মুনিয়ার পৃথিবী
বড় গল্প (৬ষ্ঠ পর্ব)
নাহিদ ফারজানা সোমা

এক মাস হাসপাতালে থাকতে হলো সিনথিয়াকে। কাউকে চিনতে পারতো না অবুঝ শিশুটা। খেতে চাইতো না,ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো, কখনো খিঁচুনি উঠতো, কখনো ঘন্টার পর ঘন্টা কাঁদতে থাকতো। মন্জুর হাসপাতাল থেকে ছুটি নিলো,চেম্বার বন্ধ করে দিলো অনির্দিষ্টকালের জন্য। শায়লা চেম্বার, বিশেষ করে অপারেশন বন্ধ করলো না। মেয়ের জন্য তার তেমন কিছু করারও ছিলোনা। করপোরেট হাসপাতাল, সেবা করার জন্য বহু লোক, সেই সাথে মুনিয়া আর অন্য সব স্বজন। মুনিয়াকে আরও নতুন করে চিনলো সবাই। অসম্ভব মমতাময়ী,সেবাপরায়ণ,বুদ্ধিমতী,পরিশ্রমী। আর শিশু অন্ত প্রাণ। প্রতিটা মুহূর্তে আগলে রাখতো সিনথিয়াকে। রাতেও সে থাকতো,তবে প্রায়ই মন্জুর তাকে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দিত নিজে মেয়ের কাছে থাকবে বলে।

মন্জুর শায়লাকে ডিভোর্স দেওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো। তার বাড়ির বা শ্বশুর বাড়ির বিশেষত মোর্শেদ সাহেব বা আবরারের কোন আপত্তি ছিলোনা। শায়লা একঘরে হয়ে যাচ্ছিল। মোর্শেদ সাহেব তাঁর “বড় আম্মি” র সাথে কথা বলা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। প্রায় মাস ছয়েক পরে বাপ-বেটির কথা হয়েছিলো, তাও মুনিয়ার বিরামহীন উদ্যোগে।
আবরারেরও একই অবস্থা। মন্জুর শায়লার মুখের দিকে তাকাতেও ঘৃণা বোধ করতো। সায়মা, আশফাক আর শায়লার শ্বশুরকুল নেহাত দায়ে না পড়লে ওর সাথে কথা বলতো না। একমাত্র স্বাভাবিক ছিলো মুনিয়া। এই প্রথম মুনিয়াকে ঘাটানোর সাহস করেনি শায়লা। সে খুব ভালো বুঝতে পারছিলো যে দেওয়ালে তার পিঠ ঠেকে গেছে। আর মুনিয়ার গুণগুলোকে সে অস্বীকার করতে পারছিলোনা মনে মনে।পুরো পরিবার যে এখন মুনিয়াকেন্দ্রিক, এটা বৃহত্তর পরিবারের প্রতিটি সদস্য খুব স্পষ্ট বুঝতে পারছিলো। অর্থাৎ মোর্শেদ সাহেবের পরিবার, সায়মার পরিবার, শায়লা-নায়লার শ্বশুরকুল,সব্বাই।

একমাস পরে সিনথি ফিরলো নানার বাড়িতে। তারপরে মন্জুর ডিভোর্সের তোড়জোড় শুরু করলো অত্যন্ত কঠিন ভাবে।শায়লা ব্যাপারটায় এতোটা গুরুত্ব এতোদিন দেয়নি,ভেবেছে, মেয়ের চিন্তায় মন্জুর এমন করছে, এখন সে শংকা অনুভব করলো। তাকে ডিভোর্স দিবে মন্জুর? রীতিমতো প্রেস্টিজিয়াস ইস্যু। মানুষ কি বলবে? ডক্টর শায়লাকে ডঃ মন্জুর ডিভোর্স দিয়েছেন,এই সংবাদ নিয়ে কতো মুখরোচক কাহিনী হবে হাসপাতাল আর ক্লিনিকগুলোতে! সবাই কি আলোচনা করবে জানা আছে শায়লার_” খুব ভালো করেছেন ডঃ মন্জুর। ওই ডাইনীর সাথে থাকা যায়?চেহারা এতো সুন্দর, মন এতো কুৎসিত কেন? এত নোংরা মন-মানসিকতা নিয়ে মানুষের ডাক্তারি পড়তে আসা ঠিক না। সুশিক্ষার লেশমাত্র নেই ঐ মহিলার মধ্যে। বাপ-মা ও বোধ হয় ওই টাইপের।” এসব কথাই হবে,নিশ্চিত শায়লা। মুখে সারাক্ষণ হাঁকডাক করলেও তার সম্পর্কে মানুষ কি ভাবে,তা সম্বন্ধে ভালোই ওয়াকিবহাল সে।

