গল্প:-মনের মহারাণী
লেখিকা:-Sohani_Simu
পর্ব:-২৬

চোখ খুলে দেখি আমার শরীরের ঊর্ধ্বাংশ নিচের দিকে ঝুলছে।কারও এক হাঁটুর উপর পেট রেখে উপুর হয়ে আছি।তলপেটে আর পিঠে চাপ লেগে নাক মুখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।একটু পর কেউ আমাকে হাঁটু থেকে টেনে তুলে মাটিতে শুয়ে দিল।চোখের সামনে উমানকে দেখতে পেলাম।উনি আমার দিকে ঝুকে পেটে চাপ দিচ্ছেন।আবার মুখ দিয়ে পানি বের হতে লাগলো।ব্যাপারটা খুবই কষ্টকর।এমন অবস্থাতেই মাথাটা ডান দিকে কাত করলাম।পরিচিত অপরিচিত সব মিলিয়ে দশ-পনেরো জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।এরা সবাই বাসার কাজের লোক।মিনি একটা কাজের মেয়ের কোলে চড়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে শুকনো মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আম্মু মাটিতে বসে নানি আর আরেকটা মহিলার গায়ে হেলান দিয়ে কাঁদছে।উমান আমার গাল ধরে আকাশের দিকে মুখ করালেন।আমার গাল ঝাকিয়ে উত্তেজিত হয়ে বললেন,

‘মিতি,মিতি শ্বাস নে।চুপ করে আছিস কেন?শ্বাস নে।’

আমি অনুভূতি শূন্য হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনার ভেজা চুল থেকে টপ টপ করে পানি পরছে আমার মুখের উপর।আমার ঠান্ডা গালে উনার হাতের গরম স্পর্শ ঠিকই পাচ্ছি কিন্তু শ্বাস নিতে পারছিনা।উনি উত্তেজিত হয়ে আমার নাকের সামনে আঙুল ধরে বুঝার চেষ্টা করছেন শ্বাস নিচ্ছি কিনা।কয়েকসেকেন্ড পরই উনি এক হাতে আমার নাক চেপে ধরলেন অন্যহাতে আমার চিবুক ধরে মুখ খুলে শ্বাস নেওয়ার কৃত্রিম পদ্ধতি ব্যবহার করলেন।কয়েকসেকেন্ড পর পর উনি এমনটা কয়েকবার করার পর আমার কাশি উঠে গেল।আবার নাক মুখ দিয়ে পানি বের হলো।এবার জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম কিন্তু অস্বস্তি হচ্ছে।উমান আমাকে তুলে জড়িয়ে ধরে স্বস্তির শ্বাস ফেলে বললেন,

‘উফ্ আল্লাহ!!মিতি?এই মহারাণী?এখন ঠিক আছিস?’

আমি কিছুই বলতে পারছিনা।নাকে পানি যাওয়ায় মাথার মধ্যে কেমন যেন হচ্ছে।কথা বলারর শক্তি পাচ্ছিনা।প্রীতি আপু একটা টাওয়াল নিয়ে দৌঁড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

‘এসব কি করে হল উমান ভাইয়া?একজন যেয়ে বলল মিতি পানিতে পরেছে।শুনে সবাই আসছে।দেখি ওর মাথা মুছিয়ে দিই।’

আমি উমানের বুকে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে প্রীতি আপুর কথা শুনলাম।উমান প্রীতি আপুর থেকে টাওয়াল নিয়ে আমার মাথা আর মুখ মুছে দিয়ে আমার গায়ে টাওয়াল জড়িয়ে দিলেন।প্রীতি আপু আম্মুর কাছে যেয়ে বলল,

‘ছোট মামি আর কেঁদোনা,মিতি ভাল হয়ে গেছে।’

