#মন_নিয়ে_খেলা(১৯)
***********************
ফাহাদের অপারেশন ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। অপারেশন শেষে কিছুদিন বেড রেস্টে থাকার পর ফাহাদ আর পূনম দেশে ফিরে এসেছেন। মাঝখানে অবশ্য তাঁদের দুই মেয়ে কয়েকদিনের জন্য বাবা-মা’র কাছে এসেছিল। পরীক্ষা চলতে থাকায় তারা দুইবোন বেশিদিন সিঙ্গাপুরে থাকতে পারেনি।
দেশে ফেরার পরও ফাহাদ বেশিরভাগ সময় বাসায়ই থাকছেন। অফিসের কাজকর্মের বেশিরভাগ অনলাইনে আর ফোনে কথা বলার মাধ্যমে সেরে নিচ্ছেন। আপাতত গাজিপুরে ফ্যাক্টরিতে যাচ্ছেন না তিনি৷ তেজগাঁওয়ের অফিসে দুইদিন পর ঘন্টাখানেকের জন্য যান। বাকি কাজ অফিসের লোকেরাই সামলে নিচ্ছে।
অরণী গতকাল রাতে ফাহাদকে বলে রেখেছিল, আজ তার বন্ধুরা ফাহাদকে দেখতে আসবে। ফাহাদ জিজ্ঞেস করেছিলেন সাদমান আসবে কি না। অরণী সম্মতিসূচক মাথা নেড়েছিল। ফাহাদ বুঝতে পেরেছিলেন, মেয়ে খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সাদমানকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়ে আসছে। তিনিও মনে মনে ছেলেটাকে দেখতে চাচ্ছিলেন। তাঁকে দেখতে আসার উপলক্ষ্যে সাদমানকেও দেখা হয়ে যাবে আর পূনমও কিছু বলতে পারবে না। এটা মনে হয়ে ফাহাদের বেশ নির্ভার লাগল।
শেষ বিকেলে অরণীর বন্ধুরা এসে হাজির হল। সাদমান ছাড়া নিয়ন, ইহান, লুবনা আর নামিরা আছে দলে। সাদমান এর আগে কয়েকবার এই বাড়িটার সামনে দিয়ে ঘুরে গেছে। ট্রিপ্লেক্স বাড়িটা বাইরে দিয়ে দেখতে যতটা সুন্দর, ভেতরে তারচেয়ে বহুগুণ সুন্দর। রুচিশীল আর অ্যান্টিক জিনিসপত্র দিয়ে প্রতিটা ফ্লোর সাজানো। বাড়িতে অতিথি এলে সাধারণত একতলার লিভিংরুমে বসানো হয়। তবে ফাহাদ অরণীকে বলেছিলেন, ওদের যেন উপর তলার লিভিংরুমে বসানো হয়। উপরতলার লিভিংরুমে একদম কাছের আত্মীয়রা আসলেই বসানো হয়। ওরা আসার পর দোতলার লিভিংরুমে বসেছে। রুমের দেওয়াল আর দরজা-জানালা থেকে শুরু করে প্রতিটা জিনিস দুধ সাদা রঙের। আভিজাত্যের পাশাপাশি স্নিগ্ধ একটা ভাব ছড়িয়ে আছে রুমের প্রতিটি কোনায়। অরণীর বন্ধুরা রুমের ইন্টেরিয়রের খুব প্রশংসা করল। সাদমান জানতো অরণীরা অনেক ধনী। যদিও অরণীর বেশভূষায় আর আচরণে কখনও বড়োলোকি ভাব ফুটে ওঠেনি। সাদমান জানে অরণীর বাবার বিশাল ব্যবসা আছে। তবে আজ এখানে আসার পর সাদমানের কাছে মনে হল, অরণীদের সঙ্গে তাদের আর্থসামাজিক পার্থক্যটা অনেকটাই বেশি!
অরণী এসে সাদমানের পাশে বসে জিজ্ঞেস করল, তুমি এত চুপচাপ কেন? কিছু হয়েছে?
সাদমান মৃদু হেসে বলল, না কিছু হয়নি।
তাহলে এত চুপ হয়ে গেলে কেন? ভয় পাচ্ছ?
