গল্প:-মনের মহারাণী
লেখিকা:-sohani simu
পর্ব:২০

সাদ ভাইয়ার সামনে উমানের হাতে থাপ্পড় খেয়ে খুব অপমানিত হলাম।গালে হাত দিয়ে দৌঁড়ে রুমে এসে বিছানায় উপুর হয়ে বালিশে মুখ গুজে ফিস ফিস করে কান্না করতে লাগলাম।প্রায় দশ মিনিট পর উমান রুমে আসলেন।আমি মনমরা হয়ে একপাশ হয়ে শুয়ে আছি।উমান এসে আমার উপর গা এলিয়ে দিয়ে বললেন,

‘আমার মহারাণীটা কি করছে?’

আমি উনাকে ঠেলতে ঠেলতে বললাম,

‘সরুন, চলে যান আমার রুম থেকে।একদম কথা বলতে আসবেন না।’

উমান সোজা হয়ে বসে বললেন,

‘তোর ভয় করছেনা একা একা রুমে থাকতে?ওই লোকগুলোকে তো বেঁধে রেখেছি কিন্তু ওদের অনেক বড় গাং আছে।ওদের লোক যেকোন সময় আবার আমাদের এ্যাটাক করবে।আমারই অনেক ভয় করছে আর তোর ভয় করছেনা?’

উঠে বসলাম।উমানের দিকে তাকিয়ে ভীত কন্ঠে বললাম,

‘ওরা আবার আসবে?’

উমান পকেট থেকে ফোন নিয়ে বললেন,

‘হুম যেকোন সময় আসবে।দিনেও আসতে পারে রাতেও আসতে পারে।ওরা মনে হয় তোকে নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত থামবেই না,আসতেই থাকবে।তুই এক কাজ করিস ওরা আসলে আমাকে একটু নক দিস,আমি পাশের রুমে আছি ওকে?’

আমি চোখ বড় বড় উনার একবাহু চেপে ধরে বললাম,

‘না,আপনি কোথাও যাবেন না।এখানে থাকুন।’

উমান আমার হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হয়ে বললেন,

‘না এটা তো তোর রুম,তুই তো আমাকে এখানে থাকতে দিবিনা বললি।আমি বরং পাশের রুমে গিয়ে একটু শুয়ে থাকি।’

উনি সত্যি সত্যি পাশের রুমে চলে গেলেন।আমিও ভয়ে এক দৌঁড়ে পাশের রুমে চলে আসলাম।উমান আর সাদ ভাইয়া বিছানায় বসে থেকে গল্প করছেন আর হাসছেন।আমাকে দেখেই হাসি থামিয়ে দিলেন।সাদ ভাইয়া বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ছিলেন এখন পিঠের নিচ থেকে বালিশ টান দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে বললেন,

‘তোরা এখন যা আমার একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে।’

উমানও উনার পাশের বালিশে মাথা দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে বললেন,

‘আমারও একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে,সারারাত ঘুম হয়নি।এখন একটু ঘুমিয়ে নিই।’

উনারা দুজনই চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলেন।আমি মুখ মলিন করে সোফায় বসলাম।আমার রুমে যাওয়ার আর সাহস পাচ্ছি না।উনারা দুজন তো ঘুমোচ্ছেন।এই সুযোগে খারাপ লোকগুলো যদি আমাকে নিয়ে চলে যায়?মুখ চেপে ধরলে তো একটা আওয়াজ ও বের হয়না।আমাকে নিয়ে গেলে উনারা বুঝতেই পারবেন না।ভেবেই আমার মুখ শুকিয়ে গেল।

কিছুক্ষণ পর সাদ ভাইয়া ঘুমিয়ে গেলেন আর উমান এপাশ-ওপাশ করছেন।আর আমি সোফায় পা তুলে বসে পায়ের নখ খুলাচ্ছি।উমান এপাশ-ওপাশ করতে করতে উঠে বসলেন।বিছানা থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,

‘চল।’

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘কোথায়?’

