#মনের_কোণে🥀
#আফনান_লারা
#পর্ব_৩৫
.
লিখির কাছে কথাটা হজম হলোনা।নাবিলের মুখের দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকার পর ওর মাথায় একটা বাড়ি বসিয়ে দিয়ে সে মুখ ঘুরে শুয়ে পড়েছে।নাবিল মাথা মুছে বললো,’মজা করছি।আমি আসলেই তোমায় বুঝি।বালিশের তলা চেক করো’

লিখি গোসসায় বালিশের তলায় হাত রাখলো।
ওমা কিসের যেন খচখচ আওয়াজ করছে।একটা চকলেট সেখানে।চকলেট বুঝতে পেরে লিখি হাত সরিয়ে মুখটা আবারও ফুলিয়ে রাখলো।নাবিল এবার বললো ল্যাম্প শ্যাডের পাশে তাকাতে।লিখি সেখানে তাকিয়ে দেখলো আরও দুটো চকলেট ওখানে।এবারও সে মুখ ফুলিয়ে চুপ করে আছে, নাবিল এবার ওর হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বললো,’আরও লাগবে চকলেট?’

‘না।আপনি হয়ত জানেননা,চকলেট আমার পছন্দ না’

নাবিল জিভে কামড় দিয়ে বললো,’সত্যি?’

‘হ্যাঁ,আমি চকলেট পছন্দ করিনা’

এত শত আয়োজন সব কিছুতে পানি ঢেলে গেলো।নাবিল ভেবেছিল চকলেট দেখলে হয়ত ওর মন গলবে।কিন্তু এ তো উল্টা হলো।
মেয়েরা চকলেট অপছন্দ করে?’

লিখি বুঝি নাবিলের মনের কথা বুঝে গেলো।সে তখনই বলে উঠলো,’কেন?সবার চকলেট প্রিয় হতে হবে?’

‘আপনি ভাল,আপনার চকলেট প্রিয় না।তাও রেগে যাইয়েন না দয়া করে,আপনার রাগ কাটাতে আমার রফাদফা হয়ে যায়।’
——
অনাবিল আর সামিয়া নাহিদকে নিয়ে লিখিদের বাসার সামনে এসে উপস্থিত হয়েছেন।রাত দুইটা বাজে এখন।এত দেরি হলো তাদের!!পথে জ্যাম থাকায় দেরিটা দিগুণ বেড়েছে।
গেটের বাইরে ছিল দারোয়ান অন্যজন।এর নাম আজম।আজম ঘুম ঘুম চোখে মশা মারছিল।কারের আওয়াজ পেয়ে সজাগ হয়ে উঠে গেট খুলে দিয়েছে সে।সাদা রঙের ঝকঝকে গাড়ীটা ভেতরে প্রবেশ করলো।রুহুল আমিনের বাড়িতে সবসময় যত কার আসতো তার মধ্যে এটা সব চাইতে সুন্দর কার ছিল।
আজম সালাম দিয়ে ভেতরে যেতে বললো তাদের। অনাবিল গাড়ী থেকে নেমে মাথা ঘুরিয়ে গোটা বাড়িটা দেখছে একবার পরোক করে।
যতটা ভেবেছিল তার চেয়ে বিশাল বাড়ি।দেখে হাসি ফুটলো তার।সামিয়া হাই তুলে বললো,’আমার একটু রেস্ট দরকার।অনেক টায়ার্ড’

তখন অনাবিল পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললেন,’এখন তো আলোচনা শুরু করছিনা।ডিনারটা সেরে ঘুমিয়ে পড়বো।
কিন্তু বাড়ির কারোর তো কোনো আয়োজন দেখছিনা।আমাদের কেউ কি রিসিভ করবেনা?’

