গল্প:-মনের মহারানী
লেখিকা:-Sohani_Simu
পর্ব:-০৭

‘মিতি?মিতি?এই মহারাণী?উঠ না।কত ঘুমাবি আর?দেখ,তাকা আমার দিকে।মিতি?’

উমান ভাইয়া ক্রমাগত ডাকতেই আছেন আমাকে।আমি শুনতে পাচ্ছি কিন্তু তাকাতে পারছিনা।পুরো শরীর ব্যথা করছে।খুব শীত করছে।একটু পর কপালে ভেজা কাপড়ের উপস্থিতি টের পেলাম।পুরো শরীর যেন শিউরে উঠলো।আমি শীতে কাঁপছি।মনে হচ্ছে শরীরে ভারী কিছু চাপা দিলে কাঁপুনি কমবে।আমি চোখ বন্ধ করেই গায়ের উপর দেওয়া কম্বলটা খামচে ধরলাম।হঠাৎ উমান ভাইয়া কপালের ভেজা কাপড় তুলে নিলেন।আমার গালে হাত দিয়ে বললেন,

‘শীত করছে?একটু উঠ,একটা মেডিসিন খেলেই ঠিক হয়ে যাবি।প্লিজ উঠ।’

আমি ধীরে ধীরে চোখ খুললাম।উমান ভাইয়া!অনেক বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে উনাকে।উনি আমার চোখের কোনা দিয়ে গড়িয়ে পরা অশ্রু মুছে দিয়ে আমার মাথার পেছনে হাত দিয়ে আমাকে বিছানা থেকে একটু উচু করে আমার মুখে প্রায় তিন-চারটে ট্যাবলেট দিয়ে পানি দিলেন।আমি মেডিসিন খেয়ে বালিশে মাথা রেখে চোখবন্ধ করলাম।উমান ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে নরম কন্ঠে বললেন,

‘খুব ব্যথা করছে?এই সৌম্য দেখ না একটু?’

আরেকটা লোকের কন্ঠ শুনতে পেলাম।উনি বললেন,

‘আরে তুই থাম এবার।এত কথা বলছিস কেন?জ্বর এসেছে ওর,তাকাতেও পারছেনা আর তুই শুরু করেছেসিস বক বক।এই তুলো গুলো আগে সরা ইয়ার।ডক্টর হলেও এসব ব্লাড টাড একদম দেখতে ইচ্ছে করেনা।’

মুখের উপর গরম নিঃশ্বাস পরছে।বুঝতে পারছি উমান ভাইয়া আমার মুখের উপর ঝুকে আছেন।কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর কপালে উনার গালের ছোয়া পেলাম।উনি আমার কপালে গাল ঠেকিয়ে জ্বর চেক করছেন।আম্মুও আগে এমন করে জ্বর চেক করতো।আমি বিরবির করে আম্মুর কথা বলতেই উনি আমার কপালে কিস করে বললেন,

‘তুই আজ এখানেই থাক।ওর যদি কোন প্রবলেম হয়।জ্বর তো কমছেই না।’

‘প্রবলেম আর হবেনা।মেডিসিন যখন খেয়েছে একঘন্টার মধ্যে জ্বর চলে যাবে।আর এই ব্যথাও কমে যাবে।ডোন্ট ওরি।আমি আজ থাকতে পারবোনা।আমার রাতের ডিউটি দোস্ত।কাল একবার এসে দেখে যাব।আর প্রবলেম হলে আমাকে ফোন দিস।’

এরপর কিছু শব্দ পেলাম।তারপর পায়ের শব্দ পেলাম।ধীরে ধীরে শব্দগুলো ক্ষীণ হয়ে আসলো।আমি বিরবির করে উমান ভাইয়াকে ডাকছি কিন্তু কোন সাড়াশব্দ নেই।একসময় ঘুমিয়ে গেলাম।

