#মেঘফুল_৫
#লেখনীতে_উম্মে_সুমাইয়া_আক্তার।
________________________________

জান্নাতের কাছে এসে ওর দিকে ঝোঁকে বললো,

” সরি টু আস্ক দ্য কুয়েশ্চন। জান্নাত তোমার শরীর কাঁপছে কেন?”

মেঘালয়ের প্রশ্ন শুনে জান্নাত পুনশ্চ শুকনো একটা ডুব গিলে বললো,
“আসলে..জান্নাতকে থামিয়ে চকিতে মেঘালয় বললো-” বুঝতে পারছি আর বলতে হবে না। সত্যি কথা বলতে আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত নই। বাবা-মা একরকম জোর করেই আমায় বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমার কিছুদিন সময়ের প্রয়োজন।”
এতটুকু শুনে জান্নাত স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। কিন্তু শেষের কথাটি শুনে ও নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। মাথায় যেন গোটা আকাশ ভেঙে পরলো। মেঘালয় বললো,

“সবচাইতে বড় কথা হলো আমার প্রাক্তন স্ত্রীর প্রতি এখনও আমার মায়া রয়ে গেছে। আমি এখনও তাকে ভালোবাসি।” এ কথাটি শুনে জান্নাত কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,

“প্রাক্তন স্ত্রী মানে?”

” মানে আমার প্রথম স্ত্রী প্রভা। যার সাথে গত এক বছর আগে আমার ডিভোর্স হয়েছে।”

“তারমানে বাবা আমাকে একজন বিবাহিত পুরুষের সাথে বিয়ে দিয়েছেন! এটা তো ফ্যাক্ট নয়। উনি এখনও তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীকে ভালোবাসে। তাহলে কি জেনেশুনে বাবা আমার সাথে এরকম করলেন?”
মনে মনে এসব ভেবে জান্নাত একরকম কেঁদেই ফেললো। ও মেঘালয়াকে ভাঙা ভাঙা গলায় বললো,

” আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানি না!”

” সিরিয়াসলি!”

” জ্বী।”

” কি বলছো এসব! তোমার বাবা কি না জেনেই তোমাকে বিয়ে দিয়েছেন? নাকি জেনেশুনেই বিয়ে দিয়েছেন?”

” বুঝতে পারছি না!”

বলে জান্নাত নাক টেনে টেনে ফুপিয়ে কাঁদছে। মেঘালয় ভ্রুকুঞ্চন করে বললো,

“এই মেয়ে একদম কাঁদবে না।”

তারপর সে ভারী কন্ঠে বললো,

“আমি এতদিন জানতাম আমার বাবা-ই একজন খারাপ লোক। কিন্তু এখন দেখছি তোমার বাবাও কম নয়। একটা বিবাহিত ছেলের সাথে কুমারী মেয়ে বিয়ে দেওয়া নিশ্চয়ই দোষের কিছু নয়। কিন্তু এ বিষয়টা তো পাত্রীকে জানানো উচিৎ যে,সে ঐরকম পাত্রকে বিয়ে করতে রাজি কি না! এতটুকু বলে সে একটা কথা বলতে গিয়েও থেমে গেলো। মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,” ইশ…আমার মতো হয়তো অরও একই অবস্থা। তারউপর আমি এখন প্রভার কথাটা কেন বলতে গেলাম! চকিতে বললো-” বেশ করেছি! একদিন না একদিন তো জানবেই তারচেয়ে বরং আগেই জানিয়ে দিলাম। আচ্ছা এখন আমি কি করবো? অকেই বা কি বলে শান্তনা দিবো?”
মেঘালয় আনমনা হয়ে এসব ভাবছে। আর জান্নাত মেঘালয়ের মুখে তার শশুর খারাপ কথাটা শুনে যেন আরেক দফা অবাক হলো। জান্নাত বিস্মিত হয়ে বললো,

” বাবা যেমনই হোক না কেন। তাই বলে কি কেউ বাবার বদনাম করে?”

আকস্মিক এরকম একটা কথা শুনে মেঘালয়ের আনমনা ভাব কেটে গেলো। ও গম্ভীর হয়ে বললো,

” কেউ করে কি না,তা জানিনা। তবে আমি করি এবং একশোবার করবো। আমার জায়গায় তুমি হলে হয়তো অনেক আগেই নিজের গলা,নিজেই টিপে মরে যেতে!”
মেঘালয়ের থেকে এরকম উত্তর শুনে জান্নাত নির্বাক হয়ে রইলো। রাগে মেঘালয়ের শরীর কাঁপছে। ডাগর ডাগর চোখগুলো আগুনের ন্যায় লাল বর্ণ ধারণ করলো। এর আড়ালেও বুক ফাটা আর্তনাদের শব্দ যেন জান্নাত শুনতে পেলো। সে এমন রূপ আর অপ্রত্যাশিত উত্তর পেয়ে চুপসে গেলো। মনে মনে ভাবছে,” জানিনা আল্লাহ সামনে আমার জন্য কি কি অপেক্ষা করছে!” অজানা ভয়ে হৃদপিণ্ডটা ক্রমশ উঠানামা করছে।