ওমনি আজমের ডাকে রুহুল আমিন এবং তার স্ত্রী সালাম দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এগিয়ে এসেছেন ওদের কাছে।অনাবিল মুগ্ধ হলেন তাতেৃ
রুহুক আমিন তো প্রতি লাইনে বেয়াই দশবার বলতেছেন।বেয়াই বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলতেছেন।অনাবিলকে কিছু বলতেই দিচ্ছেন না।
লিখি আর নাবিল ঘুমাচ্ছে।ওদের আর জাগালেন না কেউ।ডাইনিং সাজিয়ে ফেললেন সুন্দর সুন্দর খাবারের আইটেম দিয়ে।
অনাবিল ফ্রেশ হয়ে এসে বসতেই রুহুল আমিন নিজে মাংসের পিস ওনার পাতে দিয়ে বললেন খেতে।
তখনও পান চিবোচ্ছিলেন তিনি।অথচ তার সুন্দর ব্যবহারে অনাবিলের চোখে এই দোষ ধরাই পড়েনি।খেতে খেতে তিনি বললেন,’নাবিল কোথায়?’

লিখির মা তখন বলেছেন তারা ঘুমে।যদি তিনি বলেন তো জাগিয়ে দেবেন।তিনি সাথে সাথে মানা করলেন,সকালে কথা বলবেন বলে।
নাহিদ ঘুমে।তাকে রুমে শুইয়ে দিয়ে এসে সামিয়া আর অনাবিল ডিনারটা সেরেছে।রুহুল আমিন সোফায় বসে পান সাধলেন ওনাদের।তার পানের ঘ্রানে জনাব অনাবিল পাগল হয়ে বলে দিলেন তিনিও এক খিলি খাবেন।
সামিয়া তো আশ্চর্য হয়ে গেছে।হা করে এক মিনিট চেয়ে থেকে বললো,’তুমি পান খাবে?আর ইউ সিওর?’

‘কি সুন্দর ঘ্রাণ দেখেছো??তুমি খাবে?’

সামিয়া নাক ছিঁটকে নাহিদের কাছে চলে গেছে।অনাবিল আয়েশে পান মুখে দিয়ে চোখ বুজলো।কি সুন্দর স্বাদ!!!
রুহুল আমিন তা দেখে খিলখিল করে হাসছেন।ওনাকে দেখে প্রথমে মনে হয়েছিল জীবনে পান খাননি,সেই লোক কিনা বরিশালে এসে এই বাসায় ঢুকে পান মুখে দিলো।ভাবা যায়!!

অনাবিল পান খেতে খেতে রুমে চলে গেছেন।নাবিল দরজা ফাঁক করে সব দেখছিল এতক্ষণ।জনাব অনাবিলকে রুহুল আমিনের সাথে এভাবে মিলে যেতে দেখে সে দারুণ খুশি হলো।পেছনে তাকালো লিখিকে সুখবরটা দেবে বলে,কিন্তু সে তখন ঘুমাচ্ছিল।কথাটা শুনলে সে খুব খুশি হবে ভেবে নাবিল কাছে এসে ওকে জাগানোর জন্য কয়েকবার করে ডাকলো।লিখি ওঠেনি।কিছু সময় আগেই চোখ লেগে গেছে তার।তাই এখন আর উঠতে পারছেনা।
নাবিল আর জোর করেনি।সে ও পাশে এসে শুয়ে পড়েছে।
——
সকালে নাবিলের মায়ের ডাক শুনে লিখি লাফ দিয়ে উঠে বসলো।ভেবেছে স্বপ্ন দেখছে।পরে দরজায় নক হবার আওয়াজ পেয়ে তাড়াহুড়া করে চোখ ডলে উঠতে গিয়ে ধপ করে পড়ে গেলো আবার।নাবিল ওর ওড়না মুঠো করে ধরে ঘুমায়।লিখি অনেক চেষ্টা করেও ওড়নাটা ছাড়াতে পারেনি, ওদিকে সামিয়া জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে।শেষে বাধ্য হয়ে লিখি বললো,’আন্টি একটু দাঁড়ান,উনি ওড়না ছাড়ছেননা।’

এটা শুনে সামিয়া লজ্জা পেয়ে চলে গেলো ওখান থেকে।কথাটা নাবিলও শুনে চোখ মেলে ওড়না ছেড়ে বসে গেলো।লিখি স্বাভাবিক ভাবে ওড়না নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই নাবিল বললো,’আর একবার ভুলভাল কথা বললে কানের নিচে একটা দিব।সবসময় উল্টা পাল্টা কথা বলো তুমি ‘
‘কিসের উল্টা পাল্টা বললাম?আপনি এদিকে ওড়না ছাড়ছেন না,ওদিকে শাশুড়ি মা পারছেননা দরজা ভেঙ্গে ফেলছেন।আমাকে তো এটাই বলতে হতো’