আমার ঘুম ভাঙলো দুপুর বারোটায়।মাথার উপর ফ্যান ঘুরছেনা তাই গরম লাগছে।গায়ের উপর থেকে মোটা কম্বলটা সরিয়ে দিয়ে কম্বলের উপর পা তুলে দিলাম। ওয়াশরুম থেকে পানি পরার আওয়াজ আসছে।উমান ভাইয়া মনে হয় ভেতরে আছেন।আমি ধীরে ধীরে উঠে বালিশে হেলান দিয়ে বসলাম।গলা,কাঁধ চিনচিন করছে আর পেটে জ্বলছে।ডান হাতের অবস্থাও ভাল নয়।আমি ভ্রু কুচকে পরনে থাকা টিশার্টের দিকে তাকালাম।টিশার্টটা অনেক ঢোলা,মনে হচ্ছে কিছুই পরে নেই।এটা উমান ভাইয়ার টিশার্ট।কালই শপিংয়ে গিয়ে কিনেছিলেন।কিন্তু কথা হল আমি তো এটা পরিনি তাহলে কে পরিয়ে দিল?উমান ভাইয়া?ছিঃ…..না।এটা যেন না হয়।আগের বারের মতো উমান ভাইয়ার কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড যেন পরিয়ে দেয়,প্লিজ আল্লাহ্‌ প্লিজ!

বলতে বলতেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে উমান ভাইয়া বেরিয়ে আসলেন।আমি উনাকে দেখে হা।এত স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে উনাকে!উনি শুধু একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পরে আছেন।এই প্রথম উনাকে শার্ট বা টিশার্ট ছাড়া দেখলাম।এত ফর্সা উনি,আল্লাহ্!সেজন্যই উনি আমাকে কালো দেখেন।উনার পাশে আমি শুধু কালো নয় একদম পেত্নি।উনি কাঁধের উপর সাদা টাওয়াল নিয়ে মাথা মুছছেন।উনার একহাতে কিছু ভেজা ড্রেস।আমাকে দেখেই খুশি হয়ে আমার কাছে আসলেন।ভেজা ড্রেস গুলো বিছানায় রেখেই আমার গালে কপালে হাত দিয়ে বললেন,

‘এখন কেমন লাগছে?’

আমি উনার হাত সরিয়ে দিলাম।থমথমে মুখ করে বললাম,

‘ফ্যান ছাড়ুন,গরম লাগছে।আর আপনি চলে যান এখান থেকে।ভাল লাগছেনা আপনাকে।’

উনি ফ্যানেরর সুইচ অন করে সোজা ব্যালকনিতে গিয়ে ভেজা ড্রেস গুলো শুকোতে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে রুমে আসলেন।আমার পাশে বসে আবার আমার গালে কপালে হাত দিয়ে বললেন,

‘ব্যথা করছে?আগের চেয়ে কমেছে?’

আমি গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,

‘কালকের ওই লোকটা কে ছিল উমান ভাইয়া?’

উনি নরম কন্ঠে বললেন,

‘দিস ইজ উম ফর ইউ।চল ফ্রেশ হবি।’

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘লোকটা কে?বাবা কোথায়?ফোন দিন ইমরুল আঙ্কেলের সাথে কথা বলবো।’

উনি আমার কপালের চুল কানে গুজে দিয়ে বললেন,

‘আগে ফ্রেশ হয়ে খাবি তারপর সব বলবো।’

ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে আবার শুলাম।টিশার্টের সাথে ঘর্ষণ লেগে পেটের দিকটা একদম জ্বলে যাচ্ছে।উমান ভাইয়া না থাকলে টিশার্ট পেটের উপরে তুলে রাখতাম।আমি শুয়ে থেকে উমান ভাইয়ার দিকে তাকালাম।উনি বিছানার কোনায় বসে খাচ্ছেন আর ফোনে কথা বলছেন।একটু পর উনার খাওয়া শেষ হল আর কথা বলাও।উনি প্লেট নিয়ে বাহিরে যেতেই আমি উঠে বসে পেট থেকে টিশার্ট সরিয়ে দেখতে লাগলাম।গজ কাটা জায়গা থেকে সরে গিয়ে জরে উঠেছে সেজন্যই এভাবে জ্বলছে।আমি একহাতে গজ ঠিক করতে লাগলাম।উমান ভাইয়ার পায়ের আওয়াজ পেয়েই টিশার্ট নামিয়ে দরজার দিকে তাকালাম।উনি দরজা দিয়ে ঢুকে ডাকদিকে ঘুরে ওয়্যারড্রপের উপর থেকে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে এসে আমার পাশে বসে বক্স খুলতে খুলতে বললেন,

‘ঘুম পাচ্ছে?’

