#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – পর্ব ১৭
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
______________________________
–’ ওহে মেয়ে, আমার শুধু তোমাতেই চলবে। একবার তোমাতে আটকে গেছি। এখন সমবয়সী কেন, পৃথিবীর সবচে সুন্দর মেয়ে এনে দিলেও কাজ হবে না। আ’ম অল ইউরস। ‘
আহনাফের তীব্র স্বীকারোক্তি আকাশ বাতাস আলোড়িত করে তুলল। বাতাসের স্রোতে গা ভাসিয়ে চলে গেল আভার কাছে। আভা হাঁটতে পারল না। এড়িয়ে যেতে পারল না প্রিয় মানুষের প্রবল ভালোবাসা, আদুরে বার্তা। আভা পা টানতে চাইল। চাচ্ছে না আহনাফের কথায় কান দিতে। অথচ পারল না। আটকে রইল। জমে গেল পা দুখানা। আহনাফ আভার পাশে এসে দাঁড়াল। আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁলো। হাতে হাত রাখল। আহনাফের স্পর্শে আভার হাত বেয়ে ঘাম ছুটে গেল
ভিজল কপোল, নরম গালের একাংশ। আহনাফ মিষ্টি কণ্ঠে শুধাল,
–’ রাগ কমেছে? ‘
ইশ, এমন আদর করে বললে কি আদৌ রাগ করে থাকা যায়? উহু, যায় না! একদম যায় না। আভা আহনাফের দিকে রাগ নিয়ে চাইল। দু একটা কথা শুনাতে চাইল। পারল না। আহনাফ বড্ড অসহায় চোখে চেয়ে আছে আভার ডিকে। আভা কিছুক্ষণ থম করে রইল। অতঃপর ফিক করে হেসে আহনাফের গাল টেনে দিয়ে বলল,
–’ খুব কিউট লাগছে। ‘
আহনাফ হাত দিয়ে গাল ঘষে বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
–’ গাল টানবে না। বাচ্চা না আমি। ‘
আভা আহনাফের বাহু দুহাতে জড়িয়ে ধরলো। পা উচু করে লাফিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
—’ জানি। চব্বিশ বছরের দামড়া ছেলে। যাই হোক। আমারই তো। ‘
দুজনেই হেসে উঠে। হাসতে হাসতে আভার চোখের কোণে জল জমে। মেয়েটা অতি সুখে পাগল হয়ে আছে। আভা চোখের পানি মুছে নিল। বলল,
–’ আমার খুব হাসতে ইচ্ছে হচ্ছে আজ। হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। আপনি আমার জীবনে আরো আগে এলেন না কেন? সুখ আরো আগে আমার হাতে ধরা দিল না কেন? এতটাবছর অপেক্ষা করালেন। ‘
আহনাফ নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলে আভাকে পরিয়ে দিল। সুন্দর করে দায়িত্বশীল প্রেমিকের ন্যায় জ্যাকেট ফিট করে সরে দাঁড়াল। আভা বলল,
–’ জ্যাকেট কেন? ঠাণ্ডা লাগছে না তো। ‘
আহনাফ মৃদু হাসল। আভার কানের কাছে ঠোঁট এনে ফিসফিসাল,
–’ ভিজে গায়ে সব দেখা যাচ্ছে। যা বিয়ের আগে দেখতে চাচ্ছি না, তা এখন চোখে পড়ছে। বাকিটা তুমি জানো। জ্যাকেট খুলবে এখন? ‘
আভা যেন লজ্জায় মরি-মরি। গায়ের জ্যাকেট শক্ত করে টেনে ধরে বিড়বিড় করে,
–’ অসভ্য। ‘
আহনাফ হাসে। কথা বলতে বলতে দুজন আভার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বাড়িতে চলে এসেছে দেখে আভার মন খারাপ হল। সে ঠোঁট ফুলে আহনাফের দিকে চেয়ে থাকল। আহনাফ আভার গালে হাত রাখল। বলল,
–’ আমরা আবার দেখা করব। ঠিক আছে? মন খারাপ করো না। ‘
–’ মন খারাপ করতে চাইছি না। হয়ে যাচ্ছে। কি করব? ‘
–’ কিছু করবে না। এখন বাসায় যাবে। হট গোসল করবে। চা খেয়ে পড়তে বসবে। সামনে অ্যাডমিশন। ভালো করে না পড়লে আমার কাছে আসতে পারবে না। আমার সাথে পড়তে হলে ভালো রেজাল্ট করতে হবে। বাসায় যাও। আমি একটু পর ফোন করব। ‘
—’ আপনার ফোন তো নষ্ট। ‘
–’ আরো একটা বাটন ফোন আছে। সেটা দিয়ে কল করব। ‘
–’ আচ্ছা। শুভ বিদায়। ‘
–’ জ্যাকেট নিয়ে যাবে? ‘
–’ ওহ, আমি তো জ্যাকেটের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। কি করব এটা? নিয়ে যাই? ‘
–’ তোমার মা দেখলে প্রবলেম হবে? ‘
–’ তাও ঠিক। আচ্ছা আপনি জ্যাকেট নিয়ে নিচে দাড়াবেন। আমি আমার ঘরে জানালা দিয়ে দড়িতে পলিথিন আটকে নিচে নামব। আপনি জ্যাকেট পলিথিনে দিয়ে দিবেন। ‘