বাপি-মামনির এতো কঠিন রূপ শায়লা-নায়লা আগে দেখেনি।

সায়মা কথা প্রসঙ্গে বললেন,” আমি মঞ্জুরের দোষ দিইনা। আমি যদি ওর মা হতাম,মনে প্রাণে চাইতাম এমন বৌকে ডিভোর্স দিক।সব দোষ আমার।আমি মানুষ করতে পারিনি তোমাদের। তোমাদের একটাও ভালো গুণ আছে কিনা,নিজেরা ভেবে বের করোতো? ”

“আছে। আমরা সারাজীবন টপার। আমরা রেপুটেটেড ডক্টর। আমরা ইনডাসট্রিয়াস।”

“তোমরা টপার,কিন্তু সেই বিদ্যাকে তোমরা কেবল পরীক্ষার খাতাতেই উগড়ে দিয়েছো, জীবনের অন্য কোন ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারোনি। তোমরা ডক্টর কিন্তু তোমাদের রেপুটেশন নিয়ে কথা বলতে আমার ইচ্ছা হয়না। দালাল লাগিয়ে রোগী ধরে আনা, অপারেশনের দরকার নেই তবু অপারেশন করা,টাকার পেছনে পাগলের মতো ছুটে বেড়ানো, মানবতার কোন স্বাক্ষরটা রেখেছো ডাক্তার হয়ে? এমনতো নয় যে তোমাদের অনেক ক্রাইসিস। অতিরিক্ত বিত্ত-বৈভবেই তো সারা জীবন কাটালে। সৎ ভাবে উপার্জন করলে না কেন? কেন নিজের বাচ্চাদের এতোটুকু সময় দাও না?”

“এতো কথা বলছো,বাপি যখন ঘুষের টাকা এনে তোমার হাতে তুলে দিতো,তখন তোমার বা বাপির বিবেক কোথায় থাকতো?”

“নায়লা,আমিতো বলছিই,তোমাদের আমরা নষ্ট করেছি।তবে অনেক মানুষ অন্যকে দেখে শেখে, স্বশিক্ষিত হয়,তোমরা তা হতে পারলেনা।”

“তোমার বৌকে দেখে শিখতে হবে,এটাই বোঝাতে চাচ্ছো তো?”

“আমার বৌএর মতো তোমরা একদিনে হতে পারবেনা। বহু বছর সাধনা করতে হবে। যদি ওর মতো কিছুটাও হতে পারো, তোমাদের ও আমার জীবন ধন্য হয়ে যাবে।”

“বুঝলি আপি, মন্জুর ভাইকে ওই মেয়েটাই ফুসলেছে। সংসারে
ভাঙন শুরু করছে। প্রথম কারণ, এই ক্লাসটা এমনই হয়,দ্বিতীয়ত রিভেঞ্জ। নাকি নন্দাইএর সাথে অ্যাফেয়ার?আগে মন্জুর ভাইএর মাথা চিবাবে, টাকা পয়সা সব হাতিয়ে বাপের বাড়ি চালান করবে,তারপর মন্জুর ভাইকে ছেড়ে জামানকে ধরবে।”

সায়মা প্রচণ্ড চড় কষালেন নায়লার গালে। কি জঘন্য মেয়ে জন্মেছিল তাঁর পেটে। হায়,তাঁর আবরারের বউ,নিজের ভাবী সম্পর্কে কেমন করে এতো নোংরা কথা বললো মেয়েটা! এবং সেও খুব ভালো করে জানে কথাগুলোর মাঝে এক কণা সত্য নেই।

তাঁর দুই মেয়েই মুনিয়াকে ভালো করেই চিনে ফেলেছে, উপকার পেয়েছে প্রচুর,তবু তারা এতোটাই সংকীর্ণ, অন্ধ সেজে থাকতেই ভালোবাসে। চোখ খুললে যদি মুনিয়াকে ভালোবেসে ফেলে!

