গল্প:-মনের মহারাণী
লেখিকা:-Sohani Simu
পর্ব:-১৮
চলে আসার আগে সামিরার সাথে আমার আর কথা হল না।সামিরাও কথা বলেনি আমিও বলিনি।উমান আমার একহাত ধরে আমাকে নিয়ে নিচে আসলেন।আমাকে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে দিয়ে উনি ড্রাইভিং সিটে বসলেন।আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।এখনও টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে।ভেজা রাস্তায় নিয়ন আলো পরে চিক চিক করছে। রাস্তার উপর নিচু জায়গাগুলোতে পানি জমে আছে।আমি সিটে হেলান দিয়ে উদাস চোখে বাইরে তাকিয়ে আছি।হঠাৎ উমান জানালার কাচ নামিয়ে দিলেন।শীতল বাতাসে কেঁপে উঠলো কপালের চুলগুলো।পুরো রাস্তা কেউ কারও সাথে কথা বললাম না।বাসায় ঢুকে দরজা লাগিয়েই উমান আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।কানের সাথে ঠোঁট ঠেকিয়ে বললেন,
‘আ’ম সরি।’
আমি কিছু বললাম না।উনি একাহাতে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে অন্যহাত আমার গালের নিচে রাখলেন।কপালে ঠোঁট চেপে ধরে বললেন,
‘বলছি তো সরি।’
মাথা কিছুটা পিছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বললাম,
‘ছাড়ুন,ভাল লাগছেনা।’
উনি বুড়ো আঙুল দিয়ে আমার গাল থেকে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন,
‘রাহি টেবিলে ওটা লিখেছিল কেন?’
গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে রাগি কন্ঠে বললাম,
‘রাহি আমাকে ভালোবাসে সেজন্য।’
উনি আমার গাল টিপে ধরলেন।দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
‘খুন করে ফেলব রাহিকে।’
আমি উনার হাতে খামচি দিয়ে বললাম,
‘বাবাকে সব বলে দিব।ফোন দিন।কথা বলব বাবার সাথে।’
উনি ভ্রু কুচকে বললেন,
‘কি বলবি?’
আমি উনার দুই পায়ের উপর পা রেখে বললাম,
‘আপনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন আর এখন অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করছেন।’
উনি আমার গাল ছেড়ে দিয়ে মৃদু হেসে বললেন,
‘তোর এটা মনে হচ্ছে?গাধী একটা!’
গুম গুম করে উনার বুকে দুটো কিল বসিয়ে দিয়ে বললাম,
‘তুই গাঁধী।’
উমান রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন।আমি ভয়ে মুখ কাঁচুমাচু করে নিলাম।উনি আমার কোমড় আরও শক্ত করে চেপে ধরলেন।আমার থুতনি ধরে আমার দিকে ঝুকে চোখে চোখ রেখে মুচকি হেসে বললেন,
‘তুই এত ছোট কেন?’
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম।উনি আমার মুখে ফু দিয়ে কপালের চুলগুলো উড়িয়ে দিলেন।উষ্ণ বাতাসের ছোঁয়া পেতেই অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।উনি আমার নাক টেনে বললেন,
‘আই লাভ ইউর ব্রুইশেড নোজ।’
নাক থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে তেতে উঠে বললাম,
‘রাগ হচ্ছে আমার।’
উনি হাত বাড়িয়ে দেয়াল থেকে ওয়ালমেট খুলে নিয়ে আমার হাতে দিলেন।সঙ্গে সঙ্গে সেটা মেঝেতে আছাড় দিলাম।উনি মুচকি হেসে বললেন,
‘এখনও রাগ হচ্ছে?আরও ভাঙবি?’
উনার হাতে খামচি দিয়ে বললাম,
‘প্রচুর রাগ হচ্ছে।’
উনি আমার গালের নিচে হাত রাখলেন।কপালের নীল রগ ফুলিয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে থাকলেন তারপর আমার ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়ালেন।হাত-পা অবস হয়ে শরীর ভেঙে আসলো।উনি দুইহাতে জড়িয়ে ধরলেন আমাকে।আমার কাঁধে থুতনি রেখে বললেন,
‘এখনও রাগ হচ্ছে?’
কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই আমি এখন।থর থর করে কাঁপছি।উনি ধরে না রাখলে ঠাস করে মেঝেতে পরে যাব।উমান মৃদু হেসে বললেন,
‘এমন কেন তুই?ইট ওয়াজ জাস্ট আ কিস।আরেকবার করব?’
আরও একবার?মরেই যাব তাহলে।বাসার সব আলো নিভে গেল,লোডশেডিং হয়েছে।এই মুহূর্তে অন্ধকারটা খুব জরুরী ছিল।ভাগ্য সহায় হয়েছে।অন্ধকারে চোখ বন্ধ করে নিলাম।উমান আমাকে আরেকবার কিস করে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বললেন,
‘আই লাভ ইউ মিতি।তোকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসি না।সামিরা আমার ফ্রেন্ড,গার্লফ্রেন্ড বা এক্স নয়।সেদিন তুই স্বপ্নের মধ্যে ফালতু বকবক করছিলি তাই ভাবলাম একটু রিভেন্জ নিই।নিষাদকে নিয়ে জ্বালিয়েছিলি না আমাকে?বিশ্বাস কর আজকে এত কিছু করতাম না।ওই রাহির জন্য মেজাজটা একদম খারাপ হয়ে গিয়েছিল।আ’ম সরি মহারাণী।’
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম।বদের হাড্ডিটা আমাকে এভাবে নাকানি চুবানি খাওয়ালো!!মিতি,দ্যা প্রিন্সেসকে এত বাজেভাবে অপমান করল!!কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।উমান আমার কাঁধে নাক ঘষে ফিসফিস করে বলল,
‘বাসায় কেউ আছে,ভয় পাস না।কিছু হবে না।’
ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরলাম উনাকে।কাঁপা কন্ঠে বললাম,
‘কককে আআছে?ককেন এসেছে?’
উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,
‘ডোন্ট ওয়ারি।’
‘কককি হচ্ছে এসব?কিসের ঝামেলা চলছে?বাবা কোথায়?’
উমান মৃদু হেসে আমার গালে গাল ঠেকিয়ে বললেন,
‘চাচ্চুর অফিসের ঝামেলা।নাথিং সিরিয়াস।হিংসা-বিদ্বেষ,লোভ-ক্ষোভ।ঠিক হয়ে যাবে সব,ডোন্ট ওয়ারি।’
তীব্র ঝাকুনি খেয়ে কোথাও সরে গেলেন উমান।দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে বললাম,
‘উমান!!!’
সঙ্গে সঙ্গে কেউ আমার মুখ চেপে ধরলো।গলায় আবার সেই ধারালো ছুরির অস্বিত্ব টের পেলাম।কর্কশ কন্ঠে কেউ বলল,
‘নড়িস না উমান,মেরে দেব ওকে।আ’ম সিরিয়াস।’
উমানের কন্ঠ পেলাম।কাছেই আছেন উনি কিন্তু অন্ধকারের জন্য দেখতে পাচ্ছিনা।উমান উত্তেজিত হয়ে বললেন,
‘ও কিছু জানেনা,ছেড়ে দে ওকে।সামান্য আঘাতও যদি করিস তোর ভাই আর জীবিত থাকবেনা।’
কয়েকজনার হাসির শব্দ কানে আসলো।বেশ বুঝতে পারছি উমানকে দুতিনজন লোক চেপে ধরে আছে।ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
‘উম?কককোথায় আপনি?’
লোকটা আমার গলায় ছুরি চেপে ধরে বলল,
‘এখনও সময় আছে উমান,বলে দে পাপনকে কোথায় রেখেছিস।’
উমান শক্ত গলায় বললেন,
‘ছেড়ে দে ওকে।’
আমার মুখ আরও শক্ত করে চেপে ধরে লোকটা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
‘ রোজ দে ছেড়ে দিব।’
উমান কিছু বলছেন না।কয়েকসেকেন্ড পর উমান বললেন,
‘নেই ওটা।’
লোকটা আমার গলায় আচড় দিয়ে বলল,
‘মেরে দিই একে?’
উমান শক্ত গলায় বললেন,
‘না।’
লোকটা মৃদু হেসে বলল,
‘এই কেউ লাইট অন করে দে।একে তো ওর সামনে মারতে হবে নাহলে জমবে না।’
মিনিটের মধ্যেই সব আলো জ্বলে উঠলো।উমান আমার থেকে আট-দশ ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে আছেন।তিনজন লোক উনাকে চেপে ধরে আছে।এই লোকগুলোর মুখ চেনা চেনা লাগছে। কোথাও না কোথাও দেখেছি।আমার পেছনে একটা লোক দাঁড়িয়ে আমার মুখ চেপে গলায় ছুরি ধরে আছে।উমান রক্তচোক্ষু নিয়ে আমার পেছনের লোকটির দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ছেড়ে দে ওকে।’
‘রোজ কোথায়?’
উমান বিরক্ত হয়ে বললেন,
‘নেই বুঝিস?নেই ওটা।মিতিকে ছাড় আর চলে যা এখান থেকে নাহলে কিন্তু ভাবতে পারছিসনা কি হবে।’
সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।আমার পেছনের লোকটা বলল,
‘কি হবে?’
বলেই আমার গলার নিচে ছুরি দিয়ে আচড় দিল।উমান চোখমুখ শক্ত করে শুধু মাথা নিচু করলেন।এক মিনিটের মধ্যে উমানকে ধরে রাখা তিনজন লোক বেহুশ হয়ে নিচে পড়ে গেল।আমার মাথাও ঘুরছে।আমার পেছনের লোকটার হাতও আলগা হয়ে আসলো।ধপ করে নিচে পরে গেলাম।অস্পষ্ট চোখে দেখলাম উমান পকেট থেকে মাস্ক নিয়ে মুখে লাগালেন তারপর দেখলাম দুটো উমান,একজন আরেকজনকে হাই ফাইভ করে হাগ করল।আর কিছু দেখতে পেলাম না।গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
চলবে…….
(গল্পের থিম বিশাল।গুছিয়ে লিখলে প্রায় ষাটটা পার্ট আসবে।আপনারা যেহেতু পছন্দ করছেননা গল্প তাড়াতাড়ি শেষ করে দিব।এলোমেলো আর বোরিং লাগার কথা নয় তাও কেন লাগছে বুঝতে পারছিনা।)