–’ এত কষ্ট কেন? সামান্য জ্যাকেটই ত। তোমার কাছে আরো একটা আছে না? ‘
–’ এটাও লাগবে। ‘
আহনাফ হাসে। আভার মাথার চুল এলোমেলো করে বলে,
–’ বিয়ের পর আমার সব জ্যাকেট তোমায় দিয়ে দেব। আমার সামনে সবসময় জ্যাকেট পড়ে ঘুরবে। দেখব তখন। কত জ্যাকেট পড়তে পারো। ‘
–’ ছিঃ। শুধু জ্যাকেট পড়ে থাকব কেন? ‘
–’ ছিঃ কি? তোমাকে কি শুধু জ্যাকেট পড়ে থাকতে বলছি। জামার উপর জ্যাকেট পড়বে। বাচ্চা মেয়ে। সারাক্ষণ মাথায় অদ্ভুত চিন্তা। ‘
–’ আমি বাচ্চা না। ‘
আভা মুখ ফুলায়। আহনাফ হাসে। বলে,
–’ আচ্ছা। তুমি বড় বাচ্চা। এখন যাও। নয়টা বেজে গেছে। তোমার মা চিন্তা করবেন। ‘
–’ আচ্ছা, যাই। শুভ বিদায়। ‘
–’ গুড বাই। ‘
আভা জ্যাকেট খুলে আহনাফের হাতে দেয়। অতঃপর পেছনে ফিরে এগিয়ে যায় গেইটের দিকে। গেইটে প্রবেশ করার আগে আরো একবার পেছন ফেরে আহনাফকে দেখে। আহনাফের দৃষ্টি আটকে আভার দিকে। আভা চোখের ইশারায় আরো রোজার বিদায় জানায়। আহনাফ হাসে। মেয়েটা এমন অদ্ভুত কেন? এই যে সে আহনাফ ছাড়া আর কিছু বুঝে না। আহনাফ দিন বললে আভা সেটাকে দিন মানে, আহনাফ রাত বললে আভা রাত মানে। আভা এতটা নির্ভরশীল কেন আহনাফের উপর। এই যুগে এসে একটা মেয়ে অচেনা পুরুষের উপর এত নির্ভরশীল হয়? আদৌ সম্ভব? আহনাফের ভয় হল। আভার এই বিশ্বাসের মর্যাদা সে রাখতে পারবে তো? আহনাফের কিছু হয়ে গেলে আভার কি হবে? মেয়েটা যে পাগল, নিশ্চয়ই উল্টোপাল্টা কিছু করে বসবে। আহনাফ কি করবে এই অবুঝ মেয়েকে নিয়ে? মেয়েটা কি একটু বুঝবে না?

–’ ডাক্তার সাহেব! ‘
উপর থেকে আভার ফিসফিস চেঁচানো শুনে আহনাফের ধ্যান ভাঙে। আহনাফ মাথা তুলে উপরের দিকে চায়। আভা আঙ্গুলের ইশারায় নিচে কিছু একটা দেখাচ্ছে। আহনাফ আভার ইশারা অনুসারে নিচে তাকায়। লম্বা দড়িতে একটা পলিথিন ঝুলানো। আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। হাতে থাকা ভেজা জ্যাকেট পলিথিনে ঢুকিয়ে দেয়। উপরে চেয়ে হাত নাড়ায়। আভা মুচকি হাসে। দড়ি উপরে উঠায়। জ্যাকেট হাতে নিয়ে গায়ে জড়ায়। আহনাফের দিকে চেয়ে হাতের ইশারায় বিদায় জানায়। আহনাফ মৃদু হেসে বাইকে করে চলে যায়। আভা জ্যাকেট গায়ে শক্ত করে চেপে ধরে। জ্যাকেট থেকে আহনাফের গায়ের গন্ধ ভেসে আসছে। আহনাফ সদা যে পারফিউম ব্যবহার করে জ্যাকেটে সেই পারফিউমের সুঘ্রাণ। আহনাফের পাশে হাঁটলে আভার নাকে তীব্রভাবে লাগে এই পারফিউমের গন্ধ। বিয়ের পর আভা সারাক্ষণ আহনাফের এই পারফিউম ব্যবহার করে বসে থাকবে। তাহলে আভার বোধ হবে আহনাফ আভার পাশেই আছে, ছুঁয়ে দিচ্ছে, ভালোবাসছে। আভার আর একা একা লাগবে না। আহনাফকে আভা জিজ্ঞেস করবে, সে কোন পারফিউম ব্যবহার করে। এত সুঘ্রাণ কোন পারফিউমে আছে। আভা তাহলে এখন থেকে সেই পারফিউম ব্যবহার করবে।
আভা গায়ের জ্যাকেট নাকের সামনে উচু করে ঘ্রাণ শুঁকল। উফ, নাকের কাছে যেন সুরসুরি লাগছে। আভা জ্যাকেট চেপে ধরে বারান্দা থেকে কক্ষে প্রবেশ করল। জ্যাকেট হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে আলমারিতে লুকিয়ে রাখল। সাজেকে দেওয়া আহনাফের সেই জ্যাকেটটাও সেখানে রাখা। এখন থেকে আভা আলমারিতে এই লুকানো জায়গার নাম দিল, প্রেম সিন্দুক। এখন থেকে এই জায়গায় আভা প্রেম জমাবে। বিন্দু বিন্দু করে প্রেম জমিয়ে রাখবে। বিন্দু বিন্দু থেকে সাগর তৈরি হয়। তাহলে একদিন এই প্রেমগুলো জমে প্রেমের সাগর তৈরি হবে। আভা এই প্রেমের সাগরে সাঁতরে বেড়াবে। ইশ, এত আনন্দ কোথায় রাখবে আভা? বুকের ভেতর পুষবে কি?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here