#মেঘফুল_৪
#লেখনীতে_উম্মে_সুমাইয়া_আক্তার।
___________________________________

ছাঁদে এসে দেখলো আমান আর তানভী বসে বসে সিগারেট ফুঁকছে আর গল্প করছে। মেঘালয় দুঃখীত হয়ে তাদের কাছে যেতে যেতে বললো-” সরি রে আসতে অনেক দেরি করে ফেললাম!”

তানভী সরু চোখে তাকিয়ে বললো-” কেনরে আমরা কি তোকে এখানে আসতে বলেছিলাম নাকি?

আমান মজা করে বললো-” হু, ব্রো.. বিয়ে করেছিস বৌয়ের কাছে থাকবি, রোমাঞ্চ করবি। এটাই তো স্বাভাবিক। তারউপর আজকে বিয়ে করলি, বাসর রাত বলে কথা! এখানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে না পেরে সরি বলার কি আছে!”

মেঘালয় কপাল কুঁচকে বললো-” ফালতু কথা রাখ! তোরা কি ভুলে গিয়েছিস এটা আমার দ্বিতীয় বিয়ে?”

আমান-” হু,তো কি হয়েছে?”

মেঘালয়-” কি হয়েছে মানে! আমি প্রভাকেই ভালোবাসি। এই জান্নাতকে কখনোই মেনে নিতে পারবো না। তোরা পারলে আমায় কোনো আইডিয়া দে,মেয়েটার মনে কষ্ট না দিয়ে এ কয়টা দিন কিভাবে পার করা যায়?”

তানভী বিস্মিত হয়ে বললো-“এসবের মানে কি মেঘ?”

মেঘালয় তানভীর হাত থেকে সিগারেট নিয়ে ঠোঁটে চেপে এক টান দিয়ে বললো-” মানে হলো আমি এখন অনুভূতি শূন্য। যার ফলে জান্নাতকে এখন কিংবা ফিউচারে স্ত্রীর মর্যাদা দিবো কি না এ নিয়ে কনফিউজড! এর মূল কারণ হলো প্রভার শূন্যতা এখনোও আমায় পীড়া দেয়। আমি পূর্বের কাজের জন্য অনুতপ্ত। এবং যদি তার সন্ধান পাই তো….কিছুক্ষণ থেমে গম্ভীর হয়ে বললো,” তাকে আমার জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো এবং জান্নাতকে ডিভোর্স দিবো!”

আমান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো-” তুই কি আসলেই আমাদের মেঘালয়! দিন দিন তোর রুচি কি করে এতটা করুচিপূর্ণ হতে পারলো?”

আমানের কথায় তানভী সায় দিয়ে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে মেঘালয়কে বললো-” মেঘ তুই একটা কাপুরুষ, স্বার্থপর আর লুচ্চা! এই তিনটি শব্দ কেন বললাম জানিস? কাপুরুষ বলার কারণ তুই কাপুরুষ বলেই আজ তোর আর প্রভার মধ্যে বিচ্ছেদ এবং এতটা দূরত্ব। তুই স্বার্থপর কারণ প্রভাকে ফিরে পেলে জান্নাতকে ডিভোর্স দিবি। একটা ফুলের মতো পবিত্র মেয়ের মনে কষ্ট দিয়ে কি তুই আদৌও সুখে থাকতে পারবি? পারলেও স্বার্থপর হয়ে থাকবি। কারণ এতে জান্নাতের স্বপ্ন-মন এবং ওর জীবনটা নষ্ট করে দিবি। বাকি রইলো লুচ্চা। এটা বলার কারণ প্রভাকে তোর লাইফে ফিরিয়ে না আনতে পারলে তুই জান্নাতের দিকে চোখ ফেলবি এবং অনেকটা স্বার্থপর হয়েই তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিবি!”