উনি আমার একহাত ধরে আমার রুমে নিয়ে আসলেন।দরজা বন্ধ করে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে বুকের উপর ফোন নিয়ে টিপতে লাগলেন।আমি গিয়ে সোফায় বসবো তখনই উনি বললেন,

‘ওই শোন,এখানে আয়।’

আমি গুটি গুটি পায়ে বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।উনি একটু সরে গিয়ে আমাকে বসতে বললেন।আমি বসতেই উনি আমাকে টেনে উনার পাশে শুয়ে দিলেন।আমার মাথা উনার হাতের উপর নিয়ে আমার গালে কিস করে আমার হাতে উনার ফোন ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

‘তোর ফেসবুক আইডিতে লগ ইন কর।রাহী কি কি মেসেজ করেছে দেখতে ইচ্ছে করছে।’

এটা কিছুতেই করা যাবেনা।রাহী আমার গুড ফ্রেন্ড ও ভালই মেসেজ করবে কিন্তু ওই তৌসিফ আর আরমান একদম ভাল মেসেজ করবেনা।ওরা নিশ্চয় লাভ ইউ টাভ ইউ বলে কনভারসেশন ভরিয়ে ফেলেছে।আমি শুকনো ঢোক গিলে উমানের দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘লললগ ইন করতে পপপারিনা।’

উমান আমার গালে হাত বুলিয়ে বললেন,

‘তোতলাচ্ছিস কেন?এমনি বল পারিসনা।আমি শিখিয়ে দিব।’

কান্না মুখ করে বললাম,

‘পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি।’

উমান আমার ঠোঁটে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বললেন,

‘এটা খেয়ে নিই তাহলেই মনে পড়বে।’

মুখ থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,

‘সসসত্যি ভুলে গেছি।’

উনি মুচকি হেসে উনার পা আমার উপর তুলে দিলেন।আমি শুকনো ঢোক গিলে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,

‘বাইরে যাব।টিভিতে… ‘

উমান আমার জামার মধ্যে দিয়ে পেটে হাত রাখতেই আমার কথা বন্ধ হয়ে গেল।উনার হাত চেপে ধরে বললাম,

‘ককরছি,লগ ইন করছি।’

উনি পেটে চিমটি দিয়ে ধরে রেখে বললেন,

‘কর,করলেই ছেড়ে দিব।’

মুখ কুচকে তাড়াতাড়ি লগ ইন করলাম।উমান পেট ছেড়ে দিলেন।আমার মাথা বালিশে রেখে উনি কনুইয়ে ভর দিয়ে হাতের তালুতে মাথা রেখে কৌতূহলী হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘দেখি কেমন আইডি তোর।দেখা একটু আমাকে।’

আমি শুকনো ঢোক গিলে প্রোফাইলে ঢুকলাম।আমার অসংখ্য ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া আছে।উমান ভ্রু কুচকে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘এতগুলো পিকচার দিয়েছিস!!!এটা কি লেখেছিস?সৌন্দর্য চোখকে নয় হৃদয়কে স্পর্শ করে??এক থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত খুলে নিব বেয়াদব।ডিলিট কর সব।’

উনি রেগে উঠে বসলেন।আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ভ্রু কুচকে আমার সব ছবি গুলো ট্রাশ বক্সে ফেলে দিলেন।আমিও উঠে বসে উঁকি দিয়ে দেখছি সব।সবগুলো ছবিতে হাজার হাজার লাইক কমেন্ট আর উনি সবগুলো ডিলিট করে দিচ্ছেন।আমার ভার্চুয়াল লাইফকে আমার সামনে খুন করছেন।এদিকে আমাকে এ্যাক্টিভ দেখেই সবাই এত বেশি মেসেজ দিচ্ছে যে উনার ফোনে টুং টুং করতেই আছে।এতে উনি আরও বেশি রেগে যাচ্ছেন।একটু পর উনি ফোন সামনে ধরে রেগে বললেন,

‘ও কে?’

আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বললাম,

‘ফ্রেন্ড।’

উনি ভ্রু কুচকে বললেন,

‘গার্ল স্কুলে পড়িসনা তুই?তাহলে এত হাজার হাজার ছেলে ফ্রেন্ড কোথায় থেকে আসলো?আই লাভ ইউ মেসেজ কেন পাঠাবে???’

শেষের কথাটা উনি চিল্লিয়ে বললেন।আমি কেঁপে উঠে মাথা নিচু করে গাল ফোলাতেই উনি আমার গাল টিপে ধরে মাথা তুলে বললেন,

‘তুই ও ওদের আই লাভ ইউ বলেছিস?’