আম্মুর কথা শুনতে পেলাম না।উমান আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটা দিলেন।আমি হাত নড়ানোর শক্তিও পাচ্ছিনা,নিস্তেজ হয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছি আর আধ খোলা চোখে এটা-ওটা দেখছি।পুকুর পাড় থেকে কিছুটা দূর যেতেই বড়াম্মু,দাদি,উর্মি আপু,ফুপ্পি আর বড়াব্বুকে দেখলাম,হন্তদন্ত হয়ে এদিকেই আসছে সবাই।ওদের দেখেও উমান থামলেন না,কোন কথা না বলেই আমাকে নিয়ে বাসায় এসে উনার রুমে ঢুকলেন।উনার পেছন পেছন সবাই আসলো।উনি আমাকে ভেজা অবস্থাতেই বিছানায় শুয়ে দিয়ে সবাইকে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে বললেন।কেউ গেল না।বরং বড়াব্বু-বড়াম্মু আর ফুপ্পি মিলে উনাকেই রুম থেকে বের করে বাইরে নিয়ে গেলেন।আম্মু এখনও এখানে আসতে পারেনি।আম্মুর আবার এই এক প্রবলেম অন্য সময় খুব চটপটে হলেও আমি বা মিনি অসুস্থ হলে আম্মুই আগে ফিট লেগে পরে থাকে।

উর্মি আপু আর প্রীতি আপু বাদে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।উর্মি আপু আর প্রীতি আপু মিলে আমার ভেজা ড্রেস চেন্জ করে দিল।আমার সাথে কথা বলার কত চেষ্টায় না করছে কিন্তু আমার ইচ্ছে করছেনা।বিছানা অনেকটা ভিজে গিয়েছে।প্রীতি আপু বেডশিট চেন্জ করে দিল।উর্মি আপু আমার হাতের তালু ঘষতে ঘষতে বলল,

‘প্রীতি,ড্রায়ার নিয়ে এসে ওর চুলটা শুকিয়ে দে।শরীর এত ঠান্ডা হয়ে আছে কেন?ভয় লাগছে।আমার ফোনটা নিয়ে আসিস ডক্টরের সাথে কথা বলতে হবে।’

প্রীতি আপু তড়িৎ গতিতে দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।দরজা বিছানার সোজা হওয়ায় বাইরে দেখতে পেলাম উমান ভেজা কাপড়েই বাইরে দাঁড়িয়ে সবার সাথে চেঁচিয়ে কথা বলছেন।মনে হচ্ছে দাদির সাথে রাগারাগি করছেন।

উর্মি আপু আমাকে মোটা কম্বল দিয়ে ঢেকে দিল।প্রীতি আপু ড্রায়ার আর ফোন নিয়ে দৌঁড়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।দুজন মিলে আমাকে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে চুল শুকাতে লাগলো।উর্মি আপু ফোন নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল।একটুপর ব্যালকনি থেকে এসে রুমের দরজা খুলে বলল,

‘উম এখন এসব কথা থাক এখনই ওকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে।তুই তাড়াতাড়ি চেন্জ করে নে।’

উমান হন্তদন্ত হয়ে রুমে এসে বিছানায় একহাতে ভর দিয়ে অন্যহাত আমার গালে রেখে আমার দিকে ঝুকে বললেন,

‘কোথায় কষ্ট হচ্ছে?শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে?’

মনের কথা বলেছেন একদম।শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।মনে হচ্ছে ভেতরে আরও অনেক পানি আছে।শ্বাসনালীতে কেমন যেন হচ্ছে।পানসে ঢোক গিলে লো ভয়েসে বললাম,

‘বুক ব্যথা করছে।’

উমান এক মুহূর্তও দেরি না করে শুকনো ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলেন।দুমিনিটে কালো প্যান্ট আর সাদা টিশার্ট পরে বের হয়ে এসে প্রীতি আপুকে বললেন,

‘প্রীতি তুই যা গাড়ি বের করতে বল।’

প্রীতি আপু বিছানা থেকে নেমে চলে গেল।উমান আমার উপর থেকে মোটা কম্বল সরিয়ে আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটা দিলেন।আমি উনার বুকে মাথা হেলান দিয়ে রাখলাম।হাত ঝুলছে কিন্তু ঠিক করতে ইচ্ছে করছেনা।কেউ একজন হাতটা তুলে আমার পেটের উপর রাখলো।

হসপিটালে এসে উমান আমাকে বেডে শুয়ে দিয়ে আমার পাশে দাঁড়ালেন।প্রেগনেন্সির জন্য উমান উর্মি আপুকে সাথে নিয়ে আসেননি,বড়াব্বু আর প্রীতি আপু এসেছে।ওরা বাইরে অপেক্ষা করছে।ডক্টর সোহরাব,উর্মি আপুর কলিগ প্রথমেই আমার বুকে স্টেথিস্কোপ ধরলেন,জোরে জোরে শ্বাস নিতে বললেন।আমাকে উপুর করে দিয়ে পিঠেও স্টেথিস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে উমানের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘দুই ফুসফুসেই পানি আছে।এরকম অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে আগে বুঝতে পারেননি?’