মেঘালয় হতাশ হয়ে বললো-“তোরা যাই বল,আমার জায়গায় হলে তোরা আমার অনুভূতিটা বুঝতে পারতি। প্রভার প্রতি এখনও আমার মায়া এবং ভালোবাসা রয়ে গেছে। আমি তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো। জানি সে আসবে না কিন্তু তাও চেষ্টা করবো। আর যদি না আসে তো আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিবো। জান্নাতকে ডিভোর্স দিবো না ওর দেখভাল করার দায়িত্ব আমার। তাছাড়া এক ছাঁদের নিচে দু’জন মানুষ একি সাথে বসবাস করবো। আল্লাহ চাইলে একসময় তো তার প্রতি সত্যিকারের মায়া,প্রেম-ভালোবাসা হয়ে যেতেও পারে। তাহলে এতে আমাকে লুচ্চা উপাধি দেওয়ার মানে কি! মানুষ কি প্রথম, দ্বিতীয়…প্রেম করে না নাকি? প্রথম প্রেমে ব্যার্থ হলে কেউ দ্বীতীয় প্রেম করে। আবার কেউ দ্বিতীয় প্রেমে ব্যার্থ হলে তৃতীয় প্রেমে সফল হয়। এটাকে তোর কি বলবি?

আমান মেঘালয়ের পিঠ চাপড়িয়ে বললো-” ঠিক বলেছিস বন্ধু। ভালোবাসা কি জিনিস সেটা আমরা বুঝি। তোর জীবনে ঐ ঝড় শুধুমাত্র তোর বাবার কারণেই এসেছে। তোর বাবা একজন মুখোশধারী শয়তান। ভীষণ ডেঞ্জারাস মানুষ।

মেঘালয় আমানের কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো-” গ্রেট! আলম আহমেদকে বাবা বলে ডাকতেও আমার ঘেন্না হয়।

তানভীও বললো-” আসলেই আঙ্কেল ভীষণ ডেঞ্জারাস। আচ্ছা মেঘ এখন তুই কি করবি?”

মেঘালয়-” জানিনা। তবে আমার কিছু সময়ের প্রয়োজন। আমার মনটাকে কিছুতেই আমি স্থির করতে পারছি না। এজন্যই বলছি জান্নাতকে কষ্ট দিতে চাই না। তোরা পারলে আমায় একটা বুদ্ধি দে? আপাতত অকে নিয়ে দোটানায় আছি!”

চকিতে আমান বললো-” আমরা আর কি বুদ্ধি দিবো। আমাদের চাইতে তোর বুদ্ধি অনেক ভালো। আশা করি তুই এমন আচরণ করবি না অথবা কিছু বলবি না যার জন্য জান্নাত কষ্ট পায়।”

মেঘালয় চিন্তিত মুখে বললো-” হু।”

তানভি মেঘালয়ের মলিন মুখটা দেখে বললো-” দোস্ত আমরা রাত এগারোটার মধ্যে চলে যাবো। চল এখন একটা মুভি দেখি তাহলে মনটা চাঙা হয়ে যাবে।”

মেঘালয় মৃদু হেঁসে বললো-” মন্দ বলিস নি। গেস্ট রুমে চল তিন বন্ধু মিলে আড্ডা দিবো আর মুভি দেখবো!

আমান ফিচেল হেঁসে বললো-” মেঘালয় মুভিটা যেন রোমান্টিক হয়!”

তিন বন্ধু আকাশ-বাতাস ভারী করে একসাথে হো হো করে হেঁসে উঠলো।

এদিকে জান্নাত একা একা বসে আছে। এশার নামাজ পড়ে মাত্র বিছানায় এসে বসেছিলো এর মধ্যেই তার হায়েজ হয়ে গেছে। তল পেটে ভীষণ ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে। আজকের তুলনায় অন্য মাসে হায়েজের ব্যাথা ভয়ংকর রকম প্রখর হতো। সহ্য করার মতো তার ধৈর্য থাকতো না। ব্যাথায় একদম অস্থির হয়ে বিছানায় কাতরাতো আর কাদঁতো। এই ব্যাথার মাত্রা কতটা ভয়ংকর একমাত্র নারী জাতিই সেটা বলতে পারবে। আজকে নতুন পরিবেশে অস্বস্তি হলেও তার ব্যাথার মাত্রা সহ্যের ভেতরে হওয়ায়, সে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানালো। তারপর মেঘালয়কে নিয়ে ভাবতে লাগলো। বিড়বিড় করে বললো,” মেঘালয়, চমৎকার একটি নাম। লোকটা দেখতে শুনতে মন্দ নয়। কিন্তু অতটা ভালোও নয় আবার ততটা খারাপও নয়। তারপর আনমনা হয়ে বললো-” আচ্ছা উনি যদি আজকেই স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চান তো? আমি কিভাবে মানা করবো! লজ্জায় তার শ্যামল বর্ণের মায়াবী মুখটা হলুদ বর্ণ হয়ে উঠছে।

