“মায়ার_বাধঁন”পর্ব ৭

৭..★★★★
বিকেলের দিকে কনেকে নিয়ে বরপক্ষের সবাই চলে আসে।কনের জন্য মিষ্টি,দুধ,সেমাই রেডী করে ড্রয়িং রুমে নিয়ে এলাম।কনেকে মিষ্টি মুখ করানো হলো।এরই মধ্যে সায়ানের কয়েকজন বন্ধুরা ড্রয়িং রুমে চলে আসে কনেকে দেখতে।আমি ওদের কথাবার্তার আওয়াজ পেয়ে আলগোছ ড্রয়িং রুম ত্যাগ করে রান্নাঘরে চলে আসি। উনার বন্ধুরা একেকজন একেক মন্তব্য করছে সানাকে দেখে!উনাদের কথা শুনে আমার গা শিউরে উঠছে।উনার এক বন্ধু এবং আমার তথাকথিত এক দেবর তো বলেই ফেলল,
-ইশ ভাবি!আপনাকে তো একদম খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে!এই লাল শাড়ী,লাল লিপিষ্টিকে আপনাকে একদন অপ্সরা লাগছে।তাই তো বলি! সায়ান বিবাহিত হয়েও শালির দিকে কেনো চোখ দিয়েছিলো!আপনাকে দেখে তো আমিও ফিদা হয়ে গেছি তাহলে বেচারা সায়ান কী করবে! একে তো ওর বউ সেকেলে,আনস্মার্ট আর আপনি তো সাক্ষাৎ এক পরী।
আরেকজন তো বলেই বসল,
-শুনেন ভাবি!সায়ান আপনার আবদার পূরণ করতে না পারলে আমাদেরকে বলবেন।দেখবেন বলতেই বান্দা হাজির।
একথার পর ড্রয়িং রুমে হাসির রোল পড়ে যায়।সবার মধ্যমনি সানাও ওদের ঠাট্টার সাথে তাল মিলিয়ে ওদের সাথো খোশগল্পে মেতে উঠেছে।নতুন বউ হিসেবে ওর মধ্যে কোনো জড়তা নেই।
ড্রয়িং রুমের সব কথা আমি রান্নাঘর থেকে শুনতে পারছি।উনার বন্ধুদের কথা শুনে তো আমি
মনে মনে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ছি আর আল্লাহর কাছে সানার হেদায়েতের জন্য দোয়া করছি।
এখানে একটি কথা, যদি সানা পর্দা মেনে চলতো এবং মাহরাম পুরুষ মেনে চলতো তাহলে সে কখনো এভাবে পরপুরুষের চোখে আকর্ষনীয় হয়ে উঠতো না। এমন পরিস্থিতিও তৈরি হত না।
প্রতিটা নারীর মনে রাখা উচিত, আপনি আপনার স্বামীর কাছে আর্কষনীয় হন আর না হন কিন্ত শয়তন আপনাকে আরো আট/দশ জন পুরুষের চোখে ঠিকই আকর্ষণীয় করে তুলবে।
কারণ পর পুরুষরা সাধারণত নারীর দিকে প্রবৃত্তি ও কামভাব নিয়েই তাকায়। এর বিপরীত যে বলবে সে মিথ্যুক। কারণ, আল্লাহ তাআলা পুরুষের মধ্যে নারীর প্রতি মোহের সৃষ্টি করেছেন এবং নারীর মধ্যে দিয়েছেন পুরুষের প্রতি গভীর আগ্রহ। অধিকন্তু নারীর মধ্যে রয়েছে দুর্বলতা ও কোমলতা। ফলে নারী-পুরুষের সহাবস্থানে শয়তান স্নায়ুতন্ত্র ও অনুভূতিগুলোকে প্ররোচিত করার মোক্ষম সময় মনে করে।
নিজের রুমে এসে আমার বিয়ের দিনের কথা মনে করছি আর আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করছি।আমার বিয়ের দিনে আমার শাশুরী মা আমাকে এভাবে সবার সামনে প্রদর্শন করান নি! বিশেষ করে তো পরপুরুষের সামনে তো নয়ই।ঐদিন আমি খুব অবাক হয়েছিলাম আমার শাশুরী মায়ের আমার প্রতি এত কেয়ার দেখে!আজ তো আমার শাশুরী মা উনার রুম থেকেই বেশ বের হচ্ছেন না!নয়তো উনাদের এই নটংবাজি বের করতেন উনি।এ বাড়িতে সবাই ইসলামি নিয়ম-কানুন না মানলেও আমার শাশুরী মা যথা সম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করেন।আর সবাই তো ইসলাম মানে জুম’আর নামায,দুই ঈদের নামাজ, বৃদ্ধ বয়সে হজ্জ করা আর নাম করার জন্য লাইন বেধে যাকাত দেয়াকেই মনে করে।