উমান চিন্তিত হয়ে বললেন,

‘এখন কি করতে হবে?’

ডক্টর আমার ডানহাতের কব্জির নিচে ধরে বললেন,

‘কৃত্রিম পদ্ধতিতে পানি বের করতে হবে।আই মিন মুখেমুখ পদ্ধতি।’

উমান ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘করেছি তো।’

ডক্টর একটা নার্সকে ডেকে উমানের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ভুল ভাল কিসব সব করেছেন।আপনারা অনেক দেরি করে ফেলেছেন।আরও আগে নিয়ে আসতে হত।উনি যে এতক্ষণ বেঁচে আছেন সেটায় ভাগ্যের ব্যাপার।’

উমানের শুকনো মুখ আরও শুকনো হয়ে গেল।নার্স আসতেই ডক্টর নার্সকে বললেন,

‘গ্যাস রেডি করুন,গ্যাস দিতে হতে পারে।’

নার্স জ্বী স্যার বলে সাদা পর্দার আড়ালে চলে গেলেন।ডক্টর একটু ইতস্তত করে বললেন,

‘প্রবলেম না থাকলে শুরু করি?’

উমান ভ্রু কুচকে বললেন,

‘কিসের প্রবলেম?’

ডক্টর আমার দিকে ঝুকে বললেন,

‘কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিতে হবে।’

উমান উত্তেজিত হয়ে বললেন,

‘হোয়াট??না,সরুন,আমি দিব।’

ডক্টর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে বললেন,

‘ওকে ওকে।আগে নিয়মটা বুঝে নিন।ওর ঘাড়ের পেছনে একহাত রাখুন,অন্যহাতে কপাল চেপে ধরুন।’

উমান আমার দিকে ঝুকে তাই করলেন।আমি ভীত চোখে উমানের দিকে তাকিয়ে আছি।উমান ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘এখন?’

ডক্টর আমার মাথার নিচ থেকে বালিশ টেনে নিলেন।কপালের উপর থেকে উমানের হাত সরিয়ে দিয়ে বললেন,

‘হচ্ছেনা,হাত সড়ান।’

উমান ভ্রু কুচকে ডক্টরের দিকে তাকালেন।ডক্টর মৃদু হেসে বললেন,

‘ডোন্ট ওয়ারি আপনিই করুন।আমি শ্বাসনালী খুলে দিব জাস্ট।’

ডক্টর ঘাড়ের পেছনে আর কপালে এমনভাবে ধরলেন আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপনাআপনি মুখ হা হয়ে গেল।ডক্টর ব্যস্ত হয়ে বললেন,

‘হয়েছে।শুনুন,এমনভাবে বাতাস দিবেন যেন বাতাস বাইরে না আসতে পারে।মনে রাখবেন তিন সেকেন্ডের বেশি নয়।পেশেন্টের ফুসফুস দুটোই ফুলতে হবে সেই অনুযায়ী তিন সেকেন্ডর মধ্যেই দ্রুত গতিতে ফু দিবেন।ভুল করবেন না তাহলে আরও বেশি প্রবলেম হয়ে যাবে।নাকটা আগে চেপে ধরুন।’

আমি তো ভয় পাচ্ছিই এবার উমানও ভয় পাচ্ছেন।উনি আমার নাক চেপে ধরে অনেক জোরে মুখের মধ্যে বাতাস দিলেন।ডক্টর এক দুই তিন বলছেন আর উনি ছেড়ে দিচ্ছেন।চার পাঁচবার এমনটা করার পর বাতাস সজোরে কোথাও ধাক্কা লাগতেই নাক মুখে পানি উঠে আসলো।চোখ খিচে কাশতে কাশতে পাশফিরে শুলাম।ডক্টর আমাকে চিৎ করে দিয়ে বললেন,

‘ব্রেথ,ব্রেথ….হয়নি আবার,উমান ফাস্ট।’

আমি শ্বাস আটকে মারায় যাচ্ছিলাম,উমান আমাকে বাঁচালেন।এখন শ্বাস নিতে আর কষ্ট হচ্ছেনা।কথা বলতেও প্রবলেম হচ্ছেনা কিন্তু কথা বলা কিসের কি উমানকে জড়িয়ে ধরে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করছি।আজকে কি থেকে কি হয়ে গেল।সারাজীবন মনে থাকবে এই ভয়ানক দিনটির কথা।আর ওই পুকুরের ধারের কাছেও কোনদিন যাবনা।উমান আমার মাথা উনার বুকে চেপে ধরে বললেন,

‘কাঁদিস না,প্লিজ স্টপ ইট!’

