#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – ১৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
______________________________
রাত থেকে আহনাফের প্রচন্ড সর্দি-জ্বর। চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। নাকের পাটা লাল টকটকে। ফর্সা গরণে লালের আভাস বেশ চোখে পড়ছে। আহনাফের মা ছেলের অসুস্থতায় বেশ ব্যস্ত আছেন। এই গরম পানি করে দেন, এই ভাপ দেওয়ান, ঔষুধ পত্র ঠিকমত খাচ্ছে কি না খেয়াল রাখছেন। একা হাতে সবকিছু সামলে হাপিয়ে উঠেছেন তিনি। আহনাফের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন। আহনাফের চোখ বুজে। তিরতির করে কাপছে রক্তিম রঙের ঠোঁট। কপালে হাত রাখা যাচ্ছে না। বোধ করি পুড়ে যাবে হাত। জ্বরের মাত্রা সময়ের তালে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আহনাফের মা চোখের জল মুছেন। টাওয়াল আবারও পানিতে ভিজিয়ে আহনাফের কপালে রাখেন। একে একে মা’সুলভ অভিযোগ করেন,
–’ বৃষ্টির পানি সহ্য হয় না তো ভিজেছিস কেন? সবসময় তোর বাড়াবাড়ি। জানিস এক ফোঁটা পানি মাথায় পড়লে তোর সর্দি হয়, জ্বরে গা পুড়ে যায়। তবুও বেখায়ালি সবসময়। তোর বাবা এসব দায়িত্ত্ব থেকে ছুটি নিয়ে ভালো আছেন। আমার হয়েছে যত জ্বালা। দেখি, থার্মোমিটার মুখে রাখতে দে। ‘
আহনাফ মৃদু হা করে। আহনাফের মা মিসেস শেখ আহনাফের মুখে থার্মোমিটার রেখে পারদ পর্যবেক্ষণ করেন। ১০২° জ্বর। জ্বর কমছে না কেন? ছেলেটার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। শুকিয়ে এটুকু হয়ে আছে। ইশ!
আহনাফের মা চোখের জল মুছতে ব্যস্ত। আবারো ঔষুধ বের করে আহনাফকে ধরে খাওয়ালেন। আহনাফ মায়ের ব্যস্ততা দেখে বিড়বিড় করল,
–’ আ-আমি ঠ-ঠিক হয়ে যাব। খা-খামোকা ব-ব্যস্ত হচ্ছ। ‘
–’ হ্যাঁ। আমি যা করি সব তো তোর কাছে খামোমাই মনে হয়। চুপ করে বসে থাক। আর একটাও কথা বলবি না। বাজে ছেলে। ‘
আহনাফের আর উত্তর দেয়ার শক্তি নেই। সে চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করে। ঘুম আসছে না। সারা গায়ে অসহ্য এক ব্যথা কিলবিল করছে। আহনাফের মা বলেন,
–’ বাবা, মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। একটু ঘুমা? ‘
আহনাফ মাথা নাড়ায়। আহনাফের মা মাথায় বিলি কেটে দেন। আহনাফের ঘন চুলে মায়ের হাত যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। আহনাফের মা মনের সুখে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন। মায়ের হাতের জাদু আছে। এই যে আহনাফের দু চোখে ঘুম নেমে এল। কেন এলে? মায়ের হাতের জাদুর জন্যে নিশ্চয়ই।
যার মা জীবিত আছেন, সে এই পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তার কাছে জাগতিক সকল সুখ আছে, শান্তি আছে। মা হলেন জগতের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
আভা পড়ছে। বৃষ্টিতে ভিজে তার অবস্থাও খুব একটা ভালো নেই। একটু পরপর হাচি দিচ্ছে। আভার মা মেয়ের টেবিলে গরম দুধ রাখলেন। বললেন,
–’ বৃষ্টি দেখেছিস তো ভিজেছিস কেন? তারাদের বাসায় ছাতা ছিল না? বাসা থেকে ছাতা নিয়ে বেরুলেই তো পারিস। সবসময় তোর বাড়াবাড়ি। নে, গরম গরম দুধ খা। শরীর ভালো লাগবে। খেয়ে পড়।’
আভা ঠোঁট উল্টে মায়ের দিকে চাইল। আভার মা গরম চোখে মেয়ের দিকে চেয়ে আছেন। আভা ঢোক গলাধঃকরণ করল। চুপচাপ দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে খেতে লাগল। আভার মা বিড়বিড় করতে করতে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। আভা খালি গ্লাস টেবিলে রাখল। আড়চোখে সেলফোনের দিকে চাইল। না, এখনো আহনাফের কোনো কল আসে নি। সে কি বাসায় পৌঁছেছে? কোনো কাজে আটকে গেছে। বলেছে তো বাসায় গিয়ে কল করবে। অথচ এখনো……
আভা ফোন হাতে নিল। আহনাফ কল করে নি তো কি হয়েছে। আভা করবে? দুজনের একজনকে সবসময় এগিয়ে থাকতে হবে। আভা কল করল আহনাফের নাম্বারে। দুবার রিং বাজতেই কল রিসিভ হল। আভা বলল,
–’ হ্যালো। ‘
–’ হ্যালো, কে? ‘
মেয়েলি কণ্ঠ শুনে আভা চমকে গেল। আহনাফের মোবাইল কার কাছে?