কিছুটা।
কেন! বাবাকে ভয় পাবার কিছু নেই। আমার বাবা একদম অন্যরকম।
আন্টিও তো আছেন, তাই না? আন্টি কিছু বলেন কি না, তাই ভাবছি।
আম্মুকে ভয় পেয়ো না। আমি আছি তো। অরণী আলতো করে সাদমানের হাতটা ছুঁয়ে দিয়ে বলল।
বন্ধুরা আসার পর অরণী, ফাহাদকে জানিয়ে তারপর বন্ধুদের কাছে এসেছিল। সাদমানদের আসার কথা পূনম আগে থেকে জানতেন না। ফাহাদ মেয়ের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে পূনমের রুমে এলেন। পূনম সিনেমা দেখছিলেন। ফাহাদকে দেখে বললেন, কিছু লাগবে?
উঁহু।
বসো। চা দিতে বলব?
চা পরে খাবো। আমি অরণীর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। তুমিও এসো। ওরা দোতলার লিভিং রুমে বসেছে।
অরণীর বন্ধু মানে? কারা এসেছে?
অরণীর ক্লাসমেটরা৷
হঠাৎ?
আমার অপারেশনের কথা শুনে দেখা করতে এসেছে। আমি যাচ্ছি, তুমি এসো।
ঐ ছেলেটা….
ফাহাদ জানতেন, পূনম এই প্রশ্নটা করবেনই। তিনি বললেন, সাদমানও এসেছে। পূনমকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফাহাদ রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
ছেলেমেয়েরা আড্ডায় ব্যস্ত, এমন সময় ফাহাদ এসে রুমে ঢুকলেন। সকলে উঠে দাঁড়িয়ে ফাহাদকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করল। ফাহাদ বেশ কিছুক্ষণ সবার সঙ্গে গল্প করলেন। নিয়নকে জিজ্ঞেস করলেন, পাশ করে কী করতে চায়। নিয়ন জানালো, পাশ করেই সে বিসিএস দেবে। ফরেন সার্ভিসের প্রতি তার দুর্বলতার কথাও জানালো। সাদমানকে জিজ্ঞেস করলে সে জানালো, তার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার খুব ইচ্ছা। রেজাল্টের পর বোঝা যাবে তার ইচ্ছার কতটা প্রতিফলন হয়। ফাহাদ, সাদমানকে বললেন, একদিন আমার অফিসে চলে এসো। তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলা যাবে।
সাদমান বলল, জি আংকেল, আসব।
হতে পারে শ্বশুর-জামায়েই কথা শুনে বন্ধুরা সবাই চোখাচোখি করল। সবার মুখেই মৃদু হাসির ঝিলিক।
পূনমকে রুমে ঢুকতে দেখে সবাই আবারও উঠে দাঁড়াল। পূনম একে একে সবার নাম জানতে চাইলেন। সাদমান নাম বলতেই পূনম বললেন, তুমি সাদমান?
অরণী আর সাদমান চোখাচোখি করল। পূনম যদিও অখিলকে দিয়ে খোঁজখবর নিয়ে সবকিছুই জেনে বসে আছেন, তবু আবারও নতুন করে সব জিজ্ঞেস করলেন। ফাহাদ দেখলেন পূনমকে না থামালে তিনি সাদমানকে জেরার পর জেরা করতেই থাকবেন। বিষয়টা এখানেই থামানো প্রয়োজন। তিনি পূনমকে বললেন, চলো আমরা উপরে যাই। ওরা বন্ধুরা মিলে খাওয়াদাওয়া করুক, আড্ডা দিক।
পূনম আরও কিছু প্রশ্ন করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু ফাহাদ তাঁকে একপ্রকার জোর করেই রুম থেকে বের করে নিয়ে গেলেন। ফাহাদ-পূনম রুম থেকে চলে যাওয়ার পর, পুতুল, অরণীকে ফোন করে জানালো ডাইনিং রুমে খাবার দেওয়া হয়েছে।
অরণী ওর বন্ধুদের নিয়ে ডাইনিং রুমে চলে এল। টেবিল ভরা খাবার দেখে নিয়ন বলল, এত আয়োজন! এগুলো কখন খেয়ে শেষ করব? আচ্ছা অরণী, যদি খেয়ে শেষ করতে না পারি, পার্সেলের ব্যবস্থা করা যাবে? বেশি কিছু না, আমি ঐ রেশমি কাবাব আর….
