#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – ১৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
___________________________
জয়ধ্বনি ট্রাভেল এজেন্সি অফিসের সামনে এসে থামল আহনাফ। এই ট্রাভেল এজেন্সির দ্বারা আহনাফরা সাজেক গিয়েছিল। আহনাফ বাইক থেকে নেমে দাড়াল। টিশার্ট টেনে ঠিক করে রোদচশমা খুলে কলারে ঝুলাল। মুখখানা গম্ভীর করে ভেতরে প্রবেশ করল।

–’ আরে, আহনাফ ভাই যে? আসুন আসুন। ‘
আহনাফকে দেখে অফিসের ম্যানাজার পুলকিত হলেন। চেয়ার ছেড়ে উঠে আহনাফকে জড়িয়ে ধরলেন। আহনাফকে বসার জন্যে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বললেন,
–’ ভাই, আবার কি মনে করে আমাদের এজেন্সিতে? কোনো ট্রিপ চাই নাকি? ‘

আহনাফ উত্তর দিল,
–’ ট্রিপ নয়। ট্রিপের পার্মানেন্ট সঙ্গী চাই। ‘

ম্যানেজার চিন্তায় পড়ে গেলেন। মাথা চুলকে মৃদু স্বরে বললেন,
–’ বুঝিনি ভাই। ট্রিপের সঙ্গী বলতে? ‘

আহনাফ বেপরোয়া হয়ে উত্তর করল,
–’ আভার নাম্বার এবং ঠিকানা চাই। দেওয়া যাবে? ‘
–’ কোন আভা? আভা ইসলাম রাত্রি? ওই চঞ্চল মেয়েটা? ‘
-‘ হ্যাঁ। ‘

ম্যানেজার যারপরনাই বিস্ময় নিয়ে তাকালেন আহনাফের দিকে। আহনাফের আচরণ ভঙ্গি অত্যন্ত স্বাভাবিক। ম্যানেজার গোলাকার চোখে আগাগোড়া পরখ করলেন আহনাফকে। আহনাফ পায়ের উপর পা তুলে বাবু হয় বসে চেয়ারের হাতলে হাত রেখে পা দুলাচ্ছে। আহনাফের কখনো মেয়ে চক্কর ছিল না। আচমকা একটা মেয়ের ঠিকানা চাইছে। কি সাংঘাতিক! আহনাফের বড় কোনো অসুখ টসুখ হল কি? ম্যানেজার লাল দিয়ে গলা ভিজিয়ে সুধালেন,
–’ ভাই ঠিক আছেন? অসুস্থ? ‘
–’ না, সুস্থ আছি। আপনি ঠিকানা দিলে আরো বেশি ভালো এবং সুস্থ থাকব। ‘

ম্যানেজার মাথা চুলকে বোকা বোকা হাসলেন। বললেন,
–’ আসলে বিশ্বাস হচ্ছে না। মেয়ে আর আপনি? বড্ড আশ্চর্যজনক লাগছে। ‘
–’ আর কত একা একা ট্রাভেল করব? একটা স্থায়ী সঙ্গী হলে ভালো হয় না? ‘
-‘ হ্যাঁ, হ্যাঁ। তা হয় বৈকি। ‘
–’ তাহলে ঠিকানাটা? ‘
দেখা গেল ওহী সাহেব কিছুটা শঙ্কিত হচ্ছেন। এদিক ওদিক চেয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বলছেন না। আহনাফ লক্ষ্য করে বলল,
– ‘ কিছু বলার হলে বলে ফেলুন। ‘

ওহী সাহেব বোধহয় খানিক আশ্বস্ত হলেন। লালা কর্তৃক
গলদেশ ভিজিয়ে বললেন,
–’ ভাই, এভাবে কারো ঠিকানা দেয়া আমাদের নিয়মের বহির্ভূত। ‘

আহনাফের কুচকে যাওয়া ভ্রু লক্ষিত হল। আহনাফ শান্ত কণ্ঠে সুধাল,
–’ যার ঠিকানা চাইছি, সেও চায় আমি তাকে খুঁজে বের করি। শি ইজ ইন লাভ উইথ মি। ‘

ওহী সাহেবকে অবাক হতে দেখা গেল না। বরং তিনি জানতেন, আহনাফ এবং আভার মধ্যে কিছু একটা খুসুরফুসুর চলছে। হয়তো ট্রাভেলে থাকা সবাই তা জেনে গেছে। আভার আহনাফের কাছে ঘেঁষা, আহনাফের মুগ্ধ নয়ন কারো চোখ এড়ায় না। দুজন প্রেমিক প্রেমিকা এক হতে চাইছে। হোক! কি দোষ তাতে? সে নাহয় পৃথিবীতে আরো এক ভালোবাসার গল্প তৈরি করবে। ওহী সাহেব মৃদু হেসে বললেন,
–’ আমি ডায়েরি বের করে দেখছি। ‘

ডায়রি খোলা হল। পাতা উল্টাতে দেখা গেল। ভ্রু কুঁচকে যাওয়া পরিলক্ষিত হল। ওহী সাহেব বললেন,
–’ পেয়েছি ভাই। ঠিকানা, মোহাম্মদপুর, রোড নং ১২০১, বাসা নং ৩৪। নাম্বার , ০১৭******** ‘