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘না।আপনি আগে বলুন ওই লোকটা কে?কিসের সিডস?কিসের ফর্মুলা?’

উনি বক্স থেকে তুলো,গজ আর এ্যান্টিসেপ্টিক বের করে বললেন,

‘তোকে এসব জানতে হবেনা।’

‘হবে,আপনি বলুন।’

জেদ ধরে বললাম আমি।উনি তুলোই এ্যান্টিসেপ্টিক লাগিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘তোকে কেন বলবো?আমার লাভ?’

‘একশো টাকা দিব।আপনি তো টাকার জন্য সব করতে পারেন।একশোতে হবে নাকি আরও লাগবে?’

উনি হু হা করে হেসে দিলেন।আমি রেগে বললাম,

‘এই একদম হাসবেন না।আপনাকে আমার চেনা হয়ে গেছে।লোভী একটা!!এখন বুঝতে পারছি দেনমোহর পাঁচটাকা কেন!এমন লোভী আর কৃপণ মানুষ আমি জীবনেও দেখিনি।’

উনি হাসি থামিয়ে আমার আরও কাছে এগিয়ে আসলেন।মুচকি হেসে আমার গালে হাত দিয়ে বললেন,

‘সেই নগদ পাঁচটাকাও তো তুই ফেলে দিয়েছিস।এখানে ব্যথা করছে?’

আমি রেগে গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিলাম।উনি আমার হাত টেনে নিয়ে গজ খুলতে খুলতে বললেন,

‘এমন করে রাগবি নাতো,দাদির মতো ডাইনি ডাইনি লাগে।আচ্ছা তুই দাদির মতো হয়েছিস কিভাবে বলতো?দাদিকে তো কাছে পাসনি কখনও।কিভাবে তার মতো হলি?’

আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,

‘আমি আম্মুর মতো হয়েছি।’

উনি হাত থেকে গজ খুলে কাটা জায়গায় এ্যান্টিসেপ্টিক লাগাতে লাগাতে বললেন,

‘আম্মুর মতো হয়েছিস তাহলে দাদির মতো রেগে যাস কেন?অহংকারে তো পা মাটিতে পরেইনা।কিসের এত অহংকার তোর,দেখতে তে পুরো পেত্নীর মতো।’

আমি উনার এসব ফালতু কথাকে পাত্তা না দিয়ে ভ্রু কুচকে বললাম,

‘সাদ কে উম ভ..’

উনি আমার মুখ চেপে ধরে আমার দিকে চোখ গরম করে তাকালেন।আমি মুখ থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে মেজাজ নিয়ে বললাম,

‘ভাইয়া,ভাইয়া,ভ..’

উনি আবার আমার মুখ চেপে ধরলেন।রাগী কন্ঠে বললেন,

‘আর একবার ভাইয়া বললে থাপ্পড় দিয়ে গাল বাঁকা করে দিব।’

আমি মুখ থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,

‘এই শুনুন আমি আপনাকে ভয় পাইনা।আমার একটা পুলিশ ভাইয়া আছে,ভাইয়াকে বলে আপনাকে জেলে ঢুকিয়ে দিব।’

উনি ভ্রু কুচকে আমার গলায় তুলো ঠেকিয়ে বললেন,

‘আমার অপরাধ?’

আমি একহাত উনার হাতের উপর রেখে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘আপনি একটা লোভী।টাকার জন্য আমাকে বিয়ে করেছেন।আমার তো বিয়ের বয়সই হয়নি।ঘুষ দিয়ে বিয়ে করছে।আপনি কতগুলে ক্রাইম করেছেন,আল্লাহ্‌!আর আপনি একটা গুন্ডা,আপনার কাছে অস্ত্র থাকে।সব বলে দিব আমি নাসির ভাইয়াকে।’

উনি চুপচাপ আমার ড্রেসিং করছেন আর আমি বকবক করছি।একটা কথাও বের করতে পারছিনা উনার মুখ থেকে।এই লোক ভীষণ চাপা।গলা কাঁধ আর হাতের ড্রেসিং শেষ করে উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘পেটের টাও করে দিই?’