ফজরের সময় জান্নাতের ঘুম ভাঙলো। আড়মোড়া ভেঙে ও লম্বা একটা হাই তুলে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলতে লাগলো-” দীলু নীলু ওঠরে ফজরের নামাজের সময় হয়েছে। নামাজ পড়বি না তোরা? তাড়াতাড়ি ওঠ!” চকিতে ঘুমের রেশ কেটে গেলো। ডান হাতটা বিছানার মধ্যে থাকা কোল বালিশের উপর পরতেই ও চমকে উঠলো। হ্যাঁ, সে যাতে মেঘালয়ের কাছে ঘেঁষতে না পারে তাই মেঘালয় মধ্যে একটা কোল বালিশ দিয়ে রেখেছে। জান্নাতের মুখটা মলিন হলেও ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের এক ফালি শুকনো হাসির ঢেউ খেলে গেলো। ও বিছানা থেকে উপবেশন করে ওয়াশরুমে গেলো। প্রাকৃতিক কাজ শেষে অজু করে এসে,মেঘালয়কে নামাজের জন্য ডাক দিলো।

” এই যে শুনছেন? নামাজের টাইম চলে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি উঠুন! ”

মেঘালয়ের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে জান্নাত একটু ধাক্কা দিয়ে বললো-” আরে উঠুন না জামাতের টাইম কিন্তু চলে যাচ্ছে! ”

মেঘালয় ঠোঁট আঁটিয়ে ভ্রু কুঞ্চন করে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো-” ওহ প্রভা এত চিল্লাফাল্লা করছো কেন!”

জান্নাত আরেকটা ডাক দিতে গিয়েও থেমে গেলো। মেঘালয়ের মুখে আবারও প্রভার নামটা শুনে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আর একটু সময়ও সে নষ্ট না করে বিছানার এক কোণে বসে তাসবিহ জপতে শুরু করলো। একদিকে দুই চোখ জুড়ে অশ্রুকণা ঝরে পরছে অন্য দিক দিয়ে তার দুই ঠোঁট ভরে প্রভুর প্রশংসা করে যাচ্ছে। কখনো বা একটানা জিকির আবার কখনো বা একটানা ইস্তেগফার। হায়েজ অবস্থায় অন্যান্য ইবাদাত না করতে পারলেও, এই সময়ে জিকির-ইস্তেগফার করে অনেক বেশি আমল করা যায়। যেহেতু হাতে সময় থাকে তাই আমল তো করা যেতেই পারে। এজন্য জান্নাতও কখনো এগুলো মিস করে না। ওয়াল্লাহি! এই অবস্থায় ইস্তেগফার করে অতিরিক্ত সময়টুকু দারুণভাবে কাটানো যায়!”

কাঁদতে কাঁদতে কখন যে জান্নাত দেয়ালে ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে তার কোনো হদিস পায়নি। মেঘালয় খুব একটা দেরিতে না উঠলেও আজ ভোর বেলায় তার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলে তাকিয়ে রুমটা পরখ করলো। এরমধ্যেই তার চোখ একটা জায়গায় আটকে গেলো। সে নিদারুণ চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে, দেয়ালে ঠেস দেওয়া এক ঘুমন্ত নববধূর দিকে।
দরজাজানালা বন্ধ হওয়ায় রুমটা আদৌ আদৌ আলোকিত হয়ে আছে। সেই আলোয় জান্নাতের মুখটা স্নিগ্ধ এবং ভীষণ মায়াবী দেখাচ্ছে। মাথায় ঘোমটা দেওয়া এবং জড়োসড়ো হয়ে মেয়েটা এক কোণে ঠেস দিয়ে ঘুমোচ্ছে।”যেন আরেকটুখানি জায়গা দখল করলেই কেউ তার পিঠে চাবুক মারবে!” এ কথা ভেবে মেঘালয় আনমনে হেঁসে উঠলো। জান্নাতের কাছাকাছি গিয়ে বসলো। তার মুখপানে গভীর চাহনিতে তাকিয়ে রইলো। এরমধ্যেই এক অনাকাঙ্ক্ষিত কান্ড ঘটে গেলো! মেঘালয় একদম হাবাগোবা বনে গেলো। সে দেখলো প্রশান্তিতে ঘুমোনো মেয়েটা হুট করেই ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তার ভ্রু গুলো যখন কুঁচকে এলো তখনই বিকট শব্দে অস্পষ্ট ভাষায় মেঘালয়কে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। মেঘালয় যখন জান্নাতকে ঘামতে দেখে তখনই তার হাতটা খামচে ধরতে গিয়েছিল। ফলে জান্নাত তাকে ধাক্কা দেওয়ায় সে সাথে সাথে জান্নাতের হাতটা শক্ত করে ধরে ফেলে। এবং জান্নাতকে নিয়েই বিছানার উপর পরলো। মেঘালয়ের বুকের উপর পরতেই জান্নাত নিজেও রীতিমতো লজ্জিত এবং বিব্রত হয়ে গেলো। ও মেঘালয়ের দিকে কপাল কুঁচকে তাকালো। মেঘালয় ভ্রু গুলো নাচিয়ে বললো-” কি হয়েছে? আমাকে এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে কেন?”

