#মন_নিয়ে_খেলা২২
*********************
হ্যালো পূনম, শুনতে পাচ্ছিস না?
হ্যাঁ শুনছি।
আমি ভাবলাম বুঝি লাইন কেটে গেল। তোর কী হয়েছে বল তো?
কই, কিছু হয়নি তো।
উঁহু, কিছু তো একটা হয়েছে। সেদিন যখন কথা হল, তখনও কত আগ্রহ দেখালি আর এখন বলছিস, বিয়েটা পরে হবে! তুই তো পারলে সেদিনই অরণী আর অর্ণবের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলি। এখন তাহলে এই কথা বলছিস কেন?
আমরা আসলে আরেকটু সময় নিতে চাচ্ছি রে দিনা।
আরেকটু সময়? সেটা না হয় ঠিক আছে; কিন্তু তোর এতদিনের আচরণের সঙ্গে আজকের আচরণটা কেমন যেন বেখাপ্পা লাগছে। এই পূনম, সত্যি করে বল তো, কী হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে?
কেউ কিছুই বলেনি।
সত্যি?
একদম সত্যি।
উঁহু, তুই সত্যি বলছিস না; কিন্তু মিথ্যেটা কেন বলছিস, সেটা বুঝতে পারছি না। তুই আমার কাছে লুকাচ্ছিস, পূনম! আমাদের বন্ধুত্বের চল্লিশ বছর হয়ে গেল আর আজকে এসে তুই আমাকে এভাবে মিথ্যা বললি!
আমি মিথ্যা বলিনি, দিনা। বিশ্বাস কর।
দিনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আমি জানতাম এমন কিছুই হবে। আমি এখন আমার জা আর ভাসুরের কাছে কী মুখ দেখাব, তা-ই বুঝতে পারছি না।
স্যরি দিনা।
স্যরি বলিস না। তুইও আমার আপন, তাঁরাও আমার আপন। আমি ভেবেছিলাম, অরণীকে নিয়ে এসে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কটা…. থাক বাদ দে। ভাবী শুনলে একটু মন খারাপ করবে। অর্ণবের মতো ছেলেকে তো ‘না’ বলার মতো কোনও সুযোগই নেই। ভাবী যখন জানতে চাইবে কী কারণে তোরা অর্ণবকে রিজেক্ট করলি, আমি যে কী বলব, সেটাই ভাবছি।
পূনম বললেন, আমি বুঝতে পারছি দিনা। তুই একটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেছিস। আসলে হয়েছে কী, আমি তো আর বিষয়টা জানতাম না। অরণী ওর এক ক্লাসমেটকে পছন্দ করে বসে আছে। আজকালকার বাচ্চাদের কথা আর বলিস না। এরা যে কী হচ্ছে দিন, দিন!
ও আচ্ছা, এই কথা? বাহ, বেশ ভালো তো। তুই কী জানতিস না ব্যাপারটা?
সেভাবে জানতাম না। যখন জানতে পারলাম, আমি তো সঙ্গে, সঙ্গে না বলে দিয়েছি।
তারপর কী হল?
আমি না বললে কী হবে? ফাহাদ আবার মেয়ের মন বুঝে চলতে চায়। মেয়েদের কষ্ট দিতে সে রাজি না। আমি তো একদম বেঁকে বসেছিলাম। আমার দুই বোন এসেও আমাকে খুব করে বোঝাল।
ছেলের ফ্যামিলি কেমন? তোদের সঙ্গে মানাবে তো?
ঐ কথা বলে আর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিস না।
মানে কী? নুনের ছিটা হবে কেন?
আমি যা দেখতে পারি না, মেয়ে ঠিক সেই জায়গাতেই গিয়ে পড়েছে। মিডল ক্লাস ফ্যামিলি।
ওমা, তাই নাকি! শেষ পর্যন্ত কি না অরণী তোকে মিডল ক্লাসে নামিয়ে দিল! আহারে, বাচ্চাদের কারণে কী কী যে সহ্য করতে হয় আমাদের?