আহনাফ বিস্ময় নিয়ে চাইল। এই ঠিকানায় সে অনেকদিন বাইক নিয়ে পাড়ি দিয়েছে। আভাদের বাসার নিচে বন্ধুদের সাথে চা খেয়েছে। মাঝরাতে বন্ধুদের সাথে বাইক নিয়ে এই রাস্তা থেকে সেই রাস্তা ঘুরে বেরিয়েছে। ওরা দুজন এত কাছে অথচ দূরত্ব যেন তাদের আস্টেপিস্টে জড়িয়ে রেখেছিল। আহনাফ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ওহী সাহেবের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
–’ ধন্যবাদ ফেভারটুকুর জন্যে। ‘

ওহী সাহেব হাত মেলালেন আহনাফের সাথে। বললেন,
–’ আমি আমার কাজ করেছি। মেয়েটাকে ভালো রাখার দায়িত্ব তোমার। আশা করি, তুমি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে। ‘
–’ অবশ্যই। আসছি। ‘

আহনাফ রোদ চশমার আড়ালে নিজ ঘোলাটে চোখ লুকাল। অতঃপর বেরিয়ে গেল এজেন্সির অফিস থেকে।
________________________________
মাগরিবের আজানে সন্ধ্যার পরিবেশ কলোরিত। দলে দলে পুরুষরা ছুটে চলেছে মসজিদের দিকে। আহনাফ মাগরিবের নামাজ আদায় করল মোহাম্মদপুর মসজিদে।
আভা নামাজ আদায় করে চা হাতে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। যতদূর দৃষ্টিসীমা পৌঁছে, চেয়ে দেখে অলিগলি। নেই, কেউ নেই। আভার আকাঙ্খিত পুরুষের দেখা মেলে নি। আভার চোখে জল টুইটুম্বর করে উঠে। আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেল। অথচ সে একবার কল করেনি। তার মিঠা কণ্ঠ শুনিয়ে বলে নি, ‘ এই মেয়ে, এত রাগ করো না তো। এই যে আমি কথা বললাম। চিৎকার করে বললাম, তোমার ছাড়া আমার চলছে না। তুমি কি শুনতে পাও নি? ‘
না, সে বলেনি। একবার গলির মুখে তার লম্বাটে, পেটানো দেহের দেখা মেলে নি। দূর থেকে হাত বাড়িয়ে বলে নি, ‘ মন তোমাকে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলাম। একবার আমার বুকে মাথা ঠেকাবে কি? ‘
সে বলেনি। পাষাণ লোক! আভা তার কথা আর কখনো মনে করবে না। সে আভাকে ভুলে গেছে। আভাও তাকে ভুলে যাবে। কিন্তু ভুলে যাবে কি করে? মন ছোঁয়া পুরুষকে কি এত সহজে ভুলে যাওয়া যায়? যে পুরুষে আভার সর্বনাশ, তার স্মৃতি নাশ করা কি আদৌ সম্ভব? না তো। এমন কোনো মন্ত্র আছে কি, যা পাঠ করে আভা আহনাফ নামক খারাপ নির্দয় লোককে ভুলে যাবে?
আছে এমন কোনো মন্ত্র, জাদুপত্র?

আভা চায়ের কাপে শেষ চুমুক দেয়। ঘোলা অশ্রু ভেজা চোখ পরিষ্কার করে পুনরায় চোখ রাখে দূরে-বহুদূরে! আশাহত হল। কেউ নেই।

কে যেন হাত বাড়াল। হাত বাড়িয়ে আভাকে ডাকল। আভা চমকে উঠল। গায়ে কাঁটা দিয়ে গেল। আভা ঠিক দেখছে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ, আভা ঠিক দেখছে। শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরিধান করে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে সে। আভার নয়ন গড়িয়ে টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। আহনাফ বাসার নিচে থেকে চেয়ে থাকল অনিমেষ। সপ্তাহ কেটে গেছে। তবুও মনে হচ্ছে কত বছর কেটেছে। টিশার্ট ও প্লাজু পরিধানকৃত আহনাফের কিশোরী আভাকে দেখতে বাচ্চা লাগছে। আহনাফের চোখের পাতা এক হয় না। এ তৃষ্ণা নিভে যেতে চায় না। বরং আগুনের ফুলকির মত তেজ দেখিয়ে বেড়ে উঠে। বহুদিন পর একযুগল প্রেমিক-প্রেমিকা তাদের চোখের তৃষ্ণা নেভাচ্ছে। জানালার এপারে আভা, ওপাড়ে আহনাফ। আভার চোখে জল আর আহনাফের চোখে মুগ্ধতা। এ মুগ্ধতা শেষ হবার নয়। কেমন যেন বেহেয়া ন্যায় বৃদ্ধি পেয়ে আকাশ ছুঁতে চায়। আকাশ ছুঁয়ে ফেলার কি তীব্র বাসনা! মন জ্বলে পুড়ে ছারখার!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here