিষয়টা সত্যি অদ্ভুত। “লিফটের কাছেই লেখক দাঁড়িয়ে রইলো।তার কিছুতেই মন মানছে না।মেয়েটাকে দেখার পর থেকেই তার কেমন জানি লাগছে।অদ্ভুত ভালো লাগাও কাজ করছে।এতো চিন্তাভাবনার পর লেখক নিজেকে বুঝালো,,,
‘কার জীবনে কখন প্রেম আসে কেউ বলতে পারে না।হয়তো তার জীবনে প্রেমটা একটু দেরিতেই আসলো।তাতে দোষ কি??কি খারাপ যদি এই বয়সে একটা মেয়ের জন্য একটু পাগলামি করে তাতে?’ লেখক হাসলো।আবার চার তালায় এসে লিফট থামলো।দুজন লোক বেরিয়ে লেখককে দেখে সালাম দিয়ে বললেন,,,,,
-স্যার,আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে??বাহিরে যাবেন????লেখক উত্তর দিলো,,,,
-না,কোথাও যাবো না।আপনাদের ম্যামকে এগিয়ে দিতে এসেছিলাম।লেখকের কথায় দুজনেই হা হয়ে গেলেন।একজন লোক বললেন,,,
-স্যার,আপনি বিয়ে করেছেন কবে?আমরা তো কিছু জানলাম না।এবার লেখক হাসতে হাসতে বললো,,,,
-বিয়ে এখনও করিনি।তবে মনে হয় এবার করবো।আই মিন আপনাদের ম্যামকে খুঁজে পেয়েছি।লেখক আর একটুকুও দাঁড়ালো না।দুজন লোকেই অবাক হয়ে গেলেন।তবে তারাও আর কিছু বললেন না।

মিহির অফিস থেকে বাসার দূরত্ব বেশি না।পাঁচ মিনিটের সময়।মিহি এসে কলিং বেল বাজাতেই কুসুম এসে দরজা খুলে দেয়।কুসুমের কোলে হিয়া।মিহিকে দেখেই হিয়া রাজ্য জয়ের হাসি দিয়ে মিহির দিকে দুটি হাত বাড়িয়ে দেয়।কিন্তু মিহি হিয়াকে কোলে নিল না।মিহি বললো,,
-মাম্মাম,বাহির থেকে এসেছে।মাম্মামের আগে ফ্রেশ হতে হবে।মাম্মামের গায়ে জমস আছে।মিহির কথায় হিয়া আবার নিজের হাত ঘুটিয়ে নেয়।মিহি ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে।হিয়া ততক্ষণ ওয়াসরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।তার এক মুহূর্তও চলে না মাম্মামকে ছাড়া।

মিহি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে হিয়া দাঁড়িয়ে আছে।মিহি হিয়াকে কোলে নিয়ে হিয়ার মুখে কয়েকটা চুমু দেয়।হিয়াও মিহিকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেয়।মিহি হিয়াকে নিয়ে খেতে যায়।ব্রেক টাইম মাত্র ১ঘন্টা।চোখের ফাঁক দিয়ে টাইমটা চলে যায়।এই সবটুকু সময় মেয়ের সাথেই কাটে মিহির।তারপর হিয়াকে ঘুম পারিয়ে মিহি আবার অফিসে চলে আসে।

লেখকের আজকে কাজে মন বসছে না।কেমন অস্থির অস্থির লাগছে।শরীরটাও ম্যাজমেজ করছে।লেখক ভাবলো,বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা লম্বা ঘুম দিবে।লেখক যেই অফিস থেকে বের হতে যাবে তখন আরাফ রহমান রুমে ঢুকলেন। আরাফ রহমান বললেন,,,
-এতক্ষণ তুই কোথায় ছিলি??লেখক হাসিহাসি মুখে বললো,,,,
-তোমার বউমাকে লাইন মারছিলাম।লেখকের কথা শোনে আরাফ রহমান হেসে দিলেন।তিনি বললেন,,,,,
-ফাজিল ছেলে।বাপের সাথেও ফাজলামি করে। আরাফ রহমান লেখকের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন,,,,
-তোর মা তোকে ফোন করছে।বাট তোর ফোন নাকি বন্ধ। বাবার কথা শোনে লেখক পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে ফোনটা সত্যি বন্ধ হয়ে গেছে।লেখক বললো,,,,
-সরি,ফোনটা বন্ধ হয়ে গেছে।হয়তো চার্জ শেষ।খেয়াল করিনি।আম্মু কেন আমাকে খুঁজছে বলোতো??
-তা আমি কিভাবে জানবো।আমাকে কি বলবে? তুই ফোন করে দেখ কি বলে।আমাকে কাজ করতে দিল না।বললো যাও,আগে গিয়ে দেখো আমার ছেলে কি করে।বললাম পাঁচ মিনিট পরে যাচ্ছি। বলে ১মিনিটও যদি দেরি করো তাহলে তোমায় দরজার সামনে ১ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখবো।তাই তাড়াতাড়ি আসতে হলো।দেখলি তোর মা আমার উপর কেমন অত্যাচার করে।
-আমি দেখে কি করবো?তোমার বউ,তুমি সামলাও।
-ফাজিল ছেলে,তোমার বউ তোমার বউ বলছিস কেন??আমার বউ তোর মা হয়।এবার লেখক হি হি করে হাসলো।তারপর বললো,,,,
-আচ্ছা আমি এখন বাসায় গেলাম।তুমি এদিকটা সামলে নিও।আর হ্যাঁ,একটু পরে তোমার বউমা আসবে,তাকে দেখে রেখো।কথাগুলো বলে লেখক হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো।আরাফ রহমানও হাসলেন।তিনি নিজে নিজেই বললেন,,,,,
-ছেলেটা খুব ফাজিল।বাপের সাথেও ফাজলামি করে।

চলবে—–

আমাকে উইস করার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ😍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here