“মায়ার_বাধঁন”পর্ব ৩
৩.★★★★
সায়ানের ফোনে সানার কল দেখে আমি কিছুটা অবাক হয়েছি।ও তো আমাদের বাসাতেই আছে।একটু আগেই তো উনার সাথে কথা বললো!এখন আবার উনার সাথে কী দরকার!তাও আবার ফোনে!উনি ফোন হাতে নিয়ে হাসি মুখে বারান্দায় চলে গেলেন।আমি কৌতূহলী দৃষ্টিতে বারান্দার দরজার দিকে তাকিঁয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর উনি ফোনে কথা বলা শেষ করে রুমে আসেন!
-কী এমন দরকারে সানা আপনার কাছে ফোন করলো!ও তো পাশের রুমেই আছে!কাল সকালেও তো কথা বলতে পারতো!
আমার কথা শুনে উনি চিন্তায় পড়ে গেলেন।
কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর উনি আমার পাশে এসে বসে আমার হাতদুটো ধরে বললেন,-প্লিজ সাফা এ কথাটি শুনার পর তুমি কোন রিয়েক্ট
করো না!
আমি বললাম,-আগে বলুন তো কী এমন কথা!
উনি নিচের দিকে তাকিঁয়ে বললেন,আমি সানাকে বিয়ে করতে চাই!
আমি কিছুটা চমকে উঠে বললাম,-কী বলছেন আপনি!আপনার মাথা ঠিক আছে!ও আমার ছোট বোন হয়!
উনি আমার মুখের দিকে তাকিঁয়ে বললেন,-তোমার বোন বলেই তো আমি বিয়ে করতে আগ্রহী হয়েছি।
যাতে তোমরা দু-বোন ঝগড়া-ঝাটি না করে সুখে থাকতে পারো!আর আমি এ কথাও বলছি সাফা ২য় বিয়ে করলেও তুমি তোমার প্রাপ্য সম্মান পাবে আমার থেকে,আমার পরিবার থেকে!
আমি নিরবে উনার সব কথা শুনলাম।
ও এজন্যই সানার এ বাসায় আসা-যাওয়া বেড়েছে!তা আপনাদের রিলেশন কতদিন ধরে চলছে?
উনি এ কথা শুনে কিছুটা আপসেট হয়ে গেলেন।
উনি আমতাআমতা করে বললেন,
-কী বলছো তুমি!ওর সাথে আমার আবার কত দিনের সম্পর্ক থাকবে?চার বছর ধরে ওকে আমি চিনি!তাছাড়া..
আমি উনাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
– আপনি ওকে বিয়ে করবেন!একথা নিশ্চই ওকে বলেছেন।
উনি বললেন,-হ্যা বলেছি!
ও কী রাজি হয়েছে?
আমি এ প্রশ্নটি করে উনার দিকে তাকিঁয়ে আছি।
উনি মুচকী হেসে বললেন,-ও তো এক পায়ে খাড়া।
আমি উনার এ কথাটি শুনে যা বুঝার বুঝে গেলাম।
চাচাতো বোন তো বোনের মতই হয়।
আর আমার বোন আমার সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করলো।এ দুঃখ আমি কাকে দেখাবো!অবশ্য এতে উনারও কিছু দোষ আছে।আমাদের সিলেটি বাসায় একটা ডায়লগ আছে,”বিনা বাতাসে গাছের পাতা নড়ে না,বাতাস দিলেই গাছের পাতা নড়ে,, উনিও সমান দোষে দোষী।
উনার দিকে তাঁকিয়ে দেখলাম উনি ফোনে কী করছেন!
নিরবতা ভেঙ্গে বলে উঠলাম,-ওর সাথে ফোনে কথা বলা তো না হয় বাদই দিলাম!বাইরে নিশ্চই দেখাও করেন!
আগে বাইরে তেমন দেখা হতো না!এই ধরো প্রায় দুই মাস ধরে
মাঝে মধ্যে দেখা হয়!আজকেও সানা ফোন করেছিলো ওর কলেজের হোষ্টেলে কী প্রবলেম চলছিলো!এজন্য আমি গিয়েছিলাম ওর হোস্টেলে!তারপর তো ও আমার সাথে চলে এলো তোমাকে দেখতে!
আমি মনে মনে ভাবলাম,আমাকে দেখতে নয়!আপনাকে দিয়ে আমাকে এ কথা বলাতেই ওর এখানে আসা!আমি চিনি না আমার বোনকে!ছোটবেলা থেকেই ওর চোখ থাকতো আমার পছন্দের জিনিসের উপর!তাই বলে ও আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় একজনকেও ছিনিয়ে নেবে!
