#মনোপ্যাথি
#পর্ব:৩
#অরিত্রিকা_আহানা

আমি নিঃশব্দে অনু আপুর পাশে শুয়ে পড়লাম।সারারাত লজ্জায় ছটফট করে শেষরাতের দিকে সামান্য একটু ঘুম হলো।

সকালবেলা ঘুম ভাঙলো সবার চেঁচামেচিতে।মা এসে আমাকে তাড়া দিলো আপুকে পার্লারে নিতে হবে।আমি উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলাম।

ডাইনিং যেতেই দেখলাম ভাইয়া,ইনায়াজ ভাই,অনু আপু ওরা সবাই নাশতা করছে।মা এসে আমাকে বললো ওদের সাথে বসে যেতে।আমি লজ্জায় বসতে পারছি না।ইনায়াজ ভাইয়া আশেপাশে থাকলেই আমাকে লজ্জারোগ ধরে বসে।

ভাইয়া ডাক দিয়ে বললো, “এই তনু,কি হলো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?আয় নাশতা করবি।”

আমি আড়চোখে একবার ইনায়াজ ভাইয়ের দিকে তাকালাম।উনি নাশতা খেতে খেতে রুহির সাথে দুষ্টুমি করছে।
আমি গিয়ে ভাইয়ার পাশের চেয়ারে বসলাম।নাহিদ ভাইয়া এসে আমার পাশে বসলো।খেতে খেতে বললো,”তনু এখন কোন ইয়ারে আছিস?”

নাহিদ ভাইয়াকে আমার বেশ ভালো লাগে,কেমন যেন আপন আপন মনে হয়।উনিও ভাইয়ার অনেক পুরোনো বন্ধু।হুট করেই সবার সাথে মিশে যেতে পারে।ভাইয়ার কাছে শুনেছি ওদের সার্কেল নাকি নাহিদ ভাইকে ছাড়া অনেকটা চিনি ছাড়া চায়ের মত।বেশির ফ্রেন্ড সার্কেলে নাহিদ ভাইয়ের মত একজন থাকা বোধহয় ইউনিভার্সাল ফ্রেন্ডর ‘ল’ হয়ে গেছে।
আমি নাহিদ ভাইয়ার কথার জবাবে শুধু বললাম, “ফাইনাল ইয়ার।”
-“এসেছি থেকেই দেখছি পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিস,কি হয়েছে বলতো?”

নাহিদ ভাইয়ার কথা শুনে আমি বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না।অনু আপু একটা মিষ্টিকে চামচ দিয়ে টুকরা করে নিলেন।তারপর একটা টুকরো নাফিসার(উনার মেয়ে) মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন,”তাসফির পর তো ওর সিরিয়াল তাই লজ্জা পাচ্ছে হয়তো।”

উনার কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো।অন্য সময় হলে আমি হয়ত প্রতিউত্তর করতাম কিন্তু আজকে লজ্জায় কিছু বলতে পারলাম না।

নাস্তা শেষে আমি সবে টেবিল ছেড়ে উঠতে যাবো টেবিলের কোনার সাথে পা বেধে হোঁচট খেলাম,আর আমার হাতে থাকা পানির গ্লাস পানি সহ একেবারে ইনায়াজ ভাইয়ার মাথায়! চোখের একটু উপরে কপালে লেগেছে বাড়ি।রুহি ছিলো উনার কোলে,ওর মাথাও পড়তো যদি না উনি ধরে একহাত দিয়ে কাঁচেরগ্লাসটা ফেলতেন।গ্লাস রেখে সাথে সাথে কপালে হাত দিয়ে চেপে ধরলেন।আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি উনি চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন।ফর্সা মুখ কালো হয়ে গেছে।ঘটনার আকস্মিকতায় আমি ‘থ’!
অল্পকিছুক্ষনের মধ্যেই কপাল ফুলে আলু।ফোলা জায়গাটা লাল হয়ে গেলো।
রুহি দৌঁড়ে গিয়ে টাওয়েল এনে দিলো।উনি রুহির হাত থেকে টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছলেন।অনু আপু উনার কপালে বরফ চেপে ধরলেন!আমি তার পাশে হতবম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।অনু আপু আফসোস করে বললেন,
-“কি যে করিস তনু?..সাবধানে চলবি না?..বেচারার কপাল ফুলে ঢোল হয়ে গেছে।”
নাহিদ ভাইয়া হেসে উঠে বললেন,”এত লোক থাকতে শেষে কি না ইনায়াজ এর মাথায় ঢাললি?..ওর তো এমনিতেই সুপার কুল!”