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,

‘না।’

উনি উনার হাতে নতুন গজ পেচাতে পেচাতে বললেন,

‘নাহ করে দিই,করতে হবে।’

আমি তাড়াহুড়ো করে কম্বল গায়ে জড়িয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে তুতলিয়ে বললাম,

‘হহবে ননা।আআপনি এএখন যান।’

উনি সবকিছু বক্সে তুলে বক্স নিয়ে উঠে যেতে যেতে বললেন,

‘ওকে ঘুমা,আমি ল্যাবে আছি।’

উনি ওয়্যারড্রপের উপর বক্স রেখে দরজার কাছে যেতেই আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘ল্যাবে থাকেন কেন এত?বাবাকে বলে দিব।বাবা আমাকেই কখনও যেতে দেয়নি ওখানে আর আপনি কেন যাবেন?বাবার ইম্পরট্যান্ট ডকুমেন্ট থাকতে পারে,আপনি যাবেন না ওখানে।’

উনি পেছনে ঘুরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

‘চুপচাপ ঘুমিয়ে যা।’

আমি বিছানা থেকে নামতে নামতে বললাম,

‘ঘুম পাচ্ছেনা আমার।আমিও যাব।আপনাকে বিশ্বাস নেই,ইম্পরট্যান্ট কিছু চুরিও করতে পারেন।চোর একটা!!’

উনি আমার দিকে তেড়ে আসলেন।আমি পেটে হাত দিয়ে অপ্রস্তুত হেসে বললাম,

‘সরি,চোর নয় গ্রীডি।গ্রীডি ম্যান।’

উনি ডিরেক্ট আমাকে কোলে তুলে নিলেন।পেটে লাগায় আমি চোখমুখ খিচে আহ্ বলে উঠলাম।উনি আমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে আমার পাশে শুলেন।আমি অন্যপাশ দিয়ে উঠে যাব সেই সুযোগও আমাকে দিলেন না।আবার আমার পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে আলতো করে আমার পেট জড়িয়ে ধরলেন।কনুইয়ে ভর দিয়ে আমার মুখের উপর ঝুকে মুচকি হেসে বললেন,

‘না ঘুমালে ছাড়বোনা।’

আমি মুখ ফুলিয়ে নিজের অবস্থান দেখে নিয়ে মিনমিন করে বললাম,

‘কালকের ওই লোকটার কথা না বললে ঘুমাবোনা।’

উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।উনার নিঃশ্বাস আমার মুখে পরে কপালের ছোট চুলগুলো কেঁপে উঠলো।উনি কয়েকসেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,

‘বলছি,চোখ বন্ধ কর।’

আমি কৌতূহলি হয়ে চোখ বন্ধ করলাম।উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

‘সাদ আমার বেস্টফ্রেন্ড।’

আমি চোখ খুলে বললাম,

‘আপনার বেস্টফ্রেন্ড?এখনও?’

উনি মুখ মলিন করে বললেন,

‘হুম এখনও আর সারাজীবন থাকবে।’

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘আপনি ওই খারাপ লোকটাকে এখনও বেস্টফ্রেন্ড ভাবেন?’

উনার চোখ ছলছল করে উঠলো।ধীরে ধীরে আমার গলার মধ্যে মুখ গুজে থেমে থেমে ধরা গলায় বললেন,

‘পনেরো দিন আগে।তোকে স্কুলে নিতে গিয়েছিল।জানতে পেরে ওরা ওকে নিয়ে চলে গেল।’

‘আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।কি বলছেন আপনি এসব?’

উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।গলায় পানির অস্থিত্ব টের পেলাম।কাঁদছেন উনি!!কেন?উনিও চুপ করে আছেন আমিও চুপ করে আছি।আর কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছেনা।নিশ্চয় অনেক খারাপ কিছু সেজন্য উনি কাঁদছেন।আমি মুখ মলিন করে উনার হাতের উপর হাত রেখে উনাকে সান্ত্বনা দিলাম।

প্রায় আধ ঘন্টা ধরে উনি একইভাবে আমার গলার মধ্যে মুখ গুজে আছেন।কান্না টান্না আর কিছু বুঝতে পারছিনা।ঘুমিয়ে গেলেন নাকি!!আমি উনার হাতে পিঠে হাত দিচ্ছি,টিশার্ট খুটলাচ্ছি তাও উঠছেন না।আমাকে ঘুম পাড়াতে এসে লোভী লোকটা নিজেই ঘুমিয়ে গেছেন।আমি ধীরে ধীরে পা দিয়ে উনার পা সরানোর চেষ্টা করতেই উনি একটু নড়েচড়ে পাশের বালিশে চিৎ হয়ে শুলেন।আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।নিঃশব্দে বিছানা থেকে নেমে ধীরে ধীরে হেঁটে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।বাবার ল্যাবের দিকে পা বারালাম।ল্যাবে এমন কি আছে সেটায় আমি দেখতে চাই।

বাবার ল্যাবে ঢুকে আমি ঠোঁট উল্টে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। রুমের মেঝেতে সিলভার কালার একটা ল্যাপটপ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছেনা।এর নাম ল্যাব?হাউ ফানি!ল্যাপটপটা নিয়ে খোলার চেষ্টা করলাম কিন্তু স্ট্রং পাসওয়ার্ড দেওয়া আছে তাই খুলতে পারলাম না।ল্যাপটপ ছাড়া যেহেতু রুমে আর কিছু নেই তারমানে সবকিছু এই ল্যাপটপেই আছে।আমি ল্যাপটপ নিয়ে এসে আমার রুমে লুকিয়ে রাখলাম।উমান ভাইয়া এখনও ঘুমোচ্ছেন।বিছানার উপর উনার ফোন পরে থাকতে দেখে আমি ফোন নিয়ে ব্যালকনিতে চলে আসলাম।ফোনও লক করা আছে।কি এক ঝামেলা!ডিসপ্লে পিকচারে আমার ছবি দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।আমার ফোনেই আমি নিজের ছবি দিইনা আর এই বদমাইশ লোক উনার ফোনে আমার ছবি দিয়ে রেখেছেন।বাই দ্যা ওয়ে,এই ছবি উনি কোথায় পেলেন?এমন ছবি তো আমি কখনও তুলিনি!আমি ঠোঁট উল্টিয়ে ইমার্জেন্সি কল চাপলাম।পাঁচটা নাম্বার ইমার্জেন্সিতে সেইভ করা আছে।দুটো স্যার ওয়ান,স্যার টু দিয়ে,একটা চাচ্চু দিয়ে,একটা শিপন আর একটা সাদ দিয়ে।আমি কোনকিছু না ভেবেই চাচ্চু অর্থাৎ আমার বাবার নাম্বারে ফোন দিলাম।জানি কল রিসিভ হবেনা তাই ফোন কানে ধরে মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকালাম।আমাকে অবাক করে দিয়ে কেউ ফোন রিসিভ করলো।

‘হ্যালো উমান?’

বাবার কন্ঠ।আমি হন্ত দন্ত হয়ে বললাম,

‘বাবা?বাবা তুমি,বাবা?কোথায় তুমি?কিহল কথা বলছোনা কেন?বাবা?বাবা?হ্যালো বাবা?’

কল কেটে গিয়েছে।কাঁপা হাতে একের পর এক কল দিতে থাকলাম।প্রতিবারই নট রিচেবল বলছে।চিন্তায় আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছে।খুব অস্বস্তি হচ্ছে,হাত-পা কাঁপছে,গা গুলাচ্ছে।কোনরকম ওঠে ওয়াশরুমে গিয়েই বমি করে দিলাম।চোখে মুখে পানি দিয়ে একটু সুস্থির হয়ে আবার বাবাকে কল দেয়ার জন্য বাইরে আসলাম।হাত এত বেশি কাঁপছে যে ফোনটা হাত থেকে পরেই গেল।উমান ভাইয়া শব্দ পেয়ে নড়ে চড়ে অন্যপাশ ফিরে শুলেন।আমি ফোন তুলে নিয়ে এলোমেলো পা ফেলে ড্রইং রুমে আসতেই মাথা ঘুরে পরে গেলাম।

চলবে………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here