ভীষণ রাগ হচ্ছে আমার।কিন্তু কী করবো উনিই যেহেতু রাজি!সেখানে আমার কী বা করার আছে।আমার রাগটা একদম দেখানো যাবে না।তাছাড়া যখন নবী করীম (সাঃ)কারও ভুল কাজ কিংবা কথার কারণে রেগে যেতেন, তিনি কখনোই তা পেশীশক্তির মাধ্যমে ব্যক্ত করতেন না।বরং কোমল ভাষা ব্যবহার করতেন। এমনকি যারা তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি জানতো না তারা বুঝতেই পারতো না যে তিনি রাগান্বিত। তবে সাহাবারা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর দিকে লক্ষ্য করেই বুঝতে পারতেন তিনি রাগান্বিত।তাঁর চেহারা রক্তিম বর্ণ ধারণ করত এবং কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতো। কিন্তু বাহ্যিকভাবে ক্রোধ প্রকাশ করার পরিবর্তে তিনি শান্ত থাকতেন এবং রাগের প্রাথমিক পর্যায়েই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতেন।
রাগ নিয়ন্ত্রণ পরহেযগারীতার একটি প্রতীক। আর পরহেযগার ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন।
“তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরি করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য। যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরই ভালোবাসেন।”
[সূরা আল-‘ইমরানঃ ১৩৩-১৩৪]
.
আমি এতটাও পাষাণ নই।মনে মনে ভাবছি,এ বিয়ের মাধ্যমে যদি উনি খুশী হোন তো আমিও খুশী।উনার খুশীই আমার খুশী।বিয়ের পর একটি মেয়ের সবচেয়ে কাছের মানুষ এই স্বামীই।আর এই স্বামীর জন্য মেয়েরা সব করতে পারে।দরকার পরে তো আমি চলে যাবো উনার জীবন থেকে!তবুও উনি সুখে থাকুন!আমি তো উনাকে বাবা ডাক শুনাতে পারি নি!সানার মাধ্যমেও যদি উনি বাবা ডাক শুনতে পারেন তবে মনে হয় আমার চেয়ে খুশী আর কেউ হবে না।আমি উনাকে এই অনুভূতি থেকে বন্ঞিত করতে চাই না
-তুমি প্লিজ মা-বাবাকে এ বিষয়ে একটু বুঝিয়ে বলো। যদিও বাবা দ্বিমত করবেন না কিন্ত মাকে তো রাজি করানো যাবে না।মা তো তোমার নামে পাগল!
আমি উনার কথা শুনে স্লান হেসে বললাম,-ইনশাআল্লাহ মাকেও আমি বুঝিয়ে রাজি করাবো।উনারও তো সখ আছে ছোট ছেলের ঘরে নাতি-নাতনী দেখার!উনি তো সব সময় বড় ভাইয়ার ছেলে সিয়াম আর কিয়ামের সাথে খেলা করতে করতে আপনার জন্য আর আমার জন্য আফসোস করেন আর আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।সেদিন তো বড় ভাবি মাকে আপনার জন্য একটি মেয়ের ছবিও দেখিয়েছিলেন!কিন্ত মার থেকে কোন উওর না পেয়ে বড় ভাবি আর ঐ বিষয়ে কথা বলার সাহস পান নি।
আচ্ছা রাত তো অনেক হলো,এবার ঘুমিয়ে পরুন।তা না হলে আমার তাহাজ্জুত নামায মিস হবে।আর হ্যা আরেকটি কথা আমি মাকে যে করে হোক ম্যানেজ করে নেবো!আপনি যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের কাজটা সেরে ফেলার চেস্টা করুন।নয়তো এভাবে ওর সাথে আপনার দেখা করা,কথা বলা ঠিক হচ্ছে না!গুনাহ হচ্ছে।আপনি এখনো ওর জন্য নন মাহরাম।তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজটা সেরে ফেলুন তারপর রাত-দিন ওর সাথে কথা বলুন আমি বাধা দেবো না।
উনি আমার দিকে অবাক হয়ে থাকিয়ে আছেন! হয়তো উনি ভাবছেন একটু আগেই আমি এ কথাটি শুনে কী রিয়েক্ট করেছিলাম!আর এখন সরাসরি বিয়ে পর্যন্ত চলে গেছি!কিন্ত আমি জানি আমার ভেতরে কতখানি কষ্ট হচ্ছে।আলগোছে চোখের পানি মুছে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।জানি আজ রাত আমার আর ঘুম হবে না।
.
“কিছু কষ্ট ঝরুক না
বৃষ্টির ফোঁটার মত,
অব্যক্ত কথাগুলো থাকুক না
পুরনো ডায়রির পাতায় শত শত,
।
।
চলবে ইনশাআল্লাহ,,
লেখনিতে-জান্নাত রুবি