নিয়নকে থামিয়ে দিয়ে ইহান বলল, নিয়ে যাওয়ার কথা পরে চিন্তা করিস, আমরা খেতে শুরু করলে, তুই ঠিকমতো ভাগে পাবি কি না, সেটা আগে চিন্তা কর।
দোতলার এই ডাইনিং রুমে মোটামুটি নিঃশব্দে খাওয়াদাওয়া চলে। তবে আজকে রুমটা বন্ধুদের আনন্দ-আড্ডায় গমগম করছে। সাদমান যদিও এতক্ষণ চুপচাপ ছিল, পূনমের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর ওর ভেতরের টেনশন কিছুটা হলেও কেটে গেছে। সে-ও সবার সঙ্গে হৈ-হল্লায় যোগ দিল।
———————
পূনম ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসছিলেন। গতকাল তিনি মেয়েকে কিছু না বললেও, আজ অরণীকে রুমে ডেকে পাঠালেন। অরণীকে পূনমের রুমে যেতে দেখে নীলোর্মি বলল, সাদমান ভাইয়ার বিষয় নিয়ে আম্মু আজকে তোমাকে ধরবে মনে হচ্ছে। আপু তুমি যাও। আমি আসছি৷
অরণী রুমে ঢুকলে পূনম বললেন, বসো।
অরণী বসার পর পূনম বললেন, ছেলেটা বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছে! তাকে বাসায় ঢোকানোর আগে তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনও মনে করলে না!
আম্মু আমার বন্ধুরা বাবাকে দেখতে এসেছিল। সাদমানও আমার বন্ধু। ওর জন্য আলাদা করে পারমিশন নিতে হবে কেন?
অরণী তুমি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছ?
কোন বিষয়?
এখন যে তুমি প্রতিটা কথায় আমাকে পালটা প্রশ্ন করো? আগে এটা করতে না।
আম্মু, আগে এমন কিছু করার প্রয়োজন পড়েনি৷
নিজে এখন পার্থক্যটা বুঝতে পারছ তো?
কী পার্থক্য?
ঐ ছেলের সঙ্গে মেলামেশার পর থেকে তুমি কতটা বেয়াদব হয়েছ।
আম্মুর, ঐ ছেলে, ঐ ছেলে বলছ কেন? ওর নাম সাদমান।
তার নাম দিয়ে আমার কিছু যায়-আসে না। এর আগে এই বিষয় নিয়ে তোমার সঙ্গে যত কথা হয়েছে, সব বাদ দিলাম। এখন আমি সিরিয়াসলি কিছু কথা বলব। আমি চাই তুমিও কথাগুলো সিরিয়াসলি নেবে। বুঝতে পারছ?
অরণী উত্তর না দিয়ে পূনমের চোখে চোখ রাখল। পূনম বললেন, এতদিন যা করেছ, না করেছ, সব বাদ দিলাম। আমি এটাকে তোমার টাইমপাস ধরে নিচ্ছি। ওসবকিছু একদম ভুলে যাও। আমি কী তোমাকে অর্ণবের কথা বলেছিলাম?
কে অর্ণব?
তোমার দিনা আন্টির ভাসুরের ছেলে। অর্ণব ডাক্তার। ও এখন চায়নায় আছে। ওখানে পিএইচডি করছে।
তার কথা শুনে আমি কী করব?
তার কথা শুনে তুমি নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করবে। আমরা অর্ণবের সঙ্গে তোমার বিয়ের কথা ভাবছি।
অরণী ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আম্মু তুমি কী আমার সঙ্গে মজা করছ?
মজা তো তুমি আমাদের সঙ্গে করেছ। নিজের ক্লাস ভুলে গিয়ে, যার-তার সঙ্গে…. বাদ দাও। আমি ঐ ছেলেটাকে নিয়ে কোনও কথা বলতে চাচ্ছি না। আমার যা বলার, আমি স্পষ্ট করে তোমাকে বলে দিলাম। অর্ণবের আরও আগেই দেশে আসার কথা ছিল। কাজের চাপে আসতে দেরি হয়ে গেল। ও আগামী মাসের ফার্স্ট উইকে আসছে। অর্ণবের মা’র সঙ্গে আমার কথা হয়ে গেছে। অর্ণব আসলেই আমরা আর দেরি করব না। ও আসার পরপরই বিয়েটা দিয়ে দিতে চাই।
অরণীর যে হঠাৎ কী হল, কে জানে! সে আজ পর্যন্ত যা করেনি, আজ ঐ কাজটাই করল। চিৎকার করে বলল, তুমি কী আমার সঙ্গে মজা করছ আম্মু? তুমি বুঝতে পারছ না আমি কী বলতে চাচ্ছি?
পূনম অবাক হয়ে বললেন, তুমি আমাকে ধমক দিয়ে কথা বলছ!
