“মায়ার_বাধঁন”পর্ব ৪

৪. ★★★★
আল্লাহ তোকে কোন মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন আল্লাহই ভালো জানেন।তুই তোরই স্বামী,তোরই সাজানো সংসার আরেকটি মেয়েকে ভাগ করে দিচ্ছিস।তুই মনে করেছিস তুই যেমন দুনিয়ার সবাই তোর মতন!না রে বোকা দুনিয়ার সবাই তোর মত নয়।কোন জায়গার মেয়ে আসবে আর আমার সাজানো সংসারটা তছনছ করে দেবে।আমার সংসার ভেঙ্গে নাতি-নাতনী দেখার এত সখ নাই!আল্লাহর হুকুম হলে তোর মাধ্যমেও আমরা নাতি-নাতনীর মুখ দেখতে পারি!
শাশুরী মায়ের কথা শুনে আমি স্লান হেসে বললাম,- মা আল্লাহ আপনাকে যে মাটি দিয়ে বানিয়েছেন আমাকেও সে মাটি দিয়ে বানিয়েছেন।আমারও মা ডাক শুনতে ইচ্ছে হয়!সিয়াম আর কিয়াম যখন আমাকে ছোট মা বলে ডাকে তখন আমি অদ্ভুত একটা শান্তি পাই।
-সতীনের মেয়ে তোকে মা ডাকবে আর তুই শান্তি পাবি!না রে মা না তুই শান্তি পাবি না।
মায়ের কথা শুনে আমি দু-চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললাম,তো কী করবো মা বলতে পারো!এভাবে আমি উনাকে পিতৃ সুখ থেকে বন্ঞিত করবো!উনি আর কত অপেক্ষা করবেন!উনারও তো বাবা ডাক শুনতে ইচ্ছে করে!আমি মাতৃত্বের
সুখ অনুভব করতে পারবো কী না তা তো আমার আল্লাহই ভাল জানেন!তাই বলে উনি পাপের পথে পা বাড়াবেন আর আমি নিজের সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করে গুনাহগার হবো!তা তো হয় না মা।
আমার কথা শুনে মা কিছুটা অবাক হয়ে বললেন,তুই কীসের পাপের কথা বলছিস?আমি কিছুই বুঝতে পারছি না!
আমি নিরুপায় হয়ে মাকে সানা আর উনার ব্যাপারে সব কিছু খুলে বললাম।মা সব কিছু শুনে নিরুত্তর বসে রইলেন।
-ছিহ আমার ছেলে হয়ে ও এত নিচে নামলো কী করে!একটি সন্তানের আশায় সে পরাকীয়ায় লিপ্ত হতেও দু-বার ভাবলো না!আমারই দোষ!ওকে আমি ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারি নি।তুই আসার পর ওর কিছুটা পরিবর্তন হয়েছিলো!ভেবেছিলাম এবার বুঝি আমার সায়ান দ্বীনের পথে আসবে কিন্ত না! আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমান করে ও ওরই ভাই আর বাবার মতো অন্ধকারের পথই বেছে নিলো।
আমার আর কী করার আছে।এ পরিবারে আসার পর থেকে কম চেস্টা তো করি নি!
কথাগুলো বলে মা অঝোর ধরায় দু-চোখের পানি ফেললেন।
আমি মায়ের সামনে হাটু গেড়ে বসে উনার দু-চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,-মা আর কাদঁবেন না!আল্লাহর কাছে উনাদের হেদায়েতের জন্য সব সময় দোয়া করুন!দেখবেন আল্লাহ আপনাকে নিরাশ করবেন না।আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদের সুরা কাসাসের ৫৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
“আপনি যাকে ভালবাসেন ইচ্ছে করলেই তাকে হেদায়েত করতে পারবেন না,তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছে
হেদায়েত করে থাকেন এবং তিনিই হেদায়েতপ্রাপ্ত লোকদের সম্পর্কে ভাল জানেন,,
অবশেষে অনেক বুঝিয়ে আমার শাশুরীকে এ বিয়েতে রাজি করালাম
বাকীরা সবাই অবশ্য রাজি।
আমার শাশুরী আমার দিকে করুন দৃস্টিতে তাকিঁয়ে আছেন
হয়তো উনি ভাবছেন আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
হ্যা আমারও কষ্ট
হচ্ছে!কষ্ট হবেই বা না কেন?তারপরও আমি হাসি মুখে সব কিছু সামলাচ্ছি!ভাবছেন নিজেকে সামলানো এত সোজা!হ্যা আমার কাছে সোজাই মনে হয়।
হে আল্লাহ তুমিই ভরসা।আমি তো আমার সুখ-দুঃখ সবকিছু আল্লাহর কাছেই সমর্পন করেছি!
কারন,যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট,,(সূরা তালাক- ৬৫ঃ৩)
শাশুরী মায়ের রুম থেকে বেরুতে যাবো এমন সময় আমার বড় জা দৌড়ে এসে আমার বাবার কথা বলতেই,আমি তো পাথর বনে গেছি!
উনার পুরো কথাটি না শুনে মাকে বলে আমি বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম।
খুব কষ্ট হচ্ছে আমার বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে।এ মানুষ ছাড়া আর আমাকে বুঝার মত কে আছে।
সত্যি বলতে পৃথিবীতে বাবা আর মেয়ের সম্পর্কটা সত্যিই অন্যরকম হয়।ছোট বেলা থেকে মেয়েরা এ মানুষকে তার জীবনের অন্যতম এক
হিরো ভেবে আসে।আমার মতে আল্লাহ আর নবীর পরে মেয়েরা মনে হয় বাবাকেই বেশী ভালবাসে।বাবাকে যতটা মেয়েরা ভালোবাসতে পারে দুনিয়াতে আর কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারে না।পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর সম্পর্ক হলো বাবা-মেয়ের সম্পর্ক।
বাবার পাশে বসে বাবার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি আর দুঃচোখের পানি ফেলছি।


চলবে ইনশাআল্লাহ,,

লেখনিতে-জান্নাত_রুবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here