গল্প:-মনের মহারাণী
লেখিকা:-Sohani Simu
পর্ব:-২৩

সন্ধ্যা হবে হবে ভাব।এমন সময় আমরা রাজশাহীর বাসায় আসলাম।আমাদের দেখেই সবাই ড্রইংরুমে আসলো।নিচের একটা রুম থেকে আম্মু আর মিনিকে বের হতে দেখেই দৌঁড়ে গিয়ে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম।অন্যদিকে সবাই উমান আর সাদ ভাইয়াকে নিয়ে ব্যস্ত।আম্মু আমাকে অনেক আদর করল।মিনি আমার কোলে উঠার বাইনা করতেই ওকে কোলে নিলাম।এই কয়দিনে মোটিটা আরও মোটা হয়েছে।অনেক কষ্টে ওকে কোলে নিয়ে বললাম,

‘হয়েছে এখন নামো।’

মিনি আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

‘না আল এটটু।’

মুচকি হেসে আম্মুর দিকে তাকালাম।আম্মু আমাদের নিয়ে ড্রইং রুমে সবার কাছে আসলো।উমান একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে আছেন।উনার মুখে মিষ্টি হাসি।ফুপ্পি,বড়াম্মু আর প্রীতি আপু সাদ ভাইয়ার সাথে কথা বলছে।সাদ ভাইয়ার এত কাটা ছেড়া দাগ দেখে সবাই বিচলিত।এরা কেউ জানেনা সাদ ভাইয়ার কি হয়েছিল।আমি ড্রইংরুমে আসতেই সবাই আমার সাথে কুশল বিনিময় করল শুধু দাদি বাদে।দাদি সোফায় ভাব নিয়ে বসে আছেন।প্রীতি আপুও গিয়ে দাদির পাশে বসলো।বড়াম্মু আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।মিনিকে কোল থেকে নামিয়ে আম্মুর পেছনে দাঁড়ালাম।আম্মু আমাকে বলল,

‘দাদির সাথে কথা বল একটু।’

আমি দাদির দিকে তাকালাম।উনি অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন।আমি সালাম দিতেই দাদি উঠে দাঁড়িয়ে সালামের জবাব নিয়ে চলে যেতে লাগলেন।ফুপ্পি আমার কাছে এসে আমার গালে হাত বুলিয়ে বললেন,

‘আমার সোনা মা,কত্ত বড় হয়ে গিয়েছে।’

আমি মাথা নিচু করে মুচকি হাসলাম।এতগুলো মানুষের সামনে লজ্জা লাগছে।আম্মুর শাড়ির আচল ধরে দাঁড়িয়ে আছি।আমার হয়ে আম্মুই সবার সাথে কথা বলছে।এখানে আসার আগে উমান আামাকে বলেছেন বিয়ের কথা যেন এখনই কাউকে না বলি।এখন বললে বাসায় অশান্তি হবে তাই বাবা ফিরে আসলে সবাইকে জানানো হবে।আমি অশান্তির ভয়ে চুপ করে আছি কিন্তু মনে মনে ঠিক করেছি রাতে শোয়ার সময় আম্মুকে সব বলব।প্রায় আধঘন্টা ড্রইং রুমে থেকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য আম্মু আর বড়াম্মুর সাথে নিচেই একটা রুমে আসলাম।এই রুমে আম্মু মিনিকে নিয়ে থাকে।আমি একটা গোলাপি কালার টপস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি উর্মি আপু আর প্রীতি আপুও এসেছে।আমাকে বের হতে দেখেই উর্মি আপু আম্মুকে বলল,

‘প্লিজ কাকি প্লিজ,মিতিকে রাতে আমার কাছে রাখবো।’

আমি মুখ মলিন করে আম্মুর দিকে তাকালাম।আম্মু আমার মনের কথা বুঝতে পেরে বলল,

‘আজকে আমার কাছে থাকুক কাল থেকে তোমার সাথে থাকবে।’

উর্মি আপু হতাশ হয়ে বলল,

‘ঠিক আছে কিন্তু এখন ওকে নিয়ে যাই?গল্প আড্ডা শেষে ঘুমোনোর সময় এখানেই থাকবে।’

আম্মু আমাকে উর্মি আপুর সাথে যেতে বলল।আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপুর সাথে আসতে লাগলাম।উর্মি আপু আমার এক হাত ধরে হাঁটছে আর প্রীতি আপু ফোন টিপছে আর আমাদের পেছন পেছন আসছে।বাসাটা অনেক বড়।এক রুম থেকে আরেক রুমে যেতে অনেক হাঁটতে হচ্ছে।সিঁড়ি ভেঙ্গে দোতলায় আসতেই উর্মি আপু প্রীতি আপুর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘এই প্রীতি তুই আমার রুমে ওয়েট কর আমি মিতিকে নিয়ে দাদির রুম হয়ে আসছি।’

