#মেঘবরণ কন্যা
লিখা: সুরমা
পর্ব :২
বাসার সব কিছু কমপ্লিট করে মিহি জেমিকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসে।রাস্তায় দুজনেই হাঁটছে।দুজনেই কিছু সময়ের জন্য চুপ হয়ে গেলো।নিরবতা ভেঙ্গে মিহি বলে,,,,,
-তোর কি খবর?কিভাবে আছিস?বিয়ে করেছিস??নাকি এখনও আগের মতোই আছিস???
-না,বিয়ে করেছি।মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছি।চাইলেও নিজের মতো থাকা যায় না।
-ওয়াও,ভালো করেছিস।তা আদনান ভাইয়া কেমন আছে???মিহির কথা শোনে জেমির মুখটা কালো হয়ে যায়।জেমি মাটির দিকে তাকিয়ে বলে,,,
-আমি আদনানকে বিয়ে করি নি।জেমির কথায় মিহি বেশ অবাক হয়।মিহি বলে,,,,
-তাহলে কাকে বিয়ে করেছিস???আর তুই না আদনান ভাইয়াকে,,,, মিহিকে শেষ করতে না দিয়েই জেমি বলে,,,,
-আসলে আদনানের বাবা মায়ের আমাকে পছন্দ হয়নি।আর আদনানও তার বাবা মাকে ছাড়া কিছু করতে পারবে না।এ নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছিল।অবশেষে আদনান তার বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে।তখন আমিও মেন্টালি ভাবে খুবই ভেঙ্গে পড়েছিলাম।সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর বিয়ে করবো না।কিন্তু অবশেষে বাবা মায়ের চাপে পড়ে বিয়েটা করতে হলো।জানিস,দিপু খুবই ভালো ছেলে।প্রথমেতো আমার ওকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল।আমি ওকে আদনানের কথা বলেছিলাম।তখন ওও আমাকে প্রচুর সাপোর্ট দিয়েছে।দিপু বাহিরে থাকে।ইতালিতে।আর আমি এখানে।খুবই ইচ্ছে দেশে থেকে কিছু করবো।তাই ওর সাথে বাহিরে স্যাটেল হওয়ার কথা ভাবিনি। ওও অনেকবার বললেও আমি রাজি হয়নি।দেশের বাহিরে একটা জীবন আছে এমনটা আমি কল্পনাও করতে পারি না।ওর ফ্যামিলিরর সবাই ওখানে থাকে।তাই দিপুও এখানে স্যাটেল হওয়ার কথা চিন্তা করে না।তবে ওও প্রতি বছরেই দেশে আসে।মাস তিনেক থেকে আবার চলে যায়।আমিও চেষ্টা করছি এখানে থেকে কিছু একটা করার।আপাতত একটা মাল্টিন্যাশানালে কাজ করছি।আরো ভালো কিছুর জন্য ট্রাই করছি।দেখা যাক কি হয়।এইতো,আমার লাইফ।
-বাহ,,,তাহলে তুই ভালোই আছিস মনে হচ্ছে।
-হুম।আলহামদুলিল্লাহ। এখন আমি ভালোই আছি।তাছাড়া যেখানে দিপুর মতো হাজবেন্ড পাশে আছে সেখানে ভালো না থাকারও কারণ দেখি না।
-গুড,!!এখন ভালো থাকাটাই আর্ট।যা সবাই পারেনা।
-এখন চল আমার ফ্ল্যাটে যাই।এই বিল্ডিং এর পরের বিল্ডিংটায় আমি থাকি।
-আজ নয়।এমনিতেই অনেক লেট করে ফেললাম।আমাকে এখন বাসায় যেতে হবে। তবে আমি এখন থেকে তোকে অনেক ডিস্টার্ব করবো।
-হুম সেতো আমি দেখতেই পারছি।তিন চার বছর ধরে একবার একটা কলও করলি না।একটা বার মনেও করিস নি।
-তখন দূরে ছিলাম।তাছাড়া আমি তখন কাউকে ডিস্টার্ব করতে চাইনি।এখন কাছে আসছি এখন প্রচুর ডিস্টার্ব করবো।
-আচ্ছা করিস।এখন চলতো আমার বিল্ডিং এ যাই।
-আজ হবে না।তবে এবার তুই নিশ্চিন্ত থাক।আমি তোর ফ্ল্যাটে যাবো।এখন আমি আসি।
-আচ্ছা ঠিক আছে।তবে যা।
জেমির থেকে বিদায় নিয়ে মিহি একটু এগিয়ে গেলো।কিন্তু কিছু একটা মনে হতেই আবার থেমে গেলো।পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে জেমিও এগিয়ে যাচ্ছে। মিহি জেমিকে পেছন থেকে জেমিকে ডাকলো।সাথে সাথে জেমি পেছনে ফিরে তাকালো।মিহি একটু এগিয়ে এসে বললো,,,
-আমার বাসায় কাউকে প্লীজ বলবি না আমি এখানে থাকি।আমি চাইনা পুরনো স্মৃতি গুলো আবার সামনে আসুক।আবার কেউ কষ্ট পাক।মিহির কথায় জেমি হালকা একটু হেসে বললো,,,
-কেউ জানবে না।তুই নিশ্চিন্ত থাক।এবার মিহি বেশ স্বস্তি পেলো।সেও হালকা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,,,,
-ওকে আসি।
-হুম।
মিহির বাসায় ফিরতে অনেকটা লেট হয়ে গেলো।বাচ্চা মেয়েটা অধির আগ্রহে তার জন্য অপেক্ষা করবে।বিষয়টা মাথায় আসতেই মিহি অস্তির হয়ে যায়।আজকে লান্সের টাইমে বাসায় যাওয়া হয়নি।একটাবার কল করেও মেয়েটার সাথে কথা বলেনি।নিশ্চয় মেয়েটা অভিমান করেছে।দুপুরে হয়তো কিছু খায়ও নি।মিহি বাসায় এসে কলিং বেলে একবার চাপ দিতেই কাজের মেয়ে কুসুম এসে দরজা খুলে দেয়।মিহি অস্তির হয়ে বলে,,,,,
-হিয়া কোথায়???