আমি মাথা নাড়ালাম।উনি আমার গাল ছেড়ে দিয়ে গালে কিস করে আবার ফোন ঘাটতে শুরু করে বললেন,

‘ভেরি গুড।আমি তোকে নিউ আইডি দিব ওটা ইউস করবি।এটা ডিলিট।আর এই আই লাভ ইউ আর কিস পাঠানো ছেলেদের সাথে যদি আর একবারও কথা বলেছিস তোকে কিন্তু খুন করে ফেলব।’

আমি মাথা নিচু করে মিনমিন করে বললাম,

‘আপনারও তো অনেক গুলো ফ্রেন্ড আছে।কিস করে কাল দেখলাম সামিরাকে।’

উনি ফোন রেখে সটান হয়ে শুয়ে মাথার নিচে দুই হাত রেখে মুচকি হেসে বললেন,

‘সেজন্য কষ্ট লাগছে তোর?’

আমি মাথা নাড়ালাম।উনি ফোন হাতে নিয়ে বললেন,

‘লাগছেনা?ওয়েট এখনই তোর ব্যবস্থা করছি।’

বলেই উনি ফোন কানে ধরে বললেন,

‘স্যাম?খুব মিস করছি তোমাকে।বাসায় আসবা?……….ওকে ওকে চলে আসো।’

তারপর উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘স্যাম আসবে।শী ইজ মাই গার্লফ্রেন্ড।’

ধপ করে বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে অন্য পাশ ফিরে মনে মনে বললাম বা* ফ্রেন্ড।সব আমাকে রাগানোর জন্য।উমান বিছানা থেকে নামতে নামতে বললেন,

‘বারোটা বেঁজে গিয়েছে রান্না করব কখন?শীট!! তোর জন্য দেরি হয়ে গেল।’

উনি কিচেনে চলে আসলেন।রুমে একা থাকতে ভয় লাগবে তাই আমিও উনার সাথে আসলাম।উনি ফ্রিজ খুলে মাছ আর মুরগীর মাংস বের করে পানিতে ভিজিয়ে রাখলেন।চাল ধুয়ে রাইস কুকারে ভাত দিলেন।পেঁয়াজ কুচি করতে করতে বললেন,

‘এভাবে পেছনে পেছনে ঘুরঘুর করছিস কেন?কি চাই?’

আমি উনার পাশে দাঁড়িয়ে বললাম,

‘আমিও রান্না করব।’

উনি আমাকে উনার জায়গায় দাঁড় করিয়ে পেঁয়াজ কুচি করতে দিলেন।পেঁয়াজের দিকে তাকিয়েই আমার নাকে চোখে পানি চলে আসলো।সরে এসে বললাম,

‘এটা করতে পারবোনা।’

উনি মুচকি হেসে বললেন,

‘ইট’স ওকে আমিই করছি।’

এরপর আমি স্টোভের কাছে এসে বললাম,

‘আপনি সব কেঁটে দিন আমি রান্না করব।’

উনি পেঁয়াজ কুচি করা থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘স্টোভে হাত দিবিনা।চুপচাপ বসে থাক।’

স্টোভ ছেড়ে আমি মসলার কৌট গুলো তাক থেকে নামাতে লাগলাম।উমান মাংসগুলোতে সব মসলা দিয়ে প্রেশার কুকারে করে স্টোভে বসিয়ে দিলেন তারপর রুপচাঁদা মাছগুলোতে মসলা লাগিয়ে আরেকটা স্টোভ জ্বালিয়ে প্যান বসিয়ে দিলেন।আমি স্প্যাচুলা হাতে নিয়ে উনার পাশে দাঁড়িয়ে আছি।মাছগুলো আমি ভাজি করব।উমান প্যানে তেল দিয়ে বললেন,

‘নে মাছগুলো এবার তেলে ছাড়।’

একটা মাছ ছেড়েই ভয় পেয়ে গেলাম কারন হাতে তেল ছিটকে পড়ছে।উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘আমি এটা করতে পারবনা।’

উনি মুচকি হেসে বললেন,

‘ইট’স ওকে আমিই করছি।’