প্রীতি আপু ওকে বলে ফোন টিপতে টিপতে করিডোর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা রুমে ঢুকে গেল।উর্মি আপু প্রীতি আপুর রুমে ঢোকা দেখা শেষে আমার হাত ধরে দক্ষিণ দিকের করিডোর দিয়ে হাঁটা দিলেন।কারুকাজ করা বিশাল একটা কাঠের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম।উর্মি আপু দরজাটা হালকা ফাঁক করে ভেতরে উঁকি দিয়ে তারপর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

‘তুই ভেতরে যা আমি এখনই আসছি।’

আমি উর্মি আপুর হাত ধরে ব্যস্ত হয়ে বললাম,

‘এই না আপু,তুমিও চলো।দাদির সাথে তো আমার তেমন পরিচয় নেই।একা একা যেতে কেমন যেন লাগছে।’

উর্মি আপু মৃদু হেসে বলল,

‘কিছু লাগছেনা তুই যা তো।’

বলেই আপু আমাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে দিল।ভেতরে এসে দরজার কাছে উমানকে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই হকচকিয়ে লাফিয়ে উঠে উল্টোদিক ঘুরে দরজায় হাত দিতেই উমান আমার হাত ধরে ফেললেন।আমাকে এক সাইডে দাঁড় করিয়ে উনি দরজাটা ভেতর থেকে লক করে আমার দিকে তাকালেন।সাদা টিশার্ট আর কালো থ্রি কোয়াটার প্যান্টে আজকে উনাকে অন্যরকম দেখাচ্ছে।ভেজা চুলগুলো দেখে মনে হচ্ছে এইমাত্র শাওয়ার নিয়েছেন।উনি আমার গালে ঠান্ডা হাত ছোঁয়াতেই একধাপ পিছিয়ে এসে মাথা নিচু করে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলাম।এটা উমানের রুম।আগেও একবার এসেছি কিন্তু এত বড় বাসা শুধু একবার দেখে এর ওলি গলি মনে রাখতে পারিনি।আগে যদি বুঝতে পারতাম এটা উনার রুম তাহলে এখানে কিছুতেই আসতাম না।উমান আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

‘এরকম দূরে দূরে ঘুরছিস কেন?আসার পর থেকে কথায় বলতে পারছিনা।’

উনাকে ঠেলতে ঠেলতে বললাম,

‘ছাড়ুন আম্মুর কাছে যাব।’

উনি আমাকে আরও শক্ত করে ধরে বললেন,

‘সকালে যাস।রাতে এখানেই থাকবি তুই।’

সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে উনাকে ঠেলতে ঠেলতে চেঁচিয়ে বললাম,

‘না থাকবোনা এখানে,ছাড়ুন আমাকে,আমমমমম্মু!!’

উনি আমাকে কোলে নিয়ে সোফায় এসে বসে একহাতে আমার কাঁধ জড়িয়ে ধরলেন।টেবিলে অনেক নাস্তা আছে উনি পায়েসের বাটি থেকে একচামচ পায়েস নিয়ে আমার মুখে ধরে মুচকি হেসে বললেন,

‘হা কর।আম্মু এটা তোর জন্য বানিয়েছে।একমাত্র ছেলের বউ তুই।তোর জন্য কত যত্ন করে বানিয়েছে তোর ধারণা নেই।’

খাবনা বলার জন্য মুখ খুলতেই উমান আমার মুখে পায়েস দিলেন।কড়া চোখে উনার দিকে তাকালাম।উনি নিজে একচামচ খেয়ে বললেন,

‘এক্সিলেন্ট!!’

আমি এখনও মুখের মধ্যে খাবার নিয়ে উনার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে আছি।উনি আমার কড়া নজরকে পাত্তা না দিয়ে খাওয়া শুরু করলেন।এই কয়দিন উনার সাথে থেকে বুঝেছি জোরজবরদস্তিতে উনি এক্সপার্ট।উনার যেটা করতে মন চায় উনি সেটায় করেন আর অন্যদেরও উনি যেটা চান সেটায় করান।আমাকে জোর করে খাওয়ানো শেষে বিছানায় আসলেন।ঘড়িতে রাত আটটাও বাজেনি আর উনি এখনই ঘুমোবেন।লাইট অফ করে উনি আমাকে কোলবালিশের মতো করে জড়িয়ে ধরে বললেন,

‘গুড নাইট।’

রেগে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলাম।উনি আমার গলার মধ্যে মুখ গুজে বললেন,

‘লিপ কিস না চাইলে থেমে যা।’

আমি থমথমে মুখ করে বললাম,

‘থাকবোনা এখানে।’

উনি মুখ দিয়ে বিরক্তের শব্দ করে আমাকে নিয়ে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে বললেন,

‘আর একবার থাকবোনা বললে ক্লোরোফর্ম দিব।সেন্সলেস হয়ে পরে থাকবি সারা রাত।দিব?’