নিজেকে মনে মনে যত কুৎসিত রকমের গালি আছে সব দিলাম।আসলেই তো এত জনের মাথা থাকতে ইনায়াজ ভাইয়ের মাথাতেই আমার পানি ফেলতে হলো? একটু পর অনু আপু আমার হাতে বরফ ধরিয়ে দিয়ে বলল,” নে ধর!.আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে,নাফিসাকে খাওয়ানো হয় নি!তুই ধর!”
আমি বরফের বাটি হাতে নিয়ে বোকার মত দাঁড়িয়ে রইলাম।ইনায়াজ ভাইয়া আমার হাত দিয়ে বাটি নিয়ে নিজেই কপালে লাগানো শুরু করলেন।আমি তখনো চুপ!
উনি বললেন,”আমি লাগিয়ে নিচ্ছি!তুমি যাও রেডি হয়ে নাও।পার্লারে যাবে না?”
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।রুহি এসে হঠাৎ দুম করে আমার পিঠে কিল বসিয়ে দিলো।রাগে ওর চোখমুখ লাল হয়ে আছে।
ওর এমন কান্ডে আমি,ইনায়াজ ভাই দুজনেই হতবাক!!বাকিরা হাসছে।ভদ্রতা রক্ষার জন্য আমিও হাসলাম।কিন্তু পিঠের ব্যথায় সেটা ঠোঁটের কোনা পর্যন্তই থেকে গেলো,সবার মত অট্টহাসি বেরোলো না।বদ মেয়েটা আমার মেরুদণ্ড বোধহয় ভেঙেই দিয়েছে।ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে আরো মারবে,ভয়ে আমার চোখমুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো,মুখ বোকা হাসি।ভাগ্য ভালো যে,ইনায়াজ ভাই ওকে টেনে কোলে তুলে নিলেন।
-“ছি ছি! রুহি!বড়দের গায়ে কেউ হাত তুলে? আল্লাহ গুনাহ দেবে তো।”
-“ও তোমার মাথায় বাড়ি মারলো কেন?”
রুহির কথা শুনে আমি অপ্রতিভ হয়ে গেলাম।রুহি ভেবেছে আমি ইচ্ছে করে উনাকে বাড়ি মেরেছি।”

নাহিদ ভাইয়া হেসে উঠলেন বললেন,”শেষ পর্যন্ত একটা বাচ্চাকেও তুই হাত করলি?..আমাদের ওপর এত জুলুম কেন ভাই? দয়া করে তাড়াতাড়ি বিয়েটা কর!নাহলে যে হারে মেয়েরা তোর জন্য ক্রাশ কাচ্ছে শেষে আমাদেরকে মেয়ে খুঁজতে চাঁদে যেতে হবে।”
ইনায়াজ ভাই মুখটিপে হাসলেন।রুহিকে বললেন,”ও তো ইচ্ছে করে মারে নি।হাত থেকে পড়ে গেছে।যাও আপুকে সরি বলো?”
রুহির আমাকে সরি বললো ঠিকই কিন্তু ওকে দেখে মনে হলো না সে কোনরকম অনুতপ্ত বোধ করছে আমার মারার জন্য।বরং ইনায়াজ ভাই যদি আমার পিঠে আরো দুএকটা কিল বসিয়ে দেওয়ার কথা বলতো তাহলে বোধহয় ও আরো বেশি খুশি হত।এইপ্রথম রুহিকে আমার হিংসে হচ্ছে।কি কারণে হচ্ছে?কেন হচ্ছে?আমি জানি না।কিন্তু হচ্ছে!