মন্জুর ও শায়লার প্রায় ভেঙে যাওয়া সংসারটাকে জুড়ে দিলো মুনিয়া,নীরা আর সায়মা। শায়লার বারবার ফণা তোলা বন্ধ হয়েছে কিন্তু এই মেয়ের ভেতরটা এতোটাই নিরেট, এ কখনো পুরোপুরি শুধরাবে বলে মনে হয়না। তবে এবারে পরিবারের সবার কঠোরতায় সে ভিতরে ভিতরে ঘাবড়ে গেছে বেশ খানিকটা, হাসপাতালে -ক্লিনিকেও বেশ ঝামেলা হচ্ছে, তাই নিজেকে সে সংযত রাখতে বাধ্য হচ্ছে। বোনের অবস্থা দেখে শিক্ষা হয়ে গেছে নায়লার, সে তার রাগ-ঝাল-হিংস্রতা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে প্রাণপণে। নায়লার স্বামী প্রচণ্ড বিরক্ত তার উপরে,শ্বশুর বাড়ির সদস্যরা অতি সজ্জন, কিন্তু নায়লার কাছ থেকে ক্রমাগত জটিল ব্যবহার পেতে পেতে তাঁদের মধ্যে বৌএর জন্য কোন টান অবশিষ্ট নেই। তবে সহজে এই দুই বোনের সংশোধন হবেনা,এটা মুনিয়াসহ সবাই বুঝতে পেরেছিলো। জীবনতো নাটক-সিনেমা নয় যে একটা চড় খেলাম,ওমনি সারা জীবনে করা সমস্ত পাপের জন্য অনুশোচনার আগুনে পুড়ে খাঁটি সোনা হয়ে গেলাম।

সিনথি এখন স্হায়ী ভাবেই নানার বাড়িতে থাকে। আচার-আচরণ বলতে গেলে পুরোটাই স্বাভাবিক। কথাগুলো আগে ভালো বোঝা যেতোনা,এখন জিভের আড়স্টতা কেটে গেছে অনেকটা। পড়ালেখায় মোটামুটি ভালো,তবে ছবি আঁকার হাত অসাধারণ।

আশরাফের বিয়ের জন্য অনেক সম্বন্ধ আসছে। সে ছেলে কাউকে বিয়ে করবেনা। একদিন বাড়ির সবার সামনে গলা ছেড়ে বললো,” ভাবীর যদি ডুপ্লিকেট থাকতো,তাকে চোখ বন্ধ করে বিয়ে করতাম। ভাবী যে কেন সবার ছোট হলো?আল্লাহ আমার উপরে কেন এতো অবিচার করলেন?”

সবাই হেসে ফেললো,অবশ্যই আশরাফের দুই বোন ছাড়া। আবরার বললো,” মুনিয়া, প্লিজ, ভালো করে ভেবে দেখো,তোমার কাজিন,সেকেন্ড কাজিন,থার্ড কাজিন,বন্ধু এমন কেউ আছে যার স্বভাব তোমার মতো?আরেকজন মাদার তেরেসা বা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল?”

“উঁহু দাদা, ভাবী ভাবীই, মাদার তেরেসা মাদার তেরেসাই। কারোর সাথে কারোর তুলনা করা চলেনা। ভাবী যদি মাদার তেরেসার মতো ফ্যামিলি ছেড়ে অতি বৃহত্তর মানবসেবায় বের হয়ে পড়তো, তাহলে সে মাদার তেরেসার থেকে কম খেল দেখাতো না কিন্তু। ”

নায়লা হাসতে হাসতে বললো,”তার মানে,ছোট ভাই এর জন্য মেয়ে খুঁজতে হবে যে সাধারণ বিএ পাশ,এমএ পাশ, গায়ের রং কালো,দেখতে…কি আর বলবো, এমজিপি মানে মোষ্ট গায়ে পড়া,বাবা কোন সরকারি অফিসের কেরানি….. ”

কথার মাঝখানে প্রচণ্ড চিৎকার করে ধমক দিলেন মোর্শেদ সাহেব। আশরাফ হাসিমুখে বললো,”বিয়ের প্রতি আমার আতংক তৈরি হয়েছে আমার দুই বোনকে দেখে। দুই ভগ্নিপতির বেহাল অবস্থা দেখে। তোমরাই বলো, মন্জুর ভাই-জামান ভাই এর জীবন কোন জীবন হলো?আমার ভাগ্নে -ভাগ্নীরা মায়েদের কাছ থেকে সামান্যতম কোন ভালো শিক্ষা পাবে? এইসব মায়ের বাচ্চারা স্বার্থপর, সন্ত্রাসী,চোর,ছ্যাঁচড়া হয়ে বড় হয়।বিয়ে শাদির মধ্যে আমি নেই বাবা। যদি কখনো ভাবীর মতো কোন মেয়ে পাই,তবেই বিয়ে করবো।”