আমার কেন যেন ভাল লাগলোনা।উনি যেটায় করতে দিচ্ছেন সেটায় পারছিনা।উনি কি ইচ্ছে করে এমন করছেন?মনে মনে ভেবেই আমি বাকি মাছগুলো তেলে ছাড়তে চাইলাম কিন্তু উনি আমাকে কিছুতেই মাছ ধরতে দিলেন না।জোর করেও পারলাম না।উনি আমাকে ধমক দিয়ে কিচেন থেকে বের করে দিলেন আর সাদ ভাইয়াকে ঘুম থেকে ডেকে দিতে বললেন।উমান কিচেনের দরজায় থাকতেই আমি এক দৌঁড়ে সাদ ভাইয়ার রুমে চলে এসেছি।

এসে দেখি সাদ ভাইয়া জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছেন।উনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ঘুমোননি উনি।আমাকে দেখে সাদ ভাইয়া বিছানায় এসে বসলেন,কোলের উপর সাদা বালিশ নিয়ে খাটে হেলান দিলেন।আমি এসে খাটের এক কোনায় পা তুলে বসলাম।উনি মুচকি হেসে বললেন,

‘উম কি করছে?’

উমানের কথা শুনে আমি থমথমে মুখ করে বললাম,

‘উনি কিচেনে,দুপুরের খাবার রান্না করছেন।’

সাদ ভাইয়া মৃদু হেসে বললেন,

‘তোরা কি কথায় কথায় এভাবে মারামারি করিস?’

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘আমি মারামারি করি??উনিই তো আমাকে মারেন।আমি কখনও উনাকে মারিনি,একদিনও নয়।’

‘আজকেই তো মারলি।খামচি দিলি আর চুলও টানলি।’

আমি মুখ কাচুমাচু করে বললাম,

‘ওগুলো তো এমনি কিন্তু উনি যে আমাকে থাপ্পড় মারেন সেটা?আর আপনি জানেন উনি কত খারাপ?আপনাকে বললে বুঝবেননা। আপনিও তো খারাপ।আমাকে কিভাবে চাকু দিয়ে মেরেছিলেন সেদিন!!’

বলেই আমি বিছানা থেকে নেমে এক প্রকার দৌঁড়ে কিচেনে আসলাম।উমানের সামনে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই কিন্তু একা থাকতে ভয় লাগছে জন্য থাকতে হচ্ছে।আড় চোখে উমানের দিকে তাকিয়ে ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বক্স নিয়ে কেবিনেটের উপর বসলাম।উমান মাছ ভাজি উল্টে দিতে দিতে বললেন,

‘সাদ উঠেছে?’

আমি কিছু না বলে আইসক্রিম খেতে লাগলাম।একটু আগেই উনি আমাকে এক প্রকার ঘাড় ধাক্কা দিয়ে কিচেন থেকে বের করে দিয়েছিলেন।কথায় বলব না হু। সেদিন সাদ ভাইয়া আমাকে অত নির্মমভাবে চাকু দিয়ে মেরেছিলেন মনে হতেই এখানে চলে আসলাম না এই বজ্জাতটার কাছে আসতামই না।এক ঘন্টা পর সব রান্না শেষ করে উমান স্টোভ অফ করে কিচেন থেকে যেতে যেতে বললেন,

‘শাওয়ার নিব আমি এখন।’

আমিও উনার পেছন পেছন রুমে আসলাম।উমান টিশার্ট খুলে ঘাড়ে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে যাচ্ছিলেন আমাকে বিছানায় বসতে দেখেই ভ্রু কুচকে বললেন,

‘তুই শাওয়ার নিবি না।’

আমি একটা চকলেট মুখে দিয়ে বললাম,

‘পরে,আপনি আগে করুন তারপর আমার বেলায় একটু দরজার বাহিরে পাঁচমিনিট দাঁড়িয়ে থাকলেই হবে।

আমার এত ভয় দেখে উনি বিরক্ত হয়ে ওয়াশরুমে যেতে যেতে বললেন,

‘পারবোনা আমি দাঁড়িয়ে থাকতে।’

বলেই উনি ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিলেন।আমি ভ্রু কুচকে দরজার দিকে তাকিয়ে আছি তখনই সাদ ভাইয়া রুমের দরজায় টোকা দিলেন।উনার দিকে তাকিয়েই আমি চোখ বড় বড় করলাম কারন উনার হাতে ফল কাটা চাকু।উনি কি আমাকে মারতে এসেছেন?উমান তো ওয়াশরুমে।এখন কি হবে!!

চলবে………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here