ইনায়াজ ভাইয়ের একটা কল আসলে উনি উঠে চলে গেলেন।ফিরে এলো মুখটা কালো করে। উনার মুখ কালো দেখেই ভাইয়া উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো,” কি হয়েছে?”
উনি উনার স্বভাবসুলভ ঠান্ডা কিন্তু গম্ভীর গলায় বললেন উনাকে আজকেই নাকি চট্টগ্রাম যেতে হবে।ওখান থেকে ফোন এসেছে,ভেরি আর্জেন্ট!

মুহূর্তেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
ভাইয়া অনুরোধ করে বললো,”এখন না গেলে হয় না?রাতের দিকে না হয় আমি আর নাহিদ তোকে বাসে তুলে দিয়ে আসবো।!

উনি ভাইয়াকে কি জানি দেখলাম বোঝালো, এরপর ভাইয়া আর অমত করলো না।

নাহিদ ভাইয়া উনার দিকে তাকিয়ে ঠাট্টার সুরেই বললেন,”ডাক্তারদের লাইফে এই এক জ্বালা।সময় অসময় নেই কাজ পড়ে যায়।দেখিস,বাসর রাতে বউকে ছেড়ে রোগীদের নিয়ে না আবার বাসর করা লাগে।”

ইনায়াজ ভাইয়া চট করে আমার দিকে তাকালেন।আমি সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললাম।উনি নাহিদ ভাইয়ের মাথায় টোকা মেরে ব্যাগ গোছাতে চলে গেলেন।

আমি বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না।সবার অলক্ষে কোনরকমে কান্না চেপে রেখে উঠে এলাম।উনার চলে যাবার কথা শুনে নিজেকে কিছুতেই শান্ত রাখতে পারছি না।উনাকে চোখের দেখাটাই ছিলো আমার একমাত্র আনন্দ,এখন তো সেই উপায়ও বন্ধ।এর আগে উনি যতবারই আমাদের বাসায় এসেছেন চলে যাওয়ার পর কিছুদিন আমি কিছুতেই স্বাভাবিক থাকতে পারতাম না।রাতে চোখ বন্ধ করলেই উনার চেহারা ভেসে ওঠতো।উনার সেই সরল শান্ত মুখটার কথা ভেবে যে কতরাত নির্ঘুম কাটিয়েছি তার হিসেব নেই।

ওয়াশরুমে ঢুকে অনেক্ষন কাঁদলাম।মা এসে ওয়াশরুমের দরজার সামনে আমার নাম ধরে ডাকছে বারবার,শেষে বিরক্ত হয়ে ধাক্কানো শুরু করলো।
আমি চোখমুছে ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই মা জিজ্ঞেস করলো,”কি রে তোর চোখমুখের এই অবস্থা কেন?শরীর খারাপ নাকি?”
আমি মায়ের কথার জবাবে শুধু বললাম, “কিছু না।”
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম।আপুকে নিয়ে পার্লারে যেতে হবে।রেডি হয়ে বেরোতেই দেখলাম ভাইয়া আর ইনায়াজ ভাইক বেরোচ্ছে।

ভাইয়া বললো, “চল তোদেরকে নামিয়ে দিয়ে তারপর ইনায়াজকে ছাড়তে যাবো।”
ইনায়াজ ভাইকে দেখলাম ব্যাগ কাধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ভীষন কষ্ট লাগছে আমার!ইচ্ছে করছে উনার হাত চেপে ধরে বলি,” আপনি যাবেন না প্লিজ।আপনি গেলে আমার আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে।” কিন্তু পারলাম না।মনের কথা মনেই রয়ে গেলো।

আপুকে রাগ দেখিয়ে বললো,”আমার বিয়ে আর তুমি চলে যাচ্ছো?আমার মনমত ছবি তুলে দেবে কে? মনে থাকবে সব।আর যদি তোমার সাথে কখনো কথা বলেছি দেখো।”

আপুর কথা শুনে উনি হেসে ফেললেন।আপুর গাল টেনে দিয়ে বললেন,”কি করবো বলো বসের ফোন! উনার আন্ডারেই তো ট্রেনিং করছি।উনার কথা ফেলবো কি করে?”

আপু ক্ষেপে গিয়ে বললো,” তোমার ঐ বসকে ফোন দাও দেখি আমি কথা বলবো।উনি কি বিয়েশাদী করেন নি নাকি?”