রাতে আবরার মুনিয়াকে বলে,”এই সংসারে তোমার দিনগুলো শুধু অপমানের মধ্যেই কাটছে। শায়লা-নায়লা, আমার মামী-চাচীরা,কাজিনরা সুযোগ পেলেই তোমাকে যা নয়,তাই বলছে। আমাকে ক্ষমা করো।”

“বাপি-মামনি-ছোট ভাইয়া-মঞ্জুর ভাই -জামান ভাই -আমার ভাগ্নে-ভাগ্নীরা কতো ভালোবাসে আমাকে। তুমি সবসময় আমার পাশে আছো।আর কি চাই আমার? শোন, আমার ননদদের বাধ্যবাধকতা নেই আমাকে ভালোবাসার। তাঁরা আমাকে মেনে নিলে নিঃসন্দেহে আমার খুব ভালো লাগতো,কিন্তু মেনে না নিলেও বিন্দুমাত্র ক্ষতি নেই। তুমি-আমি -আমরা দুনিয়াতে এসেছি বাঁচার মতো বাঁচতে নিজেদের কাজের মাধ্যমে, কেউ ভালো না বাসলে জীবন এতোটুকু ব্যর্থ হয়ে যাবে না। এগুলো নিয়ে ভেবোনা। ভাবার জন্য হাজারটা জিনিস আছে।”

কয়েকদিন পরে মোর্শেদ সাহেব বললেন,”মুনিয়া,তোমার সিনথিয়ার বাগান আর ওল্ড হোম প্রোজেক্টের কি হলো মা?”

“এইতো বাপি,চিন্তা ভাবনা চলছে।”

“কেমন চিন্তা ভাবনা”?

” বাপি,মামনি, সিনথিয়ার বাগানে আবাসিক-অনাবাসিক দুই রকম ব্যবস্থা ই থাকবে। আমি অলরেডি শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ,
সাইকিয়াট্রিষ্ট, সাইকোথেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট সবার সাথে কথা বলেছি। আপনাদের বড় ছেলে নেট থেকে বহু ইনফরমেশন যোগাড় করেছে।সবচেয়ে বেশি সাহায্য করছেন আপনাদের দুই ডাক্তার জামাই। ফরেনার এক্সপার্টদের কাছ থেকে বিভিন্ন ওপিনিওন নিচ্ছেন, এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করছেন। মন্জুর ভাই ট্রেনিং নিতে যাবেন শীঘ্রই, সেরকম চেষ্টা ই চালাচ্ছেন।”

“আলোচনার সময় আমাদেরও ডেকো,মা।”

“স্যরি বাপি-মামনি,খুব ভুল হয়ে গেছে। এখন থেকে যেখানে,যতোটুকু আলোচনাই হোক না কেন,আপনাদের ছাড়া হবেনা।”

“আর ওল্ড হোম?”

“ওটার ব্যাপারে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ নিতে হবে। ওল্ড হোম খুব দরকার,না বাপি? কতো মানুষ আছেন,তাঁদের দুর্ভোগ সহ্য করা যায়না। ”

মোর্শেদ -সায়মা বৌএর কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

” কতো ঘটনা যে জানি। আমার এক বন্ধুর বাপ-মায়ের লক্ষ্যই ছিলো বিদেশে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া। স্ট্যাটাস মেইনটেইন করার জন্য। আমার বন্ধুরা তিন বোনই খুব সুন্দর ছিল। অনেক ভালো ভালো প্রস্তাব আসতো। উনারা রিফিউজ করতেন। পরে তিন মেয়েকে বিদেশে বিয়ে দিলেন। খালু এখন প্যারালাইজড। খালাম্মা কিডনির রোগী। ডায়ালাইসিস লাগবে,গত সপ্তাহে বলেছে। তিন বোন সেই যে গেছে, এর মধ্যে আর আসেনি। কি সব যেন প্রব্লেম। বড়জন মাঝেমাঝে টাকা পাঠায়,মেজোজন মানে আমার বন্ধু নিয়ম করে টাকা পাঠায়,কিন্তু ওর স্বামী এতে খুব অসন্তুষ্ট, কতোদিন টাকা পাঠাতে পারবে কে জানে,ছোটজন কিছুই পাঠায় না,পাঠাতে পারেনা আর কি! টাকা দিয়ে কি আর সব হয়,মামনি? খালু
বিছানায় পড়ে থাকেন, খাওয়া-বাথরুম সব বিছানায়, এসব কাজের জন্য লোক পাওয়া যায়না,খালাম্মা অসুস্থ শরীরে কি কষ্ট করে যে এসব করেন! কিন্তু এখনতো তাঁর অবস্থা আরও বেশি খারাপ। মেয়েরা কেউ আসতে পারবেনা।আত্মীয়রা এড়িয়ে চলে। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। ”

“তুমি প্রায় দেখতে যাও,তাই না মুনিয়া?”