পূনম কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। দিনা বললেন, এদিক দিয়ে আমাদের অর্ণব একেবারে পারফেক্ট ছিল। আহারে, আমার তো মেয়েটার জন্য ভীষণ মায়া হচ্ছে। তোর মেয়ে একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে গিয়ে কীভাবে এডজাস্ট করবে, আমি এটাই বুঝতে পারছি না।
জানি না কীভাবে কী করবে। আপু আর লাবনী অবশ্য বলল, ঐসব নিয়ে টেনশন না করতে। আমাদের এত বড়ো ব্যবসা, সব তো দুই মেয়ের জন্যই।
তা অবশ্য ঠিক; কিন্তু মিডল ক্লাস লোকজনের কোনও ভরসা নেই। এরা বড্ড বেশি ফাঁকা বুলি কপচায়। আদর্শ, নীতি-ফিতি, আরও কী সব সারাক্ষণ শুনতেই থাকবি এদের মুখে। তারপর তোদের সামনে এসে এমন একটা ভাব করবে, যে দেখে মনে হবে, তারা জানি কোনখানকার লাটসাহেব! তুই কোনও সম্মানই পাবি না এঁদের কাছ থেকে।
পূনম বললেন, আমি এমনিতেই ভীষণ বিরক্ত হয়ে আছি। তুই আর কিছু বলিস না।
বলতে তো চাইনি। আপন মনে করি দেখেই তো বলছি। ওহ, আসল কথাটাই তো বলিনি। মুস্তারির মেয়ের কথা বলেছিলাম তোকে?
মুস্তারির মেয়ের কী হয়েছে?
মুস্তারির মেয়ে তো এমন প্রেম করে বিয়ে করেছিল। এক বছরের মধ্যে মুস্তারির স্বামীর কাছ থেকে আশি লাখ টাকা বের করে নিয়ে, সেই বদমাস, মুস্তারির মেয়েটাকে ডিভোর্স দিয়ে দিল।
বলিস কী! তুই না বললি প্রেমের বিয়ে?
সেটাই তো বললাম। প্রেমের বিয়ে বলেই তো ওরা এত খোঁজখবর নেয়নি। মেয়ের জেদের কারণে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। বিয়ের পর থেকেই ছেলেটা মুস্তারির বরকে নানা জায়গায় ইনভেস্টমেন্টের কথা বলে টাকা বের করে নিচ্ছিল। ছেলেটার মিষ্টি কথায় বদরুল ভাই একেবারে কাবু হয়ে পড়েছিলেন। ওর চালাকি ধরতেই পারেননি। তিনি ভেবেছিলেন, যেহেতু তাঁদের কোনও ছেলে নেই, তাই মেয়ের জামাইকেই ধীরেসুস্থে নিজের ব্যবসায় ঢুকিয়ে নেবেন। পরে বুঝতে পেরেছেন, ছেলের পুরো গুষ্টি বাটপাড়।
কী বাজে অবস্থা!
দেখিস ভাই তোরা খুব বুঝেশুনে তারপর এগোস। আজকাল বিয়ে হতে সময় লাগে; কিন্তু ডিভোর্স হতে কোনও সময়ই লাগে না। আচ্ছা শোন, আমি এখন রাখছি। তুই মন খারাপ করিস না পূনম। আস্তে, আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার শুধু একটা কথা ভেবেই খারাপ লাগছে, তোর সংসারে তোর কথার কোনও দাম থাকল না।
দিনার কথা শুনে পূনমের মনে হলো, সত্যিই তো ব্যাপারটা তা-ই ঘটল! সবাই মিলে তাঁকে কোনঠাসা করে ফেলল। সে-ও কেমন বোকার মতো এদের ফাঁদে পা দিল! সে এত সহজে রাজি হয়ে গেল! সে অরণীর সঙ্গে সাদমানের বিয়ে কিছুতেই হতে দেবে না। পূনম বললেন, হ্যালো দিনা শুনছিল?
হুম বল?