-হিয়ামনি ঘুমাইছে।আইজকা আপনে দুপুরে আইলেন না বইলে হিয়ামনি কিছু খায়নি।হেতো কানতে কানতে ঘুমাইলো।আমি কতো কি কইলাম।হেতো আমার একটা কথাও হুনে নাই।কুসুমের কথা শেষ হতেই মিহি দৌঁড়ে নিজের রুমে ঢুকে।বিছানায় টেডিবিয়ারটা জড়িয়ে ধরে হিয়া ঘুমাচ্ছে।ফুলের মতো নিষ্পাপ একটা পুতুল। ফর্সা মুখে এলোমেলো চুল গুলো কপালের উপর পড়ে আছে।কি মায়াবি এই মুখটা।দেখলেই কলিজা ঠাণ্ডা হয়ে যায়।মিহির রুমের চারদিকে নজর দিতেই দেখে রুমের জিনিস গুলোও অগোছালো। নিশ্চয় হিয়া এলোমেলো করেছে।মেয়েটা অনেকটা জেদি।রাগ উঠলে জিনিস এলোমেলো করে ফেলে।তবে মিহি সাথে থাকলে হিয়া কখনও অবাধ্য হয়না।মিহিকে কাছে না পেলেই মেয়েটা কষ্ট পায়।তখনেই সে এমনটা করে।মিহি গিয়ে বিছানায় হিয়ার পাশে বসে হিয়ার কপাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে হিয়ার কপালে একটা চুমু একে দিয়ে বলে,,,,
-সরি মাম্মাম।আর কখনও এতো লেট করবো না।আমার মাম্মামটাকে আজকে এত্তগুলা কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।সরি,সরি সোনা।মিহি ঘুমন্ত হিয়াকে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে।সাথে সাথে হিয়া চোখ খুলে তাকায়।চোখের সামনে নিজের মাম্মামকে দেখে হিয়ামনি কিলকিল করে হেসে দিয়ে মিহিকে জড়িয়ে ধরে।মিহিও হিয়াকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।হিয়া মায়ামাখানো কণ্ঠে বলে,,,,,
-মাম্মাম তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে?জানো আমি তোমাকে কত্ত মিস করছিলাম?তোমার জন্য আমার কত্তো কান্না আসছিল।মেয়ের কথা শোনে মিহির চোখ জলে ভরে উঠে।মিহির আবারো হিয়ার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলে,,,,,,
-সরি আমার সোনাটা।মাম্মামের আজকে কাজ ছিল তাই তো আসতে লেইট হয়ে গেলো।তুমি দুপুরে খাওনি কেন??
-তুমি আসোনি তাই আমি খাইনি।জানোনা তুমি না খাইয়ে দিলে আমার খেতে ইচ্ছে করেনা।
-মাম্মামের খুব ইম্পরট্যান্ট কাজ ছিল তো সোনা।তুমি এমন করলে মাম্মামের কষ্ট হয় জানো না তুমি???নেক্সট টাইম আমি যদি কখনও আসতে না পারি তাহলে তুমি আন্টির হাতে খেয়ে নিবা।মনে থাকবে??মিহির কথায় হিয়া মাথা নাড়িয়ে সায় দিলে মিহি বলে,,,,
-গুড!এই তো আমার সোনাটা।বলে মিহি আবারও হিয়ার কপালে চুমু খায়।মিহি বলে,,,,
-চলো,এখন খাবে।ইশ!মুখটা ছোট হয়ে গেছে আমার বাবুইটার।মিহি হিয়াকে কোলে করে নিয়ে যায় ডাইনিং এ।মিহি নিজ হাতে হিয়াকে খাইয়ে দেয়।হিয়াও বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নেয়।
চলবে——-