আমি সাদমানকে ভালোবাসি। আমার তোমার মতো মুড সুইং এর সমস্যা নেই। এখনই একটা সিদ্ধান্ত নিলাম আর একটু পরই সেটা থেকে সরে গেলাম। এখনই কাউকে ভালো লাগল। পরক্ষণেই তাকে ভুলে গিয়ে আরেকজনকে ভালো লেগে যাবে। অর্ণব না কী যেন ওনার নাম, তাকে নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই। তুমি আর কখনও এমন কোনও কথা আমাকে বলবে না। প্লিজ।
পূনম কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, তখনই নীলোর্মি রুমে ঢুকল। অরণীর দিকে তাকিয়ে বলল, আপু তুমি চিৎকার করছিলে নাকি? কী হয়েছে আপু?
পূনম বললেন, এই গাধা মেয়েকে নিয়ে বুঝিয়ে বলো, সে যা চাচ্ছে, তা কখনোই হবে না।
নীলোর্মি না বোঝার ভান করে বলল, তুমি কী চাচ্ছ আপু?
পূনম বললেন, আগামী মাসে অর্ণবের সঙ্গে তোমার বোনের বিয়ে, এটা তাকে ভালো করে বুঝিয়ে দাও।
নীলোর্মি বলল, আপু তোমার বিয়ে! কিন্তু ভাইয়ার নাম তো সাদমান।
পূনম চিৎকার করে উঠলেন, আমার সঙ্গে মজা করছ তুমি? তোমার এত বড়ো সাহস?
নীলোর্মি বলল, আম্মু মজা তো তুমি আমাদের সঙ্গে করছ। তুমি জানো আপুর সঙ্গে সাদমান ভাইয়ার রিলেশন আছে। তারপরও তুমি কোত্থেকে আরেকজনকে এনে হাজির করেছ। এই মজাটা তুমি কেন করছ?
আমি মজা করছি!
অবশ্যই তুমি মজা করছ। আপু যদি রাজি না হয়, তুমি তাকে কীভাবে বিয়ে দেবে, বলো তো আম্মু? জোর করবে নাকি?
আমি যদি রাজি না হই, তাহলে অরণী ঐ ছেলেকে বিয়ে করতে পারবে?
কোন ছেলে?
তুমি জানো না কার কথা হচ্ছে?
সাদমান ভাইয়া? তুমি ওর নাম না বলে “ঐ ছেলে, সেই ছেলে” এভাবে বলছ কেন? তুমি বিয়ে না দিলে, ওরা নিজেরাই বিয়ে করে ফেলবে। সাদমান ভাইয়ার বাসার সবাই আপুকে অনেক পছন্দ করে।
ছোটো মেয়ের কঠিন কথাগুলো পূনম নিতে পারছিলেন না। তিনি হঠাৎ অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। চিৎকার করে বললেন, আমার সঙ্গে ফাজলামো শুরু করেছ তোমরা? কে তোমাকে কথা বলতে বলেছে? আমি অরণীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। তুমি মাঝখান দিয়ে কথার মধ্যে ঢুকলে কেন?
অরণী, নীলোর্মির হাত ধরে বলল, নীলোর্মি তুমি চুপ করো। আম্মু আমি তোমাকে স্পষ্ট করে বলছি, আমি সাদমান ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করব না। তুমি যদি তেমন কোনও চেষ্টা করো, সেটা ভালো হবে না। আমি তোমাকে আগেই বলে দিচ্ছি।
তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ?
আমি শুধু আমার কথাটা বললাম। এখন তুমি কী করবে, সেটা তোমার ব্যাপার।
অরণী তুমি কী আমাকে চ্যালেঞ্জ করছ?
আম্মু বিষয়টাকে তুমি যেভাবে দেখো, সেটা একদম তোমার ব্যাপার। নীলোর্মি চলো।
দুই মেয়ে এভাবে মুখের ওপর কথা বলে, তাঁকে অপমান করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল, বিষয়টা পূনম হজম করতে পারছেন না। ফাহাদের আস্কারা পেয়ে মেয়ে দু’টো এভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁর সমস্ত রাগ স্বামীর ওপর গিয়ে পড়ল। স্বামীর সঙ্গে বোঝাপড়া করার জন্য রুম থেকে বের হয়েও, পূনম রুমে ফিরে এলেন৷ তাঁকে নতুন করে প্ল্যান করতে হবে। তাঁর নাম পূনম চৌধুরী। এত সহজে তিনি হার মানবেন না।…………