উনার জন্য দ্রীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসছে।উনাকে সামনে রেখেই উনার বন্ধুরা উনার সানকে নিয়ে কত অশালীন মন্তব্য করলো আমাকে নিয়ে কত আজেবাজে কথা বললো অথচ উনি নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে আছেন।উনি দিন দিন এত পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছেন।
উনার পরিবর্তনে মনে মনে খুব কষ্ট পেলাম।চোখের পানি মুছে কুরআন মাজীদের এই আয়াতের কথা মনে করলাম,পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র বলেছেন,
“নিশ্চয়ই দুঃখের পরে আছে সুখ,,নিশ্চয়ই
কষ্টের পরে আছে স্বস্তি,, (সুরা ইনশিরাহ ৯৪,আয়াত-৫-৬)
এখন আমি যে কারনে কষ্ট
পাচ্ছি ইনশাআল্লাহ পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালা’ আমাকেএমন সুখ দিতে পারেন সেই সুখের কাছে এই দুঃখ কিছুই না।
এভাবেই কেটে গেছে এক মাস।
এই এক মাসে অনেক কিছইু পাল্টে গেছে।উনিও একেবারে পাল্টে গেছেন।প্রয়োজন ছাড়া উনি আমার সাথে কথাই বলেন না।সানা উনাকে সব সময় নজরদারিতে রাখে।আগে যদিও উনার ফজরের নামায মাঝে মাঝে মিছ হতো।তবুও অন্যান্য ওয়াক্তের নামায ঠিকই আদায় করতেন।কিন্ত এখন ফজরের নামায তো একেবারেই পড়েন না বাকী ওয়াক্তও মিছ করেন।সানা আর ভাবি সব সময় সিরিয়েল দেখা,শপিং করা আর আড্ডাতেই ব্যস্ত থাকেন।আমি রান্না করে ঘর গুছিয়ে শশুর – শাশুরীর খেয়াল রেখে যেটুকু সময়
পাই আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করার চেস্টা করি।
আজকে সকালে সায়ানের রুমে গিয়েছিলাম বাবার বাড়ি যাবার কথা উনাকে বলতে।রুমে প্রবেশ করতেই শুনলাম সানা আমার নামে শত মিথ্যে কথা দিয়ে উনার কান ভারি করছে।আমাকে দেখেই ও কথা বলা বন্ধ করে দেয়।আমি ঐ সব কথা না শোনার ভান করে উনার কাছে বাবার বাড়ি যাবার পারমিশন চাইলাম!আমার কথা শুনে উনি কিছু বলার আগেই সানা বলে উঠলো,
-আপু তুইও না!সব কিছুতেই তোর বাড়াবাড়ি।তোকে দেখে যে কেউ বলবে তুই ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানিস না অথচ আড়ালে আবধালে শাশুরীর কান আমার নামে ভারি করিস।
মা তো আমাকে দেখতেই পারেন না।বাবার বাড়ি যেতে চাচ্ছিস যা না।সব কিছু কী স্বামীকে জানিয়ে করতে হয়।তোর চোখ-মুখ দেখে মনে হচ্ছে তুই উনার থেকে একেবারেই বিদায় নিতে এসেছিস।কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে সানা ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে গেলো।আমি কিছুই না বলে চলে আসতে যাবো এমন সময় উনার ডাকে আমি পেছন ফিরে চাইলাম!
-তৈরী থেকো আমি তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে আসবো।
সায়ানের কথা শুনে
আজকে অনেকদিন পর আমার মুখে হাসি ফুটলো।উনার কথা শুনে সানা উনার সাথে প্রচন্ড ঝগড়ায় লিপ্ত হলো।আজ শুক্রবার হওয়ায় ও ওর বান্ধবীকে নাকি বলেছে সায়ানকে নিয়ে ওর বাসায় বেড়াতে যাবে।কিন্ত আমার কারনে উনি যাওয়া ক্যান্সেল করে দিলেন।সানার সাথে ঝগড়া করে উনি রুম থেকে বেড়িয়ে যান।আমি বার বার দু-জনকে বুঝাতে গিয়েও ব্যর্থ হই।


চলবে ইনশাআল্লাহ,,

লেখনিতে-জান্নাত_রুবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here