আপুর কথা শুনে ইনায়াজ ভাই আবারও হেসে ফেললেন।আমি শুধু উনার দিকে চেয়ে আছি উনি অবশ্য সেটা খেয়াল করেন নি।উনার হাসিটা মারাত্মক সুন্দর! আলাদা একটা জাদু আছে।যে কোন মেয়েই উনার এই একহাসিতেই ঘায়েল হয়ে যাবে।
ভাইয়ার কাছে শুনেছি ওদের কলেজের সব সুন্দরী মেয়েরা নাকি ইনায়াজ ভাইয়ের জন্য পাগল ছিলো,ইনফেক্ট এখনো পাগল।উনি নাকি পাত্তা দেন না।শুনে আমি মনে মনে শান্তি পাই, সে সাথে ভরসা!

ভাইয়া তার প্রায় সব বন্ধুদের গল্পই আমাদের সাথে শেয়ার করেছে।ভাইয়া যখন ইনায়াজ ভাইয়ের গল্প বলে তখন আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকি।মনে হয় যেন শুনেই যাই,শুনেই যাই।অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করে।

গাড়িতে আমি,ইমু আর আপু বসলাম পেছনের সিটে।উনি সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে রুহিকে কোলে নিয়ে বসেছেন।আরেকটা গাড়িতে ভাইয়া সব কাজিনদের নিয়ে আসছে নিয়ে আসছে।

আমি ফোনে নিউজফিড স্ক্রল করছিলাম।ইমু হঠাৎ বলল,” এই আপু তুমি নাকি গ্লাস দিয়ে বাড়ি ইনায়াজ ভাইয়ের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে?.আমি কিন্তু বিশ্বাস করি নি।”
আপু বলল,”কে বলেছে তোকে?”
ইনায়াজ ভাই রিয়ার ভিউ মিরর দিয়ে সরাসরি আমার দিকে তাকালেন।আমি লজ্জা অস্বস্তিতে দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলাম।
ইমু যখন বলল কথাটা ওকে ইনায়াজ ভাই বলেছে আমি চমকে উঠে উনার দিকে তাকালাম।উনি বাইরের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছেন।আশ্চর্য উনি কি সত্যিই ধরে নিয়েছেন আমি ইচ্ছে করে উনাকে বাড়ি মেরেছি?..ওহ নো!
আপু, ইমু দুজনেই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।এখানে এত হাসির কি হলো আমি বুঝতে পারছি না।এরা সবাই মিলে কি আমাকে কনফিউজড করে চাইছে??হচ্ছে টা কি?

পার্লারে পৌঁছে ভাইয়া বললো,” আমি ইনায়াজকে বাসে তুলে দিয়ে আসি।তোদের হলেই আমাকে ফোন দিবি।খবরদার একা একা বেরোবি না।আমি নিতে আসবো।”

ইনায়াজ ভাইয়া রুহির গালে কয়েকটা চুমু দিয়ে ওকে ইমুর কোলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।রুহি কিছুতেই আসতে চাইছে না।উনি গাড়ি থেকে নেমে রুহিকে পুরো একবক্স চকলেট কিনে দিয়েছিলো।রুহি রাগে সেগুলোও ফেলে দিলো।

ইমু অনেক কষ্টে ওকে উনার কোল থেকে ছাড়িয়ে শেষে আমার কোলে এনে দিয়ে দিলো।ইমুকে খামছি,দিয়ে কামড় দিয়ে একস্থা করে দিয়েছে।আমি অনেক আদর যত্ন করে রুহিকে কিছুটা শান্ত করলাম।

ইনায়াজ ভাই আপুকে উইশ করে চলে গেলেন।আমি কিছুতেই চোখের পানি চেপে রাখতে পারছিলাম না।কেউ দেখে ফেলবে সেই ভয়ে রুহিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি পার্লারে ঢুকে পড়লাম।

আপুর সাজ শেষ হতে প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গেল।এর মাঝখানে ইমতিয়াজ ভাইয়া ফোন দিয়েছে প্রায় দশ বারো বারের মত।ইমু ফোন দিয়েছে তিনবার।আমি বিরক্ত হয়ে শেষে ফোন সাইলেন্ট করে রাখলাম।আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে।অসহ্য লাগছে সবকিছু!