ডক্টর আমাকে ভাল করে চেকআপ করে উমানকে বললেন,

‘ফুসফুসে আর পানি নেই।বাসায় নিয়ে যেতে পারেন।সেনসিটিভ জিনিসে আঘাত পেয়েছে,রিকভারিতে সময় লাগবে।বুকব্যথা করলে দেরি না করে হসপিটালে নিয়ে আসবেন।নিউমোনিয়া হলে বিপদ। বিকেলের মধ্যেই সেড়ে যাবে আশা করা যায়,ডোন্ট ওয়ারি।’

বাসায় আসার পর জ্বর আসলো।সারাদিন কম জ্বর থাকলেও রাতের দিকে জ্বরে বিছানা থেকে উঠতে পারছিনা।আমি আম্মুর রুমে বিছানায় শুয়ে আছি।সাদ ভাইয়া আর শিপন ভাইয়া হাবিজাবি কিসব খাবার দাবার নিয়ে আমাকে দেখতে এসেছেন।উনারা জানতেনই না এত কিছু হয়ে গিয়েছে।ফুপ্পি বাসায় ছিলনা দেখে দুই ভাই নাকি বাসায় বিরিয়ানি রান্না করে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছিল।যাইহোক,খাবারের দিকে তাকালেই আমার গা গুলোচ্ছে।আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আমি চোখবন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছি।সাদ ভাইয়া উমানকে ডেকে বললেন,

‘চল একটু বাইরে যাই,কথা আছে।’

উমান বিছানার এক কোনায় বসে থেকেই শক্ত কন্ঠে বললেন,

‘সব ক্যান্সেল করে দে,কোথাও যাচ্ছিনা।’

সাদ ভাইয়া কিছু বললেন না।শিপন ভাইয়া বললেন,

‘সাদ একা যাবে টরেন্টোতে?’

সাদ ভাইয়া বললেন,

‘ধূর আমিও তাহলে যাব না।’

উর্মি আপু মৃদু হেসে বললেন,

‘উমের টা নাহয় বুঝলাম,তুই কেন যাবিনা ভাই?

প্রীতি আপু খুশি হয়ে বলল,

‘উমান ভাইয়া আর যাবেনা?’

আম্মু শান্ত কন্ঠে বলল,

‘তোমরা একটু আস্তে কথা বল,ও ঘুমোচ্ছে।’

আমি ঘুমোইনি,এমনি চোখবন্ধ করে আছি।বড়াম্মু সবাইকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলল।হালকা করে একবার তাকিয়ে দেখি ভাইয়া আর আপুরা চলে যাচ্ছে।উমানও আমার দিকে তাকিয়ে থমথমে মুখ করে চলে গেলেন।চোখ বন্ধ করে বাম পাশ ফিরে শুলাম।পা টা ঠিক করে মেলে দিতেই কাউকে লাথি লাগলো।মিনি ওটা।পায়ের নিচে কি করছে!বিরক্ত হয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললাম,

‘আন্মু,ওকে সড়াও।’

মিনি খুটখুট করতে করতে বলল,

‘আম্মু ঘুম দিব।’

মাথায় আম্মুর হাত চেপে ধরে বললাম,

‘আগে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দাও।’

আম্মু আমার মাথায় চুমু দিয়ে বলল,

‘তুমি একটু শুয়ে থাকো আমি ওকে খাইয়ে নিয়ে আসি।তারপর দুজনকে এক সাথে ঘুমিয়ে দিব।’

বড়াম্মু বলল,

‘মোহনা,আমি এখানে আছি তুুই যা।’

আম্মু মিনিকে নিয়ে চলে গেল।বড়াম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।আমি কখন ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতেই পারলাম না।

চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here