আচ্ছা শোন, তুই এখনই শিরিন ভাবীকে কিছু বলিস না। আমি একটু ভালো করে ভেবেচিন্তে তোকে কালকে জানাচ্ছি।
ঠিক আছে। তুই সময় নিয়ে ভেবে দেখ। মেয়ে তো ছোটো মানুষ, সে ভালো-মন্দ কিছু বোঝে না। ওর ভবিষ্যৎ তো তোকেই চিন্তা করতে হবে। আরেকটা কথা, তোর শুনতে খারাপ লাগতে পারে; কিন্তু কথাটা ধ্রুব সত্য। এই দুনিয়ায় কেউ কারও ভালোটা সহ্য করতে পারে না। অরণীর সঙ্গে অর্ণবের বিয়ে হোক, এটা তোর বোনরা চায় না। এ কারণেই তাঁরা তোকে জোরজবরদস্তি করে বোঝাতে চেষ্টা করছে। তুই যেন নিজেদের চেয়ে অনেক নীচের ক্লাসে মেয়ের বিয়েটা দিয়ে দিস।
তুই ঠিক বলেছিস দিনা। শোন, ছেলে-মেয়ের কবে দেখাদেখি হবে, আমি দুই-একদিনের মধ্যে তোকে ডেট জানাচ্ছি।
পরের দুইটা দিন পূনম বিষয়টা নিয়ে ফাহাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েও বললেন না। তিনি ঠিক করলেন, একবারে দেখাদেখির তারিখ ঠিক করে, ফাহাদকে বুঝিয়ে বলবেন। এখন বললে, ফাহাদ আবার বাগড়া দিয়ে বসতে পারেন।
————————–
পূনম, দিনা আর শিরিনের সঙ্গে কথা বলে আগামী বৃহস্পতিবার রাতে ছেলেমেয়ের দেখা করার বিষয়টা ঠিক করলেন। ঐদিন শুধু ফ্যামিলি মেম্বাররাই থাকবে। পূনম চেয়েছিলেন ছেলের বাড়ির লোকজন তাঁদের বাড়িতে আসুক; কিন্তু শিরিন বললেন, ঐদিনের আয়োজনটা তাঁদের হোটেলেই হোক। এর পরেরদিন না হয় তাঁরা পূনমের বাড়িতে আসবেন।
শিরিনের ফোন রেখে পূনম আবারও দিনাকে ফোন দিলেন। হ্যালো দিনা….
বল।
আচ্ছা শোন, তুই আবার ঐ ছেলেটার কথা বলে দিসনি তো?
কোন ছেলের কথা?
অরণী যে ছেলেটাকে পছন্দ করত।
আরে না। তোর কী মাথা খারাপ? এসব কেউ বলে? আজকাল ঐরকম রিলেশন সবারই থাকে। ঐসব নিয়ে একদম মাথা ঘামাস না।
ঠিক আছে।
তুই শুধু অরণীকে সামলে নিস। ও যেন আবার কোনও সিনক্রিয়েট না করে।
হুম, আমি সামলে নেব। অর্ণবের জন্য কী নেব সেদিন, বল তো?
তুই চিন্তা করে দেখ। সেদিন তো আর এনগেজমেন্ট হচ্ছে না। সেদিন জাস্ট পরিচয় হবে।
তা-ও, কিছু একটা নিতে চাই।
ঠিক আছে, চিন্তা করে দেখি কী দেওয়া যায়। রাতে কথা হবে।
আচ্ছা।
পূনম ফোন রেখে দুই হাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করলেন। অরণীকে ঐ ছেলের কাছ থেকে সরানোর পরই তাঁর শান্তি হবে। তার আগ পর্যন্ত তিনি স্বস্তি পাবেন না।
কার সঙ্গে কথা বলছিলে, আম্মু? আপুর বিয়ে ঠিক করছ নাকি?
পূনম চমকে পেছন ফিরে তাকালেন। তিনি এতক্ষণ ফ্যামিলি লিভিংয়ে বসে কথা বলছিলেন। বাসায় কেউ না থাকায়, তিনি নিশ্চিন্তমনে কথা বলছিলেন। নীলোর্মি কখন যে তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে কথা শুনেছে তিনি বুঝতেই পারেননি! নীলোর্মি কী সব কথা শুনেছে? তিনি চান না, তিনি অরণীর সঙ্গে কথা বলার আগেই নীলোর্মি গিয়ে উলটোপালটা বলে ভজঘট বাধিয়ে দিক। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, তুমি কখন এসেছ?