জান্নাত এক লাফ দিয়ে মেঘালয়ের উপর থেকে উঠে বিছানায় উপবেশন করলো। হাতে টান অনুভব করলে দেখতে পেলো মেঘালয় তার হাত ধরে আছে। ও হাতের দিকে তাকাতেই মেঘালয় তার হাত ছেড়ে দিয়ে সে নিজেও বিছানায় উপবেশন করে বললো,
” কি হলো জান্নাত?”

জান্নাত এখনও ঘামছে সাথে শরীরও কাঁপছে। ও মেঘালয়ের প্রশ্ন আদৌ শুনতে পেলো কি না? মেঘালয় সেটা বুঝতে পারলো না। জান্নাত মেঘালয়ের প্রশ্ন উপেক্ষা করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,

” আ-আমাকে এক গ্লাস পা-পানি দিবেন?”

মেঘালয় সেন্টার টেবিলে থাকা পানির বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
” সরি রুমে কোনো গ্লাস নেই!”

জান্নাত কিছু না বলে, ঢক ঢক করে বোতলের অর্ধেক পানি শেষ করে দিলো। তারপর শান্ত হয়ে বসলো। কিন্তু ভিতরে খানিকটা ভয়ের রেশ এখনও রয়েছে।
মেঘালয় আবারও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“কি হয়েছে বলবে না?”

” তার আগে বলুন আপনি কি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন? মানে গভীর দৃষ্টিতে!” এ কথা বলে জান্নাত বিব্রতবোধ হলো।

জান্নাতের কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো মেঘালয়। সে বিস্মিত কন্ঠে বললো,

” কেন বলতো? তোমার এমনটা কেন মনে হয়েছে? ”

” আসলে আমার দিকে কেউ গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে সেটা আমি বুঝতে পারি। এবং কিভাবে বুঝি সেটা আমি নিজেও জানি না! ”

মেঘালয় অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে বললো,

” লাইক সিরিয়াসলি!”

” হু। ”

” কথাটা একটা অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলেও, আমার কেন জানি অবাক হওয়ার পাশাপাশি ভীষণ হাসিও পাচ্ছে। প্লিজ কিছু মনো করো না! ”

জান্নাত উত্তরে কিছু বললো না। মেঘালয় আবার বললো,
” আচ্ছা আমি না হয় তোমার দিকে তাকিয়েই ছিলাম। আমিই তো তাকিয়ে ছিলাম নাকি? তুমি যখন বুঝতে পেরেছো কেউ তোমার দিকে গভীর চাহনিতে তাকিয়ে আছে,তাহলে এখন এটা নিশ্চয়ই মনে রাখা উচিৎ যে, তুমি বিবাহিত। তোমার স্বামী আছে। তারউপর তুমি বাসর ঘরে বসে আছো। তারপরও কেন তুমি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলে?” শুধু তাই নয় একরকম আমার বাহুতে খামচে ধরেছ!”

জান্নাত মেঘালয়ের কথাগুলো শুনে একটা শুকনো ডুব গিললো। ও মনে মনে আওরালো” আমার সাথে ভয়ংকর কিছু হতে চলেছিল। যার ধরন এমনটা হয়েছে। তাই বলে আপনি আমাকে কথাগুলো এভাবে বলবেন!” অভিমানে তার গালদুটো ফুলে উঠলো। ঠোঁট ভেঙে কান্না আসার উপক্রম হলো। এরমধ্যেই ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নে দেখা সেই ভয়ংকর ঘটনাটি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই ও ভয়ে কুঁকড়ে গেলো! আবারও শুকনো একটা ডুব গিললো।…..

চলবে………

ব্রিঃ দ্রঃ ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভেবেছিলাম বিকেলে পোস্ট করবো। কিন্তু লেখা শেষ হওয়ায় হাত আকুপাকু করছিলো পোস্ট করার জন্য।

বিঃদ্রঃ-২ নেক্সট, নেক্সট…এটা বলা থেকে বিরত থাকুন। এই শব্দটা খুবই বিরক্তিকর। নেক্সট আমি অবশ্যই দিবো। কাজেই একটু গঠনমূলক মন্তব্য করার চেষ্টা করবেন। এতে গল্প লিখতে আমি উৎসাহ পাবো। আর কিছু বলবো? নাহ থাক…..😒

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here