ভয় পেয়ে মিনমিন করে বললাম,

‘না,দিয়েন না।আমি তো খারাপ কিছু বলছিনা।আম্মুকে মিস করছি।’

উনি আমার গালে গাল ঠেকিয়ে নরম কন্ঠে বললেন,

‘আর আমি তোকে মিস করসি।আচ্ছা আমি ঘুমিয়ে গেলে চলে যাস।এখন আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দে।’

আমি অন্ধকার সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘এত অন্ধকারে যাব কি করে?’

উমান অন্ধকারে বেডসাইড টেবিল হাতরে ল্যাম্পশেড অন করে বললেন,

‘লাইট অন করে রাখলাম।আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলে ছুটি পাবি নাহলে নয়।’

তেজি কন্ঠে বললাম,

‘বকবক না করে ঘুমান তাড়াতাড়ি।’

উনি মৃদু হেসে চুপ হয়ে গেলেন।আমিও চুপ হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি।উমানের রুমটা বিশাল।আসবাবপত্র যা আছে সবই অনেক সুন্দর।বিছানাটা এত আরামদায়ক যে উঠতেই ইচ্ছে করছেনা।দরজার পাশেই আবলুসের মতো কালো রঙের কাঠের ক্লোজেটের উপর সিরামিকের একটা হাসের শোপিস রাখা আছে।ড্রিম লাইটের আলোতে সেটা চকচক করছে।মেঝের উপরেই সিলিংয়ে ঝুলানো আছে সুন্দর ঝাড়বাতি।মাথার উপর পাঁচ পাখার ফ্যান ঘুরছে নিঃশব্দে।কিছুক্ষণ ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থেকে ডানপাশ হয়ে শুলাম।উমানের হাত আলগা হয়ে গিয়েছে।ঘুমিয়ে পরেছেন কিনা কে জানে!দেয়ালের শৌখিন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সোয়া আটটা বাজে।মনে মনে ঠিক করলাম আর কুঁড়ি মিনিট পর চলে যাব ততক্ষণে উমান নিশ্চিত ঘুমিয়ে যাবেন।এখন ঘুমিয়েছেন কিনা জানার জন্য আস্তে করে উনাকে ডাকতেই উনি নড়েচড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

‘ঘুম পাচ্ছে আর একটু।’

আমি আর কথা বললাম না।কথা বললে উনার ঘুম ভেঙ্গে যাবে সেজন্য।অনড় আর বোবা হয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে আমার চোখও লেগে আসলো।উঠবো উঠবো করেও উঠতে পারছিনা।ঘুমের মধ্যেই মস্তিষ্কের নিউরন গুলো বলছে উঠে আম্মুর কাছে যেতে।উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে আমি উঠে চলে যাচ্ছি কিন্তু আমার শরীর বিছানায় শুয়ে আছে।আত্মাটা খট করে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো।বাইরে কেউ নেই।সবাই ঘুমিয়ে পরেছে।একা একা আমি কোনদিকে যাব ভেবে না পেয়ে আবার রুমের মধ্যে এসে ধপ করে আমার শরীরের মধ্যে ঢুকে পরলাম।উমানকে জড়িয়ে ধরে আম্মুর কাছে যাওয়ার জন্য এক নাগাড়ে রিকুয়েস্ট করতেই আছি।রিকুয়েস্টের কোন শেষ নেই।শেষে উমান বিরক্ত হয়ে আমাকে আম্মুর কাছে রেখে গেলেন।আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে শান্তির ঘুম দিলাম।

চলবে…………….

(ছোট হল।দিবনা ভেবেছিলাম তাও দিলাম।পরের পর্ব ঈদের পর দিব।সবাইকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা “ঈদ মোবারক”।

আর একটা কথা সামনের দুটো দিন মুসলিমদের জন্য খুবই গুরুত্বপূরর্ণ।আপনারা রোজা রাখুন,সালাত আদায় করুন,বেশি বেশি ইবাদত করুন।ইমানের সাথে আরাফাতের একদিন ইবাদত করলে দশহাজার দিনের সাওয়াব পাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here