নীলোর্মি ঘড়ি দেখে বলল, আঠারো মিনিট আগে।
মানে কী? তুমি এতক্ষণ ধরে এখানে কী করছ? তুমি আমার কথা শুনছিলে? পেছন থেকে অন্যের কথা শোনার এই স্বভাব কবে গ্রো করল?
আম্মু, তুমি এত ইন্টারেস্টিং টপিকে কথা বলছিলে, যে না শুনে পারলাম না। তুমি কী আপুকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছ, আম্মু?
জোর করে বিয়ে দেবো কেন? অরণীর সঙ্গে কথা বলেই সবকিছু করব।
আম্মু একটা কথা বলব?
কী?
আম্মু, তুমি না পাগল হয়ে যাচ্ছ।
কী বললে তুমি? পূনম চিৎকার করে উঠলেন।
নীলোর্মি বলল, আমি বলেছি, তুমি পাগল হয়ে যাচ্ছ। আমরা ভালো থাকি, এটা তুমি চাও না। আপু যে এতবার করে বলছে, ও সাদমান ভাইয়াকে ভালোবাসে, কথাটা তুমি বুঝতে পারছ না?
নীলোর্মি, তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছ।
আমি বাড়াবাড়ি করছি?
অবশ্যই করছ। বুয়েটে ভর্তি হওয়ার সময় থেকেই দেখছি, মুখে যা আসে, তা-ই বলে ফেলছ। তোমাকে আমি সাবধান করে দিচ্ছি, আমার সঙ্গে আর কখনও এভাবে কথা বলবে না।
আম্মু, প্রথম কথা হল, আমি কোনও বাড়াবাড়ি করিনি। বাড়াবাড়ি তুমি করছ। আমি শুধু ক্রিয়ার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। আর দ্বিতীয় কথা হল, তুমি আসলেই পাগল হয়ে যাচ্ছ। সেদিন খালামনিরা তোমাকে এত করে বোঝালেন আর তুমিও তাঁদের সঙ্গে সব কথায় হ্যাঁ বললে। তাহলে আজকে কেন আবার অন্য ছেলের সঙ্গে আপুর বিয়ের কথা বলছ? তোমার কী মনে হচ্ছে না, এটা এক ধরণের মানসিক অসুস্থতার লক্ষ্মণ?
নীলোর্মি….
পূনমের চিৎকারে নীলোর্মি চমকে উঠলেও, বিষয়টা সে পাত্তা দিল না। যেদিন তার ভয় কেটে গেছে, সেদিনের পর থেকে পূনমের কোনও কথাতেই ওর কোনও ভাবান্তর হয় না। একটা বিষয় নীলোর্মি খুব ভালোভাবে বুঝে গেছে, এই পৃথিবী হচ্ছে শক্তের ভক্ত আর নরমের যম। একবার যখন ভয় কাটিয়ে ফেলতে পেরেছে, সে আর কিছুতেই নরম হবে না। নীলোর্মি ওর রুমের দিকে যেতে যেতে বলল, আমি আপুকে এখনই সব বলে দিচ্ছি।
পূনম মেয়েকে কিছু বললেন না। সে এখন যা খুশি বলুক। তিনি রাতে ঠান্ডা মাথায় অরণীকে বুঝিয়ে বলবেন।
———————
পূনম, অরণীর রুমে যাওয়ার আগেই অরণী তাঁর রুমে এসে ঢুকল। পূনম, দিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। মেয়েকে দেখে ফোন রেখে বললেন, বসো।
অরণী, পূনমের মুখোমুখি সোফায় বসে সরাসরি প্রশ্ন করল, আম্মু, নীলোর্মি কী বলছে এসব?
কোন সব?
আম্মু, তুমি কেন এমন করছ? তোমার সমস্যা কোথায়?