‘আমি ঘুমের ঘোরে ধরেছি,ইচ্ছে করে ধরেছি নাকি?তুমি যেভাবে বললে, ইজ্জত বলে আর কিছু থাকলোনা।’

লিখি বিড়বিড় করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।নাবিল গিয়ে আগে দরজা খুললো।মা নেই।বের হলে মুখ ধুয়ে তারপর যেতে হবে।মায়ের আবার অনিয়ম পছন্দ না।
দরজাটা সে আবার লাগানো ধরতেই নাহিদ এসে আটকে বললো’কেমন আছো ভাইয়া?’

নাবিল খুশি হয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,’ভালো।তোমার কি খবর?’

‘এদের ফ্রিজে চকলেট কেক দেখেছি।আমাকে এক পিস নিয়ে দাও’

‘দেবো।একটু অপেক্ষা করো’

‘বাবি কোথায়?’

‘বাবি না ভাবী।তোমার ভাবী ওয়াশরুমে।’

‘এটা তো ভাবীদের বাড়ি,তাহলে তোমায় কেন বলছি? ভাবী আসলে তিনি নিয়ে দিবেন’

‘ঠিক’

নাবিল কিছু বলার আগেই দূর থেকে তোয়ালে উড়ে এসে তার আর নাহিদের মুখের ওপর পড়লো।লিখি কোমড়ে হাত দিয়ে বেরিয়ে বললো,’আমার ওয়াশরুমে নিজের টিশার্ট ওমন ঝুলিয়ে রেখেছেন কেন?আর একটুর জন্য হার্ট এটাক হয়ে যেতো।মনে হচ্ছিল ভূতের মতন,ঝুলছে’

কথাগুলো বলতে বলতে বের হয়ে এসে লিখি হঠাৎ নাহিদকে দেখে জিভে কামড় দিয়ে বললো,’ও এখানে?সরি সরি’

নাবিল তোয়ালে সরিয়ে বললো,’আর বাকি আছে বাবার সামনে তোমার উল্টা পাল্টা কথা বলার।মুখ সংযত রাখো।একবার মায়ের সামনে তো একবার নাহিদের সামনে’

‘আপনার বাবাকে বলবো শ্বশুর আব্বা আমাকে কোলে নেন
হিহিহি’

লিখি হাসতে হাসতে তোয়ালে গুছাতে গিয়ে দেখলো দরজার ওপারে জনাব অনাবিল দাঁড়িয়ে আছেন।ওনাকে দেখে সে এমন লজ্জা পেলো আর ভয় পেলো,এক ছুটে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেছে।নাবিল ওর দৌড় দেখে সেও ওদিকে তাকিয়ে বাবাকে দেখে নাহিদকে নিচে নামিয়ে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে পড়েছে।

‘নাহিদ আসো আমরা বাইরে দেখতে যাব’

নাবিল থতমত খেয়ে বললো,’বাবা ও ছোটমানুষ তো তাই মজা করে বলেছে।তুমি রাগ করোনা’

‘এত মজা ভাল না,দুষ্টামি কম করতে বলিও।বংশদর যদি ওর মতন হয় তাহলে আর আমায় বাসায় থাকতে হবেনা।বাগানে বসবাস করতে হবে।এই স্বভাব যেন ওদের না থাকে সেই প্রার্থনা করি’
——
লিখি ওয়াশরুমের দরজা ফাঁক করে দেখার চেষ্টা করছিলো নাবিলের বাবা চলে গেছেন কিনা ওমনি সামনে নাবিলের চোখ জোড়া দেখে ভয় পেয়ে দরজা আবার লাগানো ধরতেই নাবিল আটকে বললো,’সকাল সকাল এত লজ্জা দিছো আমায়, আজ তোমার রেহায় নাই’
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here