চকিতে ও আঁতকে উঠে বললো-” ছিঃ ছিঃ কিসব ভাবছি আমি। আমার উপর তো উনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। কিন্তু উনি তো গাফেল হয়ে আছেন। আমি কিভাবে তাঁকে সঠিক পথটা দেখাবো।”বলে ও চিন্তিত হয়ে মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো-” ও আল্লাহ প্লিজ হেল্প মি। আমি যেন তাঁকে তোমার পথে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। তুমি আমাকে সাহায্য করো এবং উনাকে হেদায়েত নসিব করো।”

রাত সারে এগারোটার সময় আমান আর তানভী ডিনার করে মেঘালয়ের থেকে বিদায় নিয়ে যার যার বাসায় চলে গেলো। মেঘালয় একটুখানি ড্রিংকস করেছে,যার ফলে মাথা কিছুটা ঘুরছে। ও মাথা ধরে রুমে ঢুকলো। জান্নাত সালাম দিলো। কিন্তু মেঘালয়ের কান অব্দি পৌঁছলো না। সে দরজা লক করে ঝাপসা চোখে দূর থেকে জান্নাতের দিকে একবার আড়চোখে তাকালো। মেয়েটা বেনারসি পাল্টে মেরুন রঙের একটা জামদানী শাড়ী পরে আছে। ও জান্নাতের একটু কাছাকাছি আসলে জান্নাত তাকে আবার সালাম দিলো। এবার মেঘালয় উত্তর দিলো-” ওলাইকুমসালাম।”

জান্নাত মুখ ঢুকে বললো,” ছিঃ কি বাজে গন্ধ। আপনি ড্রিংকস ও করেন!” পরক্ষণে তার চোখগুলো ছোট ছোট করে বললো-” এক্সকিউজ…আপনার সালামটাও সঠিক নয়!”

মেঘালয় মুখ ভার করে বললো-” হ্যাঁ আমি ড্রিংকস করি। ভালো লাগলে থাকো না লাগলে চলে যাও। আমার এসব বিষয় নিয়ে কখনো নাক গলাবে না। আর হ্যাঁ যেটা বলতে চাইছিলাম, সঠিক সালাম কোনটা?

জান্নাত ভারী মুখে জবাব দিলো-” ওয়া আলাইকুমুস সালাম।”

মেঘালয়-” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। এবার হলো তো?”

জান্নাত কিছুটা রাগত স্বরে বললো,” হয়েছে।”

মেঘালয়-” ডিনার করেছো?”

জান্নাত-” জ্বী।

জান্নাতের এই মূহুর্তে ভীষণ অস্বস্তি আর প্রচুর লজ্জাও হচ্ছে। সে গুটিসুটি মেরে বসে রইলো। তার মধ্যে প্রবল জড়তা কাজ করছে। চকিতে মেঘালয় বললো-” তাহলে তো…বলে মেঘালয় বিছানায় বসে শার্টের বোতাম একটা একটা করে খুলতে লাগলো। জান্নাত একবার আড়ঁচোখে তাকিয়ে ঐ দৃশ্যটি দেখে শুকনো ডুব গিললো। অস্বস্তিতে তার ধম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সে বিড়বিড় করে বললো-” তার মানে আমি যা ভেবেছিলাম সেটাই…বলে ও আঁতকে উঠলো। এতক্ষণে মেঘালয় তার শার্ট খুলে বিছানায় বসেই আলনাতে ছুঁড়ে মারলো। মাথার উপর সিলিং ফ্যান চলা সত্যেও সে ঘেমে একাকার। আড়চোখে জান্নাতকে ঘামতে এবং তার শরীর কাঁপতে দেখে সে উঠে দাঁড়ালো। জান্নাতের কাছে এসে….

চলবে……

ব্রিঃ দ্রঃ ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। নেক্সট, নেক্সট বলে চিল্লাফাল্লা করবেন। নেক্সট পর্ব আমি অবশ্যই দিবো। যেটা বলছিলাম, পারলে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। বানান ভুল,বাক্য গঠনে ভুল দেখতে পেলে সেগুলো উল্লেখ করে দিবেন। আমি সেগুলো শুধরানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। জাজাকুমুল্লাহু খাইরান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here