পূনম মেয়ের কথায় মোটেও রাগ করলেন না। তিনি অরণীর হাত ধরে বললেন, জীবনটা কিন্তু ভীষণ কঠিন। তোমরা এত সহজে এতগুলো বছর পার করে এসেছ কারণ, আমরা তোমাদেরকে কোনোরকম দুঃখ-কষ্ট ফিল করতে দিইনি। আমি আর তোমার বাবা সবসময় তোমাদের দুইজনের ভালো চাই। তোমরা যদি এখন সঠিক মানুষটাকে বেছে নিতে না পার, ভবিষ্যতে তোমরাই বিপদে পড়বে।
অরণী ভ্রু কুঁচকে বলল, আর সেই সঠিক মানুষ মাপার প্যারামিটারটা কী?
আমি যে ভুলগুলো দেখতে পারব, বয়সের কারণে তুমি সেই ভুলত্রুটিগুলো দেখতে পারবে না। জীবন নিয়ে তোমার চেয়ে আমার অভিজ্ঞতা অনেক বেশি।
অরণীর আজ এমনিতেই মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। সে আজকে সাদমানকে একটা শার্ট কিনে দিতে চেয়েছিল। সাদমান কিছুতেই শার্টটা নিতে রাজি হল না। সেটা নিয়েই তাদের মধ্যে রাগারাগি আর মনোমালিন্য হল। শেষে কথা বলা বন্ধ করে যে যার বাড়িতে চলে এসেছে। বাসায় ফিরে নীলোর্মির কাছে সবকিছু শুনে মেজাজটা আরও তাতিয়ে গেছে৷ এই মুহূর্তে পূনমের সব কথাই তার কাছে বিষের মতো লাগছে। পূনম আরও কী সব বলছিলেন, অরণী খেয়াল করেনি৷ হঠাৎ সে অধৈর্য হয়ে বলল, আম্মু তোমার কথা শেষ হয়েছে?
পূনম কথা থামিয়ে বললেন, কী ব্যাপার, তুমি এত বিরক্ত হয়ে যাচ্ছ কেন? তুমি কী বুঝতে পারছ আমি কী বলছি? বৃহস্পতিবারে আমরা যাচ্ছি।
আম্মু, আমি কারও সঙ্গে দেখা করতে কোথাও যাচ্ছি না। তুমি একটা কথা শুনে রাখো, সাদমানকে তুমি যতভাবেই সরানোর চেষ্টা করো না কেন, আমার লাইফ থেকে সাদমানকে সরাতে পারবে না।
ভালোভাবে বোঝাচ্ছি দেখে কী তুমি আমার কথার গুরুত্ব দিচ্ছ না? তুমি কী জানো না, আমি যা চাই, তা করে ছাড়ি। যা বলছি, চুপচাপ শোনো। লাইফে যদি ভালো থাকতে চাও, এসব ফালতু ছেলেপেলের কাছ থেকে সরে আসো।
লাইফে ভালো থাকা তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে, আম্মু? তুমি জানো ভালো থাকা কাকে বলে? তুমি কোনোদিন আমার বাবাকে ভালো থাকতে দিয়েছ? তোমার ভালো থাকা হচ্ছে শো-অফ করা, তোমার কাছে ভালো থাকা মানে শেষ পর্যন্ত নিজের জেদ আঁকড়ে ধরে বসে থাকা। এবাড়িতে আমরা চারজন মানুষ থাকি। আমরা চারজন শেষ কবে একসঙ্গে প্রাণ খুলে হেসেছি, বেড়িয়েছি, বলতে পারো আম্মু? আমরা দুইবোন বরং কুলসুম খালা, পুতুল আর অখিল কাকুর সাথে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ নিয়ে মিশি।
অরণী, তুমি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছ কেন? তোমার কী মাথায় সমস্যা?
হুম, আমার মাথায় সমস্যা। তোমার মাথার সমস্যাগুলো ডালপালা মেলে এখন আমাদের মাথায় আসতে শুরু করেছে।
পূনমের যে কী হল মেয়ের কথাটা শুনে, নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেন তিনি। উঠে দাঁড়িয়ে সজোরে এক চড় বসিয়ে দিলেন মেয়ের মুখে।
অরণী এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল না। সে কিছুক্ষণ নড়াচড়া করতে পারল না। একটু ধাতস্থ হওয়ার পর সে পূনমের রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে এসে ঢুকে, দরজা বন্ধ করে দিল।………………….