“আমি যেয়ে কিইবা করতে পারি,মামনি,বলেন?আমি সপ্তাহে একদিন বাজার নিয়ে যাই,পুরো সপ্তাহের রান্না করে দিয়ে আসি, একটা ছোট মেয়ে আছে হেল্পিং হ্যান্ড হিসাবে, মাঝেমধ্যে ওকে খালুর কাছে বসিয়ে খালাম্মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।”

“তুমি উনাদের পাশে থেকো মা,আমরা তোমার পাশে থাকবো। দেশ থেকে সুরুজ মিঞাকে নিয়ে আসবো, তোমার খালুর দেখভাল করতে পারবে। তোমার খালাম্মার চিকিৎসার জন্য যা লাগবে,তুমি কোরো মা। একটা মিটিং ডাকো। সিনথিয়ার বাগান আর ওল্ড হোমের জন্য। আমরা বুড়া-বুড়ি বেঁচে থাকতে সবকিছু দেখে যেতে চাই। টাকা নিয়ে ভাববে না মা।আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।”

সায়মা হাসিমুখে বললেন,”সব দায় দায়িত্ব বৌমার ঘাড়ে দিওনা। আর আম্মাজান,আপনার কি করতে সাধ হয়, আমাকে বলবেন।আমি লোক দিয়ে বা নিজেই সেটা করবো।আপনার এখন দৌড়াদৌড়ি নিষেধ, বুঝেছেন?”

মুনিয়া লাল হয়ে গেলো।

“তার মানে?” একই সাথে প্রশ্ন করলেন মোর্শেদ সাহেব আর তাঁর দুই ছেলে।

“মানেটা খুবই ভালো। আজ প্রফেসর সুরাইয়ার কাছে গিয়েছিলাম আমি আর মুনিয়া।”

” কেন? কেন? কি হয়েছে তোমার সায়মা?”

আর্তনাদ করে উঠলেন মোর্শেদ সাহেব। তার পরপরই দুই ছেলে।

“কি হয়েছে মামনি? মাগো কি হয়েছে তোমার?”

সবার উৎকণ্ঠা দেখে চোখে পানি চলে এলো সায়মার। এমনিতেই আনন্দের সীমা নেই তাঁর মনে।

“মুনিয়া,কি হয়েছে তোমার মামনির?”

“মুনিয়ার মামনি খুব ভালো আছে জনাব।এখন আমাদের সবার দায়িত্ব মুনিয়াকে ভালো রাখা। চার নাতি-নাতনির নানা হয়েছো,এবারে দাদা হতে যাচ্ছো। বড় একটা ট্রিট দাও,হবু দাদা।”

মোর্শেদ সাহেব শিশুদের মতো করছেন, ড্রাইভারকে পাঠালেন
মিষ্টি কিনে সব আত্মীয়-বন্ধুর বাড়িতে পাঁচ কেজি করে পাঠাতে। রাগ ভুলে ফোন করে ফেললেন দুই কন্যাকে।

সায়মা মুনিয়াকে জড়িয়ে ধরে হাসছেন।

আবরার লাজুক মুখে সিনথিয়াকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি পুরুষ।

আশরাফ বের হয়ে গেছে ফুলের দোকানে। ভাবীর জন্য একশত গোলাপ কিনে ফিরবে সে।

“হ্যালো বেয়াই সাহেব,নানা হতে যাচ্ছেন, জানেন সে সুখবর?”
মোর্শেদ সাহেবের উদাত্ত গলা।

“বেয়াই-বেয়ানকে আমি তখনই জানিয়েছি।” সায়মা বললেন স্বামীকে।

মুনিয়া সায়মার ঘাড়ে মাথা রাখলো। মা-বাবা রওনা হয়েছেন। আজ বাবা-মা’কে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখবে সে। কাল দাদীকে দেখে আসবে।

মুনিয়াকে সায়মা বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। কি মিষ্টি মা মা গন্ধ।

বেঁচে থাকাটা ভারি সুন্দর।

সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here