কাজিনরা সবাই বেশ সাজগোজ করেছে।আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।আমি চুপচাপ বসে আছি।শেষে আপু ধমক দিয়ে বলল, “তোর বোনের বিয়ে আর তুই এভাবে চুপচাপ বসে আছিস?কি হয়েছে তোর?”
আমি আপুর কথার জবাব দিলাম না।আমার যে কেমন লাগছে তা শুধু আমিই জানি।

শেষমেশ আপুর নির্দেশে আমাকেও সাজানো হলো।সাজগোজ শেষে ভাইয়াকে ফোন দিলাম আসার জন্য।প্রায় দশমিনিটের মধ্যেই ভাইয়া এসে আমাকে ফোন দিলো আপুকে নিয়ে নিচে নামার জন্য।

আমি আপুকে নিয়ে নিচে নামতেই চারশ চল্লিশ ভোল্টের বড়সড় একটা শক খেলাম।ভূত দেখার মত চমকে উঠলাম দুজনে।ভাইয়ার সাথে ইনায়াজ ভাই দাঁড়িয়ে!!এতখুশি বোধহয় আমি জীবনেও হই নি,ইনায়াজ ভাইকে দেখে যতটা খুশি হলাম।

আমাদেরকে দেখে ভাইয়া হাসিমুখে এগিয়ে এলো।
আপু খুশিতে চিৎকার দিয়ে বললো,” ইনায়াজ ভাই তুমি যাও নি?”
রুহি দৌঁড়ে গিয়ে উনার কোলে উঠে পড়লো।উনি রুহিকে কোলে নিয়ে আপুর কথার জবাবে মুচকি হেসে বললেন,”শেষ মুহুর্তে ক্যান্সেল হয়ে গেছে।”

আপু উচ্ছ্বাসিত গলায় বললো,”আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না ইনায়াজ ভাই তোমাকে দেখে কতটা খুশি হয়েছি।”

উনি আবারও উনার সেই ঘায়েল করা হাসিটা দিয়ে বললো,”আমিও তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না বিয়ের সাজে তোমাকে কত সুন্দর লাগছে।” উনার কথা শুনে আপু লজ্জা পেয়ে গেলো।

ভাইয়া ইনায়াজ ভাইকে সমর্থন করে বললো, “সত্যি তাসফি,তোকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।” ভাইয়ার কথা শুনে আপু দুষ্টুমির স্বরে বললো, “তোমার ওপর আমার বিশ্বাস নেই।তবে ইনায়াজ ভাই যেহেতু বলেছে তাই বিশ্বাস করলাম।”

আপু হুট করে আমাকে ইনায়াজ ভাইয়ার দিকে ঘুরিয়ে বললো,”তনুকে কেমন লাগছে ইনায়াজ ভাই?সুন্দর লাগছে না?”

আপুর এমন কান্ডে আমি বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।ও এমন কিছু করবে আমি ভাবতেও পারি ন।আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম।আপুর কথা শুনে ইনায়াজ ভাই ঠোঁট কামড়ালেন, আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।
তারপর স্বাভাবিক ভাবে বললো,”সুন্দরীর বোন তো সুন্দরী হবে তাই না?”

আপু উনার কথায় পালটা জবাব দিয়ে বললো, “সাজ কেমন হয়েছে ইনায়াজ ভাই আমি সেটাই জিজ্ঞেস করছি।ও তো সাজতেই চাইছিলো না।সুন্দর হয়েছে না সাজটা?”
আমি আপুকে ফিসফিসিয়ে বললাম,”আপু তুমি বিয়ের কনে,এত কথা বলছো কেন?”
আপু আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো, “তো কি করবো?তোর মত চুপচাপ বসে থাকবো নাকি?তোকে দেখে মনে হচ্ছে বিয়েটা আমার না তোর হচ্ছে।”

আমি আপুর কথার কোন উত্তর দিলাম না।ভাইয়া তাড়া দিয়ে বললো,”হয়েছে এবার থাম তোরা।এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেন সময় নষ্ট করছিস?বাবা অনেকবার ফোন দিয়েছে, তোদের হলো কি না জিজ্ঞেস করছিলো,আর দেরী করিস না এবার চল।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here