–’ আমি আহনাফের মা। আহনাফ ঘুমাচ্ছে। পরে কল করো। ‘
– ‘ জ্বি আচ্ছা। ‘
আভার বুক ধুকপুক করতে শুরু করল। আহনাফের মুখে তার মায়ের কথা শুনলে এই প্রথম উনার কণ্ঠ শুনল। কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছে বেশ আভিজাত্যপূর্ন মহিলা। কন্ঠে যেন মধু ছেটানো। এত সুন্দর করে কথা বলেন। ইশ!
–’ তোমার নাম কি? ‘
–’ জ্বি? ‘
–’ তোমার নাম কি? ‘
আভা চিন্তায় পড়ে গেল। এখন কি উত্তর দেবে? নিজের নাম বলে ফেলবে? না, আভার নাম আহনাফের মা আহনাফের মুখেই শুনবে। আভা বলবে না। আভা বলল,
–’ চিত্রা, আহনাফের বন্ধু। ‘
–’ আচ্ছা, চিত্রা? কেমন আছো? ‘
–’ ভালো। আপনি? ‘
–’ ভালো। আহনাফের জ্বর উঠেছে। মাত্রই ঘুমিয়েছে। পরে কথা বলব তোমার সাথে। রাখি, মা? ‘
–’ আহনাফের জ্বর? ‘
আভার বুক ধড়াস করে উঠে। আহনাফের মা বলেন,
–’ হ্যাঁ। আজ রাতে কোথা থেকে বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় এসেছে। এখন জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। তোমাদের সাথে ছিল নাকি? ‘
–’ আব…হ্যাঁ। ‘
–’ একটু বলবে ওকে, বৃষ্টিতে যেন না ভিজে। দেখো না। একটু ভিজেই মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। একটু বলবে। কেমন? ‘
–’ ঠিক আছে। বলব আমি। চিন্তা করবেন না। ‘
–’ রাখি এখন। ভালো থেকো। ‘
–’ আপনিও ভালো থাকবেন। ‘
আভা ফোন কেটে থম করে বসে রইল। খুব তো বলেছে, তার বৃষ্টিতে ভিজলে কিছু হয় না। কিন্তু নিজেই বৃষ্টি সহ্য করতে পারে না। আভাকে বলে, আভা নাকি অসুস্থ হবে। আভার বুকের ভেতর খচখচ করতে লাগল। সে অসুস্থ। ভাবলে বুকের মোচড় দিয়ে উঠে। কি করা যায়? ওর বাসায় গিয়ে একবার দেখে আসবে কি? না, না। আহনাফের মা সন্দেহ করবেন। কি করব? আহনাফের বন্ধুদের বলবে কি? না,না। আহনাফের বন্ধুরা এখনো ওদের সম্পর্কের কথা জানে না। আহনাফ যতদিন ওদেরকে আভা সম্পর্কে না জানায়, আভা কিছু বলতে পারবে না। খারাপ দেখাবে সেটা। আভা চিন্তা করে অস্থির হয়ে পড়ল। অথচ উপায় খুঁজে পেল না।
আভা চুপ করে কতক্ষণ ভাবল। মাথায় এল, কামরুলের কথা। আভা কামরুলকে কল দিল।
–’ হ্যালো, আভা। কেমন আছো? ‘
–’ ভালো, কামরুল ভাই। তুমি? ‘
–’ ভালো। ‘
–’ তোমার নাম্বার আমি কিন্তু আহনাফকে দেইনি। ‘
–’ সেটা জানি। ভাইয়া, একটা ফেবার দরকার ছিল। ‘
–’ হ্যাঁ, বলো। ‘
–’ আহনাফের বাসায় একটু যাবে? ‘
–’ কেন? কি হয়েছে? ‘
–’ ও অসুস্থ। ‘
–’ কি? অসুস্থ? ‘
–’ জ্বর হয়েছে। ‘
–’ কিভাবে? কখন? আমি তো জানিনা। ‘
–’ আজ রাতে। বৃষ্টিতে ভেজার কারণে। ‘
–’ বৃষ্টি? আহনাফের বৃষ্টি সহ্য হয় না তো। সঙ্গেসঙ্গে জ্বর উঠে। কিভাবে ভিজল? তোমার সাথে? ‘
–’ আব..না, না। আমার সাথে না। ওর সাথে তো আমার যোগাযোগ নেই। ‘
কামরুল মৃদু হাসল। কৌতুক করে বলল,
–’ আচ্ছা? বিশ্বাস করলাম। ‘
–’ আপনি কি যাবেন ওর বাসায়? ‘
–’ হ্যাঁ, আমি রওনা দিয়েছি। সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। ওরা সবাই যাবে। ‘
–’ ভাইয়া, একটা সাহায্যের দরকার ছিল।’
–’ হ্যাঁ, বলো। ‘
–’ আমি কিছু রান্না করে দিতাম ওর জন্যে। জ্বরে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়েছে বোধহয়। টক কিছু রেধে দিতাম। ‘
–’ আচ্ছা। আমি তোমার বাসার নিচে আসব। তুমি টিফিন নিয়ে নিচে নেমে যেও। ঠিক আছে? ‘
–’ আচ্ছা, ভাইয়া। ‘
–’ এখন রাখি? ‘
–’ ভাইয়া, আরো একটা সাহায্য? ‘
–’ হ্যাঁ, বলো। ‘
–’ ভাইয়া, আহনাফের বন্ধুরা যেন জানে না আমাদের ব্যাপারে। ম্যানেজ করবেন একটু। ‘
–’ আচ্ছা, জানবে না ভরসা রাখো। ‘
–’ রাখি এখন। ‘
–’ গুড বাই। ‘

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here